সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা - ২য় পর্ব # ১৩৬

৩০১৫ খৃস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সনের পৃথিবীর ইতিহাস : পর্ব-২

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা

৩০১৫ সনের রাজনৈতিক, ধর্মনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভাষিক বিভাজনহীন এক চমকপ্রদ পৃথিবী আজকের যে পর্যায়ে পৌঁছেছেএ গ্রহটি, সেখানে পৌঁছুতে বিশ্বের মানুষকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে কোটি কোটি ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’, সইতে হয়েছে নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত আর পরাজিত করতে হয়েছে প্রতিকূলতার বিষময় শক্তিকে। এ প্রতিকূলতা ছিল মানুষ আর তারই বানানো নানাবিধ সাংষর্ষিক রীতিনীতি, যা মানুষকেই শোষণ করতো পদে পদে প্রতিনিয়ত, ক্ষণে ক্ষণে। এখন যদিও সময়ের একক হচ্ছে ‘ন্যানো টাইম’ কিন্তু ২০১৩ পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষেরা সময়ের ব্যাপারে এতোই অদক্ষ ও ‘সময়-খাদক’ ছিল যে, তারা সময় গণনার একক হিসেবে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর ব্যবহার করতো। সময়ের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক ‘সেকেন্ড’ এর মান ছিল বর্তমান প্রায় ১০-ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’, মানে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে বর্তমান ১০-ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’-এর নিচে তারা গণনাই করতে জানতো না, যে কারণে তাদের প্রত্যেকটি কাজ ছিল খুবই ধীর গতির। যেমন ঐ সময়ে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে যে ক্লাসগুলো হতো তাতে প্রত্যেকটি ক্লাসের ‘ঘন্টা’ হিসেব করা হতো ৬০-মিনিট ধরে, আর ৬০-মিনিট মানে ছিল ৩৬০০ সেকেন্ড, আর তৎকালীন ৩৬০০ সেকেন্ড মানে বর্তমান সময়ের হিসেবে ৩৬০০০-ট্রিলিয়ন ন্যানো টাইম। আর ঐ সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো প্রাচীন মানুষের শিক্ষা পর্বে।

এ পর্বে আমরা দেখবো ২০১৫ পূ্র্ববর্তী পৃথিবীর মানুষ, জন্ম, মৃত্যু, প্রকৃতি, তার ধর্ম, খাদ্য, উৎপাদন, সমাজ, রাষ্ট্র, রীতিনীতি, আইন, শাস্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, সামাজিক ব্যবস্থা, ভোগ্যপণ্য, কুসংস্কার, পরিবহণ ইত্যাদি বহুবিধ প্রাচীন ‘শাস্ত্রকথা’, যা আলোচনা করা হবে পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক অধ্যায়গুলোতে।  

একুশ শতকের পৃথিবীতে মানুষ বাস করতো প্রায় সাত’শ কোটি, যার মধ্যে ঐ সময়ের হিসেবে ১-দিন বয়সী মানুষ থেকে ১০০ বছরের মানুষও ছিল। ১০০-বছর বয়সের উপরে জীবন্ত মানুষ খুব একটা দেখা যেত না সর্বত্র, কারণ ৬০-৭০ বছর হলেই ঐ সময়ের মানুষ ‘বুড়িয়ে’ যেত এবং আস্তে আস্তে তারা কর্মশক্তি, চলনশক্তি, যৌবনশক্তি, রূপরস ইত্যাদি হারিয়ে ফেলতো, যদিও এখন বিশ্বের সর্বত্রই বিচরণ করছে পাঁচ ছ’শ বছরের পুরণো থেকে ২০ বছরের ক্লোন করা একই কর্মশক্তির চির তারুণ্যময় মানুষ। ঐ সময়ের অকর্মন্য ঐ বুড়োরা সমাজের চোখে বোঝা হলেও, তাদের ‘ধ্বংস’ বা ‘বিনাস’ করা হতো না এই কারণে যে, এমনিতেই তারা কয়েক বছরের মধ্যে নির্ঘাৎ মারা গিয়ে মূলত ‘বিনাস’ হয়েই যেত, যে মৃত্যু বা বিনাস নামক চরম ও পরম সত্যের জন্যে মানুষ অপেক্ষা করতো কিছুটা সময়। এ জন্যে বর্ণিত অকর্মন্য মানুষদের অবহেলা আর তাচ্ছিল্যে কেউ কেউ তাদের বসতির এক কোনে ফেলে রাখলেও, কেউবা তাকে পাঠিয়ে দিত ‘বৃদ্ধ নিবাসে’ কিংবা ভরঘুরে সেন্টারে। আর মারা যাওয়া যদিও বর্তমান সময়ে অকল্পনীয় ও অবাস্তব ব্যাপার কিন্তু ঐ সময়ে একটি মানুষের দেহ সত্যি সত্যি প্রাণশক্তি হারিয়ে ‘জড়’ পদার্থে রূপ নিতো অনেকটা পাথরের মত প্রতিক্ষণে আর প্রতিনিয়ত। 

যে কোন সময় যে কোন মানুষ কারণে অকারণে মারা যেত যত্রতত্র, যা তার স্বজনরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো অবলীলায় অসহায়ভাবে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে। কেউ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে, আবার কেউ পানিতে ডুবে কিংবা সেকেলে মধ্যযুগীয় টেকনোলজির বিপদজনক যান ‘গাড়ির চাপায়’ মরতো যেখানে সেখানে। দৈনিক গড়ে কয়েক হাজার মানুষ এভাবে মরতো পৃথিবীর সর্বত্র, যা মানুষের কাছে ছিল ‘অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা’ ঐ সময়ের দিন-রাত্রির মত। যারা ১০০ বছরেও মারা যেত না, সমাজে তারা বিশেষ প্রাণি হিসেবে ‘মর্যাদা পেত’ এবং অনেকে তাদের দেখতো আসতো কিংবা মিডিয়ায় তাদের জীবিত থাকার সংবাদ প্রকাশিত হতো ছবিসহ, যদিও তারা ছিল সমাজ ও পরিবারের কাছে বোঝা স্বরূপ। ১০০ বছর বয়সেও মারা যায়নি এমন মানুষেরা অনেকটা দৃষ্টিশক্তি, চলৎশক্তি, বাকশক্তি ইত্যাদি হারিয়ে বিকৃত মানুষরূপে অনেকটা জড় পদার্থের মত পৃথিবীতে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুণতো শুয়ে বসে, যা বর্তমান মানুষেরা কল্পনা করতেও কষ্ট পায়। আর মৃত্যুর পর তারা আরেক অনন্ত কঠোরতর জীবনের প্রতিক্ষায় সব সময় ম্রিয়মান থাকতো জীবন কালেও, যা তাদের শেখাতো ঐ সময়ে প্রচলিত হরেক রকম ধর্ম-কথায়। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো একুশ শতক পূর্ববর্তী সময়ের প্রচলিত ও বর্তমানে বিলুপ্ত ধর্মের ইতিহাস অংশে।

[এটি একটি রূপক রচনা। যার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আজকের স্বার্থবাদী, সাংঘর্ষিক, বিপদজনক, অসহায়, অন্ধকারাচ্ছন্ন, হানাহানিপূর্ণ পৃথিবীর পরিবর্তে এক চমকপ্রদ, বিজ্ঞানময়, উন্নত, আলোকজ্জ্বল, শান্তির পৃথিবীর প্রত্যাশা। লেখকের জ্ঞানচক্ষু বলে, অবশ্যই একদিন এমন পৃথিবী প্রতিষ্ঠা হবে যা থাকবে রাজনৈতিক, ভাষিক ও ধর্মীয় বিভাজনমুক্ত। যেখানে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন থাকবে না, থাকবে না ইসরাইল ও মুসলিম নামে আলাদা দেশ। মানুষ মারণাস্ত্র উৎপাদন করবেনা মানুষেরই জন্য। তবে হতে পারে এটি হাজার বছর পরে কিংবা কিছুটা আগেই। কল্পিত লেখাটি সাজাতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ৩০১৩ সনের ঐতিহাসিকরূপে। তাদের চোখে দেখতে চেষ্টা করেছেন বর্তমান সময়ের কণ্টকপূর্ণ পৃথিবীকে। হাজার বছর ভবিষ্যতকালে গিয়ে ওখানে বসে বর্তমানকে অতীত বানানো কিছুটা কষ্টকল্পনা বৈকি! হয়তো লেখাটি অভিনব তথা নতুন চিন্তণের, যে কারণে মাঝে মধ্যে অযৌক্তিকতা চলে আসতে পারে কখনোবা! এ বিষয়ে মুক্তচিন্তাব্লগের বোধ্যা পাঠকের সুচিন্তিত সমালোচনা, মতামত, পরামর্শ প্রত্যাশা করি, যাতে পরবর্তী পর্বগুলো সংশোধিত হতে পারে প্রকাশের আগেই, ধন্যবাদ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন