সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা-৫ম পর্ব # ১৩৩

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৫ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ৫
২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা-৫ম পর্ব

আজকের আমাদের ‘প্রাক্তন পত্রিকা আর্কাইভ’-এ রক্ষিত ঐ সময়ের কিছু পত্রিকা থেকে জানা যায়, প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের এক নাগরিক ঐ সময়ের তেলসমৃদ্ধ দেশ ‘সৌদি আরবে’ (যার বর্তমান কোড অঞ্চল N0080Z) গমনের জন্যে ঐ সময়ের ‘বিপদজনক আকাশযান’ বিমানের চাকায় লুকিয়ে ভ্রমণকালে, তার কাছে আধুনিক ‘বডি এডজাস্টমেন্ট সিস্টেম’ এবং অক্সিজেন আর তাপ গ্রহণ-বর্জন যন্ত্র না থাকাতে, আকাশে তার মৃত্যু হয় এবং ঐ দেশের জেদ্দা বিমানবন্দরের রানওয়েতে সে পড়ে যায়। এ ছাড়াও প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলের অধিবাসীরা বর্ণিত সৌদি আরবে যাওয়ার আরেকটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতো ‘হজ্ব’ ও ‘ওমরা’ নামক পবিত্র ধর্মীয় উপাসনার ভিসা। ‘হজ্ব’ বলতে ঐ সময়ের সৌদি আরবের অধিবাসী ও অন্য অঞ্চলের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র একটি ধর্মীয় গৃহ যাকে মুসলমানগণ পবিত্র ‘কাবাঘর’ বলতো ঐ পবিত্র ঘরকে ৭-বার প্রদক্ষিণ, সাফা-মারওয়া নামক ছোট দু’টো পবিত্র পাহাড়ে ৭-বার ‘সাঈ’ তথা আসা যাওয়া, বছরের বিশেষ একটি দিনে ‘আরাফাত’ নামক একটি পবিত্র মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান, পরবর্তীতে ‘মুজদালেফা’ নামক অপর একটি ঐতিহাসিক স্থানে একরাত অবস্থান, ‘মিনা’ নামক পবিত্র মাঠ-স্থানে অবস্থান করে ‘শয়তান’ নামক ‘মানুষকে কুপথে প্ররোচনাকারী’ এক অশরীরী শত্রুর বিনাশে বেশ কয়েকবার পাথর নিক্ষেপ, বিশেষ শ্রেণির পশুকে পবিত্র ‘কোরবানী’ এবং সবশেষে নিজ মাথার চুল মুন্ডন করাকে বোঝোনো হত। ‘ওমরা’ বলতে কেবল প্রথম পর্বের বর্ণিত কাজ, মানে পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ ও সাফা-মারোয়ায় যাওয়া আসা বোঝানো হতো। এটি করা ধনবান মূসলিমদের জন্যে বাধ্যতামূলক ছিল।

প্রবেশের অন্য কোন পথ না পেয়ে প্রাক্তন বাংলাদেশের অদক্ষ-অশিক্ষিত অধিকাংশ দরিদ্র অভাবী মানুষ বর্ণিত পবিত্র ‘ওমরা’ বা ‘হজ্ব’ ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করতো। কিন্তু হজ্ব ও ওমরার নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পরও খাদ্য ও কাজের সন্ধানে কেউ কেউ সেখানে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করতো নিজ পরিবার আর সন্তানের ভরণ পোষণের স্বপ্নে। এরূপ অবস্থানকে সৌদি সরকার বলতো ‘‘অবৈধ বসবাসকারী’, যদিও দেশটির রাজা বা শাসকগণও ছিল নানামাপকাঠি ও বিচারে ‘অবৈধ’ কিন্তু নিজেদের তারা ‘অবৈধ’ বলতো না। এই অবৈধ ক্ষমতাহীন লোকদের ধরে শাসকদের পেটোয়া ‘সোরতা’ মানে পুলিশ বাহিনী মারধর করতো, জেলে পুরে রাখতো এবং সৌদি আকাশযানে এক কাপড়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতো। বাংলাদেশে বিমানবন্দরে নামলেই বেশভুষা ও চেহারা সুরতে ‘ওমরা ফেরত’ যাত্রীদের বোঝা যেত। এদের কাউকে বাংলাদেশ সরকার ছেড়ে দিত, আবার কাউকে অবৈধ ভ্রমণের দায়ে ঐসব দেশ থেকে প্রেরিত ‘মামলার’ ভিত্তিতে গ্রেফতার করতো। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে, অন্য দেশের কথিত অভিযোগে বাংলাদেশের মানুষ অনন্তর জেল খাটতো ও কোর্ট কাচারীতে নিয়মিত হাজিরা দিত। এভাবে এ অঞ্চলের শোষিত মানুষের দিন চলতো নানাবিধ শোষণ আর বঞ্চনার মধ্যে।

কোন কোন মানুষকে শ্রমদাস কিংবা ভূমিদাস হিসেবে মানুষ ব্যবহার করতো। ২০১৫ সনেরও বেশ আগে পৃথিবীর সর্বত্র মানুষ দাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঐ সময় মানুষে মানুষে যুদ্ধ লাগতো এবং বিজয়ীরা পরাজিতদের হয় হত্যা করতো কিংবা কৃতদাস বানাতো। কৃতদাসদের কোন অধিকার ছিল না। তাদেরকে দিয়ে বন্যপ্রাণি তথা পশুর মত দিনরাত কাজ করাতো। ঐ সময়ের নিয়মানুসারে বাঁচার জন্যে তাদের খুব কম খাবার দেয়া হতো। কেউ কেউ অনন্ত কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে আত্মহত্যা তথা মৃত্যু কামনা করতো। কিন্তু ঐ সময়ের আইনে নিজের মৃত্যুও নিজে ঘটাতে পারতো না, এটিও ছিল একটি সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ! নিজেকে হত্যার চেষ্টা করে কেউ বেঁচেগেলে আইনের চোখে সে অপরাধী হতো এবং তাকে প্রথা অনুসারে শাস্তি প্রদান করা হতো। 

৩০১৫ সনের বর্তমান পৃথিবীর ‘প্রাক্তন পত্রিকা আর্কাইভ’-এ রক্ষিত ঐ সময়ের বাংলাদেশ অঞ্চলের বিলুপ্ত প্রাচীন বাংলা ভাষায় প্রকাশিত কিছু পত্রিকা থেকে জানা যায়, বর্তমান বিলুপ্ত বাংলাদেশ অঞ্চলে ‘গৃহ’ নির্মাণের জন্যে প্রাথমিক ‘কাচামাল’ হিসেবে এক প্রকার ‘ইট’ ব্যবহৃত হতো, বর্ণিত ইট প্রস্তুত হতো এমন ফ্যাক্টরীর নাম ছিল ‘ইটের ভাটা’। ঐরূপ ইটের ভাটায় ২০১১ সনেও কমপক্ষে ৩০-জন কৃতদাসরূপী মানুষ হাতে পায়ে শিকল লাগানো ‘শ্রমদাস’ ছিল। এ ছাড়া ঐ সময়ের বাংলাদেশের রাজধানী শহরের ‘কামরাঙ্গীরচর নামক’ এলাকায় ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ নামক একটি পেশায় নিযুক্তির জন্যে সুস্থ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুদের নানা উপায়ে বিকলাঙ্গ করা হতো। আর ভিক্ষাবৃত্তি ছিল সমাজে কোন কাজ না করে মানুষের করুণা প্রার্থনা করে কোনভাবে ‘বেঁচে থাকার নাম’। ঐ সময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত ভয়াবহ ও অত্যাশ্চর্য ঐসব ঘটনা জেনে আজকের থার্মোনিউক্লিয়ার রিএ্যাকটর চালনে সক্ষম ৭৮ বির্বতেনের ৮ম প্রজাতির ৫ম পর্যায়ের চমৎকার ফটোসেলের অন্ধকার বিদারী চোখ সমৃদ্ধ ৩০১৫ সনের যে কোন আধুনিক মানুষ, ২০১৫ সনের মানুষদের আদিমতা ও বর্বরতার চিত্রে বিস্ময়াভিভূত হবে! ২০১৩ সন পূববর্তী এ আদিম মানুষের বুদ্ধিহীনতা, অসহায়ত্ব ও জীবনধারা চিন্তা করে আজকের প্রজন্মের মানুষের আফসোসের অন্ত নেই! বর্তমান একত্রিশ শতকের মানুষ চিন্তা করছে, ঐ সময়ে কষ্টকর জীবনযাপন করে কেবল ধর্মীয় অলীক প্রতিশ্রুতিকে সত্য ভেবে যারা জড়পদার্থ হয়ে মিশে গেছে পৃথিবীর মাটিতে, তাদের জীবনকে কিছুটা পূর্ণতা দিতে তাদের ক্লোন করে একত্রিশ শতকের সুন্দর, আনন্দঘন পৃথিবীতে কিছুদিনের জন্যে হলেও তাদের পুনর্জীবন দেয়া হবে, যদি না তাদের পুন. সৃষ্টির কারণে বর্তমান একত্রিশ শতকের পৃথিবীর ভারসাম্যের বিঘ্ন না ঘটে!

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন