সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ # ১২৯

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ
 
২০১৫ পূর্ববর্তী পৃথিবী ছিল নানা আঙ্গিক ও বিচারে বিপদজনক ও চরম ঝুকিপূর্ণ। মনুষ্য সৃষ্ট ছোট খাটো বিপদ, যুদ্ধ বিগ্রহের কথা বাদ দিলেও, প্রকৃতির নির্মমতা ও ভয়াবহতা ছিল মানুষের শান্তিপূর্ণ বেঁচে থাকার জন্য চরম অন্তরায়। পদে পদে মানুষকে মোকাবেলা করতে হতো প্রকৃতির নির্দয়তা আর নিষ্ঠুরতাকে। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও পরকালীন ‘শাস্তির’ ভয়ে প্রকৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পেতো মানুষ। সমাজ ও ধর্মও দিতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষেনানা বাঁধা। আজকের ৩০১৫ সনের মানুষ যেখানে বর্ণিত সময়ের প্রকৃতির নির্মমতাকে জয় করেছে প্রায় ১০০% সাফল্যের সঙ্গে, সেখানে ২০১৫ সন পূর্ববর্তী মানুষকে প্রকৃতি কিভাবে দমিয়ে রাখতো ও দাপিয়ে বেড়াতো, চলুন হাজার বছর পেছনের ‘প্রকৃতি ভার্সাস মানুষের বাঁচার সংগ্রামে’র মর্মষ্পশী চিত্রগাঁথায়!

ঐ সময়ের পৃথিবীতে আকষ্মিক বন্যা, খরা, ঘুর্ণীঝড়, সুনামী, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তুষারঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তুষারপাত, নদী ও সমুদ্র ভাঙন, উল্কাপাত, তাপমাত্রার বৃদ্ধি ও হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোত, দাবানল, বায়ু প্রবাহ, মহাকাশের ক্ষতিকর রশ্মি, ভূমিকম্প ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যায় মানুষ সব সময় চিন্তাক্লিষ্ট থাকতো। আজকের ৩০১৫ সনের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রক ‘বৌদ্ধিক’ মানুষের মতো ঐ সময়ের মানুষ জানতো না, কিভাবে বর্ণিত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে সে। যে কারণে বিশেষ সময়ে কিংবা হঠাৎ করে প্রচুর পানির প্লাবনে পৃথিবীর নিম্নভূমির দেশগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যেত। দিনের পর দিন কিংবা রাতের পর রাত প্রচুর বৃষ্টিপাতে পৃথিবীর কোথাও বন্যার সৃষ্টি হতো, আবার পৃথিবীর অপর ভাগে কিংবা অন্যত্র প্রকট খরায় সামান্য বৃষ্টিপাত কিংবা জলের জন্যে মানুষ ও অন্য প্রাণির হাহাকার তথা আহাজারী চলতো। ঐ সময়ের নির্বোধ মানুষ বর্ণিত অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্যে কোন বাস্তব পদক্ষেপের পরিবর্তে, তাদের নিজ নিজ ধর্মানুযায়ী ‘অলৌকিক শক্তির’ কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া বর্ণিত অবস্থা প্রতিরোধে তেমন কিছুই করতে পারতো না। মানুষের নানাবিধ প্রার্থনায় কোন কাজই হতোনা, প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ চলতেই থাকতো অব্যাহত ধারায়। আবার বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করে কালবৈশাখী, হ্যারিকেন, সুনামী কিংবা ভিন্ন ভিন্ন নামে ঘুর্ণীঝড় সৃষ্টি হয়ে মানুষের জীবনকে বিপন্ন তথা লণ্ঠভণ্ঠ করে দিতো মুহূর্তে। মানুষ কিছুই করতে পারতো না কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া। প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলে এরূপ ঘুর্ণীঝড় ও বন্যা 

একটি নিয়মিত ব্যাপার ছিল। এ জন্যে ঐ অঞ্চলের বাঙলাভাষিক মানুষগুলো কখনো মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারতো না ঐ সময়ের পৃথিবীতে, কারণ একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ দেশটিতে লেগেই থাকতো প্রায় সারাবছর। এরূপ দুর্যোগ হলেই বাংলাদেশ পৃথিবীর ঐ সময়ের তুলনামূলক ‘উন্নত’ (যদিও বর্তমানের তুলনায় ঐ সময়ে পৃথিবীতে কোন উন্নত দেশই ছিলনা) দেশগুলোর কাছে আর্থিক, খাদ্য ও প্রকৌশলগত সাহায্য চাইতো। যদিও বাংলাদেশ অঞ্চলে তুষারঝড় বা তুষারপাত খুব একটা হতো না, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে বিশেষ করে তৎকালীন আমেরিকা, কানাডা, গ্রীনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, চিলি প্রভৃতি দেশকে মোকাবেলা করতে হতো তুষার বিষয়ক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পৃথিবীর ঐ সময়ের মানুষ সিজন বা মৌসুমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না বলে ‘শীত’ নামক মৌসুমে পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে প্রচুর ‘তুষারপাত’ হতো। যাতে চলাচলের রাস্তাঘাট ও মানুষের জীবনের চলমানতা অনেকটা স্তব্দ হয়ে যেত। এমনকি রাস্তা চলাচল উপযোগী রাখার জন্যে উত্তর গোলার্ধের দেশ গুলোতে রাস্তায় ‘লবণ’ শ্রেণির বিশেষ রাসায়নিক ছিটানো হতো। আবার ‘গ্রীস্ম’ নামক সিজনে বর্ণিত অঞ্চলের তুষার গলে প্রচুর পানি ভাটি অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করতো নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে।

পৃথিবীতে ঐ সময়ে নিয়ন্ত্রণহীন বড় বড় সমুদ্র থাকাতে সমুদ্র তলদেশে প্রায়ই প্রচুর ঝড় ও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতো। মানুষের অবোধ্য এই ভূমিকম্প মানে হচ্ছে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিতে মানুষের বসবাসের স্থানগুলোতে বিনষ্ট ও একাকার করা। ভূমিকম্পে নানাবিধ ক্ষতির পরপরই শুরু হতো সুনামী ও জলোচ্ছ্বাস। জলোচ্ছ্বাস মানে হচ্ছে জলের উচ্ছ্বাস বা আনন্দ অর্থাৎ মানুষকে হত্যা ও ধ্বংসের জন্যে সমুদ্র জলেরা প্রচন্ড আক্রোশে মানুষের আবাসে আঘাত করে তার জীবনযাত্রা লন্ডভন্ড তথা তছনছ করে দিতো। লক্ষ ক্ষ মানুষ নানা উপায়ে মৃত্যুবরণ ছাড়াও, মানুষের গড়া সভ্যতা বর্ণিত সুনামী ও জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিতো। বর্তমান সভ্যতার পত্রিকা ‘আরকাইভে’ রক্ষিত ঐ সময়ের বিবিধ ভাষার পত্রিকা থেকে জানা যায়, ২০১১ সনের ১১-১২ মার্চের মারাত্মক ভূমিকম্প ও সুনামীতে বর্তমান N0085Z কোডধারী তথা প্রাক্তন ‘জাপান’ দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলে ব্যাপক মানুষের জীবনহানী ছাড়াও, মানুষের বসতি তথা ঘরবাড়ি ও সম্পদের সমূহ ক্ষতি হয়।

যদিও ঐ সময়ের জাপান দেশটি বিচ্ছিন্ন আলাদা কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি ও প্রযুক্তিতে তারা বেশ ‘উন্নত’ ছিল। কিন্তু ঐ সময়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে জানতো না বলে, ‘উন্নত’ জাপানের প্রযুক্তি ভূকম্পন ও সুনামীর সময় তেমন কোন কাজেই আসেনি। এমনকি পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে বর্ণিত সুনামী ও জলোচ্ছ্বাসে ঐ সময়ের জাপানের মানুষের ব্যবহার্য যান তথা গাড়ি, জলযান, ট্রেন, বাড়ি, খাদ্য, আসবাবপত্র, মানুষ ইত্যাদি তৃণখন্ডের মত ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও, মানুষ অসহায়ভাবে তা দেখা ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারেনি। বরং আরো কোন সুনামী হতে পারে (হবে কিংবা হবে না এমন ভবিষ্যতবাণী মানুষ ঐ সময় করতে পারতো না) এই দুশ্চিন্তায়, সারারাত খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে জীবন কিংবা মৃত্যুর জন্যে। আবার বর্ণিত সুনামির পর পরই জাপানের ঐ সময়ের ‘সেকেলে’ বিদ্যুৎ উৎপাদান কেন্দ্র, যাকে ফুকুসিমা পারমাণবিক কেন্দ্র হিসেবে তখনকার বিশ্ব অত্যাধুনিক মনে করতো, তাতে বিষ্ফোরণ ঘটে কিন্তু বর্তমানের মতো প্রযুক্তিজ্ঞান ঐ সময়ের ‘উন্নত’ জাপানীদের কাছে না থাকাতে, তারা বিষ্ফোরণ দমন কিংবা তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেওে, অসহায়ের মতো বর্ণিত এলাকার মানুষগুলোকে কেবল সরিয়ে নেয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন