শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৪ সনের প্রথম দিনে ইহুদী-মুসলিম শান্তিচুক্তি-২ # ৭৮



২০১৪ সনের প্রথম দিনে ইহুদী-মুসলিম শান্তিচুক্তি 
[ইহুদি মুসলিম কনফ্লিক্ট ও সমাধান বিষয়ক বড় আর্টিকেল] পার্ট-২
বড় হওয়ার কারণে ২ পর্বে ভাগ করা হলো
ফিলিস্তিনি এটোর্নীর প্রথম পর্বের বক্তব্য শেষে ইসরাইলী এটোর্নী ড. ইসরাইল ওয়েলফিন্সন ঝরঝরে অনাবিলতায় তার সূচনা বক্তব্যে বলেন-

নবী ইয়াকুবের অপর নাম ছিল ইসরাইল এর অর্থ ‘আল্লাহর বান্দা’। ইয়াকুবের সস্তানরাই বনী-ইসরাইল। ইয়াহুদীরা তাওরাত পাঠের সময় দুলতে থাকে বিধায় এদের ‘ইয়াহুদ’ বলে। ইয়াকুব কেনান তথা ফিলিস্তিনে বসবাস করতেন। ইয়াকুবের ১২-ছেলের ১-ছেলের নাম ইয়াহুদা হিসেবে ‘ইহুদী’ শব্দটি আসে। ফেরাউন থেকে মুক্তিদাতা হিসেবে নবী মুসাকে বনী ইসরাইলীদের ভেতরে প্রেরণ করা হয় ও তাঁরা ফিলিস্তিনে ফিরে আসে। ইহুদীরা বেহেস্তী খাবার পেতো ও সরাসরি ঈশ্বর থেকে বাণী পেয়েছে তারা। ‘তোরাহ’ মতে স্বয়ং যিহোভা এই দেশকে দান করেছেন ইহুদীদের জন্যে। কেনান ছিল ইহুদীদের আল্লাহ প্রতিশ্রুত দেশ। ১০৯৫-৯৭৫ খ্রী.পূর্বে ইহুদীরা এখানে তাদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। নবী দাউদ ও সোলায়মানের আমলে ইহুদীরা হেবরন ও জেরুজালেম রাজধানী স্থাপন করেছিল। গড বা যিহোভা ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাওরাতে। নবীর নামে রাখা ‘ইসরাইল’ হচ্ছে ইহুদী ধর্মের ইতিহাস ও সভ্যতার সুতিকাগার। জেরুজালেমে মুসার আমলেই ইহুদী রাজত্ব ছিল। তা ছাড়া নাজারেথ ও বেথেলহামে মুসলমানদের অধিকার ছিল কি কখনো? আমাদের নবী মোজেস বনি ইসরাইলীদের মিশর থেকে ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যেই বের করেছিলেন। আধুনিক হিব্রু ও আরবি ইসরাইলী রাষ্ট্রের সরকারি ভাষা। হিটলারের গণহত্যা কি সমর্থন যোগ্য? নিজ রাষ্ট্র না থাকাতে তারা আমাদেরকে হত্যা করেছিল। অধিকাংশ ইহুদী ফিলিস্তিনে এসে জমি কিনে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করেছিল। জলাভূমি ভরাট করে ইহুদীরা তেলআবিব শহর গড়ে তোলে। হাজার বছর পর পাওয়া জন্মভূমি আমরা ছাড়বো আবার? বর্তমান ইহুদীদের অপরাধ কি? ইউরোপে হিটলার ও খ্রীস্টানরাও ইহুদীদের হাজার বছর ধরে নির্যাতন করে। মুসলমানরা শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে কি ইহুদী রাষ্ট্র বিদ্বেষী হবে? ১৮৭৮-সনে প্যালেস্টাইনে ৪,৬২,৪৬৫ জন মুসলমান, খ্রীস্টান ও ইহুদীরা একত্রে বসবাস করতো। তাহলে এখন সমস্যা কোথায়?

১৯৪৮ সনে হাজার বছর পর যিহোভা প্রতিশ্রুত দেশে ইহুদীরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে মুসলমানরা তা মেনে না নিয়ে ১৫-মে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, জর্দান একত্রে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে নামে। ১৯৭২ সনে মিউনিখ অলিম্পিকে ফিলিস্তিনিরা ইহুদী প্রতিযোগিকে হত্যা করে। তারা ভূমধ্যসাগরে ‘আকিলে লারু’ জাহাজটি দখল করে মার্কিন ইহুদীদের হত্যা করে। ১৯৯৩ সনে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৭-তে ফিলিস্তিনিরা ‘ইন্তিফাদা’ আন্দোলন শুরু করে। ফিলিস্তিনিরা আত্মঘাতী গেরিলা আক্রমণ চালাতে থাকে ইহুদীদের উপর। ১৯৮১-মিশরের আনোয়ার সা’দাত শান্তিচুক্তি করে সিনাই ফিরে পান কিন্তু শান্তি চুক্তির কারণে তাকে হত্যা করা হয়। এখন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে ইহুদীদের শক্ত রাজনৈতিক শক্তি বিদ্যমান। বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় আড়াই লাখ শক্তিশালী ইহুদীর বসবাস। বৃটিশ পার্লামেন্টেও কমপক্ষে দেড়শো ইহুদী সদস্য বর্তমান। আমেরিকার আইপ্যাক শক্তিশালী ইহুদী লবিং গ্রুপ। আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে্ বিচার, আইন ও শক্তিশালী নিবার্হী বিভাগ বর্তমান। ছোট্ট দেশটিতে ‘নেগেভ’ নামে মরুভূমি বিদ্যমান এখনও। লোহিত সাগরে যেতে আছে মাত্র এক চিলতে সরু পথ। ইসরাইল এখন পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশ। আমাদের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বিশ্বখ্যাত। প্রায় সকল মুসলিম দেশগুলোতে প্রবল ইহুদী বিদ্বেষী মনোভাব বিদ্যমান। আমরা বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ, যদিও বাংলাদেশ তা প্রত্যাখান করে। আমরা জেরুজালেমে মুসলমানদের যাওয়া নিষিদ্ধ করিনি কিন্তু আমাদের প্রাক্তন পিতৃভূমি মদীনা নিজ জন্মভূমিতে ইহুদীরা কি যেতে পারে? তোরাহ-এর ভাষা হিব্রু। আমরা ‘এলিয়েজের বিন ইয়েহাদা’ নামক রুশ ইহুদীর প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত হিব্রু ভাষাকে ইসরাইলে চালু করেছি, যদিও আমাদের অনেকের মুখের ভাষা তখন ছিল আরবী, রুশ, ইউরোপীয় নানা মিশ্র ভাষা। এভাবে তিনি মৃত হিব্রু ভাষাকে আবার জীবন্ত ভাষায় পরিণত করেছেন। ১৯২২-সনে হিব্রু বৃটিশ পার্লামেন্টের সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়। ইসরাইলী সরকারি ভাষা হচ্ছে হিব্রু, আরবি ও ইংরেজি। সরকারি স্কুলগুলোতে হিব্রু বা আরবি ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। আমরা পৃথিবীতে অনেক আবিস্কারের জনক ও মুসলমানদের তুলনায় অনেক বেশি নোবেল পুরস্কার জয় করেছি। আমাদের ১০০% ইহুদী শিক্ষিত, ধর্মপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক। এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের অবকাশ রাখে আমরা কি রকম পরিশ্রমী ও কার্যক্ষম জাতি!
ধর্মীয় ব্যাপারে ইহুদীদের সাথে মুসলমানের সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য দৃশ্যমান। ইহুদীরা খাতনা করে, টুপি-দাঁড়ি রাখে, শুকর খায়না, চুরিতে হাত-কাটা, পাথর মেরে হত্যা সবই তাওরাতে বিদ্যমান। ইহুদীদের সিনাগাগে কারো মূর্তি থাকেনা। ২-গ্রুপই নিরাকার ইশ্বরের উপাসনা করে। কিন্তু তারপরও মুসলমানদের সঙ্গেই আমাদের চির বিবাদ কেন? জুরি বোর্ডকে অনুরোধ করবো এই বিদ্বেষ ও বিবাদের উৎস বের করতে। মুসলমানদের কাছে বর্তমানে পবিত্র শহর মদিনায় ৩-টি ইহুদী গোত্র ছিল বনু নজির, বনু কাইনুকা ও বনু কুরাইজা, যারা খ্রীস্টীয় ১ম শতাব্দী থেকে মদিনায় বসবাস করতো। তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয় কিভাবে তা আমি উদাহরণ হিসেবে মুসলমানদের হাদিস গ্রন্থ থেকেই উলেস্নখ করছি। আশা করি জুরি বোর্ড নিচের হাদিসগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আমাদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী কি-

‘‘মুসলমানদের হাতে ইহুদীদের চূড়ান্ত পরাজয় বা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। যুদ্ধের চূড়ান্তপর্বে মুসলমানদের ভয়ে ইহুদীরা পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলেও, সকল গাছ ও পাথর বলে দেবে ‘আমার মধ্যে ইহুদী লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা কর’ কেবল কাঁটাযুক্ত ‘গারকাদ’ গাছ ছাড়া, কারণ গারকাদ ছিল ‘ইহুদীদের গাছ’ (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন)। ইহুদীদের বসতি ‘খাইবার’ মুসলমান কর্তৃক জয় করার পর, বিধি অনুসারে সেখানের ইহুদী ভূমি আল্লাহ, তাঁর রসুল ও মুসলমানদের হয়ে যায়। মুসলমানদের নবী ঐ জমি বর্ণিত ইহুদীদের কাছেই অর্ধেক ভাগ-চাষে বর্গা দেন এবং শেষ পর্যন্ত খলিফা উমর ‘নিজ জমিতে বর্গাচাষী’ ইহুদীদেরকে সিরিয়ার তাইমা ও আরীহায় বহিষ্কার করেন (বুখারী-২১৭০)। খায়বরের খবর শুনে ফদখের ইহুদীরা খায়বরের শর্তে [জীবন রক্ষার্থে ভাগ চাষে] আত্মসমর্পণ করে (দাউদ-৩০০৬), ইহুদীদের ৪০,০০০ খেজুর গাছ সমৃদ্ধ ‘কুতায়বা’কে শক্তি প্রয়োগে দখল করা হয় (দাউদ-৩০০৭), নানা ঘটনার প্রেক্ষেতে ইহুদী বনু নযীর গোত্র এইমর্মে মুসলমানদের নবীকে প্রসস্তাব দেয় যে, ৩০-জন ইহুদী ও ৩০-জন মুসলমান আলেম ধর্মীয় ব্যাপারে বসে সত্যাসত্যা নির্ধারণ করবে। ৩০-ইহুদী আলেম মুহম্মদকে ‘নবী’ হিসেবে মানলে, ইহুদী গোত্র প্রধানসহ সবাই মুসলমান হবে। কিন্তু পরদিন নবী তাদের দূর্গ আক্রমন ও অবরোধ করেন এবং তাদেরকে অঙ্গীকার করতে বলেন। ইহুদীরা অঙ্গীকারে অস্বীকৃতি জানালে মুসলমানরা যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। পরদিন বনু নযীর গোত্রকে অব্যহিত দিয়ে, মুসলমানরা বনু কুরায়যার উপর আক্রমন করে।

বনু কুরায়যা মুসলমানদের নবীর সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে, নবী কুরায়যাকে ছেড়ে বনু নযীরকে পুন. আক্রমন করেন। বনু নযীরের লোকেরা ‘ইহুদী ধর্মপ্রেমে’ বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করে ও বনু নযীরের খেজুর বাগান মুসলমানদের দখলে যায় (দাউদ-২৯৯৪), পরবর্তীতে মতবিরোধের কারণে বনু কুরায়যার সাথে মুসলমানদের আবার যুদ্ধ লাগে এবং যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে ইহুদী পুরষদের হত্যা, মহিলা+শিশু+মালামাল মুসলমানদের মধ্যে গনিমাতের মাল হিসেবে বন্টন করা হয় (দাউদ-২৯৯৫)। মুসলমানদের নবী বলেন, ইহুদী ও নাসারাদের আরব থেকে বের করে দেব, এখানে মুসলিম ছাড়া কেউ থাকবে না (দাউদ-৩০২০), ওমর নাজরান ও ফিদকের ইহুদীদের আরব ভূমি থেকে বহিস্কার করেন (দাউদ-৩০২৪), নবী বলেন, আরব উপদ্বীপ থেকে ইহুদী-নাসারাদের অবশ্যই বের করে দিব (তিরমিযী-১৫৫৪), নবী নুযায়ের গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন (বোখারী-২৭৯৯), মুসলমানদের নবী বনু নাযীর গোত্রের খেজুর বাগানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন (তিরমিযী-১৪৯৪), খায়বর বিজয়ের পূর্বে মুসলমানগণ পেট পুরে খেতে পারতো না (বুখারী-৩৯১৫), দীর্ঘ অবরোধের পর দুর্গদ্বার খোলা হলে ইহুদী বনী কুরাইযা গোত্রের যুদ্ধ সক্ষম পুরুষদের হত্যা ও গোত্রের শিশু+নারীদের গণিমাত হিসেবে বন্দী করা হয় (বুখারী-২৮১৬), 

জনৈক ইহুদী ইসলাম গ্রহণের পর নিজ ধর্মে ফিরে গেলে হাত-পা বেঁধে তাকে হত্যা করা হয় (বুখারী-৪০০০), মৃত্যুর আগে রোগশয্যায় নবী বলেছিলেন, হে আল্লাহ ইহুদীদের ও নাসারাদের উপর লানত বর্ষণ করুন (বুখারী-৪০৯১-২), নবী ইহুদীদের এজন্যে ধ্বংস হওয়ার বদদোয়া করেছেন যে, তারা গরু ও শুকরের চর্বি গলিয়ে বিক্রি করে (বুখারী-৪২৭২), মদিনায় প্রথম মসজিদ বানানোর জন্য নবী বনী নযীর গোত্রের পুরণো পূর্ব পুরুষের কবরসমূহ খুঁড়ে ফেলেন ও খেজুর গাছ কেটে সমতল করে তাতে মসজিদ বানান (বুখারী-৩৬৪২), নবী ইহুদীদের এলাকা বায়তুল মিদরাসে গিয়ে বললেন, তোমাদেরকে এই ভূখ- থেকে বহিস্কার করতে চাই, জেনে নাও এ পৃথিবী আল্লাহ্্ ও তার রসুলের এখতিয়ারভূক্ত (বুখারী-২৯২৯), মৃত্যুর প্রাক্কালে নবী উপস্থিত সাহাবাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে, ‘‘আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করবে’’ (বুখারী-২৮২৫), ইহুদীদের নিখোঁজ একদল লোককে নবী ইঁদুর [বিবর্তিত আকৃতিতে] বলে সনাক্ত করেন, কারণ ইঁদুর উটের দুধ পান করেনা কিন্তু ছাগলের দুধ পান করে (বুখারী-৩০৬১), বনী ইসরাইল না হলে মাংসে পচন ধরতো না, কারণ তারা ‘সালওয়া’ নামক পাখির মাংস জমা করেছিল (বুখারী-৩০৮৪), নবী বলেছেন, তোমরা ইহুদী ও নাসারাদের পদে পদে অনুসরণ করবে, এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে ঢুকবে (বুখারী-৩১৯৮), তাওরাতের বিধান মোতাবেক যেনাকারী ২-ইহুদী নরনারীকে নবী পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলে হত্যা কার্যকরের সময়, পুরুষটি মহিলাটির উপর ঝুকে পড়ে মহিলাটিকে প্রসত্মরাঘাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করে (বুখারী-৩৩৬৪), ইহুদী-খ্রীস্টানদের প্রথমে সালাম দিওনা, রাসস্তায় দেখা হলে তাকে রাসস্তার পাশে ঠেলে দিও (তিরমিযী-১৫৪৯), হেযাজের ইহুদী ব্যবসায়ী আবু রাফে’কে নবীর নির্দেশে ঘুমন্ত অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে আতিক ও বনী কুরাইযা গোত্রের ইহুদী কবি কা’ব ইবনে আশরাফকে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা ধোকার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করেন। সরল বিশ্বাসে ইহুদী কবি কা’ব মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার সামনে এলে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার চুলের সুগন্ধির প্রশংসা করে তার চুলের ঘ্রাণ নেয়ার অনুমতি চান।

কবি কা’ব সরল বিশ্বাসে ঘ্রাণ নিতে সম্মতি দিলে ধোকায় ফেলে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার চুল আকড়ে ধরেন এবং সঙ্গীদের সহায়তায় তাকে হত্যা করেন (বুখারী-২৮০০-১,৬,৩৭৩৫-৬), [ঐ সময়ের ঈহুদীদের প্রধান পেশা ছিল কৃষি, যে কারণে] এক কৃষকের ঘরে কৃষিকাজের লাঙ্গল-জোয়াল দেখে নবী মুহাম্মদ বলেছিলেন, এটা (কৃষি যন্ত্রপাতি) যে জাতির ঘরে প্রবেশ করে আল্লাহ সেখানে হীনতা ও নীচতা ঢুকিয়ে দেন (বুখারী-২১৫৩), জিহাদ পরিত্যাগ করে কৃষিকাজে নিমগ্ন থাকলে আল্লাহ তাকে অপমান করবেন (দাউদ-৩৪২৬), নবীর নির্দেশে যায়েদ ইবনে ছাবিত হিব্রু ভাষা শিখেছিলেন ইহুদীদের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে পত্রালাপ করার জন্যে (তিরমিযী-২৭১৫), ইহুদী মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ ছিল, মুসলিম মহিলাদের ঘরের কোণে নামায আদায় উত্তম (দাউদ-৫৭০), কোরানে ‘ইহুদী ও খ্রীস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে’ (কোরান-৫:৫১), বনী ইসরাঈলকে বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম (কোরান-৪৫:১৬), ইহুদী-খ্রীস্টানরা চুল রঞ্জিত করেনা সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করো (বুখারী-৫৪৭০), একজন ইহুদী ওমরকে বলেছিল, ‘আজ আমি তোমার দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম’ এমন আয়াত আমাদের সম্পর্কে নাযিল হলে ঐদিনকে আমরা ‘ঈদ’ হিসেবে পালন করতাম (বুখারী-৪২৪৫), আমাদের নবী মুসার মর্যাদা প্রসঙ্গে নবী মুহম্মদ বলেছেন, ইস্রাফিল কর্তৃক ২য়-বার সিঙাধ্বনির পর পৃথিবীর সকল মৃত মানুষের মধ্যে ১ম জেগে ওঠার পর আমি দেখবো হযরত মুসা আল্লাহর আরশ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানিনা, সকল বেঁহুশ [মৃত] ব্যক্তিদের মধ্যে সে ছিল কিনা কিংবা আমার আগেই তার চেতনা ফিরেছিল কিংবা আল্লাহ তাকে বেহুঁশ হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন (বুখারী-২২৩৪), নবী মুহম্মদ নাজরানের খ্রীস্টানদের সাথে চুক্তি করেন যে, খ্রীস্টানদের গীর্জা ধ্বংস ও পাদ্রীদের বের করে দেয়া হবেনা কিন্তু বিনিমেয়ে নবীকে ১০০০-জোড়া কাপড় সফর মাসে ও ১০০০-জোড়া রজব মাসে খ্রীস্টানরা পাঠাবে; তা ছাড়া ৩০টি বর্ম, ৩০টি ঘোড়া, ৩০টি উট এবং সব ধরণের যুদ্ধোপকরণ ধার হিসেবে মুসলমানদের দেয়া হবে কিন্তু খ্রীস্টানরা সুদ খাওয়া শুরু করলে তাদেরকে নাজরান থেকে বহিস্কার করা হয় (দাউদ-৩০৩১)।

কিন্তু তারপরও আমরা শান্তির জন্যে জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেবো। উভয় পক্ষের এটোর্নী নিজ নিজ পক্ষে আরো নানা যুক্তিতর্ক, পাল্টা-যুক্তি উপস্থাপন করলো টানা ২০-দিন পর্যন্ত। যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে জাত্যাভিমান ছেড়ে বোধোদয়ের পাল্লা ভারী হলো তাদের। কিন্তু অবশেষে নিজ নিজ নাগরিকদের ভবিষ্যত শান্তিপূর্ণ ও এক সুন্দর দিনের প্রত্যাশা রেখে জুরি বোর্ডের সিন্ধামেত্মর অপেক্ষায় রইলেন। ১০-সদস্যের জুরি বোর্ড ২-জাতির একে অপরকে হত্যার ধারাবাহিকতা চিরতরে বন্ধ ও বিশ্বকে এ যুদ্ধের দামামা থেকে রক্ষার জন্যে নিমণরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।

চুক্তির পরদিন অর্থাৎ ২০১৪ এর নববর্ষের দিন থেকেই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি জাতিরা একত্রে মিলে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলে বসবাস করবে। সেখানে প্রত্যেকের ধর্মীয়, শিক্ষা, মৌলিক অধিকারের পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কেউ কারো ধর্মীয় ব্যাপারে হসত্মক্ষেপ করবে না ও বিদ্বেষ পোষণ করবে না। সাংবিধানিকভাবে দেশটির সরকারি ভাষা হবে হিব্রু ও আরবি। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের অধিকার হবে সমান। গণতান্ত্রিক রীতিতে গণভোটের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা হবে। অবিলম্বে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র এই গণতান্ত্রিক নতুন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে। বিশ্বের সকল দেশ ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলীদের নিজ দেশে পুনর্বাসনে সহায়তা করবে। ২০১৪ সনের পহেলা জানুয়ারি নববর্ষের দিন থেকে বিশ্বের সকল দেশ নবতর এই রাষ্ট্রের জন্যে প্রার্থনা ও আনন্দ উৎসব করবে।

জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তে হাততালি দিয়ে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করে গুণিতক ভুলে জীবনের দীর্ঘশ্বাসের পান্ডুলিপি পাঠ করা ২-দেশের এটোর্নীদ্বয়, সঙ্গে প্রচন্ড করতালিতে বিশ্ববাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশে তাদের সংহতি প্রকাশ করে। বিশ্বময় বিরামহীন করতালির বিকীর্ণ শব্দে ঘুম ভাঙলে স্বপ্নময়তার আবেশেও টিভির প্রভাতি সংবাদের হেডলাইন শুনতে পান লেখক-‘‘গাজায় ইসরাইলী আক্রমনে শতাধিক ফিলিস্তিনি শিশু-নারী নিহত এবং হামাস কর্তৃক গাজা থেকে তেল আবিবে ৮টি রকেট নিক্ষেপ, নিহত ২১ ইসরাইলি’’। হায় !!




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন