রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইসলামের ইতিহাস কত অজানারে ! # ৮৩

ইহুদিদের থেকে ফায় (বিনাযুদ্ধে প্রাপ্ত) হিসেবে প্রাপ্ত ফদখ থেজুর বাগানের ধারাবাহিক ইতিহাস

‘ফদখ’ বাগান ও নবী কন্যা ফাতেমা ও নবী শ্বশুর আবুবকর দ্বন্দ্ব :

ফাতেমা ও আলীর প্রতি আয়েশা এ জন্যে বিদ্বেষ পোষণ করতেন যে, নারী জাতির মধ্যে ফাতেমাকে নবী মযার্দাশীল ঘোষণা করেছিলেন; নবী ফাতেমার আগমনের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতেন; হাসান-হোসাইনকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। নবীর মৃত্যুর পর আবুবকরের মাধ্যমে আয়েশা তার প্রতিফলন দেখান।

‘ফদক’ ছিল হিজাজের ইহুদীদের "শমরুখ দূর্গ" দ্বারা সংরক্ষিত বাগান। নবীর সাধারণ ক্ষমার আওতায় ‘ফায়’ হিসেবে প্রাপ্ত এ বাগানটির মালাকানা ইহুদী থেকে নবীর কাছে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে এককভাবে আসে। ওমরও মনে করতেন, এটা নবীর ব্যক্তিগত সম্পদ। যখন কোরানের আয়াত ‘‘নিকটবর্তী আত্মীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও’’ নাজিল হয়েছিল, তখন নবী ফাতেমাকে ‘ফদক’ বাগান দান করেছিলেন বলে ফাতেমা জানান।

নবীর মৃত্যুর পর ফাতেমা তার ‘দখলে থাকা’ ফদখের দাবী উপস্থাপন করলে ‘‘নবীদের কোন ওয়ারিশ থাকেনা’’ ঘোষণা করে আবুবকর নবীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তা রাষ্ট্রায়ত্ব করেন, যদিও কোরানের মতে ‘‘সোলায়মান ছিল দাউদের উত্তরাধিকারী’’ (Quran - ২৭:১৬)। দানের কথা উঠলে আবুবকর ফাতেমাকে স্বাক্ষী আনতে বলেন। আলী নিজে ও নবীর পিতার আমলের দাসী উম্মে আইমন (যায়েদের স্ত্রী ও উসামার মা। নবী যাকে নিজ মায়ের মৃত্যুর পর তঁার ‘মা’ ও জান্নাতবাসী বলেছিলেন) ফাতেমার দানের স্বপক্ষে স্বাক্ষী দিলেও, আবুবকর উম্মে আইমনের পরিবর্তে অন্য কোন স্বাক্ষী আনতে বলেন। নবীর গোলাম রাবাহ ও হাসান-হোসাইন স্বাক্ষী দিলে রাবাহর স্বাক্ষী দাস হওয়ার কারণে ও হোসান-হোসাইনের স্বাক্ষী নাবালক হওয়ার কারণে অগ্রাহ্য হয় (সূত্র : Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi, পৃ.৩৪১-৬)।

ফাতেমার ‘ফদক’ বাগানের দাবী আবুবকর কর্তৃক মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যাত হলে, ফাতেমা অছিয়ত করেন, ‘‘তারা কেউ যেন তাঁর দাফনকালে উপস্থিত না থাকে’’ (পৃ.২৬০,সূত্র : Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi)।

এ বিষয়ক হাদিস : ফাতিমা দারিদ্র্যহেতু মীরাসসূত্রে নবীর ফদখ ও খায়বরের বাগানের এক-পঞ্চমাংস দাবী করলে খলিফা আবুবকর তাকে জানান যে, নবীদের সম্পদের কোন উত্তরাধিকারী হয়না। যে কারণে ফাতিমা আবুকরের সাথে কখনো দেখা করেননি ও তার জানাযাও তাকে পড়তে নিষেধ করেছিলেন (বুখারী-৩৪৩৭)। নবী বলেছিলেন ফাতিমা আমার দেহেরই একটি টুকরা, যে তাকে রাগান্বিত করে সে আমাকেই রাগান্বিত করলো (বুখারী-৩৪৩৮)। আলী আবু জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রস্ত্ততি নিলে নবী মন্তব্য করেন, ‘‘ফাতিমা আমার দেহেরই টুকরা, রসুলের মেয়ে ও আললাহর দুশমনের মেয়ে এক লোকের স্ত্রী-রূপে একত্রে বসবাস করতে পারেনা’’। মন্তব্যের পর আলী প্রস্তাবিত বিয়ে বাতিল করেন (বুখারী-৩৪৫০)। নবী বলেছেন, ফাতেমা ইমানদার নারীদের নেত্রী (বুখারী-৫৮৪২), ফাতেমা জান্নাতী সকল নারীদের নেত্রী ও হাসান-হোসাইন জান্নাতী যুবকদের নেতা হবে (তিরমিযী)। আলীপুত্র হাসানের সঙ্গে নবীর চেহারার মিল ছিল (তিরমিযী-৩৭১৫), নবী বলেছিলেন মাহদী আমার ঔরসজাত ফাতিমার বংশ থেকে হবে (আবু দাউদ-৪২৩৫)। দুঃখে ফাতেমা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনদিন আবুবকরের সাথে কথা বলেননি। ফাতেমার মৃত্যু হলে আয়েশা ছাড়া রাসুলের সকল স্ত্রীগণ ফাতেমার ঘরে গিয়েছিলেন (পৃ.১৮০,সূত্র : Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi)। মৃত্যুর পর আলী আবুবকরকে খবর না দিয়ে আববাস ইবনে আ. মুত্তালিব ও তঁার পুত্র ফজলকে সাথে নিয়ে রাতেই ফাতেমাকে দাফন করেন (পৃ.৩৪৬,সূত্র : Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi,)।

ওমরের শাসনামলে তিনি নবীর উত্তরাধিকের ‘ফদক’ ফিরিয়ে দেন। ওসমানের আমলে ওসমান চাচাতো ভাই মারোয়ান ইবনে হাকামকে ‘ফদখ’ দিয়েছিলেন। মুয়াবিয়ার শাসনামলে সে নিজে মারোয়ানের সঙ্গে ‘ফদখে’র অংশীদার হন। উমর ইবনে আব্দাল আজিজ তার শাসনামলে ফাতেমার বংশধরদের ‘ফদখ’ ছেড়ে দেন। ইয়াজিদ খলিফা হলে ফাতেমার সন্তানদের থেকে ‘ফদখ’ দখল করেন। আবুল আববাস খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের পুন. ‘ফদখ’ ফিরিয়ে দেন। আবু জাফর খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের থেকে আবার ‘ফদখ’ দখলে নেন। মুহম্মদ মাহদী খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের ‘ফদখ’ ফিরিয়ে দেন। মুসা হাদী ও হারুন উর রশিদ খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের থেকে ‘ফদখ’ আবার দখলে নেন। মামুন খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের আবার ‘ফদখ’ ফিরিয়ে দেন। জাফর আল মুতাওয়াক্কিল খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের থেকে ‘ফদখ’ দখলে নেন। মুনতাসির খলিফা হলে আবার ফাতেমার বংশধরদের ‘ফদখ’ ফিরিয়ে দেন। মুকতাফি খলিফা হলে ফাতেমার বংশধরদের থেকে ‘ফদখ’ দখলে নেন। মুখতাদির খলিফা হলে পুন. ফাতেমার বংশধরদের ‘ফদখ’ ফিরিয়ে দেন। এরপরের ‘ফদখে’র ইতিহাস আর জানা যায়নি (সূত্র : Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi, পৃ.৩৪৬-৫১,)।

1 টি মন্তব্য:

  1. তথ্যসূত্র রূপে Nahjul Balagha, Allamah ash-Sharif ar-Radi কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো Allamah ash-Sharif ar-Radi এর গ্রন্থে কি সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে। আমি জানতে চাই এ ঘটনা বর্ণনার আদি সূত্র কি।

    উত্তরমুছুন