রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পৃথিবীর বিলুপ্ত ধর্ম ও বিলুপ্ত দেবতাদের ইতিহাস : বেবিলন # ৯৩

পৃথিবীর বিলুপ্ত ধর্ম ও বিলুপ্ত দেবতাদের ইতিহাস : বেবিলন

ব্যাবিলন নামটি এসেছে সুমেরিয়ান থেকে, (আক্কাদীয় ভাষায়: Bab-Ilu), এর অর্থ হল "ঈশ্বরের দরজা"। হিব্রু বাইবেলে নামটি בבל (Babel) হিসেবে আবির্ভূত হয়, যার ব্যাখ্যা Book of Genesis[১] 11:9 তে করেছে। সেখানে এর অর্থ "বিভ্রান্তি"।

খ্রীস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে ২৩০০ পর্যন্ত মেসোপটেমিয়ায় উন্নত এক সভ্যতা ছিল। এই অঞ্চলের সুমেরু, আসিরীয়া ও আক্কাদ ছিল ব্যাবিলনের অংশ। এটি মেসোপটেমিয় সভ্যতা নামে বিশ্বজনীন ছিল। ২০১৪ সনেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন ইরাক, যার বর্তমান কোড হচ্ছে ঘ১৮৭৬১ত এই অঞ্চলের মানুষদের ধর্মীয় দেবতার নাম ছিল যথাক্রমে ‘আন’ (আকাশ), ‘মাকি’ (পৃথিবী), ‘এনলিল’ (বাতাস) এবং ‘এনকি’ (সমুদ্র)। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাসমতে এরাই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রক ছিল। বর্ণিত ৪-দেবতা ছাড়াও আরো অনেক দেবতার পূজা করাই ছিল প্রাচীন ইরাকী লোকদের প্রধান কাজ। ইরাকের একটি প্রাচীন সভ্যতার নাম ছিল ব্যাবিলন, যার ছিল সূর্যদেবতা ‘বেল’। পরবর্তীতো যার নাম হয় ‘মার্ডুক’। ‘ইশতার’ ছিল ব্যাবিলনের যুদ্ধের দেবী। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংসের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে বর্ণিত ধর্মেরও বিলুপ্তি ঘটে। এ ছাড়াও সুমেরু সভ্যতার অন্যান্য দেবতারা ছিল যথাক্রমে ‘আনু’ স্বর্গের নিয়ন্ত্রক দেবতা। ‘আরুরা’ ও ‘মায়মি’ সুমেরীয় দেবী, যারা মানুষ তৈরীতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল। ‘এনলিল’ বাতাসের দেবতা, ‘এনকি’ পানি ও জ্ঞানের দেবতা, ‘নান্না’ ছিল চাঁদের দেবী, ‘ইনান্না’ ছিল প্রেম ও যুদ্ধের দেবী, ‘উটি’ ছিল সূর্য ও বিচারের দেবতা। ‘নানলিল’ ও ‘এনলিল’ ছিল স্বামী-স্ত্রী মানে দম্পতি দেবতা।

ব্যাবিলন ছিল মেসোপটেমিয়ার একটি শহর। এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবে ইরাকের বাবিল প্রদেশে। ব্যাবিলন বাগদাদের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার (৫৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। এইটি রাজ্যের পবিত্র শহর ছিল ২৩০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এবং ব্যাবিলন সাম্রাজ্যে রাজধানী ছিল ৬১২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। শহরটি প্রথম ব্যাবিলন রাজবংশের বৃদ্ধির সঙ্গে উন্নতিলাভ, লক্ষনীয় উপনীত এবং রাজনৈতিক সুখ্যাতি লাভ করেছিল। এইটি একটি আধুনিক মহানগরের প্রথম উদাহরণ, আলেকজান্ডারের সময়ে সম্ভবত এখানে দশ লাখের মত বাসিন্দা ছিল।

ব্যবিলনের প্রধান গডদের কার্যবণ্টন ছিল নিম্নরূপ :

১: আদাদ অথবা ইসকুর : ঝড়ের দেবতা
২। এনলিল বা অসুর : পৃথিবীর অধিপতি
৩। আনু অথবা এন : আকাশ আর স্বর্গের দেবতা
৪। এনকি বা এরা : পানির দেবতা
৫। ইরেসকিগাল : পাতালের দেবতা
৬। ইনানা বা ইসতার : যুদ্ধ, ভালবাসা আর প্রজনন দেবতা
৭। মারডুক : সব দেবতার পৃষ্ঠপোষক, সম্বনয়কারী
৮। নাবু : জ্ঞানের দেবতা
৯। নানসি : সমাজ, প্রজনন আর মাছের দেবি
১০। নের্গাল : যুদ্ধ আর সূর্যের দেবতা
১১। মামি : পৃথিবী আর মাতৃ দেবি
১২। নিনলিল : বাতাসের দেবতা
১৩। নিনুর্তা : কৃষির দেবতা
১৪। উটু : সুর্য আর ভ্রমণের দেবতা
১৫। নাননা : চন্দ্রদেবতা
১৬। দুমুজি : খাদ্য আর গাছপালার দেবতা

আরো ছোট নানাবিধ দেবদেবি ছিল। যার পরিচয় বাদ দেয়া হলো। এসব দেবদেবির জয়গান গাইতো প্রাচীন বেবিলনবাসি। কিন্তু যৌক্তিকভাবেই আজ না আছে ঐসব দেবতা, আর না আছে তাদের ধর্ম। কোথায় বিলুপ্ত হলো এরা? পৃথিবীর কেউ কি এদের উপাসনা করে?

ছবি: বেবিলনের বিলুপ্ত গডদের


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন