ইহুদি তথা ইসরাইল জাতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা এই যে, ইসরাইল একটি আগ্রাসী তথা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমারও ধারণা এমনই ছিল। এই কিউরিসিটি থেকে ইহুদি জাতি তথা ইসরাইল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে সহযোদ্ধা অনিমেষ রহমান। নানাবিধ বই-পুস্তক এবং বিশাল ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ইহুদি জাতির ইতিহাস জেনে বিষ্মিত হয়েছি। আজকের বিশ্বে তারা সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী কিনা তা সচেতন পাঠক বিবেচনা করবে। নিজে বিভিন্ন উৎস থেকে ঐ জাতিটার যে ইতিহাস জানতে পেরেছি, তাই ধারাবাহিকভাবে দিলাম ১-১৭ পর্বে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কারণে কোথাওবা ভিন্নতর তথ্য-কথামালা চলে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন পাঠকের যৌক্তিক সংশোধনী ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হবে। ঈদের ছুটিতে ১০-দিনের অবকাশে যাচ্ছি বিধায় একসাথে ৬-১৭ পর্ব আগাম পোস্ট দিয়ে গেলাম, যাতে এ জটিল বিষয়গুলো আগ্রহী পাঠকরা ছুটির মধ্যে শেষ করতে পারেন। ধন্যবাদ পাঠকদের। ।
আধুনিক অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস [ পর্ব – ১৪ ]
ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইহুদি। ইহুদি জাতীয়তাবাদ ইহুদি ধর্মভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় আবেগ একে অপরের সাথে সংযুক্ত। এদের পৃথক করে বিচার করা যায় না। ইহুদিদের প্রধান নবী হলেন হজরত মূসা, যার কিতাব হলো তাওরাত। ইহুদিরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে, যাকে তারা বলে যিহোভা। এর থেকে ইহুদি নামের উদ্ভব হয়েছে। ইহুদি বলতে বোঝায় যিহোভাতে বিশ্বাসীদের। অবশ্য আদিতে ইহুদিদের মধ্যে কিছু ছোটখাটো দেবতাতেও বিশ্বাস ছিল। যিহোভা ছিল সবার চেয়ে বড় দেবতা। পরে তিনি হয়ে ওঠেন একমাত্র উপাস্য।ইহুদিরা মনে করে, বিপদে পড়লে তাদের মধ্যে উপর্যুক্ত নতুন নেতার আবির্ভাব ঘটে। এ রকম নেতাকে তারা বলে মশিহ্। ইহুদিদের বিশ্বাস, তারা যিহোভা (আল্লাহ) প্রিয় জাতি। তাদের কখনো বিলুপ্তি ঘটতে পারে না। অনেক বিপদের মধ্যেও তারা টিকে থাকবে। তাওরাত হিব্রু ভাষায় রচিত, যার একটি মৃত ভাষায় পরিণত হয়েছিল প্রায় ২০০০ বছর আগে। ভাষাটা টিকে ছিল কেবল ইহুদিদের প্রার্থনার ভাষা হিসেবে। কিন্তু এই ভাষার পুনর্জীবন ঘটিয়ে ইহুদিরা একে করেছে ইসরাইলের রাষ্ট্রভাষা এবং ওই রাষ্ট্রে শিক্ষার মাধ্যম। এর মূলে আছে ইহুদিদের ধর্মের সাথে একটা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সৃষ্টিরও প্রচেষ্টা। ইহুদি ধর্মের প্রধান ভিত্তি হলো তাওরাত কিতাব। এরপর হলো ‘তালমুদ’ যা ইহুদিদের আইন-কানুনের সঙ্কলন।তালমুদও রচিত হিব্রু ভাষায়। এসব আইন-কানুনের ভাষ্যকে একত্রে বলে জার্মেরা। এটা লিখিত হয়েছে আরামাইক ভাষায়। আমরা ঈসাকে একজন নবী বলে মানলেও ইহুদিরা মানে না। ইহুদি আর খ্রিষ্টানদের মধ্যে চলছে দীর্ঘ বিবাদ। সে রকম বিপদ অতীতে কখনো মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ঘটেনি। মুসলমানরা কখনো ইহুদিদের পুড়িয়ে মারার কথা চিন্তা করেনি। কিন্তু ইউরোপে খ্রিষ্টানদের হাতে পুড়ে মরতে হয়েছে ইহুদিদের।
খ্রিষ্টানদের ধারণা, ইহুদিরা রোমান পৌত্তলিকদের সাথে ষড়যন্ত্র করে হজরত ঈসাকে মেরে ফেলে। তারা তাই হজরত ঈসার খুনি। কিন্তু মুসলমানরা এই কাহিনীতে বিশ্বাস করেনা। আমাদের অনেকের মনে এমন ধারণা আছে যে, সব ইহুদি বুঝিবা একই মানব ধারাভুক্ত। সব ইহুদি একই মানবধারা ভুক্ত নয়। ভারতের কেরালায় বাস করত একদল ইহুদি। তাদের অধিকাংশই এখন চলে গেছে ইসরাইলে। এসব ইহুদি দেখতে ছিল কালো এবং একেবারেই স্থানীয় হিন্দুদেরই মতো। চীনে কিছু ইহুদি আছে, যারা দেখতে অবিকল চীনাদেরই মতো। অর্থাৎ এরা মানব ধারার দিক থেকে মঙ্গোলীয়। কী কারণে চীনা ইহুদিরা দেখতে চীনাদেরই মতো, তার ব্যাখ্যা করা যায়না। বলতে হয়, সব ইহুদি এক মানবধারাভুক্ত নয়। নানাভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ইহুদি ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল। এসব অঞ্চলে স্থানীয় লোকের সাথে ইহুদি ধর্ম বিশ্বাসীদের বিবাদ দেখা দেয়নি। ইহুদিদের রাষ্ট্র গড়ার কথা বিশেষভাবে ভেবেছে ইউরোপের ইহুদিরা,অন্য জায়গার ইহুদিরা নয়। ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সর্বত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে ইহুদি সমস্যা। ইসরাইল বলছে, ইসরাইলে সমগ্র পৃথিবীর ইহুদিরা এসে উপনিবেশিত হতে পারবে। কিন্তু সেটা বাস্তবে সম্ভব নয়। কারণ ভৌগোলিক দিক থেকেই ইসরাইল খুবই ছোট রাষ্ট্র। ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার(৮ হাজার বর্গমাইল) জায়গার মধ্যে আবার অর্ধেকটাই মরুময়। সমগ্র পৃথিবীর ইহুদি নিয়ে রাষ্ট্র গড়তে আরো জায়গার প্রয়োজন। ইহুদিরা তাই আরো জায়গা দখলের স্বপ্ন দেখছে। চাচ্ছে আরবদের কাছ থেকে আগামীতে আরো জায়গা দখল করে নিতে।
এরপর পর্ব – ১৫
(এ পর্ব ভালভাবে বোঝার জন্য আগের পর্বগুলো পড়া আবশ্যক)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন