শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইসলাম ধর্মের চিন্তা চিন্তন ভারতীয়, খৃস্টান, ইহুদি আর জরথ্রুস্ট ধর্মের মিশ্রন : ৫১

বৈশ্বিক সপ্তপদি ধর্মের অষ্টপদি বিস্ময়কর ধর্মকথার সিরিজ : ২৮
:
ইসলাম ধর্মের চিন্তা চিন্তন ভারতীয়, খৃস্টান, ইহুদি আর জরথ্রুস্ট ধর্মের মিশ্রন 
:
কাবা নাকি আদি মানব হযরত আদম প্রথম দফায় নির্মাণ করেন, আর ২য় দফায় নবী ইব্রাহিম (মুসলিমদের জাতির পিতা)। নবী মুহম্মদ ফেরেস্তার মাধ্যমে জেনেছিলেন যে, কাবা হল নবী ইব্রাহিম এর বানানো প্রথম উপাসনাগৃহ। এটি এক ও অদ্বিতীয় আল্লার ঘর। তার আগে মক্কার কেউ কোনোদিন এমন কথা শুনেছিল বলে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না। ব্যাপারটাকে একটু নাড়া দিলেই দেখা যায় নবী মুহম্মদ ছাড়া দুনিয়ার আর যত নবীর কথা কোরানে বলা আছে, তাদের কেউ কোথাও মক্কা ও কাবা নিয়ে কোনো কথাই বলেন নাই। অন্য কোনো ধর্মের কেউ কাবা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়। যেমন হিন্দু, খৃস্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ, জরথ্রুস্ট, মিসরীয় ফারাও, কনফুসিয়াস, তাও, সিন্টা ইত্যাদি ধর্ম। অথচ জেরুজালেমের দখল নিয়ে রীতিমত মারামারি কাটাকাটি হয়ে গেছে। চীনের বৌদ্ধরা হিমালয় পার হয়ে ভারতে যাতায়াত করত কেবল বুদ্ধের জন্য। হিন্দুরা এখনো প্রাণ হাতে নিয়ে অমরনাথ, গোমুখ বা হিংলাজ এর মতন মারাত্মক সব তীর্থে যায়। কাবা যদি নবী ঈব্রাহিমের সময় থেকেই সকলের পবিত্র স্থান হবে তো অন্য কেউ সেদিকে ফিরেও তাকালো না কেন? বাস্তবিক মুহম্মদ এর আগে কাবা কি ধরনের উপাসনাগৃহ ছিল? 
:
কাবার প্রধান দেবতা ছিলেন আল-লাত (The MOON GOD), তাঁরই প্রভাবে ইসলামের সমস্ত নিশানে চাঁদের দেখা পাওয়া যায়। হিন্দুদের মহাদেব শিব (The Initial and ultimate GOD) এর অন্যতম নাম হল সোমনাথ। তাঁর মাথায় জটার মধ্যে একটি চাঁদ লটকানো থাকে। কাবাগৃহের সবচেয়ে পবিত্র বস্তু সেই কালো পাথর। শৈবদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র বস্তু কালো পাথরে বানানো শিবলিঙ্গ। 
: 
শেলাই বিহীন সাদা পোশাকে উপাসনা করা বৈদিক কালচার। এখনো হিন্দুরা বেদে উল্লিখিত দেবতাদের পুজোয় অংশ নিলে শেলাই বিহীন শাদা পোশাক পরে। হজ্জ আর ওমরার পোশাকও তেমনই সাদা। মক্কায় গিয়ে কাবার চাদ্দিকে সাত বার পাক দিতে হয়। এটিও বৈদিক আমলেরই প্রথা। পবিত্র বস্তুকে সম্মান জানাতে সেটিকে ডাইনে রেখে পাক দেওয়াকে প্রদক্ষিণ করা বলে। হিন্দুরা বিয়ের সময় যজ্ঞের আগুনের চাদ্দিকে সাত পাক দেয় এখনো। বিভিন্ন মন্দিরে গেলেও এমন করে থাকে। বৌদ্ধরাও একই ভাবে তাদের স্তুপের চাদ্দিকে পাক মারত, এখনো মারে ৭ বার।
:
বলতেই হয় যে ঈব্রাহিম থেকে শুরু করে মুহম্মদ এর আগে অবধি কোনো খানেই কাবা এবং মক্কাকে এক ঈশ্বরের মন্দির বলে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে কাবায় যেসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা হত তার সাথেও ঈব্রাহিম থেকে শুরু করে যীশু অবধি কারোর ধর্মের কোনো মিল পাওয়া যায় না। মিল খুঁজতে গেলে একমাত্র ভারতীয় মূর্তিপূজার সাথেই মিল দেখা যায়।
:
এবার দেখা যাক আরবের লোকেরা ইন্ডিয়া সম্পর্কে কি ভাবত মুহম্মদের ধর্মের আগে। মুহম্মদের সময়েও সেখানে প্যাগান মূর্তিপূজক পরিবারে মানুষের নাম রাখা হত হিন্দ। কাজেই সম্পর্কটা কেমন ছিল আশা করি বেশি বলার দরকার পড়বে না। মুহম্মদ উম্মে হানী নামক এক প্যাগান মহিলার বাড়ির থেকেই মাঝরাতে জীবিত অবস্থায় উড়ন্ত ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গে গেছিলেন। উম্মে হানীর আরেকটা নাম ছিল হিন্দ। উড়ন্ত ঘোড়ার রথে চড়ে জীবিত স্বর্গে যাওয়া এবং ঈশ্বরের সাথে দেখা করে আসার অবিকল গল্প আছে রামায়ণ মহাভারতে। অন্যদিকে ঈব্রাহিম বা তাঁর পরের নবীরা কোনোদিন উড়ন্ত ঘোড়ায় চড়েন নি।
:
ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে যাবার গল্প ভারতীয় ধর্মেও আছে। কিন্তু সেখানে যিনি দেখা করতে গেছিলেন তিনি ফিরে এসে দেখেন পৃথিবীতে বহুকাল কেটে গেছে। থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুসারে এটাই সবসময় হবার কথা। এই ধারণাটা নবী মুহম্মদের জন্মের অনেক আগে থেকেই ছিল।
:
বাইবেলে বর্ণিত অন্য সব নবীদের মতের ব্যাপারেও মুহম্মদের খুব পরিষ্কার জ্ঞান ছিল না। কাহিনী এবং উপদেশ গুলো মোটামুটি জানা ছিল মাত্র। ফলে কোরানের বর্ণনার সাথে সেগুলো অনেক সময়েই নিখুঁতভাবে মেলে না। কিন্তু যেখানেই এমন অমিল দেখা গেছে সেখানেই মুহম্মদ সোজা বলে দিয়েছে তার স্বপ্নে পাওয়া কথাগুলোই ঠিক আর বাইবেলের কথাগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। যেমন বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট এর মধ্যে কোথাও মরার পরের শাস্তি বা পুরষ্কারের কোনো কথাই নেই। শেষ পুস্তক দুটিতেও বলা আছে শেষ বিচারের দিনে ঈশ্বর নেমে আসবেন এবং পাপীদের ধ্বংস করবেন আর জেরুজালেমকে ধর্মভীরুদের জন্য নিরাপদ করবেন। যীশুর কথায় স্বর্গ নরক থাকলেও হূর পরী পাওয়া যায় না। মরার পরের স্বর্গ নরক ও সাথে অপ্সরা এবং স্বর্গীয় সুরার ধারণা কিন্তু মুহম্মদের সময়ে ভারতে প্রচলিত ছিল। তা ছাড়া জরথ্রুস্ট ধর্মের বেহেস্ত দোযখ, ফেরেস্তা, ভালর দেবতা আর কালোর দেবতা (শয়তান), পুলসিরাত ইত্যাদি ইসলামি ধারণা ৯০% প্রায় ইসলামি চিন্তার সাথে একদম মিলে যায়।
:
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলাম ধর্মের চিন্তা চিন্তন ভারতীয়, খৃস্টান, ইহুদি আর জরথ্রুস্ট ধর্মের নানাবিধ মিশ্রন বটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন