সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৩ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ-২ # ১২৮

৩০১৩ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ১০

২০১৩ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ-২

 ২০১৩ সনে সমুদ্র ও সমুদ্র সংলগ্ন নদীগুলোর প্রচন্ড ঢেউ ও স্রোতে নানাবিধ জলযান ডুবে যেত, প্রাণহানীর ঘটনা ছিল প্রাত্যাহিক। বড় বড় জলযান ডুবে যেত যত্রযত্র। আর ছোট নৌকাগুলো ডোবার ইয়ত্ত্বা থাকতো না। এরূপ একটি বড় যাত্রীবাহী নৌযান ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঐ সময়ের পৃথিবীর অনেক মানুষই জানতো ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে। ‘টাইটানিক’ নামের জলযানটি ডোবার ঘটনা নিয়ে বেশ ক’টি ‘সিনেমা’ও ঐ সময় নির্মিত হয়েছিল অনেক বছর ধরে (সিনেমা-নাটক বা চিত্তবিনোদন বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো অন্য পর্বে)। বড় বড় জলযানগুলো ডুবলে সাধারণত আর সেগুলোকে পানি থেকে তোলা যেত না কিংবা তোলা হতো না। কারণ এতো উন্নত প্রযুক্তি কিংবা জলের ভেতর অবাধে হাঁটা, দেখা, বলা কিংবা চলাচলের জ্ঞান মানুষের হাতে ছিল না। তা ছাড়া বিশাল সমুদ্রের মাঝে ডুবে যাওয়া জাহাজকে খোঁজাও মানুষের জন্যে ছিল ব্যয়বহুল, কষ্টকর ও ঝুকিপূর্ণ। জলযান ডোবা ছাড়াও সমুদ্র ও নদী তীরবর্তী ভূভাগ প্রায় ভেঙে মানুষের জীবনযাত্রাকে জটিলতর করতো। প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলে নৌকা ডোবা, ঢেউ, স্রোত, বন্যা ও নদী ভাঙন ছিল প্রাত্যহিক ঘটনা। বাংলাদেশে বহুবিধ দুর্যোগের কারণে ঐ সময়ের সরকার ‘দুর্যোগ মন্ত্রণালয়’ নামে একটি মন্ত্রণালয় গঠন করেছিল বলে পুরণো দলিলপত্রে দেখা যায়, যার কাজই ছিল বর্ণিত দুর্যোগের মোকাবেলার নিষ্ফল ও হাস্যকর চেষ্টা তদবির করা।

আরেকটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল মহাকাশ থেকে উল্কাপাত। এখন যদিও মহাকাশের ক্ষতিকর সকল গ্রহাণু, ধুলিকনা ও ভাসমান সকল বস্তুকে ধ্বংস করে কিংবা বিশেষ অবস্থায় বিন্যস্ত করে মানুষ পৃথিবী ও মহাকাশকে করেছে সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু ২০১৩ পূর্ববর্তী পৃথিবীতে উল্কাপাত, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। উল্কাপাত ও বজ্রপাতের প্রেক্ষাপট না জানার কারণে, ঐ সময়ের কোন কোন মানুষ এটি তাদের জন্যে অলৌকিক কোন শক্তির শাস্তি কিংবা ‘গজব’ হিসেবে মনে করতো। বাংলাদেশ অঞ্চলে বজ্রপাতে প্রতিবছর অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ (জড় হওয়া) করতো। সে জন্যে বজ্রপাত কিংবা উল্কাপাত শুরু হলে, ঐ সময়ের মানুষ তার ধর্মমতে অলৌকিক সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাইতো নানা উপায়ে। কিন্তু বর্ণিত দুর্যোগ তার ইচ্ছেমত শুরু হয়ে, ধ্বংসলীলা সাঙ্গ করার পরই তার সময়মত নিবৃত হতো, সাধারণত মানুষের কথায় ‘অলৌকিক শক্তি’ খুব একটা কান দিতো না। কোন কোন ধর্মে উল্কা ও বজ্রপাতের নির্দিষ্ট ধর্মীয় কারণ উলেস্নখ থাকতো। বর্তমান পৃথিবীতে বড় বড় যে সকল প্রাচীন গর্ত কিংবা খাদ দেখতে পাওয়া যায়, তার বেশীরভাগই বর্ণিত সময়ের উল্কা পতনে সৃষ্ট।    
        
ঐ সময়ের পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে জানতো না মানুষ। কোন কোন উন্নত ও ধনীক শ্রেণির দেশে যদিও নিজের বসত ঘরটির তাপমাত্রা সীমিত পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো মানুষ। কিন্তু রাস্তা, বাজার, খোলা মাঠ ইত্যাদি থাকতো প্রকৃতির হাতে। যে কারণে পৃথিবীর কোথাও প্রচুর গরম, আবার কোথাও অসহ্য ঠান্ডা পড়তো। যেমন প্রাক্তন মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর তাপমাত্রা থাকতো গরমের সিজনে ভয়াবহ রকমের উষ্ণ, যে কারণে তারা কেবল তাদের ঘরগুলো বিশেষ ‘শীতাতপ যন্ত্রের সাহায্যে’ ঠান্ডা করতে পারতো। কিন্তু মাঠে নামলে কিংবা রাস্তায় কাজে গেলে কিংবা ফসলের খেতে প্রচন্ড গরমে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকে প্রচন্ড কষ্ট পেতে হতো। একইভাবে সুইডেন, গ্রীনল্যান্ড বা প্রাক্তন সাইবেরিয়ায় সব সময় প্রচুর ঠান্ডা পড়তো বলে, সেখানের মানুষকে পড়তে হতো প্রচুর মোটা পোশাক ও ঘরকে রাখতে হতো উষ্ণ। আগুণ জ্বালিয়ে কিংবা নানাবিধ চুল্লীর সাহায্যে ঘরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারলেও, বাইরে থাকতো প্রচুর বরফ ও ঠান্ডা। এরূপ ঠান্ডা ও গরম সহ্য করতে না পেরে কোন কোন মানুষ মারা যেত। আবার প্রাচীন মালয়শিয়া কিংবা থাইল্যান্ড অঞ্চলে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টি ও গরম থাকলেও, সাহারা কিংবা রাসআলখালী নামক মরুভূমিতে আবার একদম বৃষ্টি হতো না। মানুষ প্রযুক্তিতে অনুন্নত থাকার কারণে মানুষের উপযোগী স্বাস্থ্যসম্মত উষ্ণতা তারা পৃথিবীর সর্বত্র সৃষ্টি করতে পারেনি বা জানতো না, এমনকি বিশেষ তাপমাত্রায় এখন যেভাবে মানুষ তার নিজ শরীরকে চমৎকারভাবে ‘খাপ খাওয়াতে পারে’ যে কোন উষ্ণতায় সহজেই, তাও তখন ছিল অসাধ্য কিংবা দুঃস্বপ্ন মাত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন