শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইহুদীদের ঘৃণা করে মুসলমানরা কি পেল? [ পর্ব-৩ ] : ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ # ৫৬

ইহুদীদের ঘৃণা করে মুসলমানরা কি পেল? [ পর্ব-৩ ]
শেষ পর্ব
[প্রায় ১৪০০-বছর ধরে ধর্মীয় কারণে মুসলিম ও ইহুদীদের মধ্যে বৈরিতা বিদ্যমান। কিন্তু কেন এ হানাহানি? আর এ বিরোধে কি পেল মুসলমানরা? ৩-পর্বের এ প্রবন্ধে তা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে যৌক্তিকভাবে]

ইতোপূর্বে বর্ণিত ২-পর্বের তথ্যচিত্রে মুসলিম দেশগুলো ভার্সাস ইহুদী-খৃস্টান দেশের তথ্যচিত্র তুলে ধরা হলো, যাতে মুসলমানগণ তাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন। ৫৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৫০০টি, অন্যদিকে শুধু আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ৫৭৫৭টি, যেখানে ভারতের মত দেশেও বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ৮৪০৭টি। শিক্ষার হারইহুদী-খৃস্টান সমাজে ৯৯%, মুসলমানদের মধ্যে ৪০%, ১৫টি খৃস্টান দেশে শিক্ষার হার ১০০%, অনেক মুসলমানে দেশে শিক্ষার হার খুবই হতাশাজনক মানে ৫-১০%। বর্তমানে যেখানে বিশ্বের সর্বত্র ১০০% খৃস্টান শিশু স্কুলে যায়, সেখানে গড়ে ৫০% মুসলিম শিশু স্কুলে যায়। যেখানে ৪০% খৃস্টান শিক্ষার্থী ভার্সিটিতে পড়ে, সেখানে ৩% মুসলিম শেষ পর্যন্ত ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায়। মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানী সংখ্যা ২৩০ জন, কেবল আমেরিকায় ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানী সংখ্যা ৫০০০ জন। গবেষণা ও উন্নয়নে মুসলিম দেশগুলো তাদের জিডিপির ০.২% ব্যয় করলেও, খৃস্টান দেশগুলো গড়ে ৫% জিডিপি ব্যয় করে। উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানীর দিক দিয়ে পাকিস্তান তার উৎপাদনের ১%, সৌদি আরব, কুয়েত, মরক্কো, আলজেরিয়া ০.৩% রপ্তানী করলেও, কেবল সিঙ্গাপুর তার উৎপাদিত পণ্যের ৫৮% রপ্তানী করে। আবিস্কার ও অন্যবিধ উন্নয়ন কার্যক্রমে বিশ্বের ১০৫ বছরের ইতিহাসে ১৮০ জন ইহুদী নোবেল পুরস্কার পেলেও, ৫৭টি দেশের ১৫০ কোটি মুসলমানের মধ্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংখ্যা সাকুল্যে ৮, যার মধ্যে শান্তিতে ৫ ও আবিস্কারের জন্যে মাত্র ৩ জন। এ তথ্যচিত্রই আমাদের বলে দেয়, মুসলমান হিসেবে আমাদের অবস্থান বর্তমান বিশ্বে কোথায়!

অথচ আমরা আমাদের উন্নয়নের কোন চেষ্টা না করে নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের নানাবিধ ফাঁদ তৈরী করছি। বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ তৈরী করে নিজেরা নিজেদের উপর বোমা, গ্রেনেড মারছি। বাংলাদেশে আদালতে আল্লাহর আইন প্রবর্তনের নামে বিচারকদের বোমা মেরে হত্যা করছি, আবার পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নী-মোহাজির নামে মসজিদে আক্রমন করে প্রায় প্রত্যহ নানাভাবে মানুষ হত্যা করছি। আধুনিক বিশ্বের মানুষ ও মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত কেবল ইহুদীদের নিন্দা না করে, তাদের সঙ্গে বৈরিতার পরিবর্তে তারা কিভাবে তাদের জাতিকে সংগঠিত করছে, বিশ্বের একটি মাত্র ইহুদী রাষ্ট্র হওয়ার পরও তাদের মধ্যে জাতিগত ঐক্য কিভাবে সংহত হচ্ছে, তাদের জাতির মধ্যে বিশ্বনিয়ন্ত্রক বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কিভাবে তৈরী হচ্ছে তার খোঁজ ও তাদের বিষয়ে গবেষণা করা। আরো গবেষণা করা দরকার, আজকের মুসলমানদের বর্তমান দূরবস্থার কারণ অনুসন্ধানের। ইহুদীদের জ্ঞানবিজ্ঞানে নিত্য নৈমিত্তিক উন্নতির ‘গোপন রহস্য’ এবং এর বিপরীতে মুসলমানদের প্রাত্যহিক হানাহানির ‘সঠিক কারণ’ নির্ধারণে গবেষণালব্দ ফল পেলে হয়তো মুসলিম জাতি ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। অন্যথায় চলমান সময়ে শুধু ইহুদীদের বদনাম ও গালি দিয়ে মুসলমানরা কোন উন্নতি করতে পারেনি কিংবা পারবে এমন কোন সম্ভাবনা আছে কি একুশ শতকের পৃথিবীতে?

আসলে মানুষ হিসেবে প্রত্যেক জ্ঞানী-গুণীকে শ্রদ্ধা জানাতে যেদিন পারবো আমরা, হোক সে মুসলিম কিংবা ইহুদী অথবা অন্য কোন ধর্মের অনুসারী কিংবা ধর্মের ব্যাপারে অনাগ্রহী কেউ। একই ভাবে মানুষ হয়েও পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে যারা, অকল্যাণে নিয়োজিত ধর্ম আর জাতির নামে, হোক সে মুসলিম কিংবা নন-মুসলিম, তাকে যেদিন সম্মিলত ঘৃণা করতে শিখবে সবাই, সেদিন অবশ্যই লাভ আমাদের হবে। মুসলিমদের মধ্যে এ চেতনা যতদিন জাগ্রত না হয়, ততদিন তারা যতই ইহুদীদের ঘৃণা করুক, ইসরাইলকে যতই ধ্বংস করতে চাক, নিজেদের উন্নতি তাদের ঘটবে না। এ সত্যটি যত তড়িৎ আমাদের মগজে ঢুকবে ততই আমাদের মঙ্গল। অন্যথায় “ইন্তে ইহাহুদ --- ইন্তে ইহাহুদ” বলতে বলতে আমরা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন