সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু - প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ : ৩ # ১২৪

 ২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু - প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ : ৩
 
এক কষ্টকর ক্ষণকে আঁকড়ে ধরে সে কেবলই অন্ধকার বিভীষিকাময় অজানা এক অলীক মৃত্যুর অন্ধকারের প্রহর গুণতো, যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে জানতো না সে তেমন কিছুই। যদিও সে রেখে যেত তার ‘বংশধারা’ তথা সৃষ্টিশীলতা ‘মেল’ ও ‘ফিমেল’ অভিধায়, পৃথিবীর মাটিতে নানা অঞ্চল আর দেশে দেশে।

বর্তমানের মত ঐ সময়েরও সবচেয়ে বুদ্ধিমান তথা চতুর প্রাণি ছিল মানুষ। বর্তমানের তুলনায় ঐ সময়ের মানুষ নিতান্তই নির্বোধ হিসেবে গণ্য হলেও, ঐ সময়ের তুলনায় তারা ছিল বেশ ‘বুদ্ধিমান’। তবে মানুষের জন্ম ও মৃত্যু প্রক্রিয়াও ছিল অন্যান্য প্রাণির মতই অতি সাধারণ। মানব শিশুকেও জন্মের জন্যে মানুষের ফিমেল প্রজাতিটির পেটে কমপক্ষে ঐ সময় কালের হিসেবে ৯-মাস নানা প্রক্রিয়ায় কাটাতে হতো, যদিও এখন একটি মানব ক্লোন বের করতে কয়েক ন্যানো টাইমের প্রয়োজন হয় মাত্র। তারপরও জন্মদানকারী দম্পতিরা হয়তো চাইতো যে, তাদের সন্তানটি বিশেষ চেহারার কিংবা বিশেষ রংয়ের হোক। কিন্তু ঐ সময়ের মানুষের যেহেতু জন্মদান প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোন নিয়ন্ত্রণ থাকতো না, তাই মায়ের ইচ্ছের বিপরীত লিঙ্গের, রংয়ের কিংবা মেধার শিশু জন্ম নিতো। এমনকি বর্তমান সময়ের মত প্রজাপতি কিংবা বিভিন্ন ডিজাইনের মানব শিশু তখন জন্মানো যেত না, মুলত দম্পতি তথা বাবা-মার মতই শিশুটি জন্ম নিতো। যেমন উঁচু নাকহীন, কোকরাণো চুলের কুশ্রী চেহারার আফ্রিকা অঞ্চলের নিগ্রো তুকরণী ‘বাবা-মা’ চাইতো যে, তাদের সন্তানটি যেন ঐ সময়ের ককেশীয় সেলিব্রেটি ‘ম্যাডোনা’, ব্রিটনী’ কিংবা ‘ক্যাটরিনা’র মত চোখ, চুল কিংবা গায়ের রং নিয়ে জন্ম নেয়। এ জন্যে তারা তাদের ধর্ম অনুসারে নানাবিধ প্রার্থনা ও মানত করতো কিন্তু শিশুটি জন্মের পর দেখা যেত, বাবা-মায়ের ডুপ্লিকেট ক্লোন। একইভাবে নাকবোঁচা খাটো আকৃতির ‘চৈনিক’ মায়েদের কামনা থাকতো বিখ্যাত সেলিব্রেটি ‘সালমান খান’ টাইপের শিশু, যা তারা কষ্মিনকালেও পেতোনা নানাবিধ অলৌকিক প্রাকৃতিক চেষ্টা তদবিরেও।

আজকে যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ নিজ নিজ অভিপ্রায় মত একই উচ্চতা, গঠন, চমৎকার সব রং ও ডিজাইন, সুন্দর থেকে সুন্দরতর মুখাবরণ, রোগহীন, মেধা ও মননেও যেহেতু সবাই অত্যন্ত পারদর্শী। এ ব্যাপারটা ২০১৩ পূর্ববর্তী মানুষের মধ্যে না থাকাতে, ঐ সময়ের মানুষেরা সুন্দর গায়ের রংয়ের জন্যে, সুন্দর চুলের জন্যে, সুন্দর চেহারার জন্যে, শক্তি আর মেধার জন্যে, সুন্দর কণ্ঠের জন্যে সবাই উদগ্রীব থাকতো এবং ‘ফলহীন’ চেষ্টা চালাতো নানাবিধ। কিন্তু অন্য কোন জ্ঞানভিত্তিক প্রচেষ্টার বদলে মানুষ কেবল অলৌকিক উপায়ে বর্ণিত গুণগুলো ধারণ করতে চাইতো বিধায়, তা তখনো মানুষের ছিল নাগালের বাইরে। এমনকি মানুষের চেহারা মনোহারী করার জন্যে এক শ্রেণির ‘দোকান’ থাকতো, যাদেরকে ঐ সময় বলা হতো ‘বিউটি পার্লার’। ঐ পার্লারে পুরুষ ও নারী উভয় প্রকৃতির বিশেষ করে নারী প্রকৃতির মহিলারা বেশী যেত। কোন কোন প্রাক্তন ‘সার্জন’ ছোটখাটো সার্জারীর মাধ্যমে মানুষের চেহারা লোভনীয় করার চেষ্টা করতো। কিন্তু বর্ণিত সার্জন ও বিউটি পার্লারের চেহারা মোহনীয় করার ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত। যে কারণে মানুষ বিশেষ করে মহিলা প্রজাতির মানুষেরা নানাবিধ তেল, রং ইত্যাদি ব্যবহার করতো নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের কাছে লোভনীয় তথা সৌন্দর্যময়ী করার জন্যে।

এভাবে একটি মানব শিশু মাতৃজঠর নামক এক ‘প্রাকৃতিক উৎপাদন যন্ত্রে’ তথা অন্ধকার জগতে প্রাগুক্ত সময়ের প্রায় ন’মাস কাটানোর পর, পৃথিবীর আলো বাতাসে বেরিয়ে আসতো। জন্ম নেয়ার পর থেকে নানা প্রতিকুলতার সমুদ্র তথা কৈশোর, যৌবন এবং বার্ধক্যে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সাংঘর্ষিক সময় পাড়ি দিতে হতো তাকে। কেউ কেউ সমুদ্রের অপর পাড়ে, মানে বার্ধক্যে পৌছাঁর আগেই নানা কারণে মৃত্য নামক জড় পদার্থে পরিণত হতো। আর নানা প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে যে সকল ‘ভাগ্যবান’ মানুষেরা পৌঁছতো ৯০ কিংবা ১০০ বছর বয়সে, সে বয়স ধারণ করলেও হারিয়ে ফেলতো তার শৈশব আর যৌবনের রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ আর গতিশীলতা, যদিও ঐ সময় শক্ত খোলসের কাছিম নামক এক প্রকার ফালতু প্রাণি বাঁচতো মানুষের জীবনের ৩-৪ গুণ বেশী সময়। 

এক কষ্টকর ক্ষণকে আকড়ে ধরে সে কেবলই অন্ধকার বিভীষিকাময় অজানা এক অলীক মৃত্যুর অন্ধকারের প্রহর গুণতো, যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে জানতো না সে তেমন কিছুই। যদিও সে রেখে যেত তার ‘বংশধারা’ তথা সৃষ্টিশীলতা ‘মেল’ ও ‘ফিমেল’ অভিধায়, পৃথিবীর মাটিতে নানা অঞ্চল আর দেশে দেশে। সে প্রাগৈতিহাসিক ও মধ্যযুগীয় ‘বংশধারা’ই নানা বিবর্তন আর জ্ঞানভিত্তিক সংযোজন আর বিয়োজনের মাধ্যমে আজ শুধু পৃথিবী নামক গ্রহটিতেই নয়, ১০০-মিলিয়ন আলোকবর্ষের মধ্যে বসবাসরত সকল ক্ষত্রবাসীর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে মানুষ। যে বিচরণ করতে পারে নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রপুঞ্জে কয়েক ন্যানো টাইমের ব্যবধানে, জয় করেছে জীবনঘাতী সব ‘ডিজিজ’ তথা অপশক্তিতে, অর্জন করেছে পৃথিবী ও মহাবিশ্বের কাছাকাছি নক্ষত্রমালাকে নিয়ন্ত্রণের প্রজ্ঞা, যে শক্তি মানুষকে এক মহাকল্যাণকর তথা শান্তির বিশ্বের দিকে ধাবিত করছে, বিলুপ্তি ঘটিয়েছে ২০১৩ পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, যুদ্ধময়তা, হানাহানি, শোষণ, অভাব ও সংকীর্ণতাকে। আজকের এ ৩০১৩ সনের উন্নত প্রযুক্তি ও চিন্তাশীলতার এই কল্যাণময়ীতাকে মানুষ ধরে রাখবে না তার আগামী দিনগুলোর জন্যে? যে দিনগুলো তাকে হাতছানি দিচ্ছে সমগ্র ছায়াপথে মানুষের আলোকময় পদধ্বনির!

[চলমান --- এর পর পর্ব-১]
[এটি একটি রূপক রচনা। যার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আজকের স্বার্থবাদী, সাংঘর্ষিক, বিপদজনক, অসহায়, অন্ধকারাচ্ছন্ন,হানাহানিপূর্ণ পৃথিবীর পরিবর্তে এক চমকপ্রদ, বিজ্ঞানময়, উন্নত, আলোকজ্জ্বল, শান্তির পৃথিবীর প্রত্যাশা। লেখকের জ্ঞানচক্ষু বলে, অবশ্যই একদিন এমন পৃথিবী প্রতিষ্ঠা হবে যা থাকবে রাজনৈতিক, ভাষিক ও ধর্মীয় বিভাজনমুক্ত। যেখানে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন থাকবে না, থাকবে না ইসরাইল ও মুসলিম নামে আলাদা দেশ। মানুষ মারণাস্ত্র উৎপাদন করবেনা মানুষেরই জন্য। তবে হতে পারে এটি হাজার বছর পরে কিংবা কিছুটা আগেই। কল্পিত লেখাটি সাজাতে গিয়ে লেখক চলে গেছেন ৩০১৩ সনের ঐতিহাসিকরূপে। তাদের চোখে দেখতে চেষ্টা করেছেন বর্তমান সময়ের কণ্টকপূর্ণ পৃথিবীকে। হাজার বছর ভবিষ্যতকালে গিয়ে ওখানে বসে বর্তমানকে অতীত বানানো কিছুটা কষ্টকল্পনা বৈকি! হয়তো লেখাটি অভিনব তথা নতুন চিন্তণের, যে কারণে মাঝে মধ্যে অযৌক্তিকতা চলে আসতে পারে কখনোবা! এ বিষয়ে মুক্তচিন্তাব্লগের বোধ্যা পাঠকের সুচিন্তিত সমালোচনা, মতামত,পরামর্শ প্রত্যাশা করি, যাতে পরবর্তী পর্বগুলো সংশোধিত হতে পারে প্রকাশের আগেই, ধন্যবাদ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন