সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ভাষা ব্যবহার - ১ # ১৩২

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ৬
২০১৫ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ভাষা-১
 
আজকের এডোনাইজ এলুমিনিয়ামে রূপান্তরকৃত মস্তিস্ক ধারণকারী ৩০১৫ সনের মানুষ যদিও বিশ্বের অন্য মানুষ ও তার প্রতিবেশী অন্য প্রাণিদের সবার ‘মনোচিন্তা’ তথা ‘মনোভাব’ খুব সহজেই ধরতে পারে ‘সাউন্ড’, ‘সিম্বল’ ও নিজস্ব চিন্তনে স্থাপিত ‘হার্ট-ব্রেন-চিন্তন’ পঠন যন্ত্রের মাধ্যমে কিন্তু ২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের কাছে অন্য মানুষের মনোভাব বোঝার একমাত্র মাধ্যম ছিল মৌখিক ‘ভাষা’ যা তারা মুখের মাধ্যমে বলতে ও বিশেষ প্রতীকে লিখতে পারতো। ঐ সময় তারা তাদের স্বজাতি মানুষ ছাড়া তার প্রতিবেশী অন্য প্রাণি ও উদ্ভিদের ভাষা খুব একটা বুঝতো না, যদিও সামান্য দু’য়েকটি ইশারা ইঙ্গিতে কোন কোন গৃহপালিত প্রাণি বা পরিচিত বন্য প্রাণির কিছু কিছু ভাষা বোঝার চেষ্টা করতো, এমনকি মানুষের প্রতিবেশী উদ্ভিদ ও মহাকাশের অন্যান্য গ্রহের প্রাণিদের প্রেরিত ভাষাও তাদের কাছে ছিল অবোধ্য। 

কারণ ঐ সময়ের মানুষের ভাষা পাঠের মাধ্যমটি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের খুবই সেকেলে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে এবং বেশ জটিল। যেমন ২০১৩ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সাত কোটি মানুষ ব্যবহার করতো কমপক্ষে পাঁচ হাজার ভাষা, যা বর্তমানে মাত্র একটি, সহজ, শব্দহীন এবং সর্বজনবোধ্য। কারণ ঐ সময় বিশ্বের মানুষেরা নানা রাষ্ট্র, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদিতে বিভক্ত ছিল। তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, খাদ্য, পোষাক, ভাষা ইত্যাদি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা। যেমন বর্তমান N0040Z কোডধারী তথা প্রাক্তন ‘বাংলাদেশ’ অঞ্চলের অধিবাসীরা যে ভাষায় তাদের মনোভাব প্রকাশ করতো, তার নাম ছিল ‘বাংলা’ ভাষা (‘বাংবা’ নামে বিশ্বে তখন আরেকটি অখ্যাত ভাষা প্রচলিত ছিল)। বাংলা ভাষাভাষী লোকগুলো এতোই আবেগপ্রবণ ও তাদের ভাষাকে ভালবাসতো যে, একবার তারা তাদের ভাষার ‘সম্মান’ রক্ষার্থে ঐ সময়ের বিজাতীয় শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ও নিজেদের জীবন দিয়ে দেয়, যদিও বাঙালি জাতিটি এতো সাহসিকতার পরিচয় ইতিহাসে আর কখনো দেয়নি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় যা পরবর্তীতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রূপে বিশ্বের মানুষেরা পরম মর্যাদায় উৎযাপন শুরু করে। 

এ ভাষাটি তারা নিজেরা ভালবাসলেও, দেশটি বর্ণিত শাসকদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পরও তথা স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ভাষাটি আধুনিকীকরণে জাতিটি আর কোন পদক্ষেপ নেয়নি, এমনকি তারা তাদের কাজকর্মে প্রায়ই ভিনদেশী ভাষা ব্যবহার করতো। যে কারণে ‘বাংলা’ নামক ভাষাটি প্রাক্তন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ইত্যাদি অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ ব্যবহার করলেও, ভাষাটি আন্তজার্তিক পর্যায়ে কোথাও তেমন একটা ব্যবহার হতো না বা গুরুত্ব পায়নি, এমনকি ঐ সময়ে বাঙালিদের হিসাবযন্ত্র যার নাম ছিল ‘ক্যালকুলেটর’, তাতেও বিজাতীয় অন্য ভাষা ব্যবহৃত হতো। যে কারণে গ্রামীণ ও লেখাপড়া কম জানা বাঙালিদের বেশ সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু শাসকরা এ নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতো না। এমনকি বাংলাভাষিক লোকজনও অনৈক্য ও তথাকথিত আভিজাত্যের কারণে ভিন্ন ভিন্ন ভাষিক রীতি ও রূপমূল ব্যবহার করতো তাদের নিজস্ব বিভিন্ন অঞ্চলে। যেমন প্রাক্তন ‘নোয়াখালী’ বা ‘বরিশাল’ অঞলের মানুষের ভাষা ‘সিলেট’ অঞ্চলের মানুষের কাজে ছিল বেশ হাস্যকর, আবার ‘চট্টগ্রাম’ অঞ্চলের মানুষের ভাষা ‘ভোলা’র মানুষদের কাছে ছিল দুর্বোধ্য, যদিও ভাষিক দিকে দিয়ে সবাই বাঙালি হিসেবে পরিচিত ছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন