সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ভাষা ব্যবহার - ২ # ১৩১

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ৭ 
২০১৫ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ভাষা ব্যবহার - ২
 
আবার N0040Z কোডধারী তথা প্রাক্তন ‘বাংলাদেশ’ অঞ্চলের মানুষেরা মূলত তাদের নিজস্ব স্টাইলে কথা বললেও, তাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল মূলত কোলকাতা অঞ্চলের মানুষের ভাষা, যদিও ভুলক্রমে তারা কোলকাতা ও ভাগিরথী অঞ্চলের ভাষাকে তাদের ‘মাতৃভাষা’ বলতো। কিন্তু বাংলাদেশের মায়েরা আবার রংপুর, সিলেট বা নোয়াখালীর নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করতো। এদের ভাষার শব্দ ও বর্ণ বেশ সমৃদ্ধ হলেও, জাতিটি তা আন্তজার্তিক পর্যায়ে উন্নয়নে ব্যর্থ হয় বরং বাংলার চেয়ে শব্দ ও বর্ণতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে তুলনামূলক দুর্বল ‘ইংরেজি’ ভাষাটি ঐ সময় বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মর্যাদা অনেকটা জোর করে কেড়ে নেয়, যদিও বাঙালি জাতিটি তাদের ‘ভাষা দিবস’ ‘মহাসমারোহে’ উৎযাপন করতো প্রতিবছর কিন্তু ভাষাটির উন্নয়নে ছিল খুবই নিষ্প্রাণ ও নির্জীব । কারণ ঐ সময়ের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিধর  বর্তমান N0080Z কোডধারী প্রাক্তন ‘অস্ট্রেলিয়া’, বর্তমান কোডধারী N0070Z তথা প্রাক্তন বৃটেন, বর্তমানN0010Z কোডধারী প্রাক্তন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র এবং N0030Z কোডধারী প্রাক্তন কানাডার প্রধান ভাষা ছিল বর্ণিত ইংরেজি। যে কারণে এ ভাষাটি একুশ শতকের পৃথিবীতে প্রবল শক্তিতে তার রাজস্ব কায়েম করেছিল, যদিও আজ তা পৃথিবীর প্রাক্তন বিলুপ্ত প্রায় পাঁচ হাজার ভাষার মধ্যে একটি মাত্র। 

এভাবে বর্তমান N0050Z মানে প্রাক্তন সোমালিয়া অঞ্চলের ভাষার নাম ছিল সোমালী, বর্তমান N0060Z কোডধারী প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ার বিলুপ্ত ভাষাটির নাম ছিল রুশ, বর্তমান N0011Z কোডধারী তথা প্রাক্তন পাকিস্তানের ইতিহাসে স্থান পাওয়া ভাষাটির নাম ছিল উর্দু, বর্তমান N0080Z কোডধারী তথা প্রাক্তন সৌদি আরব ও তার পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো রাষ্ট্রের মানুষের ভাষা ছিল আরবি, যা এখন কেবলই ‘আরকাইভে’ দেখতে পাওয়া যাবে, আবার সেখানে ইসরাইল নামে বর্তমানN0081Z কোডধারী ছোট একটি অঞ্চল ছিল, যার অধিবাসীরা আবার ‘ইহুদী’ নামে ভিন্ন একটি ধর্ম অনুসরণ করতো এবং ঐ ছোট রাষ্ট্রটির মানুষেরা বিশ্বে একটি পৃথক ভাষা ব্যবহার করতো, যার ঐ সময়ের নাম ছিল ‘হিব্রু’। বর্তমানে বিলুপ্ত কিন্তু ঐ সময়ে ব্যবহার হতো এমন বিশ্বের প্রধান আরো কয়েকটি ভাষার নাম ছিল বান্টু, চীনা, কোরিয়ান, জাপানিজ, হিন্দী, মালয়ালাম, পশতু, পাঞ্জাবী, হিব্রু, তামিল, বাল্টিক, ল্যাটিন, ফ্রেন্স, জার্মান, ইতালিয়ান, ডাচ ইত্যাদি। ছোট ছোট উপজাতীরা আবার ভিন্নরূপের নানাবিধ উপভাষা ব্যবহার করতো, যেমন প্রাক্তন বাংলাদেশের সকল মানুষেরা কেবল বাংলা ব্যবহার করলেও, এ অঞ্চলে বসবাসকারী কোন কোন উপজাতি আবার চাকমা, সাওতালী, মারমা, খাসিয়া ইত্যাদি ভাষা ব্যবহার করতো, যদিও তাদের মুখের ভাষা তারা লিখতে পারতো না।

ঐ সময়ে মানুষের মধ্যে জটিল ও বিভ্রান্তিমূলক এতো ভাষা প্রচলিত ছিল যে, কেবল ঐ সময়ে বহুল ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষাটির প্রথম আলফাবেট ‘এ’ আদ্যাক্ষরযুক্ত ভাষার সংখ্যা ছিল ন্যূনতম ১২০টি, যার নামগুলো ছিল- Aage, Aaimasa, Aalawa, Aalawaa, Aaleira, Aal Murrah, A'ara, Aarai, Aari, aiw, Aari:Bako,Aari:Biyo,Aari:Galila, Aari:Laydo, Aari:Seyki, Aari:Shangama, Aari:Sido, Aari:Wubahamer, Aari:Zeddo,Aariya, Aay, A'a-Sama, Aba-Neboa, Aba-Shor, Aba-Lau, Aba-Logo:Lolia, Aba-Krongo:Abdulla, Abá-Ava-Canoeiro, Ababda-Bedawi, Ababda, Abab:Penukal, Abaca-Ilongot: Abaka, Abacama-Bacama, Abacha-Bassa:Komo, Abadekh-Adyghe:Abadzex, Abadhi-Awadhi, Abadi-Awadhi,Abadi-kbt, Abadzeg-Adyghe:Abadzex, Abadzex-Adyghe:Abadzex, Abaga, AbagaÍabg, Abai-Putoh:Abai, Abai Sungai, Abai Sungai-abf, Abak-Anaang: Abak, Abaka-Ilongot:Abaka, Abakan Tatar-Khakas, Abakay Spanish-Chavacano:Davawenyo-  Zamboanguenyo, Abaknon-Inabaknon, Abaknon Sama-Inabaknon, Abakoum-Kwakum, Abakum-Kwakum, Abakwariga-Hausa, Abaletti-Yele: Abaletti, Abalin-Maprik:Kalabu, Abam-Gidra:Abam, Abangba-Bangba, Abanliku-Obanliku, Abanyai-Kalanga:Nyai, Abanyom-Abanyum, Abanyom-abm, Abanyum,Abar-mij, Abarambo-Barambu, Abasakur, Abat-Jur:Habat, Abatonga-Ndau:Tonga, Abau, Abau-aau, Abau:Itam, Abaw-Abo, Abawa-Gupa-Abawa:Abawa, Abawa:Nganima, Abayong-Agwagwune:Abayong, Abayong-Agwagwune:Abayong, Abayong-Agwagwune:Abayong,Abaza, Abaza-abq, Abaza:Ashkaraua, Abaza:Bezshagh, Abaza:Tapanta, Abazin-Abaza, Abazintsy-Abaza, Abbe, Abbey-Abbe, Abbey-ve-Abe:Abbey-ve, Abbruzzesi-Romani, Abbruzzesi-Sinte, Abdal-Ainu, Abdedal-Gagadu, Abdulla-Krongo: Abdulla, Abdullah-Krongo, Abe-Abbe, Abe-Anyin:Abe, Abé-aba, Abe:Abbey-ve, Abedju-azaki-Lugbara, Abedju-azaki, Abe: Kos, Abelam-Ambulas:Maprik, Abelam-Ambulas:Wosera-Mamu, Abe:Morie, Abendago-Yali:Pass Valley. এভাবে অন্যান্য আলফাবেট মানে ‘বি’ থেকে ‘জেড’ পর্যন্ত প্রত্যেকটি অক্ষরেই নানাবিধ ভাষার নাম প্রচলিত ছিল। এতো ভাষার ব্যবহার ও প্রচলনের কারণ যদিও বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের চিন্তিত ও বিস্মিত করে কিন্তু তখনকার মানুষের সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, বর্ণীয় ও সপ্তপদী বৈষম্য আর অনৈক্যের কারণেই মূলত নানাবিধ ভাষার প্রচলন ও তা বিশ্বে বহুদিন টিকে ছিল। কোন কোন ভাষার মানুষেরা অন্য ভাষিক জাতির প্রতি তাদের ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইতো অনেকটা জোর করে। যা আমরা ঐ সময়ের বিশ্বের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস জানার সময় দেখতে পাবো নিখুঁতভাবে। 

কিন্তু বর্তমান সময়ের মত তাদের ভাষা এতো উন্নত ছিলনা বিধায় তার প্রকাশ ক্ষমতা ও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন বর্তমান বিশ্বের যে কোন কোড নম্বরযুক্ত মানুষ তার যে কোন মনোভাব পৃথিবী ও তার প্রতিবেশী কোডযুক্ত অন্য যে কোন গ্রহের অন্য বিশেষ কোডধারী প্রাণির কাছে পাঠাতে চাইলে, মুহূর্তেই বর্ণিত ভাষা প্রেরণকারী কোডধারীর সঙ্গে ভাষা গ্রহণকারী কোডধারীর সংযোগ স্থাপিত হয় এবং মুখে কোন শব্দ কিংবা কোন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার না করেই একে অপরের ভাষা তথা বক্তব্য ‘হার্ট-ব্রেন-চিন্তন’ পঠন যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারে কিন্তু অতীতে এমনটি ছিলনা। প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা একে অপরের মনের ভাব প্রকাশের জন্যে নানাবিধ ‘আদিম’ উপকরণ ব্যবহার করলেও, ২০১৩ সনের একুশ শতকের মানুষেরা তাদের ভাষা ব্যবহারের জন্যে ‘সেলফোন’ নামে একটি সেকেলে প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করতো। যা দিয়ে একজন অন্য জনের সাথে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে কথা বলতে কিংবা কোন সংবাদ প্রেরণ করতো পারতো নিয়ন্ত্রিতভাবে। কিন্তু এই ভাষা ব্যবহারের প্রধান সমস্যা এই ছিল যে, মহাকাশের সর্বত্রতো নয়ই এমনকি বিশ্বের সব স্থানে এই বার্তা পৌছতো না, এটি বলা ও শোনার জন্যে প্রত্যেকের কাছে ‘সেলফোন’ নামক যন্ত্রটি থাকতে হতো। যে কারণে অনেক ‘স্বচ্ছল’ ব্যক্তিরা এটি পকেটে নিয়ে ঘুরতো, কারণ তারা জানতো না কখন তাদের কাছে বার্তা আসবে। বিশেষ কারো বার্তা এলে সেলফোনটিতে ‘টুংটাং’ টাইপের এক রকম শব্দ হলে গ্রাহক বুঝতো যে, তার সঙ্গে বিশেষ কেউ কথা বলতে চাইছে, বক্তার পরিচয় বিশেষ কোডে প্রকাশিত হলেও, কখনো কখনো বক্তাকে চেনা যেত না বিধায় বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে প্রায়ই ভাব বিনিময়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো। মাঝে মাঝে আবার দু’জনের কথা কেটে যেত কিংবা অষ্পষ্ট শোনাতো। অজ্ঞতাবসত বক্তা কথা বলার এমন সময় নির্ধারণ করতো, যখন শ্রোতা হয়তো ঘুম কিংবা অন্য কোন জরুরী কাজে মগ্ন থাকতো, যা বক্তা বুঝতে পারতো না জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে। আবার কারো সেলফোনটি হারিয়ে, নষ্ট বা চুরি হয়ে গেলেও শ্রোতা আর কথা বলতে বা শুনতে পারতো না। ঐ সময়ে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষের বিভিন্ন জিনিসপত্র হারাতো, চুরি হতো কিংবা নষ্ট হতো, যা বর্তমান মানুষ জয় করেছে বিস্ময়কর চমৎকারিত্বে! আরেকটি অসুবিধা ছিল বক্তা ও শ্রোতার ভাষা বোঝারক্ষমতা যদি একই রূপ না হতো, তবে কেউ কারো ভাষা বুঝতে পারতো না, তাই বক্তব্যটি থাকতো অবোধ্য। 

ঐ সময়ের পৃথিবীকে ১-জন মানুষও ছিল না, যে পৃথিবীর প্রচলিত সকল ভাষা বুঝতে পারতো। যে কারণে একাধিক ভাষা বোঝার জন্যে একটি বৃহৎ আকৃতির ‘পুস্তক’ ব্যবহৃত হতো যার নাম ছিল ‘ডিকশনারী’। কিন্তু ডিকশনারীকে কেবল ২ বা ৩টি ভাষার শব্দের অনুবাদ প্রকাশিত হতো, যে কারণে ঐ ডিকশনারী ব্যবহার করেও সব ভাষা বোঝা যেত না, সব ভাষা বোঝার জন্যে আবার ডিকশনারী প্রয়োজন হতো কমপক্ষে পাঁচ হাজার, যা ঐ সময়ের মানুষের সল্প ধারণ ক্ষমতার মস্তিস্কের ক্ষে সংগ্রহ করা ও বোঝা নিতান্তই অসম্ভব ছিল। সুতরাং বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে ২-৪টি ভাষা ছাড়া আর প্রায় সকল ভাষাই থাকতো অবোধ্য। এমনকি কোন কোন রাষ্ট্রের পরাক্রমশালী শাসকগণও অপর রাষ্ট্রের ভাষার অবোধ্যতার কারণে বিদেশ সফরের সময় সঙ্গে থাকতো ‘দোভাষী’। যেমন প্রাক্তন বৃহৎ শক্তিধর চীন তথা বর্তমান  N0071Z কোডধারী এলাকার চৈনিক রাষ্ট্রের শাসকগণ যখন প্রাক্তন বৃটেন, আমেরিকা বা বাংলাদেশ সফরে যেতেন, তখন ওখানকার ভাষা বোঝানোর জন্যে থাকতো ২-ভাষায়ই পারদর্শী বিশেষ ‘দোভাষী’। এ থেকেই বোঝা যায়, ভাষা ব্যবহারে আজকের মানুষের তুলনায় ২০১৩ সনের মানুষ কতই না অনুন্নত ছিল!  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন