সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব- ১৭ # ১১৯

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব-১৭
                      
ইহুদি তথা ইসরাইল জাতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা এই যে, ইসরাইল একটি আগ্রাসী তথা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমারও ধারণা এমনই ছিল। এই কিউরিসিটি থেকে ইহুদি জাতি তথা ইসরাইল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে সহযোদ্ধা অনিমেষ রহমান। নানাবিধ বই-পুস্তক এবং বিশাল ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ইহুদি জাতির ইতিহাস জেনে বিষ্মিত হয়েছি। আজকের বিশ্বে তারা সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী কিনা তা সচেতন পাঠক বিবেচনা করবে। নিজে বিভিন্ন উৎস থেকে ঐ জাতিটার যে ইতিহাস জানতে পেরেছি, তাই ধারাবাহিকভাবে দিলাম ১-১৭ পর্বে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কারণে কোথাওবা ভিন্নতর তথ্য-কথামালা চলে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন পাঠকের যৌক্তিক সংশোধনী ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হবে। ঈদের ছুটিতে ১০-দিনের অবকাশে যাচ্ছি বিধায় একসাথে ৬-১৭ পর্ব আগাম পোস্ট দিয়ে গেলাম, যাতে এ জটিল বিষয়গুলো আগ্রহী পাঠকরা ছুটির মধ্যে শেষ করতে পারেন। ধন্যবাদ পাঠকদের।                                  ।
আধুনিক অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস  [ পর্ব  ১৭ ]
 
ইহুদিদের জন্য অন্যতম পবিত্র ও ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় বস্তু যার নাম আর্ক অফ দ্যা কভনেন্ট। আর্ক অফ দ্যা কভনেন্ট এর বাংলা মানে দাঁড়ায় চুক্তির সিন্দুক। এটাকে আর্ক অফ টেস্টিমনি বা বিবৃতিও বলা হয়। আর্ক অভ দ্যা কভনেন্ট সরাসরি সৃষ্টিকর্তার আদেশে হযরত মুসা  তৈরি করেন। বর্তমান ইসরায়েলের দখলকৃ্ত সিনাই পর্বতমালায় আল্লাহর সাথে কথা বলার সময় তিনি এই আদেশ পান। ধারণা করা হয়, আর্ক অভ দ্যা কভনেট একটি কাঠের বাক্স বা সিন্দুক, যেখানে লেখা রয়েছে স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত ১০ টি আদেশ। Book Of Exodus এবং Book of Number এর মতে, আর্কের ভেতরে রয়েছে ঈশ্বর প্রদত্ত খাদ্য এবং আসমানী কিতাব তাওরাত যা হযরত মুসা কর্তৃক স্বহস্থে লেখা। এর মানে হল, আল্লাহ  ইহুদিদের কাছে তার বার্তা দিয়েছেন এই আর্কের মধ্যে। Book of Exodus (বনি ইসরাইলিদের মিশর থেকে প্রস্থান) এর মতে, আল্লাহ হযরত মুসাকে নির্দেশ দেন আর্ক টি বানাতে। আর্কটি টি বানাতে হযরত মুসাকে সিনাই পর্বতমালায় থাকতে হয় প্রায় ৪০ দিন। হযরত মুসাকে দেখানো হয়েছিল কিভাবে আর্কটি বানাতে হবে। মুসা সেই অনুসারে বেজালেব এবং ওহলিয়াক কে নির্দেশ দেন কিভাবে আর্কটি বানাতে হবে। আর্কটির উচ্চতা হয় প্রায় আড়াই হাত এবং চওড়া হয় প্রায় দেড় হাত। সঠিক মাপটি হল (4.29 × 2.59 × 2.59 ফিট)। ইতিহাসে এবং বাইবেলের ভাষ্য অনুযায়ী, বনি ইসরায়েলরা যখন মিশর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে,তখন বনি ইসরায়েলের পুরোহীতরা সৈন্য বাহিনীসহ আর্কটি-কে জর্ডান নদীর প্রান্তে নিয়ে যায়। আর্কটি জর্ডান নদীর প্রান্তে আসা মাত্রই নদীটি দ্বীখন্ডিত হয়ে রাস্তা করে দেয়। 
সেই রাস্তা পার হয়ে বনি ইসরাইয়েল দল জেরিকো শহরে পৌছে। জেরিকো শহরে পৌছানোর পর পুরোহীতরা প্রায় ৭ দিন সৈন্য বাহিনী নিয়ে আর্কটিকে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করায়। ৭ম দিনে আর্কের ক্ষমতায় জেরিকো শহরের দেয়াল ভেঙ্গে পরে এবং জেরিকো শহর তাদের দখলে আসে। আর্কের ঐশ্বরিক ক্ষমতার কথা অনেক যায়গায়ই বলা হয়েছে। আর্ক অভ দ্যা কভনেন্ট ছিল এমন একটি বস্তু যা কিছু সংখ্যক মানুষ ছাড়া কেউ ই সেটাকে স্পর্শ করতে পারতে না। যদি কেউ করতো, তাহলে সে প্রাণঘাতী রোগের কবলে পরত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুসাও আর্কটি তৈরি করার সময় দুরত্ব বজায় রাখতেন। তিনি একটি বিশেষ পোশাক পরে আর্কটি তৈরি করেন। এ ছাড়াও বনি ইসরায়েলরা আর্ক পাহারা দেয়ার জন্যে আলাদা বাহিনী গঠন করেছিল। প্যালেস্টাইনিরা যখন ইহুদিদের কাছ থেকে জেরিকো শহর দখল নেয়, আর্কটি তখন ইহুদিদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। আর্কটি তখন হস্তগত হয় প্যালেস্টাইনিদের। তবে ইহুদিদের এই মহা মুল্যবান বস্তুটি প্যালেস্টাইনিদের জন্যে অভিশাপ বয়ে আনে। আর্ক এর ক্ষমতার কারণ জেরিকো শহরে ছড়িয়ে পরে প্লেগ-রোগসহ বিভিন্ন ধরনের টিউমার জাতীয় রোগ। এর কারণ আর্কটি সরিয়ে শহরের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আধুনিক মতবাদে বলা হয়েছে, আর্কটি হয়ত ছোটখাটো একটা নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর ছিল, যার প্রভাবে রেডিয়েশন ছড়িয়েছে এবং রোগ বালাই হয়েছে। বনি ইসরায়েল এর সর্বশেষ রাজা সলোমন যখন ফারাও এর মেয়েকে বিয়ে করেন, তখন তাদের থাকতে দেয়া হয় জিয়ন-এর বাহিরে একটি বাসায়। জিয়ন বানানো হয়েছিল আর্কটি রাখার জন্যে। ৫৮৬ খৃষ্টপূর্বে ব্যাবিলনিয়ানরা জেরুজালেম ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে আর্ক অফ দ্যা কভনেন্ট ও নিখোজ হয়ে যায়। কারণ এর পরে আর কোনো বইয়ে আর্কের কোনো কথা খুজে পাওয়া যায়নি। 
তবে গ্রিক এযরা বইয়ের ৩য় সংস্করণ বলা হয়েছে যে, ব্যাবিলনিয়ানরা জেরুজালেম ধ্বংসে করার আগে পবিত্র সব জিনিস আগে থেকেই সরিয়ে ফেলেছে। বইতে বলা হয়েছে, তারা ছোট বড় সব পবিত্র জিনিস, সৃষ্টিকর্তার দেয়া আর্ক এবং রাজার ধনসম্পদ ব্যাবিলনে নিয়ে গিয়েছে। র‍্যাবিনিক লিটারেচারে বলা হয়েছে, আর্কটির সর্বশেষ সংরক্ষণ গোপন করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, আর্কটি ব্যাবিলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা আর কখনোই ফেরত আসেনি। কেউ কেউ বলেন, ইথিউপিয়ায় রাজা সলোমনের সমাধিতে আর্কটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তবে সলোমনের সমাধি এখনো পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায়নি। খৃষ্টান সম্পর্কিত বই Book of Revelation  এ বলা হয়েছে, আর্কটি মহান সৃষ্টিকর্তার বেহেস্তে রয়েছে। তবে আর্ক অফ দ্যা কভনেন্ট সত্যিই আছে কিনা এ নিয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবীদ বিশ্বাস করেন, আর্কটি রয়েছে এবং হয়ত পৃথিবীর কোথাও রয়েছে।
                              
 (এ পর্ব ভালভাবে বোঝার জন্য আগের পর্বগুলো পড়া আবশ্যক)
লেখকের ফেসবুক ঠিকানা : https://www.facebook.com/DrLogicalBangal

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন