কুরাইশ মুসলিম বদর যুদ্ধের করুণাত্মক ঘটনা :
হেকটর-একিলিস বধের ট্রাজেডিকে হার মানায় যে বর্ণনা!
[মুসলিম ঐতিহাসিকের বর্ণনা]
:
যখন নবী মুহম্মদ জানতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে ফিরছেন, তখন তিনি মুসলমানদের ডেকে পাঠান এবং ঘোষণা করেন, "এই সেই কুরাইশদের ধন-সম্পদ সমৃদ্ধ বাণিজ্য-বহর (কাফেলা)। যাও তাদের আক্রমণ কর, সম্ভবত: আল্লাহ এটি তোমাদের শিকার রূপে দান করবেন।" তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়; কিছু লোক আগ্রহের সাথে, কিছু লোক অনিচ্ছায়। কারণ আল্লাহর নবী যে যুদ্ধে যেতে পারেন তা তাঁরা চিন্তা করেননি।
:
কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান হিজাজের নিকটবর্তী হলে প্রতিটি আরোহীর কাছে তিনি খবর সংগ্রহের চেষ্টা করেন। উৎকণ্ঠিত আবু সুফিয়ান কিছু আরোহী মারফত জানতে পারেন যে, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের আহ্বান করেছেন যেন তাঁরা তাঁকে ও তাঁর কাফেলায় আক্রমণ করে। এই খবরটি জেনে আবু সুফিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং দমদম বিন আমর আল-গিফারি নামক এক ব্যক্তিকে ভাড়ায় নিয়োগ করে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যে এই আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে, এই খবরটি কুরাইশদের জানানোর জন্য মক্কায় পাঠান; এবং তাকে আদেশ করেন যে, সে যেন কুরাইশদের তাঁদের মালামাল রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান করে। দমদম দ্রুত বেগে মক্কার উদ্দেশ্যে ঘোড়া চালান।
:
মক্কায় এসে দমদম উঠের পিঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে, "হে কুরাইশ, উটের কাফেলা, উটের কাফেলা! আবু সুফিয়ান ও তাঁর বাণিজ্য কাফেলায় আপনাদের যে যে সম্পদ আছে মুহাম্মদ ও তাঁর সহচররা তা হস্তগত করার অপেক্ষায় আছে। আমার মনে হয় না আপনারা তা রক্ষা করতে পারবেন।
:
লোকজন দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং বলে, "মুহাম্মদ ও তার সহচররা কি মনে করেছে যে, এটি তাদের ইবনে হাদরামীর (পূর্বের নাখলা আক্রমণ) কাফেলা আক্রমণের মতই হবে"? আল্লাহর কসম, তারা শীঘ্রই টের পাবে যে এবার সেরূপ হবে না। প্রত্যেকটি লোক নিজে অংশগ্রহণ করে অথবা তার পরিবর্তে অন্য কাউকে পাঠায়। সবাই অংশগ্রহণ করে। আবু লাহাব বিন আবদ আল-মুত্তালিব ছাড়া কোনো বিশিষ্ট লোকই অংশ গ্রহণে বিরত ছিলেন না। আবু লাহাব নিজে অংশ গ্রহণ করেননি, তিনি তাঁর পরিবর্তে আল-আস বিন হিশাম বিন মুগীরাকে পাঠান। আল-আস তাঁর কাছে চার হাজার দিরহাম ঋণগ্রস্ত ছিলেন, যা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তাই আবু লাহাব আল-আসকে নিযুক্ত করেছিলেন এই শর্তে যে, তাহলে তিনি আল-আসের ঋণ মওকুফ করবেন। আল-আস বিন হিশাম আবু লাহাবের পরিবর্তে এই অভিযানে অংশ নেন। আবু লাহাব থাকেন বিরত। অতর্কিত আক্রমণের ভয়ে ভীত আবু সুফিয়ান তখন বদর প্রান্ত থেকে ফিরে বিকল্প পথ তথা সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে মক্কা যাত্রা অব্যাহত রাখেন। কুরাইশদের সকল গোত্র নিজ সম্পদ রক্ষার্থে বদর অভিমুখে যুদ্ধসাজে ধাবিত হন!
========================== =======================
সূত্র : ১) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ২৮৯-২৯৬ http:// www.justislam.co.uk/images/ Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20R asul%20Allah.pdf; ২) “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) ১২৮৪-১৩০৮
হেকটর-একিলিস বধের ট্রাজেডিকে হার মানায় যে বর্ণনা!
[মুসলিম ঐতিহাসিকের বর্ণনা]
:
যখন নবী মুহম্মদ জানতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে ফিরছেন, তখন তিনি মুসলমানদের ডেকে পাঠান এবং ঘোষণা করেন, "এই সেই কুরাইশদের ধন-সম্পদ সমৃদ্ধ বাণিজ্য-বহর (কাফেলা)। যাও তাদের আক্রমণ কর, সম্ভবত: আল্লাহ এটি তোমাদের শিকার রূপে দান করবেন।" তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়; কিছু লোক আগ্রহের সাথে, কিছু লোক অনিচ্ছায়। কারণ আল্লাহর নবী যে যুদ্ধে যেতে পারেন তা তাঁরা চিন্তা করেননি।
:
কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান হিজাজের নিকটবর্তী হলে প্রতিটি আরোহীর কাছে তিনি খবর সংগ্রহের চেষ্টা করেন। উৎকণ্ঠিত আবু সুফিয়ান কিছু আরোহী মারফত জানতে পারেন যে, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের আহ্বান করেছেন যেন তাঁরা তাঁকে ও তাঁর কাফেলায় আক্রমণ করে। এই খবরটি জেনে আবু সুফিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং দমদম বিন আমর আল-গিফারি নামক এক ব্যক্তিকে ভাড়ায় নিয়োগ করে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যে এই আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে, এই খবরটি কুরাইশদের জানানোর জন্য মক্কায় পাঠান; এবং তাকে আদেশ করেন যে, সে যেন কুরাইশদের তাঁদের মালামাল রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান করে। দমদম দ্রুত বেগে মক্কার উদ্দেশ্যে ঘোড়া চালান।
:
মক্কায় এসে দমদম উঠের পিঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে, "হে কুরাইশ, উটের কাফেলা, উটের কাফেলা! আবু সুফিয়ান ও তাঁর বাণিজ্য কাফেলায় আপনাদের যে যে সম্পদ আছে মুহাম্মদ ও তাঁর সহচররা তা হস্তগত করার অপেক্ষায় আছে। আমার মনে হয় না আপনারা তা রক্ষা করতে পারবেন।
:
লোকজন দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং বলে, "মুহাম্মদ ও তার সহচররা কি মনে করেছে যে, এটি তাদের ইবনে হাদরামীর (পূর্বের নাখলা আক্রমণ) কাফেলা আক্রমণের মতই হবে"? আল্লাহর কসম, তারা শীঘ্রই টের পাবে যে এবার সেরূপ হবে না। প্রত্যেকটি লোক নিজে অংশগ্রহণ করে অথবা তার পরিবর্তে অন্য কাউকে পাঠায়। সবাই অংশগ্রহণ করে। আবু লাহাব বিন আবদ আল-মুত্তালিব ছাড়া কোনো বিশিষ্ট লোকই অংশ গ্রহণে বিরত ছিলেন না। আবু লাহাব নিজে অংশ গ্রহণ করেননি, তিনি তাঁর পরিবর্তে আল-আস বিন হিশাম বিন মুগীরাকে পাঠান। আল-আস তাঁর কাছে চার হাজার দিরহাম ঋণগ্রস্ত ছিলেন, যা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তাই আবু লাহাব আল-আসকে নিযুক্ত করেছিলেন এই শর্তে যে, তাহলে তিনি আল-আসের ঋণ মওকুফ করবেন। আল-আস বিন হিশাম আবু লাহাবের পরিবর্তে এই অভিযানে অংশ নেন। আবু লাহাব থাকেন বিরত। অতর্কিত আক্রমণের ভয়ে ভীত আবু সুফিয়ান তখন বদর প্রান্ত থেকে ফিরে বিকল্প পথ তথা সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে মক্কা যাত্রা অব্যাহত রাখেন। কুরাইশদের সকল গোত্র নিজ সম্পদ রক্ষার্থে বদর অভিমুখে যুদ্ধসাজে ধাবিত হন!
==========================
সূত্র : ১) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ২৮৯-২৯৬ http://
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন