বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইসলামি শিরোচ্ছেদ (কতল-কিসাস) ও রজম : প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে [ পর্ব - ৬ ] # ১৪৩

ইসলামি শিরোচ্ছেদ (কতল-কিসাস) ও রজম : প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে [ পর্ব - ৬ ]
এ লেখাটি কয়েকটি পর্বে সমাপ্ত হবে, সম্পূর্ণ লেখাটির জন্যে এখানে চোখ রাখুন
শিরচ্ছেদ প্রথাটি কোথায় কোথায় এখনো প্রচলিত ?

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে হাজার বছর ধরে তলোয়ার বা কুড়াল দিয়ে শিরচ্ছেদ করার নির্মম নৃশংসপন্থা প্রচলিত। শুধু আরব নয়, ইউরোপ এশিয়া এবং আফ্রিকাতেও গিলোটিন/বলি ইত্যাদির মাধ্যমে এই নিষ্ঠুর অমানবিক প্রথা কার্যকর হয়েছে। তবে পার্থক্য এটাই যে, বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে এই অমানবিক শিরচ্ছেদ প্রথার বিরুদ্ধে উন্নত বিশ্বের জনগণ সোচ্চার হওয়া শুরু করে এবং বর্তমানে অনেক সভ্য রাষ্ট্রই এই প্রথাকে পরিত্যাগ করেছে এমনকি কতিপয় রাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ডকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে পশ্চিমা রাষ্ট্রে এই অমানবিক নির্মম নৃশংস প্রথার বিরুদ্ধে মানুষের চোখ খুলে গেছে, সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় ইসলামিক রাষ্ট্রে এখনো প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু হওয়া এই আদিম-মধ্যযুগীয় বর্বর প্রথা আজো অনুসরণ করে যাচ্ছে। সৌদি আরব, ইয়েমেন, কাতার, ইরান, ইরাক এবং তালেবানী আফগানিস্তানে এই প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিলো এবং আছে।

এছাড়াও আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, কাশ্মীর, চেচনিয়া, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনে শিরোচ্ছেদের কিছু ঘটনা নিকট অতীতে দেখা গেছে। ইরানের মোল্লারা কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের শিরোচ্ছেদকরণ করেছে। বৈরুতের সিআইএ স্টেশন চীফ উইলিয়াম বাকলিকে হিজবুল্লাহ গং অপহরণ করে ইরানে পাঠিয়ে দেয় এবং ১৯৮৬ সালে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়। পাকিস্তানে ২০০২ সালে নামকরা আমেরিকান সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের শিরচ্ছেদ করা হয়।
হত্যার বদলে হত্যা কি আদৌ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ?

আরবী শব্দ কিসাসের অর্থ প্রতিশোধ। ইসলামিক শরীয়াহ আইনে চোখের বদলে চোখ, প্রাণের বদলে প্রাণ নেওয়ার প্রতিশোধমূলক আইন এই কিসাস। সুরা বাকারার ১৭৮ নং আয়াতে বলা আছে -
O you who believe, equivalence is the law decreed for you when dealing with murder – the free for the free, the slave for the slave, the female for the female. If one is pardoned by the victim’s kin, an appreciative response is in order, and an equitable compensation shall be paid.
উপরে উল্লেখিত সুরা মায়িদাহর ৪৫ নং আয়াতে একই বক্তব্য রয়েছে ।
কোরান হাদিসের আলোকে ৮ বাংলাদেশীর শিরশ্ছেদকরণের নৃশংসতা এবং প্রকৃত মুসলিম সম্পর্কিত বিতর্ক
এমনেস্টি ইণ্টারন্যাশনালের সূত্রমতে পৃথিবীর ১৩৯টি দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ এবং ২০১০ সালে মাত্র ২৩টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
According to Amnesty International, 139 countries have abolished the death penalty. In 2010, only one country, Gabon, abolished the death penalty for all crimes. During 2010, 23 countries executed 527 prisoners and at least 2,024 people were sentenced to death in 67 countries. More than 17,833 people are currently under sentence of death around the world. See also U.S. Figures.
দেখা যায়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০টি রাষ্ট্রের ৯টি রাষ্ট্রেই ডেথ পেনাল্টি নিষিদ্ধ – ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে। ডেথ পেনাল্টি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে কি এসব দেশে মানুষের মত অপরাধ ও দুর্নীতি করার সাহস বেড়ে গেছে ? তারা কি আইনভঙ্গ করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে ? এসব অনেক দেশেই এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অজস্র মানুষ পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করে, কেননা এসব দেশে অপরাধ, হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি অত্যন্ত কম।
আবার ডেথ পেনাল্টি যেসকল দেশে কার্যকর, সেসকল দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। শীর্ষ ১০ দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, চাদ, ইকোয়েটারিয়াল গিনিতে ডেথ পেনাল্টি বলবত আছে, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে সম্প্রতি এটি ব্যান করা হয়েছে, মায়ানমারে শুধু নামকাওয়াস্তে ডি-ফ্যাক্টো ব্যান রয়েছে।
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সৌদি আরব ১ম নয় বরং ৫০ তম স্থানে রয়েছে, উল্লেখ্য, সৌদি আরবের অতি রক্ষণশীলতার কারণে যৌনঘটিত/নারীঘটিত অনেক অপরাধই লুক্কায়িত থেকে যায় তাই সঠিক ফলাফল আসেনা, উপরন্তু এই রকম কঠোর রক্ষনশীলতায় ট্রান্সপারেন্সি ইণ্টারন্যাশনালের লোকজনও সাচ্ছন্দে ডাটা কালেক্ট করতে পারেনা। শিরচ্ছেদ প্রচলিত আরো তিনটি দেশ ইরান ইয়েমেন এবং ইরাক সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যথাক্রমে ১৪৬,১৪৬ এবং ১৭৫তম (৩য় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত) ।
তাহলে ডেথ পেনাল্টি দিয়েও দেখা যাচ্ছে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটেনি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হ্রাস পায়নি।
তাই যারা বলেন – ডেথ পেনাল্টি দিয়ে মানুষকে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে নিবৃত্ত করবেন, তারা সেটা তাদের বাস্তবতাবিবর্জিত অজ্ঞতা থেকেই বলেন।

সৎ-মাকে বিয়ে করলে নবী তার মাথা কেটে আনার জন্যে আবু বুরদাকে প্রেরণ করেন (তিরমিযী-১৩০০)
পিতাকে খুনের জন্যে ছেলের কিসাস (হত্যা) হলেও, ছেলেকে খুনের জন্যে পিতার কিসাস হবে না (তিরমিযী-১৩৩৯-৪১)
যারা যেনাকারীকে পাথর মেরে হত্যা করবেনা তারা পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ হবে (বুখারী-৬৩৫৬)।
কিসাসের কারণে কোন অমুসলিমকে হত্যার জন্য কোন মুসলমানের প্রাণসংহার করা যাবেনা (বুখারী-৬৪৩৫)।
কতিপয় নাস্তিককে আলীর কাছে আনা হলে, আলী তাদের পুড়িয়ে হত্যা করলেন [যদিও নবী কাউকে পুড়িয়ে হত্যা নিষেধ করেছিলেন] (বুখারী-৬৪৪২)।
পাথর মেরে হত্যা করা হবে জেনেও, আসলাম গোত্রের জনৈক লোক নবীর কাছে এসে বললেন, তিনি যেনা করেছেন। অতঃপর তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হয় ও নবী তার জানাযা পড়ান (বুখারী-৬৩৫০)।
কেবল অভিযোগকারীর একমাত্র স্বাক্ষীতেই নবী জনৈক অপরাধীকে ২-পাথরের মাঝে রেখে হত্যার নির্দেশ দেন (বুখারী-৬৩৯৮)।
লেখাটি প্রস্তুতে বিভিন্ন ব্লগ ও নেট থেকে তথ্য সহায়তা নেয়া হয়েছে)
[এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত পোস্ট পাবেন আজই পরবর্তী পর্বগুলোতে। এরপর পর্ব ৭ ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন