রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

প্রাচীন মিশরের দেবদেবী কেন্দ্রিক ধর্ম : উদ্ভব বিকাশ ও বিলুপ্তির ইতিহাস # ৯৯

 
প্রাচীন মিশরের দেবদেবী কেন্দ্রিক ধর্ম : উদ্ভব বিকাশ ও বিলুপ্তির ইতিহাস
 
২০১৩ পূর্ববর্তী প্রাচীন মিশরে বহুত্ববাদ প্রচলিত ছিল। খ্রীস্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দে নানারূপ দেবদেবীর পূজা করতো তারা। মিশরের প্রধান সূর্যদেবতার নাম ছিল ‘রি’ বা ‘রা’। রা’র শরীর মানুষের মত হলেও, তার চেহারা ছিল প্রাচীন বিলুপ্ত শিকারী বাজ পাখির মত। রা’র মাথায় থাকতো একটি সাপ-জড়ানো গোলাকার মুকুট। দেবতা রা’য়ের নাম পরিবর্তন করে মিশরীরা পরে একে ‘আমন’, ‘আটন’ ইত্যাদি নামেও ডাকতো। সূর্যদেবতা রা’য়ের ৩ ছেলের নাম ছিল যথাক্রমে শু, টেফনুট ও নুট এবং মেয়ের নাম ছিল ‘শেব’। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, ‘শেব’ হচ্ছে পৃথিবী, আর তিন ছেলে হচ্ছে আকাশ, পাতাল ও বায়ুমন্ডল। শেবের ২ ছেলের নাম ছিল ‘ওসাইরিস’ ও ‘সেট’। ‘ওসাইরিস’ ছিল মৃতদের তথা পাতালপুরীর রাজা। অন্য দেবতা ‘হোরাস’ও ছিল সূর্যসন্তান। তাদের সারসমুখো দেবতার নাম ছিল ‘থথ’। ‘আনুবিস’ ছিল শিয়ালমুখো মৃত্যুর দেবতা। বিড়ালমুখো ‘বাস্ট’ দেবতা ছিল রা’য়ের কন্যা, এর অপর নাম ছিল ‘আইলুরাস’ প্রকৃতপক্ষে সূর্যদেবতা, যার সঙ্গে মিল ছিল চন্দ্রদেবতা ও গ্রীক দেবী আর্টেমিসের সঙ্গে। ‘বেস’ ছিল নিউবিয়ান থেকে আগত মিশরীয় দেবতা। ‘গেব’ ছিল উর্বরতার দেবতা, যে ডিম পারলে তাতে সূর্যদেবতা ‘তা’ দিতো। মিশরের নিম্নভূমির দেবতা ছিল ‘গেব’। গেব তার বোন ‘নাট’কে বিয়ে করেছিল। গ্রীক দেবতা ক্রোনসের সঙ্গে তার মিল ছিল। মিশরীয় গো-দেবতার নাম ছিল ‘হাথোর’। এই দেবী রা-এর স্ত্রী ও হারোসের মা ছিল। দেবতা অসিরিসের ছেলে ছিল ‘হারোস’। গ্রীক এথেনা দেবীর সমগোত্রীর মিশরীয় দেবীর নাম ছিল ‘নেইথ’। ‘ইসিস’ ছিল অন্যতম দেবতা অসিরিসের স্ত্রী, হোরোস এর মা, অসিরিসের বোন এবং জেব ও নাট এর কন্যা। ‘নেপথিস’ ছিলেন সেব ও নাটের কন্যা, আইসিস, সেট ও অসিরিসের বোন এবং সেট এর স্ত্রী, আনবিসের মা। এই দেবতার মুখ ছিল শিকারী ঈগলের মত। মিশরীর আকাশ দেবতার নাম ছিল ‘নাট’। নাট ছিল সু ও টেফনাটের কন্যা এবং জেবের স্ত্রী।
 
 
এলাকা হিসেবে মিশরে হেলিওপোলিসের নয় দেবদেবী ছিল যথাক্রমে আতুম, গেব, আইসিস, সুট, ওসাইরিস, নেপথিস, সেথ, শু এবং তেফনুত। হার্মোপোলিসের আট দেবদেবী ছিল যথাক্রমে নুনেত, নু, আমুনেত, আমুন, কুকেত, কুক, হুহেত ও হুহ। এলিফ্যান্টাইনের খুম, সাতেত ও আনুকেত। থিবিসের আমুন, মাত ও খেনসু। মিম্ফিসের পহাত, সেকমেত ও নেফেরতেম। এ ছাড়াও বিচ্ছিন্ন মিশ্র দেবতারা ছিলো যথাক্রমে আমুন, আমুনেত, আনুবিস, আনুকেত, আপেপ, আতেন, আতুম, বাস্ত, বাল, বাত, বেস, হোরাসের চার পুত্র, গেব, ছাপি, ছাথোর, হেগেত, হোরেস, ইমহোতেপ, আইসিস, খেপ্রি, খানুম, মাহেস, মা’আত, মাফদেত, মেনহিত, মেরেতসেগের, মেনথু, মুত, নুনেত, নেইথ, নেখবেত, নেপথিস, নুত, ওসাইরিস, পতাহ, রা, রা-হোরাকতাই, রেশেপ, সাতিস, মেখমেত, সেকের, সেলকেত, সবেক, সেত, সেশাত, শু, তাওযেরেত, তেফনুত, থোথ, ওয়াজেত, ওয়াজ-ওযের, ওয়েগওযাওযেত, ওরসেত।
 
 
মিশরীয় শাসক ‘ফারাও’ বা ‘ফেরাউন’রা নিজেদের দেবতা কিংবা তার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতো মানুষের সামনে এবং প্রজাদের কৃতদাস বানিয়ে তাদের শোষণ করতো। মিশরের রাজা ফারাহ খাফরার চেহারার অনুকরণে ছিল গিজায় স্ফিংসের দেবমূর্তি, যা ২০১৩ সনেও বিদ্যমান ছিল। মিশরীয়রা মৃত্যুর পরে আত্মায় বিশ্বাস করতো এবং মনে করতো যে, মৃত্যুদেহে আবার আত্মা ফিরে আসে, যে কারণে তারা মৃতকে বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতো ‘মমি’ করে, যাতে তার দেহে আত্মা আসতে পারে সহজে। ২০১৩ সনের অনেক আগেই পৃথিবীর হাজারো প্রাচীন ধর্মের মত মিশর থেকেও এ ধর্ম লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বর্ণিত শক্তিধর দেবদেবী সমেত! মিশরীয় ফারাওগণ খ্রীস্টপূর্ব ৩২০০ থেকে মিশরে পরম বিক্রমে পৌরাণিক ধর্মকেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। বর্ণিত রাষ্ট্রে বহু দেবদেবীর অস্তিত্ব থাকলেও, একসময় মিশরবাসী কেবল একেশ্বর হিসেবে সূর্যদেব ‘আতেন’ কে পূজা করতো। প্রায় ৪ হাজার বছর মিশরে পৌরাণিক ধর্ম প্রচলিত থাকলেও, কেবল মুসলমানদের বিজয়ের পরই তাদের দেবদেবী কেন্দ্রিক ধর্মের অবসান ঘটে। হায়! বিশ্বের এতো শক্তিধর ধর্ম ও দেবতারা কোথায় গেল? তাদের ১-জন অনুসারীও খুঁজে পাওয়া যায়নি ২০১৩ সনের মিশরে কিংবা পৃথিবীর কোথাও!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন