সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব- ১১ # ১১৩

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব-১১
ইহুদি তথা ইসরাইল জাতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা এই যে, ইসরাইল একটি আগ্রাসী তথা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমারও ধারণা এমনই ছিল। এই কিউরিসিটি থেকে ইহুদি জাতি তথা ইসরাইল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে সহযোদ্ধা অনিমেষ রহমান। নানাবিধ বই-পুস্তক এবং বিশাল ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ইহুদি জাতির ইতিহাস জেনে বিষ্মিত হয়েছি। আজকের বিশ্বে তারা সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী কিনা তা সচেতন পাঠক বিবেচনা করবে। নিজে বিভিন্ন উৎস থেকে ঐ জাতিটার যে ইতিহাস জানতে পেরেছি, তাই ধারাবাহিকভাবে দিলাম ১-১৭ পর্বে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কারণে কোথাওবা ভিন্নতর তথ্য-কথামালা চলে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন পাঠকের যৌক্তিক সংশোধনী ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হবে। ঈদের ছুটিতে ১০-দিনের অবকাশে যাচ্ছি বিধায় একসাথে ৬-১৭ পর্ব আগাম পোস্ট দিয়ে গেলাম, যাতে এ জটিল বিষয়গুলো আগ্রহী পাঠকরা ছুটির মধ্যে শেষ করতে পারেন। ধন্যবাদ পাঠকদের।                                  ।
আধুনিক অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস  [ পর্ব  ১১ ]
 
ইহুদি নবী ইসাহ্‌ অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রচার শুরু করেন যে, এই যুদ্ধ যিহোভা ও অসুরের যুদ্ধ নয়। ইহুদি জাতি তাদের প্রভু যিহোভাকে ভুলে গেছে, তারা অন্যায় অনাচার করেছে তাই ইহুদিদের শাস্তি দেবার জন্য যিহোভা অ্যাসিরিওদের পাঠিয়েছেন। তাই এই অবাধ্য জাতিকে শাস্তি দেবার জন্য যিহোভা অ্যাসিরিওদের পাঠিয়েছেন। সুতরাং ইসাহ যে বাণী প্রচার করেন তার সারমর্ম হলো, যিহোভা-ই একমাত্র ও সত্যিকার দেবতা, তিনি শুধু প্যালেস্টাইল নন, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা। ইহুদি জাতি এই দেবতাকে ভুলে গিয়েছে বলে তিনি অ্যাসিরিওদের পাঠিয়েছেন ইহুদিদের সাজা দেবার জন্য। অ্যাসিরিওগণ সর্বশক্তিমান যিহোভার হাতের দন্ডবিশেষ যা অপরাধীদের শাস্তি দেবার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এইভাবে ইসাহ ক্ষুদ্র এক গোষ্ঠী-দেবতা যিহোভাকে সর্বশক্তিমাণ ঈশ্বরে রূপান্তরিত করে বিশ্বে প্রথম একেশ্বরবাদের প্রচলন ঘটান।
শেষ পর্যন্ত অনেকটা আকস্মিকভাবেই হিব্রুগণ অ্যাসিরিওদের হাত থেকে রক্ষা পায়। অবরোধ করে থাকা অ্যাসিরিও সৈন্য শিবিরে প্লেগ দেখা দেয়, ফলে রাতারাতি সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। বাধ্য হয়ে সম্রাট সিন্নেসেরাব অবরোধ তুলে নিয়ে বাকি সৈন্যসহ তার রাজধানী নিনেভে প্রত্যাবর্তন করতে এবং সেখানে সে তার পুত্রদের হাতে নিহত হন। এখানে উল্লেখ্য, অ্যাসিরিও শিবিরের ঐ মহামারী যিহোভার অবদান বলে দাবি করা হয়েছে ওল্ড টেস্টামন্টে। ইসাহ কর্তৃক প্রবর্তিত একেশ্বরবাদের ভিত্তি আরও দৃঢ় হয় পরবর্তীকালের নবী যিরিমিয়াহ্‌-র হাতে।
নবী যিরিমিয়াহ্‌-র মতবাদ প্রচারের সময় মোটামুটিভাবে ৬৩৫ থেকে ৫৮৬ খ্রি. পূর্বাব্দ পর্যন্ত ইসাহ্‌-র মতোই ইহুদি জাতির অপর এক বিপর্যয়ের মুহূর্তে আবির্ভূত হন যিরিমিয়াহ্‌। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অবস্থা পাল্টে গেছে। ৬১২ খ্রি. পূর্বাব্দে শক্তিধর অ্যাসিরিওদের পতন ঘটেছে যৌথ শক্তি মেডেস ও ক্যালিডিয়দের হাতে। অ্যাসিরিওদের স্থলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে ক্যালডিয়গণ। তাদের সম্রাট নেবুক্যাডনেজার মধ্যপ্রাচ্যের স্বাধীন রাজ্যগুলি দখল করে ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছেন। ৫৮৬ খ্রি. পূর্বাব্দে তিনি জেরুজালেম অবরোধ করেন। এবার পরাক্রমশালী ক্যালডিয়দের হাতে জেরুজালেমের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। এবারও ইহুদি জাতি পূর্বের মতোই অদৃষ্টনির্ভর হয়ে পড়েছিল। তারা আশা করেছিল হয়তো জিহোভা পূর্বের মতোই তাদের উদ্ধার করবে। এই সংকটময় মুহূর্তে যিরিমিয়াহ্‌ তার মতবাদ প্রচার করেন।
যিরিমিয়াহ্‌ ঘোষণা করেন, হিব্রু জাতি তাদের দেবতা যিহোভাকে ভুলে গিয়ে বৃক্ষ, শিলা প্রভৃতির উপাসনা করছে। তাই তাদের শাস্তি দেবার জন্য যিহোভা বিদেশিদের পাঠিয়েছেন। বিদেশিদের হাতে ইহুদিদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। যিহোভা ইহুদিদের পক্ষে আর নেই বলেই তাদের পরাজিত হতে হবে। ইহুদিদের ব্যাবিলনরাজ নেবুক্যাডনেজারের দাসত্ব করতে হবে। যিরিমিয়াহ্‌-র মতে যিহোভা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর খেয়ালখুশি মতো সব কিছুই করতে পারেন। তিনি যা করেন তা এক জাতির জন্য নয় বিশ্বের সব মানুষের কথাই মনে করে তা করে থাকেন। ইহুদিদের উচিত এই সর্বশক্তিমানের খেয়ালখুশির উপর নিজেদের সমর্পণ করে শুধু তাঁরই আরাধনা করা। এভাবে যিরিমিয়াহ্‌ যিহোভাকে বিশ্বের সব জাতির ঈশ্বর হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন।
যিরিমিয়াহ্‌-র ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হয়। ক্যালডিয়দের হাতে জেরুজালেমের পতন ঘটে ৫৮৫ খ্রি. পূর্বাব্দে। সম্রাট নেবুক্যাডনেজার অধিকাংশ ইহুদিকে বন্দী করে জেরুজালেম থেকে ব্যাবিলনে নিয়ে যায় দাস- শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য। সেখানে ইহুদিগণ বন্দী থাকে ৫৪৯ খ্রি. পূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই ঘটনা ইতিহাসে Babylonian Captivity নামে পরিচিত। হিব্রু ধর্মের বিকাশের আরও এক ধাপ সূচিত হয় এই ব্যাবিলনিয় বন্দী দশায়।
এরপর পর্ব  ১২
(এ পর্ব ভালভাবে বোঝার জন্য আগের পর্বগুলো পড়া আবশ্যক)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন