রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রাক ইসলাম যুগের আরব দেবদেবি : # ৮৫



প্রাক ইসলাম যুগের আরব দেবদেবি :

ইসলাম প্রচলনের আগে আরবের অধিকাংশ মানুষই নানাধর্মে বিশ্বাসী ছিল। কোন কোন মরু দেবতাকে তারা ‘জিন’ বলতো। মরু এলাকায় চন্দ্রের পূজা এবং উর্বর এলাকায় সূর্যের উপাসনা করা হতো। হিজায অঞ্চলের প্রধান দেবতা ‘উজ্জা’, ‘লাত’ ও ‘মনাহ’-কে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করা হতো। কুরাইশদের প্রধান দেবতা ছিল ‘উজজা’। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তীস্থান কুবেদ এলাকায় স্থাপিত ‘মনাহ্’ ছিল ভাগ্যের দেবী। কুবেদ মন্দিরে পূজার জন্য পবিত্র একটি ‘কালো পাথরও’ ছিল। তায়েফের কাছাকাছি মন্দিরে স্থাপিত ছিল ‘লাত’-এর মূর্তি। কাবাঘরে অনেকগুলো দেবতার মূর্তি ছিল। কাবার প্রধান দেবতা ছিল ‘হুবল’।

হুবলের মাধ্যমে কুরাইশরা তাদের ভাগ্য গণনা ও নীতি নির্ধারণ করতো। তবে মক্কাসহ সকল আরবের লোকেরা বহু দেবতার সঙ্গে ‘সৃষ্টিকর্তা’ হিসেবে ‘আল্লাহ’-তে বিশ্বাস করতো। ইয়ামেনের হিমার গোত্র ছিল ‘সূর্যপূজক’। কেনানা গোত্র ‘চন্দ্রপূজা’ করতো। বনী তামিম গোত্র ‘দুররান’ দেবতার পূজক ছিল। কায়েস গোত্র ‘উতারুন’ নক্ষত্রের ও নজমের, জুযাম গোত্র ‘মুশতরী’ নক্ষত্রের উপাসনা করতো। তায়েফের ছাকীফ গোত্র ‘লাতদেবীর’, মক্কার কুরাইশ ও কেনানা গোত্র ‘উজ্জার’, মদীনার আওছ, খাযরছ ও গাস্সান গোত্র ‘মানাত’ দেবীর, দুমাতুল জান্দালের কলন গোত্র ‘ওয়াব্দ দেবতার’, হুযাইল গোত্র ‘ছুওয়া’ দেবতার, মযহজ গোত্র ‘ইয়াগোছ’ দেবতার, মাহদান গোত্র ‘ইয়াউক’ দেবতার উপাসক ছিল।

কাবাঘরের ছাদে ছিল কুরাইশদের যুদ্ধের ‘হুবল’ দেবতা। এর মধ্যে মানাত ছিল সবচেয়ে পুরণো। মানাতকে কাদীদ নামক স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল। আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকের মানাতের নামে ‘বলিদান’ করতো। দাওমাতুল জান্দালের ‘ওয়ান্দ’ ছিল কালব গোত্রের দেবমূর্তি, ‘সুয়া’ ছিল হুয়াউল গোত্রের দেবমূর্তি, জাউফের ‘ইয়াগুস’ ছিল মুরাদ ও বানি গাতিফের দেবমূর্তি, ‘ইয়াউক’ ছিল হামদান গোত্রের দেবমূর্তি, ‘নাস’ ছিল যুলকালা গোত্রের হিমইয়ার শাখার দেবমূর্তি (বুখারী-৪৫৫১)। আরবে আমর ইবনে লু্হাই প্রথম পূজা শুরু করে। তবে আরবরা আল্লাহকেও বিশ্বাস করতো। মদীনায় ইহুদীরা প্রধান ধর্মীয় জাতি ছিল। মক্কাতে কিছু লোক খ্রীস্টান ছিল। খ্রীস্টান ওরাকা ইবনে নওফেল খাদিজার চাচাতো ভাই ছিলেন। তামিম গোত্র ছিল পার্সী তথা ‘অগ্নি উপাসক’। ঐ গোত্র প্রধান জারারা তামিমী পার্সী ধর্ম অনুসারে নিজ কন্যাকে বিয়ে করেছিলো, যদিও এ ব্যাপারে পরবর্তীতে সে অনুতপ্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। মদিনার হানিফ বা হানাফী নামে একেশ্বরবাদী এক শ্রেণির লোক ছিল।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন