সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব- ১০ # ১১২

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব-১০
ইহুদি তথা ইসরাইল জাতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা এই যে, ইসরাইল একটি আগ্রাসী তথা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমারও ধারণা এমনই ছিল। এই কিউরিসিটি থেকে ইহুদি জাতি তথা ইসরাইল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে সহযোদ্ধা অনিমেষ রহমান। নানাবিধ বই-পুস্তক এবং বিশাল ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ইহুদি জাতির ইতিহাস জেনে বিষ্মিত হয়েছি। আজকের বিশ্বে তারা সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী কিনা তা সচেতন পাঠক বিবেচনা করবে। নিজে বিভিন্ন উৎস থেকে ঐ জাতিটার যে ইতিহাস জানতে পেরেছি, তাই ধারাবাহিকভাবে দিলাম ১-১৭ পর্বে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কারণে কোথাওবা ভিন্নতর তথ্য-কথামালা চলে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন পাঠকের যৌক্তিক সংশোধনী ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হবে। ঈদের ছুটিতে ১০-দিনের অবকাশে যাচ্ছি বিধায় একসাথে ৬-১৭ পর্ব আগাম পোস্ট দিয়ে গেলাম, যাতে এ জটিল বিষয়গুলো আগ্রহী পাঠকরা ছুটির মধ্যে শেষ করতে পারেন। ধন্যবাদ পাঠকদের।                                  ।
আধুনিক অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস  [ পর্ব  ১০ ]

ইহুদিদের প্রথম প্রখ্যাত নবী ছিলেন আমোস (Amos) তার জন্মস্থান ছিল জুডান রাজ্যের টিকোয়। প্রথম জীবনে আমোস ছিলেন মেষপালক। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৬০-এ তাঁর আবির্ভাব ঘটে ইসরাইল রাজ্যের বেথেলহাম নগরে। তিনি একই ইহুদি জাতির দুই রাজ্য, জুডা ও ইসরাইলের মধ্যেকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হন। উত্তরের অধিবাসীদের স্বার্থপরতা,হৃদয়হীনতা, দক্ষিণের অধিবাসীদের সাহায্যে তাদের এগিয়ে না আসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তিনি। আমোস ঘোষণা করেন, ইসরাইলিদের এই স্বার্থপরতার পরিণতি হলো তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। তাঁর মতে যিহোভাই হল সব কিছু; মানুষ,  পৃথিবী সবই অ-গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের কাজ শুধু যিহোভার উপাসনা করা। প্রখ্যাত মিশরিয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ  জে. এইচ, বেরস্টেড-এর মতে,  "আমোসের এই সকল ধারণা ছিল সমসাময়িক মিশরিয় ও ব্যবিলনীয় ধর্মের অনুরূপ চেতনা।"  ইহুদি জাতি এই সময় থেকেই তাদের জাতীয় ইতিহাস লেখা শুরু করে এবং আমোস ছিল হিব্রুদের লেখা সর্বপ্রথম ধর্মগ্রন্থ। সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও আমোস গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটান। তিনি মানুষ ও যিহোভার মধ্যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য টানেন। আমোস বলেন, যিহোভার কোন বস্তুগত আকার নেই, তাকে শুধু অনুভব করা যায়। এতদিন পর্যন্ত ইহুদিগণ মনে করতো যিহোভা মানব সাদৃশ্য এক সত্তা, সে ধারণার বিলোপ ঘটিয়ে যিহোভাকে নিরাকার রূপে প্রতিষ্ঠা করেন আমোস। হিব্রুধর্ম পরবর্তী নবী ইসাহ (Isaiah)-i দ্বারা আরও বিকশিত হয়।
হিব্রুজাতির এক ক্রান্তিলগ্নে আবির্ভূত হন ইসাহ (খ্রীস্টানদের ইসা নন)। তিনি তাঁর মত প্রচার করেন আনুমানিক ৭২৪ থেকে ৬৮০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত। জেরুজালেম যখন অ্যাসিরিও রাজা সিন্নেসিরেব কর্তৃক আক্রান্ত হতে যাচ্ছিল তখন ইসাহ তাঁর বাণী প্রচার করেন। খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্যে অ্যাসিরিও শক্তির উত্থান ঘটে। দুর্ধর্ষ, নৃশংস এই জাতি একের পর এক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জাতিকে পরাস্ত করে বিশাল এক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ৯১০ খ্রি. পূর্বাব্দে ব্যাবিলনের পতন ঘটে তাদের হাতে এবং ৮৭০ খ্রি. পূর্বাব্দের মধ্যে তারা সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দখল করে। অ্যাসিরিও সম্রাট তৃতীয় টিগলাথ পাইলসার দামোস্কাস দখল করেন ৭৩২ খ্রি. পূর্বাব্দে। পরবর্তী অ্যাসিরিও সম্রাট পঞ্চম সালমিনিসার ইহুদি রাজ্য ইসরাইল আক্রমণ করেন। ৭২২ খ্রি. পূর্বাব্দে ইসরাইলের রাজধানী সামারিয়ার পতন ঘটে অ্যাসিরিও সম্রাট দ্বিতীয় সারগনের হাতে। ইসরাইলের পতনের পর অধিকাংশ ইহুদিকে এখান থেকে উচ্ছেদ করেন অ্যাসিরিওগণ। দ্বিতীয় সারগন পরবর্তী অ্যাসিরিও সম্রাট সিন্নোসিরেব সম্রাট হন ৭০৫ খ্রি. পূর্বাব্দে। পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে তিনিও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে উদ্যোগী হন এবং ইহুদি রাজ্য জুডা দখল করতে এগিয়ে আসেন। দুর্দান্ত অ্যাসিরিওদের হাতে জুডার পতন ছিল এক অবশ্যম্ভাবী বিষয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতেই ইসাহ্‌ তাঁর মতবাদ প্রচারে অগ্রসর হন।
এতদিন পর্যন্ত ইহুদিগণ জানতেন তাদের দেবতা যিহোভা সমগ্র প্যালেস্টাইনের দেবতা। এখন তারা উপলব্ধি করতে পারে যে, প্যালেস্টাইন হলো মধ্যপ্রাচ্যের এক ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সুতরাং এই পর্যায়ে ইহুদি মাত্রই সংশয়ে আচ্ছন্ন ছিল,তাদের দেবতার কী ক্ষমতা আছে প্যালেস্টাইনের বাইরের বিশাল পৃথিবীতে, যেখানে বিভিন্ন শক্তিশালী জাতি যুদ্ধরত। সমগ্র পশ্চিম এশিয়া জয়কারী অ্যাসিরিওদের দেবতা অসুর কি ইহুদিদের দেবতা যিহোভার চাইতে কম শক্তিশালী?বিশাল অ্যাসিরিও সেনাবাহিনী নিয়ে সম্রাট সিন্নেসেরাব যখন জুডা রাজ্য আক্রমণে উদ্যত হন, তখন অনেকে ইহুদিই ভাবতে শুরু করেছিল এই যুদ্ধ হচ্ছে অ্যাসিরিওদের দেবতা অসুর ও ইহুদিদের দেবতা যিহোভার মধ্যকার যুদ্ধ দুই দেবতা শক্তি পরীক্ষায় মুখোমুখি, জয়-পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে নির্ধারিত হবে কে বেশী শক্তিশালী। যুদ্ধে যেহেতু ইহুদিদের পরাজয় প্রায় অবশ্যম্ভাবী ছিল তাই অনেক ইহুদি এই সময় হিব্রুধর্ম ও তাদের দেবতা যিহোভার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। এই ধর্মীয় সংকট থেকে ইহুদিদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন ইহুদি নবী ইসাহ্‌।
এরপর পর্ব  ১১
(এ পর্ব ভালভাবে বোঝার জন্য আগের পর্বগুলো পড়া আবশ্যক)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন