মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে যেভাবে বিতাড়িত করে : ইয়াজিদি ধর্ম সম্প্রদায় # ৩ [১৪৭]



ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে যেভাবে বিতাড়িত করে : ইয়াজিদি ধর্ম সম্প্রদায়
[ ৩-পর্বের ইয়াজিদি মানুষের গল্পের পর্ব নং ৩ ] শেষ পর্ব
:
আইএস ও সেক্স হাটে ইয়াজিদি নারী


আইএস জঙ্গিরা ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের যুবতি ও কিশোরিদের গণিমতের মাল হিসেবেই গ্রহণ করেছে এবং ওদের দেখলেই বলে, ‘আরে তোমরাতো সাবাইয়া। সাবাইয়া মানে কৃতদাসি যাকে ভোগ করা যায়। পত্রিকায় প্রকাশ মাউন্ট সিনজার এলাকা দখলের এক ঘণ্টার মধ্যেই নারী ও পুরুষদের আলাদা করে ফেলে আইএস গ্রুপ। পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। নারী, কিশোরি ও শিশুদের খোলা ট্রাকে তোলা হয়। ভূখণ্ড দখলের চেয়ে যৌনতা শুরু করাই ছিল আইএসের মাউন্ট সিনজার দখলের মূখ্য উদ্দেশ্য। অসংখ্য নারী ও মেয়েদের তোলা হতো, বাসগুলোতে তাদের একজনকে আরেকজনের কোলে বসতে বাধ্য করা হতো। বাস চলতে শুরু করলে তারা দেখল বাসের জানালাগুলো পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। যেহেতু তারা কোন বোরকা পরিধান করেনি এবং মাথায় ওড়না দেয়নি, তাই এ ব্যবস্থা করে আইএস। একজন পালিয়ে আসা নারী বলে, ‘তারা আমাদের দেখে হাসতে থাকে এবং বলতে থাকে তুমি একটা "সাবাইয়া"। পরে আইএসের স্থানীয় এক নেতা জানায়, সাবাইয়া মানে দাসী। সে আমাদের বলে, ‘তাউস মালিক (ইয়াজিদিদের প্রধান ৭ দেবতার একজন) সৃষ্টিকর্তা নয়। সে একটা শয়তান এবং যেহেতু তোরা তার প্রার্থনা করিস, তাই তোরা আমাদের অধিকারভুক্ত। আমরা চাইলেই তোদের সাথে সেক্স কিংবা তোদের বিক্রি করতে পারি।শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াজিদি গবেষক মি. বারবার জানান, ইয়াজিদিদের এ কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য সম্ভবত এটা যে, তারা বহুঈশ্বরবাদী এবং তাদের কোন লিখিত ধর্মগ্রন্থ নেই। তাদের ধর্ম মৌখিকভাবে প্রচারিত রীতিনীতির উপর চলে। আইএস তাদেরকে খ্রিস্টান ও ইহুদের চেয়েও জঘন্য পর্যায়ের বিধর্মী মনে করে। যেহেতু কুরআনে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের আহলে কিতাব (যারা ঐশীগ্রন্থের ধারক) বলা হয়েছে। সুতরাং সঙ্গত কারণেই ইয়াজিদিরা ইসলাম বিরোধি দল তথা ধর্ম। ইসলামিক স্টেট ঘোষণার পর থেকে প্রায় শপাঁচেক ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকদের প্রকাশ্যে হত্যা করেছে বাগদাদীর নেতৃত্বাধীন সুন্নি জঙ্গিরা। তারা ইয়াজিদি সম্প্রদায়কে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, নয়তো বাস্তুচ্যুত করছে করছে লুটপাট আর ধর্ষণ। পত্রিকায় প্রকাশ আইএস আক্রমনে সিনজার ও কুর্দিস্তানের প্রায় ৫০ হাজার ইয়াজিদি উত্তর ইরাকের সিনজার পর্বতে আটকা পড়েছেন। বিপজ্জনক সেই স্থানে খাদ্য ও পানীয়ের তীব্র সঙ্কট। অনেকে ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তের টাইগ্রিস নদী পার হয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে পৌঁছতে পেরেছেন। কিন্তু যারা তাৎক্ষণিক নিরাপদ ভেবে পাহাড়ের দিকে উঠে গিয়েছেন, সেই পাহাড় তাদের জন্য এখন বিপজ্জনক। পাহাড় থেকে নেমে আসার পথও বন্ধ করেছে আাইএস।
:
ইরাকি পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের একমাত্র ইয়াজিদি সাংসদ "ভিয়ান দাখিল" জানান, আমাদের পবিত্রস্থান নালিশ আজ নরকে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন এই প্রার্থনালয়টি ঘেরা ছায়া ঢাকা লোকালয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলেই ছিল আদম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত সেই স্বর্গ। সেই নালিশ আজ নরক। আমাদের অপরাধ আমরা নাকি শয়তানের পূজারি, সেজন্য আইএস জঙ্গিরা আমাদের পবিত্র স্থান ধ্বংস করে দিতে চায়, বাস্তুচ্যুত করেছে, করতে চায় ধর্মান্তরিত। এহেন সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি দমাতে পশ্চিমাদের এগিয়ে আসতেই হবে। নয়তো পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ধর্মানুসারীরা হারিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, তাদের পঞ্জিকা ৬ হাজার ৭৫৬ বছরের প্রাচীন। ইরাকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আজ ছড়িয়ে আছে। রহস্যাবৃত ইয়াজিদিরা সাম্প্রদায়িক হামলার অন্যতম শিকার। শয়তানের পূজারি হোক বা হোক মানুষ, তারা কি বিলুপ্ত হবে এ বিশ্ব থেকে?
:
ধর্মের নামে প্রাচীন আর মধ্যযুগে লাখো মানুষকে হত্যা করেছে এক ধর্মের মানুষ অন্যদেরকে। ২০১৫ সনেও কি ইয়াজিদি পুরুষদের হত্যা করবে বিশ্বের অন্য ধর্মের মানুষেরা? তাদের নারীদের করবে ধর্ষণ কিংবা বিক্রি সেক্স হাটে? কবে ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিবেধের পরাসমাপ্তি হবে? কবে দেখবো সুন্দর মানবতার অনুপম বিশ্ব? যেখানে মানুষ হিসেবে সবার পরিচয় হবে, ধর্ম হিসেবে নয়?
:
[প্রবন্ধটি লিখতে ইন্টারনেট, বিবিসি, উইকি, পত্রিকা থেকে নানাবিধ তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন