বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইসলামি শিরোচ্ছেদ (কতল-কিসাস) ও রজম : প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে [ পর্ব - ৭ ] # ১৪৪


ইসলামি শিরোচ্ছেদ (কতল-কিসাস) ও রজম : প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে [ পর্ব - ৭ ] শেষ পর্ব
এ লেখাটি কয়েকটি পর্বে সমাপ্ত হবে, সম্পূর্ণ লেখাটির জন্যে এখানে চোখ রাখুন

সৌদি আরবের সঙ্গে কেউ কেউ বাংলাদেশের অপরাধের মাত্রার তুলনা করে থাকেন। অভাবে স্বভাব নষ্ট – এই আপ্তবাক্যই অনেকাংশে বাংলাদেশে সৌদি আরবের চেয়ে অপরাধের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণ। সামান্য বৈদ্যুতিক তার চুরি করা থেকেই এই “অভাবে স্বভাব নষ্টের” চরম বাস্তবিক প্রমাণ পাওয়া যায়। তেল দিয়ে অর্জিত অর্থ না থাকলে আজকে সৌদি আরবীয় জনগণও ব্যাপক দুর্নীতি করতো ।

তবে এটাও আমরা ভুলে যাই কেন যে – সৌদি আরবের জনগণ যেমন মুসলিম, ইরাক-ইরান-ইয়েমেনের জনগণ যেমন মুসলিম তেমনি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের জনগণও মুসলিম। সুতরাং, মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাষ্ট্রেই অপরাধ বেশি এবং শিরচ্ছেদ করে যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় তা ইরাক ইরান ইয়েমেন থেকেই সুস্পষ্ট। যারা সৌদি আরব প্রীতি দেখাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের দোষ ধরছেন, তাদের এটা জানা উচিত বাংলাদেশের এই অপকর্মকারী ব্যক্তিরাও মুসলিম, ইহুদী নন।

বিদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদেরও ফিরিয়ে আনার নজির

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ‘রক্তমূল্য’ দিয়ে ছয় বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে এনেছে। শারজায় এক পাকিস্তানিকে হত্যার দায়ে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট আদালতের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আইন অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আদালত নির্ধারিত এক কোটি টাকা রক্তমূল্য দেওয়ার পর ওই ছয় বাংলাদেশি মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুদান হিসেবে তাঁদের এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, সৌদি আরবেও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের দণ্ড হ্রাস করার নজির আছে। গত শতকের আশির দশকে সৌদি আরবে এক অপরাধের জন্য হাত কাটার অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশি এক শিল্পপতির (বর্তমানে প্রয়াত)। পরে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সৌদি সরকার তাঁর হাতের বদলে শাস্তি হিসেবে আঙুল কেটে দেয়। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, দেশ ও অপরাধভেদে শাস্তির মাত্রাও ভিন্ন। তাই নাগরিকদের অপরাধের দণ্ড মওকুফ বা কমানোর প্রচেষ্টা সব সময় সফল হয় না।
কেন এই ইসলামিক কায়দায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ?
সময় বদলেছে, সময়ের প্রবাহের সাথে সাথে সভ্যতার প্রসার-বিস্তার ঘটেছে কিন্তু এই অমানবিক প্রথার কোন পরিবর্তন বা সংস্কার সাধন ঘটেনি ইসলামিক বিশ্বে। কেননা ইসলাম সংস্কারে বিশ্বাস করেনা, ইসলাম বিশ্বাস করে মৌলবাদ এবং প্রথাকে অন্ধভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে। যেখানে ফাঁসি আছে, বুলেট আছে, হিপনোটিক ইঞ্জেকশন আছে সেখানে এইরকম রক্তলোলুপ নৃশংস হত্যাযজ্ঞের প্রয়োজন কিসের ? ৭ম শতাব্দীতে নাহয় বিভিন্ন উন্নত পন্থা ছিলোনা, নাহয় সেসময়ে তলোয়ার,কুড়াল ও ছুরি ব্যতীত অন্য পন্থা ছিলোনা কিন্তু বর্তমানে তো আছে। তাও কেন সেই আদিম-মধ্যযুগীয় পন্থার অন্ধ অনুকরণ ? এর কারণ – প্রকৃত মুসলিম মানেই মৌলবাদী অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক/গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অন্ধের মত অনুকরণ। তাই প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরব, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, পাকিস্তানীরাই প্রকৃত ইসলামিক রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি রাষ্ট্রের মুসলিমেরা প্রকৃত মুসলিম নয়। বাংলাদেশীরা মঙ্গোলয়েড ককেশয়েড এবং দ্রাবিড়ের সংমিশ্রণ। শাড়ি পড়া, কপালে টিপ দেওয়া, লুঙ্গি পড়া, ফুল দেওয়া, পূজাপার্বণে যাওয়া, বাংলা নববর্ষ উদযাপন – এগুলোর কোনটিই ইসলামিক সংস্কৃতির অংশ নয় বরং ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালি/ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ। তাই সেই বিচারে বাংলাদেশীরা সুস্পষ্টভাবেই প্রকৃত মুসলিম নয়, যদিও নিজেকে সকলেই প্রকৃত বলে মনে করে।
ধর্মের ২টি মূল স্তম্ভ রয়েছে যার উপর দাঁড়িয়ে ধর্ম আজ পর্যন্ত মানুষকে বোকা বানিয়ে চলেছে, সেদুটি হলো – ক) ভয়ভীতি ২) লোভলালসা। ভয়ভীতি থেকে মানুষ ধর্মীয় আচারাদি পালনে রত হয়। আবার তথাকথিত জান্নাত প্রাপ্তির লোভে মানুষ এসকল আচারাদি আরো বেশি করে পালনে তৎপর থাকে। তাই বিভিন্ন নতুন পন্থা থাকলেও তারা ইসলামী পন্থাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে। এর একটি চমৎকার বাস্তবিক উদাহরণ হলো – আমাদের দেশের ছাত্রশিবিরের গুন্ডারা বুলেট ব্যবহার না করে ছুরি ব্লেড কিরীচ ইত্যাদি দিয়ে হাত/পা/হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। তারা সকল কিছুই কোরান ও হাদীসের আলোকে সম্পন্ন করতে চায়। তাই আমাদের দেশের সাধারণ মুসলিমেরা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃত মুসলিম নয়, কেননা তারা অনেক ক্ষেত্রেই ইসলামিক আইনকানুনের খেলাফ কাজকর্ম করে (যেমন চিত্রাংকন, সঙ্গীত বা চলচিত্র)। পক্ষান্তরে এই জামাত শিবিরেরাই প্রকৃত মুসলিম কেননা সুরা মায়িদাহ আনফাল বা মুহাম্মদের আয়াতের মত হুবুহু তলোয়ার কুড়াল ছুরি ব্লেড কিরীচ নিয়ে তারা হাত পায়ের রগ কাটতে প্রবৃত্ত হয়।
ভুলবসত কেউ হত্যা করলে (হুযাইফার পিতা হত্যা) তাকে শাস্তি দেয়া হয়নি (বুখারী-৬৪১০)।
পশুর সাথে যেনাকারীকে ও পশুকে একত্রে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন নবী (তিরমিযী-১৩৯৪), কাউকে খুন করলে উত্তম পন্থায় খুন করবে (তিরমিযী-১৩৪৯),
মাইয ইবনে মালেক নিজেই যেনার অপরাধ স্বীকার করলে নবী তাকে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলে, সবাই তা কার্যকরণে নামে। মাইয পাথরের আঘাতে পালাতে থাকলে, তাকে উটের হাড় দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। নবী বললেন, তোমরা তাকে ছেড়ে দিলেনা কেন? (তিরমিযী-১৩৬৮), ৩-বার পর্যন্ত মদ পানকারীকে চাবুক মারো, ৪র্থ বারে হত্যা কর (তিরমিযী-১৩৮৪), নবীর নির্দেশে চোরের হাত কেটে তার ঘাড়ে লটকে দেয়া হয় (তিরমিযী-১৩৮৭)
তোমরা বয়স্ক মুশরিকদের খুন করো কিন্তু শিশুদের হত্যা করোনা (দাউদ-২৬৬১),
তাওরাতের বিধান মোতাবেক যেনাকারী ২-ইহুদী নরনারীকে নবী পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিলে হত্যা কার্যকরের সময়, পুরচষটি মহিলাটির উপর ঝুকে পড়ে মহিলাটিকে প্রস্তরাঘাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করে (বুখারী-৩৩৬৪)।
ওহুদের যুদ্ধে কাফেররা নবীকে ৭০-টি আঘাত করেছিল, প্রধান আক্রমনকারী ছিল উতবা ইবনে আবু ওয়াক্কাস, নবী নিজ হাতে উবাই ইবনে খালাফকে হত্যা করেছিলেন (বুখারী-৩৭৬৮-৭০)।
ধোকায় ফেলে হত্যার ব্যাপারে ওমর বলেছিলেন, যদি এই হত্যায় (ধোকার) সকল সা’নাবাসী শরীক হতো, তবে আমি সবাইকে হত্যা করতাম (বুখারী-৬৪১৭)।
হেযাজের ইহুদী ব্যবসায়ী আবু রাফে’কে নবীর নির্দেশে ঘুমন্ত অবস্থায় আবদুললাহ ইবনে আতিক ও বনী কুরাইযা গোত্রের ইহুদী কবি কা’ব ইবনে আশরাফকে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা ধোকার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করেন। সরল বিশ্বাসে ইহুদী কবি কা’ব মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার সামনে এলে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার চুলের সুগন্ধির প্রশংসা করে তার চুলের ঘ্রাণ নেয়ার অনুমতি চান। কবি কা’ব সরল বিশ্বাসে ঘ্রাণ নিতে সম্মতি দিলে ধোকায় ফেলে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার চুল আকড়ে ধরেন এবং সঙ্গীদের সহায়তায় তাকে হত্যা করেন (বুখারী-২৮০০-১,৬,৩৭৩৫-৬)।
ধোঁকা দিয়ে কাউকে মারা যাবে না (আবুদাউদ-২৭৬০)।
৭ পর্বে লেখাটি শেষ হলো ।


https://www.facebook.com/logicalbengali/posts/1553198634914287:0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন