রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পৃথিবীর প্রাচীন মনি ধর্ম এবং এর উদ্ভব, বিকাশ ও বিলুপ্তির ইতিহাস # ১০১

 
পৃথিবীর প্রাচীন মনি ধর্ম এবং এর উদ্ভব, বিকাশ ও বিলুপ্তির ইতিহাস
 
প্রাচীন পারস্যের এক প্রেরিত পুরুষের নাম ছিল Mani, তাঁর সময়কাল ২১০-২৭৬ খ্রিস্টাব্দ। প্রফেট (!) মনি ২১৬ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন দক্ষিণ ব্যাবিলনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়টায় ব্যাবিলন ছিল পারসিক সাম্রাজের অন্তর্গত। তিনি ছিলেন মনিবাদ বা Manichaeism-এর প্রবক্তা। মনির জন্ম হয়েছিল বাগদাদের কাছাকাছি এক পার্থিয় - ইরানীয় পরিবারে। মনির বাবার নাম ছিল 'পাটিগ' (কিংবা ফাটিক) আর মায়ের নাম 'মারিয়াম'। এরা ছিলেন মূলত হামাদানের লোক। ঐ সমগ্র অঞ্চলটি ছিল পারস্যের সাসানিয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। স্বর্গীয় এক দেবদূত মনিকে নতুন একটি ধর্মমত প্রতিষ্ঠার প্রত্যাদেশ দেন বলে তিনি জানান। আসলে ব্যাবিলনের অলিগলিতে ঘুরছিল এক ঘোরলাগা তরুণ। কে আমি ? আমি এখানে কেন? আমি কোথা হতে এলাম? যাবই বা কোথায়? এ প্রশ্ন নিয়ে পারস্যের পথে পথে ঘুরলেন মনি। অসংখ্য পারস্যবাসী তাঁর কথায় আকৃষ্ট হল। বেশির ভাগই সমাজের কোণঠাসা, দীনহীন, আর দরিদ্র। পারস্যের মেইনস্ট্রিম ধর্মটিও মনে শান্তি দিতে পারছে না তাদের। মনি যখন পারস্যে ধর্ম প্রচার করছিলেন তখন পারস্যে জরথুস্ট্র (Zoroaster) বাদের প্রবল প্রতাপ ছিল। সম্রাট শাহপুরের ভাই পেরোজ (ফিরোজ?) কে ধর্মান্তরিত করেছিলেন মনি। ধর্মপ্রচারের জন্য তুর্কিস্থান, মেসোপটেমিয়া, পারস্য, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, মিশর এবং ভারতের কুষান সাম্রাজ্যে মিশনারী পাঠিয়েছিলেন প্রফেট মনি। মনি নিজেকে সর্বশেষ প্রেরিতপুরুষ দাবি করেছিলেন ঐ সময়। তাঁর মতে অন্যান্য প্রেরিত পুরুষগণ হলেন- সেথ, নূহ নবী, ইব্রাহীম, শেম, নিকোথেওস(?), এনচ(?), জরথুস্ট্র (Zoroaster), বুদ্ধ ও জেসাস (যিশু)।
মনি Manichaeism (উচ্চারণ: ম্যানিকিইজম) ধর্মমতের প্রবর্তক ছিলেন। ধর্মটি ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মের অভ্যূদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে চীন অবধি বিস্তৃত ছিল। অর্থাৎ ধর্মটির উদ্ভবের পর কয়েক শতাব্দী ধরে ম্যানিকিইজম বা মনিবাদ অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং খ্রিস্টান ধর্মের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীতে ২১৫-১৬ খ্রীস্টাব্দে ব্যাবিলনে জন্মগ্রহণকারী ‘মনি’ প্রাচীন আরামাইক ভাষায় ৭টি ধর্মীয় পুস্তক রচনা করে তার এ ‘মনি ধর্ম’ প্রচার শুরু করেন। তার রচিত পবিত্র পুস্তকের নাম ছিল ‘জীবন্ত বা সুসমাচার (গসপেল), জীবনের রত্নভান্ডার, গোপন কথার বই, উপদেশপত্র, সঙ্গীত ও প্রার্থনাগ্রন্থ, প্রাগমাটিয়া গ্রন্থ ও দৈত্যদের বই’। ২৭৬ খ্রীস্টাব্দে বর্ণিত পুস্তক রচনার কারণে ‘জিন্দিক’ বা মিথ্যা ধর্ম প্রচারক বলে জেলে প্রেরণ ও নির্যাতনে হত্যা করা হয় মনিকে। পরবর্তীতে তার ধর্ম ব্যাপক প্রসার লাভ করে, এমনকি বিলুপ্ত তুর্কিস্থানে তার ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মনি ধর্মের অনুসারীরা ‘মনি’কে পূর্বেকার সকল নবীর উত্তরসূরী মনে করতো। এ ধর্মে পার্শীদের মত ২-সত্ত্বা তথা ‘আলো’ ও ‘অন্ধকারে’র কথা ছিল। তার মতে পৃথিবীর প্রথম প্রাণ হচ্ছে ‘আশাকলুন’ ও ‘নামরহিল’। ‘আশাকলুন’ ও ‘নামরহিল’ এর মিলনে জন্ম গ্রহণ করে ‘আদম’ ও ‘হাওয়া’। মানুষ আত্মাকে মানব জন্মের সময় মাংসের শরীরে বন্দী করে। তার মুক্তি ঘটবে শেষ বিচারে মাংসের শরীর থেকে, আর পৃথিবী জ্বলবে ১৪৬৮ বছর। আত্মবিশ্বাসী মনি রোমান শাসকদের কাছেও তাঁর ধর্মের মূলকথা ব্যাখ্যা করে দূত পাঠিয়েছিলেন। মনির পরিবারটি যদিও ছিল পারসিক কিন্তু ‘মনি’ শব্দটি অবশ্য ‘আরামিয়’ ভাষার একটি শব্দ। আরামিয় ভাষা অর্থাৎ যে ভাষায় ফিলিস্তিনের যিশু কথা বলতেন। মনি যে সময়ে জন্মেছিলেন, সে সময়ে পারস্যের প্রধান ধর্ম ছিল জরথুস্ট্র (Zoroaster)বাদ। তবে এর পাশাপাশি পারস্যে নানা ধর্মসম্প্রদায় প্রচলিত ছিল। ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্ম বহু তরিকায় (সম্প্রদায়) বিভক্ত হয়ে পড়েছিল সেখানে। মনির বাবাও সেরকম একটি মিশ্র উপ-ধর্ম পালন করতেন। পন্ডিতদের মতে, সে ধর্মটি ছিল প্রচলিত জরথুস্ট্র (Zoroaster)বাদী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এবং তাতে ইহুদি মতবাদের আধিক্য ছিল। জরথুস্ট্র (Zoroaster) বাদের তত্ত্বদর্শন ব্যাখ্যা করে নানা সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম হল Manichaeism বা মনিবাদ। ইউরোপের আটলান্টিক উপকূল থেকে চীনের প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল অবধি ধর্মটির ব্যাপক বিস্তার হয়েছিল। মনি ধর্মীয় পুস্তকগুলো প্রায় বিলুপ্ত হলেও পরবর্তীতে তুর্কিস্থান, চীনের কিনকিয়াং ও মিশর থেকে এগুলো নানা উপায়ে একুশ শতকে উদ্ধার করা হয়।
মনির মৃত্যুর পরে ইউরোপ থেকে চীন অবধি তাঁর অনুসারীরা ছড়িয়ে যায়। কয়েক শতাব্দী জুড়ে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল Manichaeism বা মনিবাদ। প্রথম জীবনে রাজদরবারের পৃষ্টপোষকতা পেলেও – এ মতবাদটি প্রচারের জন্য অশেষ নির্যাতন সহ্য করে অনিবার্য মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়েছিল মনিকে। নিজস্ব মত প্রচারের জন্য অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলেন পারস্যের এ পুরুষ, যার শিক্ষা ছিল আত্মসংযম, নিরামিষ আহার, যৌনসংগম থেকে বিরত থাকা, উপবাস ও দান। আগেই বলেছি মনির ধর্মটি ম্যানিকিইজম নামে পরিচিত। পারস্যে ধর্মটির দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। এতে জরথুস্ট্র (Zoroaster)বাদী পুরোহিতগণ রুষ্ট হচ্ছিলেন। মনিরও ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে উঠছিল দুর্যোগ। সম্রাট ধর্মদ্রোহী মনিকে আটক করার জন্য নির্দেশ দিলেন। সম্রাটের নির্দেশে চলে ভূগর্ভস্থ জেলখানায় মনির ওপর অমানুষিক নির্যাতন। মনির মৃত্যুর সালটি ২৭৬ খ্রিস্টাব্দ। আর সম্রাট প্রথম বাহরাম পারস্যের সম্রাট হন ২৭৪ খ্রিস্টাব্দে। মনি প্রসঙ্গে ইতালিও দার্শনিক নিকোলো ম্যাকিয়াভ্যালির একবার বলেছিলেন, ‘ইতিহাসে সশস্ত্র পয়গম্বরগণ বিজয়ী এবং নিরস্ত্র পয়গম্বরগণ হন পরাজিত’। মনিও নিজেকে সর্বশেষ পয়গম্বর দাবি করেছিলেন, যদিও তাঁর বহু সহচর (সাহাবী) থাকলেও ঠিক অস্ত্রশস্ত্র ছিল না তাদের, হয়তো এ কারণেই মনির ধর্ম পরাজিত এখন। মনি বলেছিলেন, আমিই সর্বশেষ পয়গম্বর। পন্ডিতেরা অবশ্য বলেন যে, মনির ধর্মমতের ওপর ভারতীয় প্রভাব ছাড়াও Gnosticism এর প্রভাব ও রয়েছে। Gnosticism হল আদিধর্ম। Gnosticism শিক্ষা দেয় যে, নিগূঢ় আধ্যাত্মিক সত্য উপলব্দির মাধ্যমেই জগৎ সংসারের বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। মনি বলতেন, বিশ্বজগতের শাসক ঈশ্বর। তবে জরথুস্ট্র (Zoroaster)র মতোই মনিও জগতের দ্বৈতরূপ অর্থাৎ জগতের শুভ অশুভের দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন। একদিকে রয়েছে আত্মা বা আলোর জগৎ, অন্যদিকে অন্ধকার। মনির মতে বস্তু মাত্রই অশুভ। এ কারণে বস্তুর জগৎ শাসন করে শয়তান। মনি এও বলতেন যে, একদা আলো ও আঁধারের জগৎ দুটি পৃথক ছিল। আদি এক সংঘর্ষের পর অন্ধকারের জগৎটি আলোর জগতে আগ্রাসন চালায়। দুটি জগতের মিশ্রণ হওয়ার পর থেকে তারা এক শাশ্বত দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়।
মনির মৃত্যুর পর ম্যানিকিইজম দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। প্রথম দলটির নাম ইলেক্ট (elect), এরা কৌমার্য পালন করত, নিরামিষ খেত, মদ্য পান করত না, কাজ বা পরিশ্রম করত না এবং মৃত্যুর পর এরা আলোর জগৎ লাভ করবে এমন একটি ধারণা ইলেক্টদের সম্বন্ধে প্রচলিত ছিল। দ্বিতীয় দলটির নাম অডিটর (auditor) এরা মূলত গৃহী বা কর্মবাদী এবং এরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ট। অডিটরদের আধ্যাত্বিক অর্জন ছিল নিম্নস্তরের। এরা বিবাহ করত (যদিও মনিবাদে যৌনাচারকে প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করা হত) অডিটরগণ সপ্তাহান্তে উপবাস করত এবং ইলেক্টদের সেবা করত। অডিটররা অবশ্য ইলেক্টরূপে পুর্নজন্ম নেওয়ার আশা রাখত পরবর্তীতে। Elect-রা আসলে মনিধর্মের কাঠমোল্লা বা মৌলবাদী। বলা হয়ে থাকে যে, Elect-দের আত্মা মৃত্যুর পর সরাসরি স্বর্গে যাবে। আর Hearers-দের সৎগতি অত সহজে হবে না। মনি যে নগরে বেড়ে উঠছিল, মানে তৎকালীন বাগদাদ, সে নগরে “এলকাসিটেস” নামে এক ইহুদি সম্প্রদায় ছিল। সেই গোত্রের সঙ্গে মিশে ধর্ম সম্বন্ধে সচেতন হয়ে উঠেছিলেন মনি। তেমনি একটি মনিবাদী সম্প্রদায়ের নাম Cathari. এরা বিশ্বাস করত যে Hearers-রা Elect দের মতোই সরাসরি স্বর্গে যেতে পারবে। ম্যানিকিইজম ধর্মমতে অবশ্য ইলেক্ট এবং অডিটর উভয়ই স্বর্গীয় আলোর টুকরো এবং তারা একদিন না একদিন মুক্তি লাভ করবেই। একদিন জগৎ ধ্বংস হবে, আলো আর অন্ধকার আবার চিরস্থায়ী ভাবেই পৃথক হয়ে যাবে।
মনিবাদ বা Manichaeism সম্পর্কে সবচে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- এটি বৌদ্ধধর্ম, জরথুস্ট্র (Zoroaster)বাদ ও খ্রিস্টধর্মের জগাখিচুরি তরকারি এবং বাঙালিমাত্রেই জানেন জিনিসটি কী প্রকার উপাদেয় খাবার। এ ত্রয়ী দর্শন মিলিয়ে সম্পূর্ণ একটি নতুন ভাষ্য তৈরি করার সমস্ত কৃতিত্ব অবশ্যই মনির। মনিবাদ-এর মূলকথা যে দ্বৈতবাদ, এই দ্বৈতবাদ কি? দ্বৈতবাদ মানে বিশ্বের প্রতিপালক একজন নন দু’জন এবং এই ধারণাটি মনি প্রাচীন পারস্যের জরথুস্ট্র (Zoroaster) থেকে সম্ভবত গ্রহণ করেছিলেন। মানুষ তার কালের চিন্তা-চেতনায় আচ্ছন্ন থাকে। মনি বিশ্বাস করতেন, যে বিশ্বজগতে দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তির মধ্যে প্রতিনিয়তই সংঘর্ষ হচ্ছে। এর একটি অশুভ (অন্ধকার ও বস্তু) অন্যটি শুভ ( আলো ও আত্মা)। বোঝা যায় বিষয়টি খ্রিস্টানদের ‘গড’ ও ‘ডেভিল’-এর ধারণার অনুরূপ। মনিবাদ অনুযায়ী দুটি পরস্পর বিরোধী শক্তির ক্ষমতা সমান! তা হলে, শুভ ও অশুভ শক্তির ক্ষমতা সমান? এখানেই মনিবাদ জগতের অন্যান্য ধর্মীয় দর্শন থেকে স্বতন্ত্র। যেখানে ঈশ্বরের জগতে অশুভের উপস্থিতি নিয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিকগণ ইষৎ লজ্জ্বিত। মনিবাদের আরেকটি সিদ্ধান্ত হলো : শরীর=অশুভ, আত্মা =শুভ। মনিবাদে কেবল যৌনতাই নিষিদ্ধ নয়, মাংস ও মদ্যপানও নিষিদ্ধ। তা হলে লোকসমাজে কি করে মনিবাদ অত গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল? মনির জীবদ্দশাতেই মনির মতবাদটি ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষ অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল কেমনে? পারস্য ও মেসোপটেমিয়ায় মনিবাদ প্রথম থেকেই টিকে ছিল কি কারণে? ওখান থেকেই মধ্য এশিয়া, তুর্কিস্থান ও চীনে মনিবাদ ছড়িয়ে যায় কোন মন্ত্র বলে? এমন কী চীন ছাড়িয়ে তাইওয়ান অবধি পৌঁছেছিল এ মতবাদ। পশ্চিম চীন ও মঙ্গোলিয়া নিয়ন্ত্রণ করত Uighur-রা। অস্টম শতকের শেষের দিকে Uighur-রা মনিবাদকে তাদের রাস্ট্রীয় ধর্ম করে। চীনের উইঘুরে মনিবাদ এখনো প্রচলিত আংশিকভাবে। এমন কী রোমান সাম্রাজ্যেও মনির অনুসারী ছিল। চতুর্থ শতকের বিখ্যাত খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিক সেন্ট অগাস্টিন ৯-বছর ম্যানিকিইজম-এর অনুসারী ছিলেন। এরপর খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন তিনি। পরে ম্যানিকিইজম-এর কট্টর সমালোচনা করেন এ ভদ্রলোক। সপ্তম শতকে ইসলামের অভ্যদয় মনিবাদের অন্তিম ঘন্টা বাজিয়ে দেয় শেষাবধি! অষ্টম শতকে বাগদাদকেন্দ্রীক আব্বাসীয়রা মনিবাদীদের ওপর চাপিয়ে দেয় চরম লাঞ্ছনার দণ্ড।
নবম শতক থেকে মধ্য এশিয়ায় মনিবাদের প্রভাব কমতে থাকে ক্রমশ। ইসলামের প্রসার এর অন্যতম প্রধান কারণ। ১৩-শতকে মঙ্গল অভিযানের পর পর মধ্য এশিয়া থেকে মনিবাদীরা সম্পূর্ণ উচ্ছেদ হয়ে যায়। মার্কো পোলো অবশ্য পূর্ব চীনে মনিবাদীদের দেখা পেয়েছিলেন বলে জানান। সময়টা ছিল ১৩০০ সাল। রোমানদের নির্যাতন সত্ত্বেও নানা সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মনিবাদীরা। আজকের পৃথিবীতে যদিও মনিবাদের অনুসারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল অথচ আরও প্রাচীন অনেক ধর্ম আজও টিকে রয়েছে পৃথিবীতে। ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীতে প্রাচীন চীনের মনিধর্ম অনুসারী ‘উইগুররা’ ২০১৩ সনে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করতে থাকে ক্রমশ। ফ্রান্সের আলবী শহরে, ইতালীতে এ ধর্ম প্রচলিত ছিল কিন্তু ১২০৮ সালে পোপের ক্রুসেডের ফলে এ ধর্মের বিলুপ্তি ঘটে। ২০১৩ সনের দিকে এ ধর্মের মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি বিশ্বের তেমন কোথাও।
 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন