সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ-৩ # ১২৭

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - ১১
২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ-৩

২০১৫ সময়কালের আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম ছিল ‘দাবানল’। ঐ সময় পৃথিবীর নানা অঞ্চলে প্রচুর বৃক্ষরাজি ছিল যত্রতত্র, মানুষ যাকে বন বলতো। পৃথিবীর তাপমাত্রা নানা কারণে কখনো বৃদ্ধি পেয়ে বর্ণিত বনাঞ্চলে আগুণ লাগলে, মানুষ তা বহু চেষ্টাতেও নেভাতে পারতো না। বরং অসহায় অন্য বন্য প্রাণির মত মরতো কিংবা চেয়ে চেয়ে দেখতো। প্রাক্তন অষ্ট্রেলিয়া বা আমেরিকা অঞ্চলে প্রতি বছরই এভাবে বনে আগুন লাগতো। আবার কখনো প্রচন্ড বেগে বায়ু প্রবাহ শুরু হয়ে মানুষ, তার বসতি ও ফসলের প্রচুর ক্ষতি করতো। মানুষ জানতো না কেন বাতাস আস্তে বইছে কিংবা প্রচন্ড বেগে। মানুষ এও জানতো না, কখন প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে কিংবা কখন হবেনা। ঘুর্ণীঝড়, সুনামী কিংবা ভূমিকম্প ইত্যাদি সম্পর্কে খুব কমই জ্ঞান ছিল মানুষের। যে কারণে বর্ণিত তান্ডব থেকে রক্ষার জন্যে মানুষ কেবল প্রকৃতি ও অলৌকিক শক্তির কাছে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারতো না। কিন্তু অলৌকিক প্রকৃতি মানুষের হাস্যকর কান্নাকাটিতে কান না দিয়ে, নিজের তান্ডবে মগ্ন থাকতো বধিরের মত!

আরেকটি মহা দুর্যোগ ছিল মহাকাশ থেকে আগত ক্ষতিকর রশ্মি, যা পৃথিবীতে প্রবেশ করে মানুষ ও অন্য প্রাণির নানাবিধ ক্ষতি করলেও, মানুষ তা প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করতে পারতো না। যদিও মানুষ বলতো যে, পৃথিবী হচ্ছে তাদের নিকট বসবাসের জন্যে ‘অত্যন্ত নিরাপদ গ্রহ’। কিন্তু যেহেতু্ ঐ সময় পৃথিবীর প্রতিবেশী উপগ্রহ একমাত্র ‘চাঁদ’ ছাড়া মানুষ আর কোন গ্রহে যাওয়ার মত প্রযুক্তি ঐ সময় পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারেনি, এমনকি মঙ্গল গ্রহও সরসরি জয় করতে না পারার কারণে ‘সবেধন নীলমনি’ পৃথিবীই তাদের কাছে ছিল ‘অত্যন্ত নিরাপদ গ্রহ’। আবার চাঁদে গিয়েও মানুষ একটি মৃত প্রতিবেশীকেই খুঁজে পায় মাত্র। তাই তারা কখনো ঐ সময়ের চোখেরক্ষমতার সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্যে আবিষ্কৃত ‘দুরবীণ’ দিয়ে ২-৪টি গ্রহ-নক্ষত্র দেখে মনে করতো যে, ‘পৃথিবী কতই না নিরাপদ’। যেখানে মূলত মানুষের জন্যে ওৎ পেতে থাকতো বর্ণিত হরেক হরকের বিপদ প্রতি পদে পদে। এমনকি পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাস ও পানিতে মানুষের জন্যে ভেসে বেড়াতো কোটি কোটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। তাও মানুষ না দেখে কখনো শ্বাস গ্রহণের সময়, আবার কখনো আহারের সময় টেনে নিতো নিজ শরীরে কিন্তু মানুষ বুঝতো না কিছুই। এমনকি মানুষের শরীরে কোটি কোটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস পুরোদমে বংশ বিস্তার করে ‘ঘর সংসার’ শুরু করলেও, মানুষ চরম ‘নির্বোধের মত’ তা নিয়েই তার দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেত কিন্তু অবশেষে একদিন পর্যুদস্ত হতো বর্ণিত ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের কাছে, যারা তাকে টেনে নিতো মৃত্যুর দরজা।

ঐ সময়ের ন্যূজ ও প্রকৃতির কাছে পরাস্ত মানুষ যদি জানতো যে, ৩০১৫ সনের বিশ্বজয়ী অমর মানুষ পৃথিবীর সকল প্রতিকূলতাকে পদদলিত করে, বর্ণিত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে জয় করে, মুহূর্তেই ভ্রমন করতে পারবে মহাকাশে ভাসমান অগণিত গ্রহ আর উপগ্রহে, যারা সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ আজ মানুষের জন্যে, যেখানে মানুষ অক্সিজেন না নিয়ে কিংবা খাদ্য গ্রহণ না করেও নানাবিধ উপায়ে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে নিজের জন্যে এবং যেখানের আবহাওয়া, বাতাস, উষ্ণতা, প্রকৃতি, ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস সবই মানুষের জন্যে শুধু নিরাপদই নয়, চমৎকার মানানসই এবং মানুষের আজ্ঞাবহ সবই। তবে কি ২০১৫ সন ও এর পূর্ববর্তী মানুষ ঐ সময়ের ক্লান্তিকর পৃথিবীর কষ্টকর জীবনের ইতি টেনে মৃত্যু কামনা করতো? কিংবা পরাস্ত হতে চাইতো মৃত্যুর কাছে? যে মৃত্যু ঐ সময়ের কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে গিয়েছিল এক অজানা অন্ধকার পারলৌকিক কল্পিত জগতে! যে জগতের সন্ধান আজকের ৩০১৩ সনের প্রযুক্তি জ্ঞা্নসমৃদ্ধ মানুষও উদ্ধার করতে পারেনি কিংবা খুঁজে পায়নি কোটি কোটি ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরবর্তী কোন গ্রহ কিংবা নক্ষত্রে! যে নক্ষত্রপুঞ্জে মানুষ ঘুরে বেড়ায় সকালে আর বিকেলে নিজ সঙ্গী কিংবা একাকী আলোক মালার গতিতে! অনন্ত মহাকাশে উড়ে চলার সময় হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানায়, গোলাপী কিংবা পীত বর্ণের গ্রহের অনন্ত জীবনলাভকারী অধিবাসীরা!     
   

1 টি মন্তব্য: