সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ পূর্ববর্তী প্রাচীন মানুষের ধর্মবিশ্বাস # ১২১

২০১৫ পূর্ববর্তী প্রাচীন মানুষের ধর্মবিশ্বাস
প্রাচীন ব্যাবীলন ও মায়ানদের ধর্ম
ক. প্রাচীন ব্যাবীলনের ধর্ম
খ্রীস্টপূর্ব ৩৫০০ হতে ৩০০০ পর্যন্ত মেসোপটেমিয়ায় উন্নত এক সভ্যতা ছিল। এই অঞ্চলের সুমেরু, আসিরীয়া ও আক্কাদ ছিল ব্যাবিলনের অংশ। এটি মেসোপটেমিয় সভ্যতা নামে বিশ্বজনীন ছিল। ২০১৫ সনেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন ইরাক, যার বর্তমান কোড হচ্ছে N18761Z এই অঞ্চলের মানুষদের ধর্মীয় দেবতার নাম ছিল যথাক্রমে ‘আন’ (আকাশ), ‘মাকি’ (পৃথিবী), ‘এনলিল’ (বাতাস) এবং ‘এনকি’ (সমুদ্র)। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাসমতে এরাই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের নিয়ন্ত্রক ছিল। বর্ণিত ৪-দেবতার পূজা করাই ছিল প্রাচীন ইরাকী লোকদের প্রধান কাজ। ইরাকের একটি প্রাচীন সভ্যতার নাম ছিল ব্যাবিলন, যার ঈশ্বর ছিল সূর্যদেবতা ‘বেল’। পরবর্তীতো যার নাম হয় ‘মার্ডুক’। ‘ইশতার’ ছিল ব্যাবিলনের যুদ্ধের দেবী। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংসের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে বর্ণিত ধর্মেরও বিলুপ্তি ঘটে। এ ছাড়াও সুমেরু সভ্যতার অন্যান্য দেবতারা ছিল যথাক্রমে ‘আনু’ স্বর্গের নিয়ন্ত্রক দেবতা, ‘আরুরা’ ও ‘মায়মি’ সুমেরীয় দেবী, যারা মানুষ তৈরীতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল, ‘এনলিল’ বাতাসের দেবতা, ‘এনকি’ পানি ও জ্ঞানের দেবতা, ‘নান্না’ ছিল চাঁদের দেবী, ‘ইনান্না’ ছিল প্রেম ও যুদ্ধের দেবী, ‘উটি’ ছিল সূর্য ও বিচারের দেবতা, ‘নানলিল’ ও ‘এনলিল’ ছিল স্বামী-স্ত্রী মানে দম্পতি দেবতা।
খ. প্রাচীন মায়ান ধর্ম
মায়ানরা বসবাস করতো প্রাচীন পৃথিবীর ক্ষিণ আমেরিকায়। তাদের ছিল বহু দেবদেবী। তাদের মৃত্যুর দেবতার নাম ছিল ‘আহপুছ’। এই দেবতা ‘ইয়াম-কিমিল’ নামেও পরিচিতি ছিলেন মায়ানদের কাছে। ‘চিয়াক’ ছিল মায়ানদের উর্বরতার দেবতা। এ দেবতা কৃষি, বৃষ্টি ও আলো নিয়ন্ত্রণ করতো। আজটেক দেবতা ‘টলোলাকের’ সঙ্গে তার মিল ছিল। এই দেবতা অমর ছিল। আরেক মায়া সূর্য দেবতার নাম ছিল ‘কিনিস আহাউ’। ‘কুকুলচান’ ও ‘ইতজামনা’ ছিল আরো ২-জন অমর মায়ান দেবতা। কুকুলচানের পিতা ছিল স্বর্পরাজ। ‘ইক’ নামের আরেক দেবতাকে পূজা করতো মায়ানরা। ‘বি’ দেবতা ছিল জীবন ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রক। দেবী, ‘ইক্সচেল’ ছিলেন রংধনু, পৃথিবী ও চাঁদের নিয়ন্ত্রক। ‘ইক্সটাব’ ছিল আত্মহত্যকারী আরেক মায়ান দেবতা। বিলুপ্ত মায়ানরা নানা দেবদেবীর পূজা করতো, তবে তারা সময়কে বেশ গুরুত্ব দিতো। বিশেষ সময়ে তারা বলিদান বা উৎসর্গ করতো দেবতার সামনে। যাজকরা বিশেষ ক্যালেন্ডারে সময় নির্ধারণ করতো পূজা ও বলিদানের জন্যে। বলিদানের সময় মায়ানরা বিশেষ মানুষের বুক চিরে হৃদপিন্ড বের করে তা দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করতো। হত্যাকারীর হাত ও পা রেখে দিতো মায়ানরা বিশেষ বিশ্বাস হেতু। এ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হতো এ জন্যে যে, শিশুদের মায়ানরা নিষ্পাপ মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো যে, বিশ্ব তথা ইউনিভার্সের তিনটি নকশা হচ্ছে নরক, আকাশ ও পৃথিবী। মায়ারা নরককে গুহা মনে করতো এবং সেখানে ‘বল’ দেবতার বিচারালয় বা আদালতের মাধ্যমে পৌঁছানোতে তারা বিশ্বাস করতো। প্রধান দেবতা ‘কিনিচ আহুয়া’ ও ‘ইতজামনা’-কে মায়ানরা আধিপত্যবাদী আকাশচারী দেবতা মনে করতো। আরেকজন ক্ষমতাসীর দেবতা ছিল ‘এল’। ‘এল’ ছিল নরকের প্রধান দেবতার একজন। মায়ানরা তারামন্ডলীকে বিভিন্ন দেবতা মনে করতো। তারা ঋতু পরিবর্তনকে দেবতাদের কাজ বলে মনে করতো। মায়ানদের দেবতা গ্রীক দেবতাদের মত আলাদা ছিলনা। তারা মনে করতো দেবতারা একত্রিত হয়ে সব কাজ করে। তারা একাধিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল। মায়ানরা তাদের জীবনে দেবতাদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতো ও ভয় করতো, এ জন্যে তারা তাদের সকল কাজের শুরুতে দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতো। মায়ানরা বাস করতো প্রাচীন মেক্সিকোর দক্ষিণে এবং উত্তর ও মধ্য আমেরিকায়। খ্রীস্টের জন্মের অন্তত ২০০০ বছর আগে মায়ানরা তাদের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। ২০১৫ সনের রাজনৈতিক বেলিজ, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, এলসালভাদরের চাপাস, তারাস্কো ও ইয়ুকাটান ছিল মায়ানদের সম্যদ্ধ অঞ্চল। ২০১৫ সনেও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে মায়ানরা বসবাস করতো ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখেছিল। মায়ানদের পঞ্জিকার হিসার শুরু হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৩১১৪ সন থেকে। মায়া নগরগুলোতে তথা ইউকাতানে ধর্মীয় স্মৃতিসৌধ, মন্দির-পিরামিড, সজ্জিত কবর ২০১৩ সনেও দৃশ্যমান ছিল। মায়ানরা টেলিস্কোপ আবিস্কারের অনেক আগেই অরিয়ন নক্ষত্রের দিক নির্দেশনা, সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ও শুক্রের জোতির্বিদ্যা সঠিকভাবে অঙ্কন করেছিল। মায়ানদের অন্যতম দেবতা ছিল ‘ডাভিইং’। কিন ছিল মায়া বর্ষ পঞ্জিকার একটি সময়, যা একটি দিনের অনুরূপ ছিল। ধর্মীয় রীতিতে মায়ানরা বিশ্বাস করতো যে, প্রতিটি সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তই পবিত্র। তাদের ধারণা ছিল অনেকগুলো সূর্যের প্রতিকৃতি পর্যায়ক্রমে আসে নরক থেকে স্বর্গের উদ্দেশ্যে। মায়ানদের ভাষায় এক হাজারেরও বেশী বর্ণলিপি ছিল।

[ চলমান --- এর পর পর্ব-১ ]
[এটি একটি রূপক রচনা। যার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আজকের স্বার্থবাদী, সাংঘর্ষিক, বিপদজনক, অসহায়, অন্ধকারাচ্ছন্ন,হানাহানিপূর্ণ পৃথিবীর পরিবর্তে এক চমকপ্রদ, বিজ্ঞানময়, উন্নত, আলোকজ্জ্বল, শান্তির পৃথিবীর প্রত্যাশা। লেখকের জ্ঞানচক্ষু বলে, অবশ্যই একদিন এমন পৃথিবী প্রতিষ্ঠা হবে যা থাকবে রাজনৈতিক, ভাষিক ও ধর্মীয় বিভাজনমুক্ত। যেখানে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন থাকবে না, থাকবে না ইসরাইল ও মুসলিম নামে আলাদা দেশ। মানুষ মারণাস্ত্র উৎপাদন করবেনা মানুষেরই জন্য। তবে হতে পারে এটি হাজার বছর পরে কিংবা কিছুটা আগেই। কল্পিত লেখাটি সাজাতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ৩০১৩ সনের ঐতিহাসিকরূপে। তাদের চোখে দেখতে চেষ্টা করেছেন বর্তমান সময়ের কণ্টকপূর্ণ পৃথিবীকে। হাজার বছর ভবিষ্যতকালে গিয়ে ওখানে বসে বর্তমানকে অতীত বানানো কিছুটা কষ্টকল্পনা বৈকি! হয়তো লেখাটি অভিনব তথা নতুন চিন্তণের, যে কারণে মাঝে মধ্যে অযৌক্তিকতা চলে আসতে পারে কখনোবা! এ বিষয়ে মুক্তচিন্তাব্লগের বোধ্যা পাঠকের সুচিন্তিত সমালোচনা, মতামত,পরামর্শ প্রত্যাশা করি, যাতে পরবর্তী পর্বগুলো সংশোধিত হতে পারে প্রকাশের আগেই, ধন্যবাদ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন