সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা - ৩য় পর্ব # ১৩৫

৩০১৫ খৃস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সনের পৃথিবীর ইতিহাস : পর্ব-৩
২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের অবস্থা

২০১৫ সন পূর্ববর্তী মানুষের জীবনের আনন্দময়তা আর চলমানতা হঠাৎ থেমে গিয়ে যে কোন মানুষ নানাবিধ রোগ আর অজানা কারণে জড় পদার্থে পরিণত হতো প্রতিমূহূর্তে, এর নাম ছিল ‘মৃত্যু’। অজানা এই হিমশীতল মৃত্যু নিয়ে ঐ সময়ের মানুষের মধ্যে ছিল ভীতিকর আতঙ্ক আর ভয়। অনেকেই মৃত্যুর পর আরেক জগতে বিশ্বাস করতো। কল্পিত যে জগত ছিল ঐ সময়ের পৃথিবীর কষ্টকর আর প্রতিনিয়ত সংগ্রামের কষ্টকর জীবনের তুলনায় অনেক প্রশাস্তিময়। ঐ সময়ের অসহায় মানুষ তার পৃথিবীর কষ্টকে লাঘবের মানসে, এক কল্পিত স্বপ্নের সুন্দর জগতের কথা চিন্তা করতো, যা সে পৃথিবীতে পায়নি কখনো কিন্তু স্বপ্ন আর কল্পনায় দেখেছিল ঐ জগতকে। তার এ স্বপ্ন আর কল্পনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্যে ঐসব অসহায় মানুষের সামনে চলে এসেছিল অনেক রূপে আর বর্ণনায় নানাবিধ ধর্ম আর তার হরেক রকম রসাত্মক কিসসা-কাহিনী। প্রত্যেকটি ধর্মই কমবেশী মৃত্যু পরবর্তী এক চমৎকার সীমাহীন ‘ভোগবাদী’ আনন্দময় ও বিপরীত দিকে ভয়ংকর শাস্তিপূর্ণ অনন্ত জীবনের কথা বলতো ধর্মপুস্তকগুলোতে, আর শোনাতো এ জীবনে যা তারা পায়নি তা পাওয়ার লোভনীয় কিসসা। যেহেতু মানুষগুলোকে অসহায়ভাবে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হতো, তাই হাতে গোনা ২-৪ জন বাদে প্রত্যেকেই ঐ অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করে পবিত্র ও শান্তিময় মৃত্যু কামনা করতো। এ জন্যে মৃত্যুর সময় ও মৃত্যু পরবর্তী নানাবিধ পবিত্র ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করা হতো মৃত্যু-পরবর্তী পরম শান্তি কামনায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে, যা আমরা আলোচনা করবো পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে পর্যায়ক্রমে।

এখন তাহলে প্রশ্ন আসবে এতো মৃত্যুর শূন্যতা তাহলে পুরণ হতো কিভাবে? ঐ সময়ের মানুষ কি ফ্যাক্টরীতে নতুন মানুষ উৎপাদন করতো? হ্যা, মৃত্যুর মত জন্ম ছিলো ঐ সময়ের একটি নিত্য নৈমিত্তিক সাধারণ ব্যাপার। প্রাত্যাহিক হাজারো মৃত্যুর মত লক্ষাধিক মানুষ জন্ম নিত প্রায় প্রতিদিনই। আজকের সময়ে যখন কোন মানুষকে সৃষ্টির জন্যে ‘ক্লোন কমিটির’ অনুমোদন সাপেক্ষে একজন ‘আইনস্টাইন’, ভ্যানগগ কিংবা ‘স্টিফেন হকিং’ এর ক্লোন বের করা হয়, তেমনটি কিন্তু ছিলনা ঐ সময়ে। কোন বৈধ ‘বিবাহিত দম্পতি’ মানব সন্তান জন্ম দিতে চাইলে, তাদের নিতে  হতো বিশেষ প্রস্তুতি। এ ক্ষেত্রে ‘বিবাহিত দম্পতি’ বলতে রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক ‘প্রজনন’ বা ‘সন্তান উৎপাদনের বৈধ লাইসেন্স’ প্রদান বা অনুমোদনকে বোঝানো হতো। এইরূপ লাইসেন্সধারী দম্পতি-ই কেবল বৈধ মানব শিশু জন্ম দেয়ার অধিকার রাখতো, লাইসেন্সহীন পুরুষ-মহিলা মিলে কোন সন্তান জন্ম দিলেও সমাজ ও রাষ্ট্রে তার ‘বৈধতা’ ছিলনা, এমনকি সমাজে ঐ দম্পতি ও তাদের সন্তানকে নানারূপ নেতিবাচক আচরণ ও নিগৃহীত হতে হতো পদে পদে। তবে লাইসেন্সধারী কিংবা লাইসেন্সহীন উভয় শ্রেণির মানব শিশু ও অন্যান্য ইতর প্রাণির জন্ম প্রক্রিয়াও ছিল বেশ জটিল, কষ্টকর, সময় সাপেক্ষ এবং প্রায় একই রূপে। এ জন্যে দম্পতির ফিমেল প্রজাতিটির পেটে বা জঠরে প্রায় ৯-মাস কাটাতে হত ভ্রুণ থেকে সম্পূর্ণ মানব শিশু রূপান্তর প্রক্রিয়ায়। তারপরও সেটি যে প্রক্রিয়ায় মায়ের পেটের বাইরে বিশ্বের আলো-বাতাসে আসতো, তা ছিল বেশ জটিল, ভয়ংকার ও বিপদজনক। 

জন্ম দেয়া প্রক্রিয়ায় অনেক মা-ই মারা যেত পেটের সন্তানসহ কিংবা সন্তান পৃথিবীতে ঠেলে দিয়ে, জীবন-মৃত্যুর এরূপ মারাত্মক রিস্ক থাকার পরও ‘সন্তান’ কামনা করতো অনেক দম্পতি। এমনকি নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম অনেক দম্পতি কেবল সন্তান লাভের আশায় নানাবিধ চিকিৎসক ও ওঝা-বৈদ্যের, অলৌকিক সাধকের দারস্থ হত ঝার-ফুঁক নিতে। কেউ কেউ ঐ সময়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারী চিকিৎসায় সন্তান লাভে সক্ষম হলেও, অনেকেই প্রতারিত হতো পীর, ফকির, ওঝা নামীয় ভন্ডদের দ্বারা। এই অপচিকিৎসার বিজ্ঞাপনও ঐ সময়ের মিডিয়ায় নিয়মিত প্রকাশিত হত অবলীলায়। কিন্তু তারপরও এই পেশা চলতো বংশানুক্রমে বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলে। বৈধ লাইসেন্স পাওয়ার পরও সন্তান ইচ্ছেকৃতভাবে জন্ম না দিলে কিংবা দিতে অক্ষম হলে সমাজে তাকে ‘বন্ধ্যা’, ‘অপয়া’ ইত্যাদি নানাবিধ ঋণাত্মক অভিধায় ভূষিত করা হত। কোন কোন পুরুষ আবার ২য় বা ৩য় বিয়েটি করতো সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত পুন. বৈধ লাইসেন্স নিয়ে, যাতে সে অন্তত একটি সন্তানের পিতা হতে পারে, ঐ সময়ের বিশ্বের এই বিয়ে নামক লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়াটি ভিন্নতর প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হতো। বর্তমান পত্রিকা আর্কাইভে রক্ষিত ২০১১ সনের ফেব্রুয়ারী ২১ তারিখের ‘আমাদের সময়’ নামক পত্রিকার একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘‘৩৯ স্ত্রী ও ৯৪ সন্তান’’। খবরের মোদ্দা কথা, ঐ সময়ের ভারত অঞ্চলের মিজোরামের ‘জিওনা ছানা’ নামক জনৈক ব্যক্তি ৩৯টি স্ত্রী, ৯৪ সন্তান এবং ৩৩ নাতি-নাতনি নিয়ে বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাস করছে। তিনি নিজেকে সর্বচেয়ে ভাগ্যবান এ জন্যে মনে করতেন যে, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবারের কর্তাব্যক্তি। বর্ণিত ব্যক্তির চার তলা এবং ১০০ রুম বিশিষ্ট বাড়িতে তিনি পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন, যেটি বর্তমান সময়ে বেশ আশ্চর্য, হাস্যকর, অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য ঘটনা মনে হবে আধুনিক মানুষের কাছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন