সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব- ১৬ # ১১৮

ইহুদি (ইসরাইলি) জাতির পৃথিবীতে টিকে থাকার ইতিহাস পর্ব-১৬
                                            
ইহুদি তথা ইসরাইল জাতি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা এই যে, ইসরাইল একটি আগ্রাসী তথা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমারও ধারণা এমনই ছিল। এই কিউরিসিটি থেকে ইহুদি জাতি তথা ইসরাইল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি, যাতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে সহযোদ্ধা অনিমেষ রহমান। নানাবিধ বই-পুস্তক এবং বিশাল ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করে ইহুদি জাতির ইতিহাস জেনে বিষ্মিত হয়েছি। আজকের বিশ্বে তারা সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী কিনা তা সচেতন পাঠক বিবেচনা করবে। নিজে বিভিন্ন উৎস থেকে ঐ জাতিটার যে ইতিহাস জানতে পেরেছি, তাই ধারাবাহিকভাবে দিলাম ১-১৭ পর্বে। ভিন্ন ভিন্ন সূত্র থেকে নানাবিধ তথ্য সংগ্রহের কারণে কোথাওবা ভিন্নতর তথ্য-কথামালা চলে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সচেতন পাঠকের যৌক্তিক সংশোধনী ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হবে। ঈদের ছুটিতে ১০-দিনের অবকাশে যাচ্ছি বিধায় একসাথে ৬-১৭ পর্ব আগাম পোস্ট দিয়ে গেলাম, যাতে এ জটিল বিষয়গুলো আগ্রহী পাঠকরা ছুটির মধ্যে শেষ করতে পারেন। ধন্যবাদ পাঠকদের।                                  ।
আধুনিক অসাম্প্রদায়িক মানুষের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস  [ পর্ব  ১৬ ]


পক্ষান্তরে ইসরাইলকে ঘিরে থাকা আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইল সম্পর্কে কোনো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে না কোনভাবেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে দেখা দিয়েছে গুরুতর মতবিরোধ। কেবল আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই নয়, ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যেও হতে দেখা যাচ্ছে কঠিন রাজনৈতিক বিভক্তি, যা ইসরাইলের হাতকেই শক্তিশালী করছে। সৌদি আরবও মিসর যেন ইসরাইলের চেয়ে হামাসকেই  অধিক বিপজ্জনক বলে ভাবতে শুরু করেছে। তারা মনে করছে, হামাসকে নির্ভর করে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে একই রকম ইসলামি বিপ্লবের ধারণা। সেটা মিসর  বর্তমান সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর মোটেওকাম্য নয়।
ইহুদি ধর্মাবলম্বী কোনো মেধাবী ইহুদী ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য চিন্তা করতে হয় না। এখনো বহু ওয়েব সাইটে এদের জন্য দান গ্রহণ করা হয়। তারা প্রধানতঃ মাতৃতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখে। কমিউনিটির কেউ বিপদে পড়লে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন অনেক ওয়েব সাইট আছে যেখানে ইহুদি পরিবারগুলোর বংশ-লতিকা বা ফ্যামিলি ট্রি তৈরি করতে সাহায্য করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধাওয়া খেয়ে ইহুদিরা বহু দেশে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের স্বপ্নভূমির কথা কখনো ভোলোনি। এক্ষেত্রে তারা কট্টর ও চরমপন্থি। কারণ মিডল ইস্টের কোনো এক জায়গায় তাদের জন্মভূমি ছিলো তিন হাজার বছর আগে সেই যুক্তিতে তারা স্বপ্নকে আঁকড়ে রাখে। বর্তমান বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা দেড় কোটির কিছু বেশী। তা-ও তারা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দেশে। যেমন আমেরিকায় আছে প্রায় ৬১ লাখ, ইসরেলে আছে প্রায় ৫লাখ, কানাডায় আছে প্রায় ৪ লাখ, বৃটেনে প্রায় ৩ লাখসহ ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, অষ্ট্রেলিয়া, পোল্যাণ্ড, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইউক্রেন, ওয়েস্টার্ণ ইউরোপ, ইথিওপিয়া প্রভৃতি দেশে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি হলেও, বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি। প্রধান ধর্মগুলোর পর পৃথিবীতে যে মতবাদটি সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছে সেই কমিউনিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা কার্ল মার্কস ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদু শিল্পি হুডিনি ও বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড এসেছেন একই কমিউনিটি থেকে। আর আছে, মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড। লেখকদের মধ্যে আর্থার মিলার, ফ্রানজ কাফকা, জন ষ্টাইনব্যাক যেমন এসেছেন তেমনি এসেছেন সাইন্স ফিকশান জগতের সবচেয়ে আলোচিত লেখক আইজাক আসিমভ। মিউজিকে ইহুদি মেনুহিনের অসাধারণ ভায়োলিনের পাশাপাশি রিঙ্গো ষ্টার, মার্ক নাফলারের মতো বাদক যেমন এসেছেন তেমনি বব ডিলান, বব মার্লির মতো গায়কও এসেছেন।
মুসলমানরা বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ইসরাইল ভূমধ্য সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। ইসরাইলের রাজধানীর নাম জেরুজালেম। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রই ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় ভাষা হিব্রু ও আরবি। ২০ বর্গ কিলোমিটারের এই রাষ্ট্রটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই ইহুদি ধর্মাবলম্বী ইসরাইল রাষ্ট্রটির জন্ম ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শিতা এবং ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরস্কে মুসলিম খিলাফত ভেঙ্গে যায়। ব্রিটিশ বাহিনী ১৯১৭ সালে মুসলিম শাসন থেকে ইরাক, সিনাই উপত্যকা, ফিলিস্তিন  জেরুজালেম দখল করে নেয়।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সহ বেশিরভাগ আরব এলাকা চলে যায় বৃটিশ  ফ্রান্সের দখলে১৯১৭ সালের ২-নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদিবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে প্রাক্তন কেনান তথা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। নানা জাতি কর্তৃক নিজ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত ইহুদিদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ার পর বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে (কেনানে) এসে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে (প্রাক্তন কেনান) আসা শুরু করলে ১৯০৫ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা কয়েক হাজারে উন্নীত হয় কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজারে উন্নীত হয়। ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ হাজারে পৌঁছে। ধীরে ধীরে বিশ্বের মধ্যে ইসরাইল ভূখন্ড ইহুদিদের জন্য নিরপরাধ ও স্বাধীন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠার ফলে, সেখানে ইহুদির সংখ্যা দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩১ সালে ইহুদিদের সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছায় এবং ১৯৪৮ সালে সেখানে ইহুদিদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। ১৯১৮ সালে ব্রিটেনের সহযোগিতায় ইসরাইলের গুপ্ত ইহুদি বাহিনী "হাগানাহ" গঠিত হয়। ইসরাইলের বর্তমান জনসংখ্যা ৭৫ লক্ষ ৪০ হাজার।

এরপর পর্ব  ১৭
(এ পর্ব ভালভাবে বোঝার জন্য আগের পর্বগুলো পড়া আবশ্যক)
লেখকের ফেসবুক ঠিকানা : https://www.facebook.com/DrLogicalBangal

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন