শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মৃতের লাশ কবর থেকে তুলে নাচ-গান-আনন্দের উৎসব যেখানে ‘ফরজ’ কাজ # ৭৯



মাদাগাস্কারের ধর্মীয় রীতি :
মৃতের লাশ কবর থেকে তুলে নাচ-গান-আনন্দের উৎসব যেখানে ‘ফরজ’ কাজ

ভারত মহাসাগরে বিশাল দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কার। রাজধানীর নাম আন্টানানারিভো। আয়তন ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১ বর্গ কি.মি.। লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। পূর্ব নাম মালাগাছি। সে কারণে মাদাগাস্কারের অধিবাসীরা অফিসিয়াল হিসেবে মালাগাছি, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ভাষা ব্যবহার করে। ১৯৬০ সালের ২৬ জুন মালাগাছি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মাদাগাস্কার’। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, আজ থেকে প্রায় ৮০ মিলিয়ন বছর আগে মাদাগাস্কার বা মালাগাছি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের অধীনে একটি দ্বীপ। পরবর্তীতে এই দ্বীপ উত্তর আফ্রিকা মহাদেশের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে ৫০০ বছর আগে এ দ্বীপে লোকবসতি গড়ে ওঠে। মাদাগাস্কারের দক্ষিণে রয়েছে মরিসাস, পূর্বে সিসিলি, উত্তরে মোজাম্বিক ও পশ্চিমে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভূ-প্রকৃতির দিক দিয়ে মাদাগাস্কার পৃথিবীর ৪৬তম বৃহৎরাষ্ট্র, আর দ্বীপ হিসেবে চতুর্থ রাষ্ট্র। মাদাগাস্কারের চারদিকে রয়েছে অসংখ্য সোনালি পাহাড়। বাড়িঘরগুলো পাহাড় কেটে তৈরি বিধায় ছোট ছোট, দূর থেকে দেখতে দ্বীপের মতো মনে হয়। প্রাচীন এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সাক্ষরতা হার বর্তমানে ৪৭ শতাংশ। সবদিক বিবেচনায় মাদাগাস্কার পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন দেশ হিসেবে বিবেচিত।

ফামাদিয়েনা ধর্মীয় রীতি (Famadihana : Transformations of Secondary Burial)
বিচিত্র পৃথিবীর মানুষ, তার ধর্ম আর তার ধর্মীয় রীতিনীতি। মৃত্যুর পর সাধারণত সকল ধর্মের মানুষই মৃতকে অত্যন্ত সম্মান আর যত্নে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। কিন্তু মাদাগাস্কারে মৃতকে দাফনের পর আবার কি উঠিয়ে আনা হয় তাকে? হ্যা, এমন প্রথার নাম ‘ফামাদিয়েনা’ যা প্রচলিত মাদাগাস্কার মালাগাছি জাতি গোষ্ঠির মধ্যে। নিকট আত্মিয় মৃত্যবরণ করার পরে সাধারণ নিয়মেই কফিনে কবর দেওয়া হয় সেখানে। আর কফিনের মধ্যে থাকায় দেহটি মাটির সংগে না মিশে শুকিয়ে অনেকটা মমির আঁকার ধারণ করে। কয়েক বছর পরে এই মৃত দেহ পুনরায় কবর থেকে বের করে তাকে গোছল করিয়ে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে সাজানো হয় নতুন ভাবে। এসময় মৃতদেহকে ঘিরে জাকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পরিবার আর সমাজ। নতুন সাজানো মৃতের হাড় নিয়ে নাচ, গান, মিউজিক বাজাতে বাজাতে পুরো এলাকা আনন্দের মাঝে প্রদক্ষিণ করে মৃতের স্বজনরা। সবাইকে খুব হাসিখুশি দেখা যায় তখন। এর পরে তাকে পুনরায় কবর দেওয়ার আগে পশু জবাই করে রীতিমত খাওয়া দাওয়ার বিশাল আয়োজন। তারপর উৎসবের রীতিতে ২য় দফায় মৃতকে রাখা হয় আগের কবরে কিংবা নতুন কোন কবরে।

মালাগাছির মানুষ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে এভাবে তাদের মৃত আত্মীয়দের আত্মার পবিত্রতা তথা স্বর্গ নিশ্চিত করণে এ কাজটি করে অনেকটা ‘আবশ্যিক’ (ফরজ) কর্ম হিসেবে। আর এটা তাদের কাছে যেমন ‘পবিত্র’ তেমনি অনেক আনন্দেরও। কেননা, বহু বছর পরে তাদের ছেড়ে যাওয়া আত্মীয় আবার তাদের মাঝে ফিরে আসে অনেকটা শুভ আর কল্যাণের বার্তা নিয়ে। এ রীতিটি বাধ্যতামূলক পালন করে মাদাগাস্কারের হাইল্যান্ডের ‘মিরিনা’ ও ‘বেতসিলো’ মানুষেরা।

বিশ্বের মানুষের ধর্মীয় কর্মকান্ড যতই দেখছি, জানছি, বোঝার চেষ্টা করছি; ততই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করছি নিজেকে, কোনটি ভুল আর কোনটি সঠিক? সবতো অবশ্যই সঠিক নয়। তবে সে সত্যটি কিভাবে খুঁজে পাবো এ আজব মানুষ আর তার রীতিনীতির মাঝে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন