মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে যেভাবে বিতাড়িত করে : ইয়াজিদি ধর্ম সম্প্রদায় # ১ [১৪৫]

 

ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে যেভাবে বিতাড়িত করে : ইয়াজিদি ধর্ম সম্প্রদায়
[
৩-পর্বের ইয়াজিদি মানুষের গল্পের পর্ব নং ১ ]

:
২০১৫ সনে শেওলার মতো ভেসে বেড়ানো ইয়াজিদিগণ প্রধানত উত্তর ইরাকের 'নিনেভেহ' প্রদেশে বসবাস করে। ইরাকের সংখ্যালঘু এ ইয়াজিদি ধর্মীয় সম্প্রদায়টি মাউন্ট সিনজার উপত্যকা ও তৎসল্প বিভিন্ন গিরিখাতে নিজস্ব জীবন চেতনায় স্নাত এক জাতি। ইয়াজিদি বা এজিদি হচ্ছে একটি কুর্দি নৃ-ধর্মীয় গোষ্ঠী, যাদের রীতি-নীতির সাথে জরথুস্ত্র ধর্মমতের নৈকট্য তথা সাদৃশ্য রয়েছে। ইয়াজিদিগণ বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সাতটি পবিত্র জিনিস তথাা ফেরেশতার মাঝে এটাকে স্থাপন করেছেন। এই সাতজনের প্রধান হচ্ছেন, "মেলেক তাউস" তথা "ময়ুর ফেরেশতা"। ইয়াজিদিদের বর্ণিত তাউসের সাথে ইসলাম ধর্মে বর্ণিত শয়তানের বেশ সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এমনকি স্বর্গ থেকে শয়তান ও মেলেক তাউসের বিতাড়নের কাহিনি একই, মানে মাটি নির্মিত আদমকে সিজদা না করা।
:
ইরাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম ইয়াজিদি একটি রহস্যময় সম্প্রদায়। তুর্কীভাষিক ইয়াজিদি সম্প্রদায় প্রাচীন কাল হতে জরথুস্ত্রবাদ এবং মেসোপটেমিয়ার ধর্মীয় বিশ্বাস ও দর্শনের অনুসারী। পাশাপাশি তারা ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরান এবং খ্রিস্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেল উভয়কেই শ্রদ্ধা করে থাকে। পৃথিবীর নানা ধর্মের মিশেলে তৈরি ইয়াজিদিদের বিশ্বাস নিয়ে তাই রহস্য এবং ভুল-ধারণা কোনটির কমতি নেই। রহস্যময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কারণে এ ধারণা আরও বিস্তৃত লাভ করে।
:
ইয়াজিদিরা ইরাকের মোট ৩৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার মাত্র ১.৫ শতাংশ। ইরাক ছাড়াও জর্জিয়া এবং সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইয়াজিদিদের সাক্ষাৎ মেলে। অনেকের মতে, সমগ্র বিশ্বে সম্প্রদায়টির এক লাখের বেশি অনুসারী রয়েছে। তবে সম্প্রদায়টির নিজেদের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, তাদের সংখ্যা আট লাখের মতো। গবেষকরা বলছেন, ইরাকে ৬ লাখ ৫০ হাজার, জার্মানিতে ৬০ হাজার, সিরিয়ার ৫০ হাজার, রাশিয়ায় ৪০ হাজার ৫৮৬, আর্মেনিয়ায় ৩৫ হাজার ২৭২, জর্জিয়ায় ২০ হাজার ৮৪৩, সুইডেনে ৪ হাজার, তুরস্কে ৩৭৭, ডেনমার্কে ৫০০ মিলে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সাকুল্যে ৭ লাখের বেশি নয় এ পৃথিবীতে।
:
ইয়াজিদিরা ইহুদি ও ইসলামের মত একেশ্বরবাদী। তাদের সর্বোচ্চ দেবতার নাম ইয়াজদান। যিনি সাতটি মহাত্মার উৎস এবং এর মধ্যে প্রধান 'মালিক তাউস। জরথুস্ত্রবাদের রীতি অনুসারে মালিক তাউসকে তারা ময়ূরদূত বা প্রধান দূত হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসলাম এবং খ্রিস্ট ধর্মানুসারেও মালিক তাউস হলো ইবলিশ শয়তান। ইয়াজিদিরা মালিক তাউসকে একজন পতিত দূত মানতে নারাজ বরং তারা বিশ্বাস করে মালিক তাউস হলো একজন সম্মানিত দূত। যার নাম সচরাচর ইয়াজিদিরা মুখে উচ্চারণ করে না। এছাড়া ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে, তারা আদমের সন্তান শহীদ বিন জাবের বংশধর। এবং অন্যান্য মানব জাতি আদম-হাওয়া দুইজনেরই বংশধর। এই কারণে ইয়াজিদিরা অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দূরে থাক, মেলামেশা করা থেকেও নিজেদের বিরত রাখে তারা সযতনে। ইয়াজিদিরা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের সামনে নিজেদের ধর্মীয় রীতি-অনুষ্ঠান কোন কিছুই পালন করে না। তাদের আচার-অনুষ্ঠান সবটাই অত্যন্ত গোপনে পালন করা হয়, যাতে কেউ না দেখে।
:
ইয়াজিদিরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে। নিভেজা বেরিস্পেদে (ভোরের বা ফজরের নামাজ), নিভেজা রোঝিলাতিনে (সূর্যোদয়ের নামাজ), নিভেজা নিভ্রো (দুপুরের বা যোহর নামাজ), নিভেজা এভারি (বিকেলের বা আসর নামাজ), নিভেজা রোজাভাবুনে (সূর্যাস্তের বা মাগরিব নামাজ)। বর্তমানে ইয়াজিদিগণ শুধুমাত্র সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের নামাজ পড়ে থাকে, বাকিগুলো তেমন পড়ে না। সূর্যোদয়ের নামাজের সময় ইয়াজিদিগণ সূর্য পূজারীদের মত সূর্যের দিকে এবং সূর্যাস্তের নামাজের সময় লাল আভার দিকে মুখ করে থাকে। দিনের সকল নামাজ সূর্যের দিকে ফিরে পড়া হয়। বহিরাগতদের উপস্থিতিতে দিবসের নামাজ পড়া হয় না। বুধবার হচ্ছে তাদের পবিত্র দিন এবং শনিবার বিশ্রাম দিবস। ডিসেম্বর মাসে তারা তিন দিনের রোজা পালন করে। 
:
ইয়াজিদি সম্প্রদায় একই সঙ্গে আলো ও অন্ধকারেরও পূজো করে। তবে বিশেষভাবে সূর্যের উপাসনা করা তাদের ধর্মের অন্যতম অনুষঙ্গ বা রীতি। তাদের মধ্যে পশু কোরবানি ও খতনা করার প্রথাও প্রচলিত ইহুদি মুসলিমের মতই। তবে শুধু জন্মসূত্রেই কেউ এই ধর্মের অনুসারী হতে পারে, ধর্মান্তরসূত্রে নয়। মালিক তাউস আসলে শয়তানের অপর নাম। সে কারণে ইয়াজিদিদেরকে অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান শয়তানের উপাসক বলেও মনে করে। তবে কুর্দিশ ভাষাতাত্ত্বিক জামেল নেবেজের মতে, তাউস শব্দটি গ্রিক যার অর্থ "সৃষ্টিকর্তা"।
:
ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ইরাক এর উত্তর মসুলের লালিস এ অবস্থিত শেখ আদি ইবনে মুসাফির (সেক সাদি) এর মাজারে সাতদিনের হজ্বব্রত বা তীর্থভ্রমণ পালন। যদি সম্ভব হয়, প্রত্যেক ইয়াজিদি তাদের জীবদ্দশায় একবার সেক সাদির মাজারে তীর্থভ্রমণের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। তীর্থভ্রমণের সময় তারা নদীতে গোছল করে। তাউস মেলেকের মূর্তি ধৌত করে এবং শেখ সাদির মাজারে শত প্রদ্বীপ জ্বালায়। এই সময়ে তারা একটি ষাঁড় কুরবানি করে।
:
যখন দিন ও রাত্রি সমান হয় অর্থাৎ বিষুবরেখার পর বসন্তে তাদের নতুন বছরের শুরু হয়। এ সময় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং নতুন পোশাক পরিধানের মধ্য দিয়ে নতুন বছর উদযাপন করে তারা। এছাড়া তাদের আরেকটি প্রধান উৎসব হলো, ময়ূর পরিবেষ্টন। ইয়াজিদি গ্রামে ময়ূর-এর পবিত্র ছবি পরিবেষ্টনের মাধ্যমে এই উৎসব পালন করা হয়। মূলত মালিক তাউসের প্রতীক হলো এই ময়ূর। এ সময় ধর্মীয় বাণী প্রচার এবং পবিত্র পানি বিতরণ করা হয় সাধারণ ইয়াজিদিদের মধ্যে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ ইয়াজিদিদের বার্ষিক তীর্থ যাত্রার সময়।
[
একটু পরেই পাবেন পর্ব # ২]


 https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1710933292474153&set=a.1381466915420794.1073741828.100006724954459&type=3&theater&notif_t=like

1 টি মন্তব্য:

  1. Sands Casino Resort, Lake Tahoe, Nevada, US | $500 Bonus
    Sands kadangpintar Casino Resort, Lake Tahoe, Nevada, US. septcasino $500 Bonus | 1xbet $500 Promo Code. Deposit $10 and receive 200 Free Spins.

    উত্তরমুছুন