সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা - ৪র্থ পর্ব # ১৩৪

৩০১৩ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ৪
২০১৩ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা

২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীতে একটি দম্পতি ৯-মাস কষ্ট করে সন্তান জন্ম দিলেই এ পর্বটি শেষ হতো না। নিউট্রিনো বিম যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্রিস্টাল রিডার ও নিউক্লিয়ার ফিউশান জনিত বিজ্ঞান না জানার কারণে শিশুটি জন্ম নিতো অনেকটা অপূর্ণ ও অসহায়ত্ব নিয়ে। স্তন্যপায়ী প্রাণির মধ্যে মানুব শিশু জন্ম নিতো সবচেয়ে অসহায় হিসেবে, যাকে অন্য বন্য প্রাণির মত মায়ের ‘বুকের দুধ’ পান করতে হতো বেশ কয়েক বছর, যদিও পিতা বা বাবা ছিল ঐ দায় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তা ছাড়া সদ্য জন্ম নেয়া মানব শিশুকে চলাচলের উপযোগী করা, ভাষা ব্যবহার তথা কথা বলানো, সাঁতার শেখা, আত্মরক্ষা, ঐ সময়ের উপযোগী বিদ্যাশিক্ষা ইত্যাদি প্রায় সব কাজই পর্যায়ক্রমে পালন করতে হতো জন্মদানকারী ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বিক্রিয়া তথা আইসোপোট আইসেলেটরে অজ্ঞ দম্পতিকে, যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বেশ হাস্যকর, জটিল, অদ্ভুৎ এবং কষ্টকর ছিল। এখন যেখানে ‘ক্লোন ল্যাব’ থেকে আবশ্যকমত কোন বিশেষ ব্যক্তির ‘ক্লোন’ বের করে আনা খুবই সহজ এবং আনার পর পরই সামান্য সময়ের ব্যবধানে তা পুরোপুরো কাজ শুরুকরে মূল ব্যক্তির মত, তা তখন ছিল অকল্পনীয় তথা কষ্টকল্পনা মাত্র।   
  
বর্তমান পৃথিবীর মত ঐ সময়ের পৃথিবী মাত্র একটি দেশ ও একক মানবগোষ্ঠী নিয়ে গঠনের পরিবর্তে তা নানা দেশ, জাতি, ভাষা, রীতিনীতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদিতে বিভক্ত ছিল। ২০১৩ সনে বিশ্বের এইরূপ রাষ্ট্র বিভাজন ছিল কমপক্ষে ১৯২টি। এই রাষ্ট্র বিভাজনগুলোর নামও ছিল অদ্ভুৎ রকমের। সিয়েরালিওন, বতসোয়ানা, তিউনিশিয়া, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, ইরাক কিংবা ফ্রান্স, যা বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন কোড অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলোর আকার আকৃতি, অধিবাসীর ভাষা ও গায়ের রং, প্রাকৃতিক ও উৎপাদিত সম্পদ, ভাষা, রীতিনীতি, খাদ্য, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদিরও ভিন্নতা ছিল। তারপরও নানাবিধ কারণে ঐ রাষ্ট্র সংখ্যা প্রায়ই বাড়তো-কমতো। এর মধ্যে কোনটি ছিল গণতান্ত্রিক, আবার কোন কোনটি রাজতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতির। এই পদ্ধতি ছিল আসলে মানব শোষণের বিভিন্ন রূপমাত্র। যেমন ২০১১ সনে রাজনৈতিক কারণেইে ‘দক্ষিণ সোমালিয়া’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল, যার বর্তমান এলাকা কোড হচ্ছে N0050Z, যদিও সোমালিয়া নামে ‘জলদস্যু’ খ্যাত একটি রাষ্ট্র পূর্বেই ঐ অঞ্চলে বহাল ছিল। আর ‘জলদস্যু’ বলতে সমুদ্র পথে এক প্রকার ‘রবারী’ বা দস্যুতা বোঝাতো, যারা ঐ সময়ে প্রচলিত আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে, সমুদ্র পথে চলাচলকারী বিভিন্ন সমুদ্রযানকে আটক করে তার নাবিকদের জিম্মি করতো অর্থ আদায়ের জন্যে, নির্দিষ্ট সময় পর তারা জিম্মিদের হত্যা এবং জাহাজটি লুটপাট ও ধ্বংস করতো, যদিও নাবিকরা থাকতো সম্পূর্ণ নিরীহ সাধারণ মানুষ, যাদের সঙ্গে ঐ জলদস্যুদের কোন পূর্বশত্রুতা ছিলনা। বিশ্বের ‘তথাকথিত’ কোটি কোটি শিক্ষিত শান্তিপ্রিয় ভদ্র মানুষ তা নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখতো।

বর্ণিত রাষ্ট্র বিভাজনের বেশ ক’বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে একটি সমাজতান্ত্রিক বৃহদাকার রাষ্ট্র ভেঙে সৃষ্টি হয়েছিল অনেকগুলো ছোট ছোট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যার বর্তমান এলাকা কোড হচ্ছে N0060Z। আবার বর্তমান N0040Z কোডধারী তথা প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের পূর্ববর্তী নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান, এরও আগে ছিল এটি রাজনৈতিকভাবে প্রাচীন ভারতবর্ষের অংশ। ঐ সময়ে পৃথিবীকে নানা ভৌগলিক অঞ্চলে ভাগ করে বিভিন্ন শাসকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো এবং তার উপর প্রভুত্ব করতো নিজেদের তৈরীকৃত আইন ও ইচ্ছেমত। যেমন বর্তমান N0080Z কোডধারী অঞ্চলটির পূর্বনাম ছিল ‘অস্ট্রেলিয়া’ যা আবার গায়ের জোরে দখলে নিয়ে শাসন করতো দূরবর্তী দেশ ‘বৃটেন’, যার বর্তমান এলাকা কোড হচ্ছে N0070Z। প্রাক্তন বৃটেনটি ছিল আবার ‘রাণী’ শাসিত, ঐ রাণীর নামে অস্ট্রেলিয়াও শাসিত হতো। অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও অনেক অঞ্চল তারা দখল করে নিজেদের শাসন চালাতো। যেমন বর্তমান N0020Z কোডধারী অঞ্চলটি ঐ সময়ে আর্জেন্টিনিয়া নামে পরিচিত থাকাকালীন, আর্জেন্টিনিয়ার নিকটবর্তী প্রাক্তন ‘ফকল্যান্ড’ এলাকাকে বৃটেন নিজেদের বলে দাবী করে বসে এবং ঐ দাবী পালনার্থে তারা আর্জেন্টিনিয়ার বিরুদ্ধে সমুদ্রে্ শক্তির মহড়া দেয় ও যুদ্ধে নামে কিন্তু আর্জেন্টিনিয়া দুরবর্তী শক্তিধর বৃটেনের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হতে না পেরে, তার দাবীকৃত নিকটবর্তী দ্বীপ ফকল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

আবার গায়ের জোরে ঐসব ভূখন্ড দখল করেই তারা খান্ত থাকতো না, তুলনামূলকভাবে গরিব কিংবা কম শক্তিধর দেশগুলোর অধিবাসীদের তারা ঐসব সমৃদ্ধ এলাকায় ঢুকতে নানাবিধ বাঁধা ও কঠোর কৃত্রিম আইন সৃষ্টি করতো। যেমন বর্তমান N0010Z কোডধারী অঞ্চলটির পূর্বনাম ছিল আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, N0030Zকোডধারী অঞ্চলটির কানাডা এবং N0080Z কোডধারী তথা প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঢুকতে হলে বর্তমানN0040Z কোডধারী তথা প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের অধিবাসীদের জটিলতর পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি দুষ্প্রাপ্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতো হতো। আর পাসপোর্ট বলতে কোন বিশেষ দেশের অধিবাসীদের দেশত্যাগের অনুমোদনপত্র এবং ভিসা বলতে বিশেষ কোন দেশে অন্য দেশের নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি পত্র বোঝাতো। এখনকার মানুষ যেমন অবাধে তার নিজস্ব কোড ব্যবহার করে পৃথিবী ও মহাবিশ্বের সর্বত্র ভ্রমন করতে পারে বিনা বাঁধায়, এমনটি ছিলনা তখনকার সময়ে। বর্তমান  N0040Z কোডধারী তথা প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের অধিবাসীরা ঐ সময়ের বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বোকা, গরিব, শান্তিপ্রিয় ও সরলপ্রাণ ছিল বলে, জটিলতর পাসপোর্ট-ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তারা ঐসব দেশে প্রায়ই ঢুকতে পারতো না। 
 
কেউ কেউ জীবনের ঝুকি নিয়ে সমুদ্রপথে নানাবিধ বিপদজনক ‘অবৈধ’(!) পথে বর্ণিত দেশগুলোতে ঢুকতে গিয়ে নিজের জীবনটি হারাতো। এমনকি তাদের মৃতদেহও আর খুঁজে পাওয়া যেত না। যে কারণে অনেকের মৃতদেহের পরকালীন ‘সৎকার’ আর করা সম্ভব ছিলনা। অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার অপরাধে কাউকে ‘জেলে’ পুরে দেয়া হত। জেল ছিল ঐ সময়ের এক প্রকারের ‘আটক-শাস্তি’র নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার নাম। যেখানে আটক থেকে মানুষ তার স্বজন কিংবা প্রয়োজনীয় কারো সাথে কোন যোগাযোগ রক্ষা বা অন্যবিধ চাহিদা পুরণ করতে পারতো না। মানুষের জন্য এরূপ কঠোর আইন কানুন থাকলেও, ঐ সময়ের বণ্যপ্রাণি, কীট-পতঙ্গ, পাখিরা আবার অবলীলায় ঢুকে যেত এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিনা পাসপোর্ট-ভিসায়। এই সব বণ্যপ্রাণি, কীট-পতঙ্গ, পাখিরা কখনো কখনো ঐসব বর্ণিত তথাকথিত ‘অভিজাত’ দেশের জন্যেক্ষতিকর হলেও, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার কলাকৌশল তারা আবিস্কার করতে পারতো না বিধায়, কেবল মানুষের প্রতিই বিশেষ করে নিম্নশ্রেণির কোডভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আইনের ‘স্টিম-রোলার’ চালাতো। বর্তমান N0040Z কোডধারী প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের অধিবাসীদের মত অন্যান্য গরিব ও অভাবী অঞ্চলের অধিবাসীরা নানা বৈধ-অবৈধ প্রক্রিয়ায় ঐসব উন্নত অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা চালাতো অব্যাহতভাবে। আর ‘অভাব’ বলতে ঐ সময়ের শক্তিধর শাসকরা কৃত্রিমভাবে শোষণের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে রাখাকে বোঝাতো।
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন