রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পৃথিবীর বিলুপ্ত ধর্ম ও বিলুপ্ত দেবতাদের ইতিহাস : মায়ানদের সভ্যতা ও ধর্ম -২ # ৯১


পৃথিবীর বিলুপ্ত ধর্ম ও বিলুপ্ত দেবতাদের ইতিহাস : মায়ানদের সভ্যতা ও ধর্ম
পর্ব # ২ (২ পর্বে বিভক্ত লেখাটির ২য় পর্ব) ১ম পর্বের পর

মৃত্যু পরবর্তী জীবন :

মিশরীয় বা অ্যাজটেক, ইনকাদের মতই মায়ারাও তীব্রভাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবন আছে বলে বিশ্বাস করত। তারা ভাবত যেহেতু বেশীর মানুষ পাপী তাই তাদের নরকে যেতে হয় যেখানে দুষ্ট দেবতা তাদের গিলে খেয়ে ফেলার জন্য তৈরি থাকেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে কেবলমাত্র যে মহিলা শিশুর জন্ম দেওয়ার পরেই মারা গিয়েছেন এবং যাকে নরবলি দেওয়া হয়েছে তারাই কেবল স্বর্গে যেতে পারবেন।

সব পিরামিডই ছিল দেবতার প্রতি উৎসর্গিত। অধিকাংশ পিরামিড ছিল হয় কুকুল্কান নয় ইটজাম্নার প্রতি সমর্পিত। এইসব পিরামিডে সিঁড়ি বেয়ে কেবল উঠত পুরোহিতকূল। তারা বছরে কেবল পাঁচদিন বাদে বাকি সব দিনেই পিরামিডের চুড়ায় উঠত। সেখানে তারা নরবলি এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করত। সাধারণ মানুষের সাথে এমনকি রাজারও সেখানে যাওয়া বারণ ছিল। কেবল যেসব দিন শুভ ছিল সেসব দিনে রাজা এবং অভিজাতরা পিরামিডে উঠতেন। সাধারণ মানুষের জন্য বছরে মাত্র একদিনই পিরামিডে ওঠার সৌভাগ্য হত। সেটা হল রাজার জন্মদিন উপলক্ষ্যে!

মায়ারা বিশ্বাস করত যে আধুনিক সাল অনুযায়ী ৩১১৪ খৃষ্টপূর্বাব্দে তাদের উৎপত্তি হয়েছে। তাদের দিনপঞ্জীতে এটা একটা বিচিত্র পন্থায় চিহ্নিত করা হয়েছে। খুইচ্যে ভাষাগোষ্ঠীর ইন্ডিয়ানরা, যারা গুয়াটেমালার সব চেয়ে বড় জাতি তারা আদতে মায়াদের উত্তরপুরুষ। এদের তরফ থেকে বেশ কিছু দিক থেকে আজও মায়া ধর্ম পালন করা হয় ও দেবতার পূজা করা হয়।

এক মায়া অনুসারে ভুট্টা নাকি ভগবানের সৃষ্টি নয়, মানুষই নাকি ভুট্টার জন্ম দিয়েছে।
মায়া পুরাণ অনুসারে দুই মায়া দেবতা নরকের দেবতার সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত করে তাদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে মানুষকে স্বর্গে নিয়ে যায়। এই যমজ দেবতার নাম যথাক্রমে হুনাহপু এবং এক্সবালাংখুয়ে।

যমজ দেবতা হুনাহপু এবং এক্সবালেংখুয়ের কাহিনী[সম্পাদনা]
এই যমজ দেবতার কাহিনী মায়া পুরাণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অধ্যায় বলে মনে করা হয়। এই কাহিনী যে কটা অদ্যাবধি জীবিত 
মায়া পুরাণ টিকে আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। এই কাহিনী বিখ্যাত পোপোল ভুহ গ্রন্থে লিখিত হয়েছে খুইচ্যে ভাষায়; স্প্যানিশ লিপিতে। এখানে গল্পের সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হল।

মায়ারা ভাবত যে, মঙ্গোলিয়ানদের ন্যায় টানা চোখ, চওড়া কপাল এবং লম্বা ও বড় নাক সৌন্দর্যের প্রতীক। এর কোনওটাই না থাকলে সেই মায়া বিবাহের পক্ষে অযোগ্য বলে মনে হত। এইজন্য তারা অস্ত্রোপচার এবং সাজসজ্জা করে নাক বড় ও চোখ টানা করার ব্যবস্থা করত।

মায়ারা বড় বড় টুপি [অনেকটা বৈষ্ণবদের কানঢাকা টুপির মতন] ও দামী দামী অলঙ্কার পড়া পছন্দ করত, বিশেষ করে যারা অভিজাত তারা। যত উচ্চদরের অভিজাত ততই বড় মাপের টুপি পরিধান করত।

মায়ারা ইনকা বা অ্যাজটেকদের মতই লোহার ব্যবহার জানত না। এমনকি চাকার ব্যবহারও জানত না। তারা পাথরের তীক্ষ্ম অস্ত্র দিয়ে সব কাজ চালিয়ে নিত।
 
মায়ারা যে ভলিবল গোছের খেলা খেলত; তা কেবল ধর্মীয় উৎসবের দিনেই খেলত। এই খেলায় যে দল হারত, তারা দেবতার প্রতি উৎসর্গিত হত অর্থাৎ নরবলির শিকার হত!

মায়ারা অন্ততঃ ১১১ রকমের নৃত্যকলা জানত। এর মধ্যে প্রায় ১৫ রকমের নৃত্যকলা অদ্যাবধি প্রচলিত। এর মধ্যে বাঁদর নাচ, সাপ নাচ, স্ট্যাগ হরিণের নাচ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
(সূত্র : নেট, উইকি)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন