সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু - প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ : ২ # ১২৫

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব – ১৩
২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু - প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ : ২
এক কষ্টকর ক্ষণকে আকড়ে ধরে সে কেবলই অন্ধকার বিভীষিকাময় অজানা এক অলীক মৃত্যুর অন্ধকারের প্রহর গুণতো, যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে জানতো না সে তেমন কিছুই। যদিও সে রেখে যেত তার ‘বংশধারা’ তথা সৃষ্টিশীলতা ‘মেল’ ও ‘ফিমেল’ অভিধায়, পৃথিবীর মাটিতে নানা অঞ্চল আর দেশে দেশে।

সরাসরি ডিম না ছেড়ে বিভিন্ন প্রাণির ‘ফিমেল’ প্রজাতিটির ‘জঠরে’ আবার বর্ণিত ডিমগুলোর উর্বরায়ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে ‘শাবকটি’ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের পেটেই বড় হয়ে একটি বিশেষ সময়ে পৃথিবীতে বেড়িয়ে আসতো, এর নাম ছিল ‘জন্ম নেয়া’। এ প্রক্রিয়াটি ছিল প্রাণির ফিমেল প্রজাতিটির জন্যে মারাত্মক কষ্টকর, বিপদজনক ও বিভীষিকাময়। বিশেষ সময় মায়ের পেটে অবস্থানের পর শাবকটি বাইরে বের হওয়ার প্রাক্কালে কখনো শাবকটি, আবার কখনো মা-টি মারা যেত। কখনো দু’জনে একত্রে বেঁচে থাকতো কিংবা মারা যেত নানাবিধ জটিল প্রক্রিয়ায়। এ জন্ম প্রক্রিয়া এবং মৃত্যুকে মানুষ খুবই স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করতো ২০১৫ এর দিকে। আবার বনে জঙ্গলে সদ্য জন্ম নেয়া প্রাণি শাবককে আহার করার জন্যে হিংস্র প্রাণিরা ওৎ পেতে থাকতো যত্রতত্র। ‘ওয়াইলবিস্ট’ নামক প্রাচীন এক প্রকার তৃণভোজী নীরিহ প্রাণির শিশু শাবককে প্রায়ই হায়েনা, সিংহ বা বাঘ জাতীয় ঐ সময়ের প্রাণিরা মায়ের সামনে থেকে টেনে নিয়ে যেত, দীর্ঘতর প্রক্রিয়ায় কষ্ট করে নিজ সন্তানকে জন্ম দেয়ার পর তাকে হারানোর এ দৃশ্য অসহায় ‘ওয়াইলবিস্ট’-মায়েরা চেয়ে চেয়ে দেখতো জলময় করুণ চোখে। অবশ্য লক্ষ লক্ষ ‘ওয়াইলবিস্ট’ শাবকের মধ্যে নানা প্রতিকুলতার ভেতরেও যারা বড় হয়ে আবার নতুন শাবকের জন্ম দিতো, তারাও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারতো না ঐ সময়ের বয়স ‘বুড়িয়ে’ যাওয়া জনিত প্রাকৃতিক ‘হিংস্রতর’ রোগ থেকে। ঐ সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণি ছিল ‘সামুদ্রিক তিমি’, যা সমুদ্রে বাস করতো। আকাশে, জলে ও স্থলে বসবাসকারী কোন প্রাণিই আকার ও শক্তিতে তিমির সমতুল্য ছিলনা বিধায়, তিমিদের ধারে কাছে কেউ খুব একটা ঘেষতো না। যে কারণে তাদের ওভাবে কেউ হত্যা করে খাওয়ার চিন্তা করতো না। কিন্তু যখন ঐ বিরাটাকৃতির তিমিরাও বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে অসার দেহ নিয়ে সমুদ্রের তলদেশে মরে পড়ে থাকতো জড় পদার্থের মত, তখন ছোট বড় নানাবিধ সামুদ্রিক প্রাণি তাদের দেহ খুবলে খুবলে পরম আনন্দে আহার করতো। অর্থাৎ যে কোন ভাবে বেঁচে থাকলেও, কোন প্রাণিই আসলে বাঁচতে পারতো না বর্তমান সময়ের মত, মরতে তাকে হতোই অসহায় প্রাণি হিসেবে।

ঐ সময় মৃত্যু স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক দু’ভাবে হলেও, জন্ম হতো কেবল স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মে। অস্বাভাবিক জন্মের ‘টেকনিক’ মানুষ জানতো না, এমনকি ভবিষ্যত সম্ভাব্য মানুষটির আকার, আয়তন, রং, চেহারা ও প্রজ্ঞাশীলতার কথা মানুষের অজানা থাকতো, যে কারণে কখনো কখনো বিকৃত অঙ্গ ও চেহারার ‘প্রতিবন্ধী’ মানুষ জন্ম নিতো অহরহ। যাদের ‘সঠিক’ চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক মানুষে রূপান্তর করা ঐ সময়ের মানুষের জন্যে অত্যন্ত কঠিন ছিল বিধায়, বর্ণিত বাক-প্রতিবন্ধী বা দৈহিক প্রতিবন্ধী মানুষেরা পরিবার ও সমাজের জন্যে বোঝা হিসেবে পরিগণিত হতো। জন্ম নেয়া মানুষটির মেধা ও প্রজ্ঞাশীলতায় মানুষের খুব একটা হাত না থাকাতে একই শ্রেণির বহু কর্মহীন মানুষ সমাজে ঘুরে বেড়াতো, আবার কখনো বিশের মেধার মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল। যেমন প্রাক্তন বাংলাদেশ নামক এলাকায় ‘কবি’ টাইপের মানুষের আধিক্য থাকলেও, এ্যারোনটিক্যাল বা পরমাণু বিদ্যায় দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ খুঁজে পাওয়া যেতনা খুব একটা। ২০১৫ পূর্ববর্তী সময়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং বয়সের একটা নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর ‘বুড়িয়ে’ যাওয়া রোগে অধিকাংশ মানুষ মারা গেলেও, শক্তিশালী প্রাণি এবং মানুষেরাও নিজ প্রজাতির মানুষ এবং অন্যবিধ প্রাণিকে হত্যা করতো। বাঁচার জন্যে যেহেতু খাওয়া অপরিহার্য ছিল, তাই সকল প্রাণি খাওয়ার জন্যেই নানাভাবে প্রাণি হত্যা করতো। 

তবে মানুষের খাওয়ার জন্যে হত্যা ছিল অনেকটা কৌতুকপ্রদ বিষয়। যেমন কিছু কিছু প্রাণিকে মানুষ পরম যত্নে, রোগ প্রতিরোধকারী ঔষধ ইত্যাদি প্রয়োগে লালন পালন করে বড়ো করতো কেবল হত্যা করে খাওয়ার জন্যে। তবে কেবল খাওয়ার জন্যে মানুষ অন্য অঞ্চল, ধর্ম বা বর্ণের মানুষকে হত্যা না করলেও, তাদের অঞ্চল, সম্পদ, নারী-শিশু ইত্যাদি দখলের জন্যে কখনো কখনো পুরষ শ্রেণির কিংবা সকলকে হত্যা করতো। এ ছাড়া কৃত্রিম যুদ্ধ ইত্যাদি সৃষ্টি করেও মানুষ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করতো। আরেক শ্রেণির মৃত্যু বা হত্যা ছিল সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক ‘বৈধ’। মানে গোষ্ঠীপতি বা বিচার বিভাগ কর্তৃক কোন ব্যক্তিকে সমাজের জন্যে ‘ক্ষতিকর’ মনে করা হলে, তাকে সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক ‘বৈধ’ভাবে হত্যা করা হতো। তবে এ বৈধতার মাপকাঠি ছিল অঞ্চল ও সমাজভেদে ভিন্নতর ও কখনো হাস্যকর। যেমন ‘লাইসেন্স-বিহীন’ পুরুষ ও নারী কোনরূপ যৌনতা তথা শারিরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করলে প্রাক্তন ইরান, যার বর্তমান এলাকা কোড হচ্ছে N0082Z বা রাজনৈতিক সৌদি সমাজে, যার বর্তমান এলাকা কোড হচ্ছে N0080Z  কাজটি ছিল অবৈধ তথা মৃত্যুদন্ডযোগ্য কিন্তু প্রাক্তন কানাডা যার বর্তমান এলাকা কোড N0030Z কিংবা ডেনমার্কে (বর্তমান কোড এলাকা # N0083Z) এটি কোন ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হতো না। অর্থাৎ ঐ সময়ের পৃথিবীর মানুষের চিন্তাধারা ও আইনকানুন ছিল অঞ্চল ও জাতিভেদে ভিন্নতর। আবার প্রাচীন প্রচলিত ধর্মগুলোর সমালোচনা প্রায় সকল পুঁজিবাদী রাষ্ট্রেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে ধর্মের সমালোচনা ও ধর্মহীনতাকে উৎসাহিত করা হতো। 

অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটিই অবৈধ হলেও, অজ্ঞানতার কারণে কোন বিষয়কে বৈধ, আবার কোনটিকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হতো। সুতরাং ঐ সময়ের পৃথিবীর চিরন্তন সত্য ছিল মৃত্যু এবং যে কোন ভাবে বাঁচার জন্যে খাদ্য গ্রহণ, যদিও এভাবে নানা প্রাণি হত্যা করে খাদ্য গ্রহণের পরও মৃত্যু নামক ভয়ংকর হিংস্রতা মানুষকে ঠিকই হত্যা করতো। তবে মৃত্যুকে জয় করার টেকনিক ঐ সময়ের মানুষের অজ্ঞাত ছিল বিধায়, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কিংবা বেঁচে যাওয়া সকলেরই সর্বশেষ ‘দন্ড’ ছিল আসলে ‘মৃত্যু’ই। আর এ মৃত্যু ভয়ে মানুষ সব সময় থাকতো দিশেহারা।
[চলমান --- এর পর পর্ব-১]
[এটি একটি রূপক রচনা। যার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আজকের স্বার্থবাদী, সাংঘর্ষিক, বিপদজনক, অসহায়, অন্ধকারাচ্ছন্ন,হানাহানিপূর্ণ পৃথিবীর পরিবর্তে এক চমকপ্রদ, বিজ্ঞানময়, উন্নত, আলোকজ্জ্বল, শান্তির পৃথিবীর প্রত্যাশা। লেখকের জ্ঞানচক্ষু বলে, অবশ্যই একদিন এমন পৃথিবী প্রতিষ্ঠা হবে যা থাকবে রাজনৈতিক, ভাষিক ও ধর্মীয় বিভাজনমুক্ত। যেখানে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন থাকবে না, থাকবে না ইসরাইল ও মুসলিম নামে আলাদা দেশ। মানুষ মারণাস্ত্র উৎপাদন করবেনা মানুষেরই জন্য। তবে হতে পারে এটি হাজার বছর পরে কিংবা কিছুটা আগেই। কল্পিত লেখাটি সাজাতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ৩০১৩ সনের ঐতিহাসিকরূপে। তাদের চোখে দেখতে চেষ্টা করেছেন বর্তমান সময়ের কণ্টকপূর্ণ পৃথিবীকে। হাজার বছর ভবিষ্যতকালে গিয়ে ওখানে বসে বর্তমানকে অতীত বানানো কিছুটা কষ্টকল্পনা বৈকি! হয়তো লেখাটি অভিনব তথা নতুন চিন্তণের, যে কারণে মাঝে মধ্যে অযৌক্তিকতা চলে আসতে পারে কখনোবা! এ বিষয়ে মুক্তচিন্তাব্লগের বোধ্যা পাঠকের সুচিন্তিত সমালোচনা, মতামত,পরামর্শ প্রত্যাশা করি, যাতে পরবর্তী পর্বগুলো সংশোধিত হতে পারে প্রকাশের আগেই, ধন্যবাদ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন