সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু # ১২৬

৩০১৫ খ্রিস্টাব্দের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে ২০১৩ সন পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষের ইতিহাস : পর্ব - 12
২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের মানুষের জন্ম এবং মৃত্যু - ২০১৫ সন পূর্ববর্তী বিশ্বের প্রকৃতির নির্মমতা ও অসহায় মানুষ : ১
২০১৫’র মানুষ এক কষ্টকর ক্ষণকে আকড়ে ধরে সে কেবলই অন্ধকার বিভীষিকাময় অজানা এক অলীক মৃত্যুর অন্ধকারের প্রহর গুণতো, যে মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে জানতো না সে তেমন কিছুই। যদিও সে রেখে যেত তার ‘বংশধারা’ তথা সৃষ্টিশীলতা ‘মেল’ ও ‘ফিমেল’ অভিধায়, পৃথিবীর মাটিতে নানা অঞ্চল আর দেশে দেশে।
আজকের এ ৩০১৫ সনের মানুষের কাছে জন্ম এবং মৃত্যু একান্তই অন্যবিধ জ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কারের মত নিতান্তই সাধারণ একটি ‘বৈজ্ঞানিক কৌশল’ মাত্র, যা সে প্রয়োগ করতে পারে অনেকটা ‘নিজে’ এবং আজকের পৃথিবীর ‘জন্ম মৃত্যু নিয়ন্ত্রক কমিশন’ কর্তৃক। এখনকার মানুষ যদি বিশেষ পেশা বা জীবনকে ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে মনে করে কখনো, তবে ‘সেক্স কন্ট্রোল কমিশনে’ নিজ ইচ্ছে প্রকাশ করে বর্তমান সেক্স পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গ কিংবা ‘ভারসাম্য লৈঙ্গিক’ জীবন ধারণ করতে পারে। এ জন্যে প্রয়োজন হয় মাত্র কয়েক গুণিতক ‘ন্যানো টাইমের’। ইচ্ছে করলে সে তার জ্ঞানের ধারণ ক্ষমতা ও বিষয়ও সহজেই পরিবর্তন করতে পারে একই পদ্ধতিতে। এমনকি স্বাভাবিক মানুষ ও অন্য প্রাণির ‘জিন’ সংমিশ্রণে সে ‘পাখি-মানুষ’, ‘জেব্রা-মানুষ’ কিংবা ‘প্রজাপতি-মানুষে’ও রূপান্তরিত হতে পারে। এতেও কেউ সন্তুষ্ট না হলে, বর্ণিত কমিশনের বিশেষ সুপারিশে আজকের যে কোন মানুষ নিজেকে ‘বিনাশ’ বা ‘ফ্রিজ’ করতে পারে চিরকাল কিংবা সাময়িক সময়ের জন্যে। একইভাবে ইতোপূর্বে সাময়িক বিনাশকৃত বা ফ্রিজকৃত মানুষের ইচ্ছেনুসারে তার ‘নবায়িত-জীবন’ এখন সামান্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। তা ছাড়া পৃথিবীর বিশেষ শ্রেণির মানুষের সংকট কিংবা আধিক্য বিবেচনায় ‘জন্ম মৃত্যু নিয়ন্ত্রক কমিশন’ কর্তৃক বিশেষ জ্ঞানে দক্ষ ব্যক্তির হুবহু ‘ক্লোন’ করে দিতে পারে খুবই স্বল্প সময়ে, যে কারণে প্রাচীন ২০১৫ পূর্ববর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে কিংবদন্তীতূল্য বিজ্ঞানী ‘আইনস্টাইন’-এর হাজারো ক্লোন এখন এ কালের যত্রতত্র ‘দক্ষ-টেকনিশিয়ান’ হিসেবে ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র। তবে কারো একান্ত ইচ্ছে না হলে, ঐ কমিশন কাউকে রূপান্তর বা বিনাশের পক্ষে মত দেয় না বরং তার পেশাগত দক্ষতা কিংবা সেক্স পরিবর্তনের সুপারিশ করে মাত্র।

কিন্তু ২০১৫ পূর্ববর্তী পৃথিবীতে মানুষ ও অন্য প্রাণির জন্ম ও মৃত্যু ছিল একটি অত্যন্ত অনিয়ন্ত্রিত সাধারণ ঘটনা। ঐ সময়ের মানুষ জন্ম ও মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতো না মোটেই। এর রহস্যও খুব একটা বুঝতো না তারা। নানা অঞ্চলের নানা ধর্মের নানা ভাষিক মানুষ জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে নানাবিধ কল্প কাহিনী তৈরী করতো, যেহেতু পুরো বিষয়টি ছিল তাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। গাছপালা ও উদ্ভিদরা ঐ সময়ের প্রাকৃতিক নিয়মে যত্রতত্র প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নানাভাবে জন্মাতো। কোন কোনটি বিশেষ প্রয়োজনে মানুষ তাকে ব্যবহার করতো, আবার কোনটি ‘ফালতু’ তুচ্ছ ফেলনা হিসেবে অবজ্ঞা করতো কিংবা অহেতুক জন্ম নিয়ে আবার তা বুড়িয়ে গিয়ে মারা যেত মানুষের অগোচরেই। এভাবে প্রাক্তন বাংলাদেশ, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিত বৃষ্টি হতো বিধায়, নানাবিধ গাছ-লতাপাতার জন্ম হতো। যার অনেকগুলোর ব্যবহার মানুষ না জানার কারণে, সেগুলো খামোখাই জন্ম নিয়ে আবার বিশেষ সময়ের পর মারা যেত। প্রাক্তন বাংলাদেশ অঞ্চলে এরূপ ছোট এক প্রকার গাছের নাম ছিল ‘বাটুইগাছ’ যার ব্যবহার বাঙালিরা না জানলেও, বাংলাদেশের রাস্তার দু’পাশে তা প্রচুর জম্মাতো কিন্তু জাতিটি অলস ছিল বলে, বর্ণিত ‘ফালতু’ বাটুইগাছ কেটে সেখানে প্রয়োজনীয় ফলের গাছ লাগাতো না। গাছেরা সাধারণত তার নিজ ‘বীজ’ থেকে জন্ম নিতো, কোন কোন গাছের ‘ক্লোন’ করা যেত কিন্তু সব গাছের নয়। কোন কোন লতাপাতার বীজ কিংবা ক্লোন থেকেও বংশ বৃদ্ধি করা যেত। ‘পাতাবাহার’ নামক গাছের ডালে ক্লোন হলেও, মানুষ জানতো না ‘কাঁঠাল’ নামক বিরাটাকৃতির ফলের ডালের কেন ‘ক্লোন’ করা যাচ্ছে না। একইভাবে ‘পাথরকুচি’ পাতার প্রাকৃতিক ক্লোনে নতুন গাছ জন্মালেও, প্রাচীন সুমিষ্ট ‘লিচু-পাতা’য় কেন নতুন ‘গাছ-শিশু’ জন্মাচ্ছে না, তা ঐ সময়ের মানুষ জানতো না নিতান্তই অশিক্ষা আর অজ্ঞতার কারণে, বর্তমান ৩০১৫ এর মানুষের কাছে এই বিষয়টি খুবই সাধারণ হলেও এই সামান্য বিষয়টি বোঝার জ্ঞানও মানুষ তখন আয়ত্ত করতে পারেনি।

মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণিদের জন্ম তথা বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ছিল বহুল প্রচলিত দু’টো। একটি হচ্ছে, পরিপূর্ণ ‘স্টেম-সেল’ সমৃদ্ধ একটি কোষ যাকে মানুষ ‘ডিম’ বলতো। একটি শক্ত খোসায় সুরক্ষিত ডিমটি থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আরেকটি নতুন জীবনের শুরু হতো। কোন কোন প্রাণি ডিম আকাশে, মাটিতে, গাছে বা পানিতে ছেড়ে দিতো। কেউ ডিম থেকে নতুন জীবন সৃষ্টির জন্যে কষ্টকরভাবে ডিমে ‘তা’ দিত, আবার কেউ তা মাটি বা পানিতে রেখে চলে যেত। তবে বর্ণিত ডিম থেকে নতুন জীবন সৃষ্টির জন্যে ডিম উর্বরায়নে বর্ণিত জীবের কমপক্ষে একটি পুরুষের প্রয়োজন হত। তবে মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণির নতুন ‘শাবক’ সৃষ্টির জন্যে দম্পতির বৈধ লাইসেন্স বা বিয়ে করার প্রয়োজন হতো না। এক প্রাণির ডিম আবার অন্য প্রাণিরা শাবক সৃষ্টির আগেই কিংবা ছোট শাবকসহ খেয়ে ফেলতো। এ ক্ষেত্রে মানুষ ছিল সবচেয়ে বেশী ‘ডিম তথা স্টেমসেল খেকো’। মুরগী নামক একটি পাখি জাতীয় প্রাণির ডিম ঐ সময়ের বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যহ নানাভাবে ‘ধ্বংস’ করতো। সরাসরি খাওয়া ছাড়াও, মানুষের বিভিন্ন খাদ্য তৈরীর ‘উপকরণ’ হিসেবেও ঐ ডিমগুলো ব্যবহার করতো মানুষ। ঐ সময়ের উটপাখী জাতীয় প্রাণির ডিমের আয়তনও ছিল বেশ বড় সাইজের। যা মানুষসহ বিশ্বের সকল প্রাণিরা যে যেভাবে পারে ‘লুটপাট’ করে খেত। তবে বিশ্বে এতো ডিমের প্রাচুর্য ছিল যে, প্রত্যহ কোটি কোটি ডিম খাওয়ার পরও, বিশ্বে ডিমের অভাব খুব একটা হতো না। কিছু কিছু মাছ বা পতঙ্গ দৈনিক কোটি কোটি ডিম ছাড়তে পারতো প্রাকৃতিক নিয়মে, এরূপ একটি পতঙ্গের নাম ছিল ‘মশা’ যা ছিল মানুষের জন্যে খুবই ক্ষতিকর। সামান্য এই প্রাণিটি মানুষের জীবন সংহারী হলেও, মানুষ তাকে বিনাশ করার কৌশল জানতো না, যে কারণে  মশা মানুষকে নানাভাবে কষ্ট দিত কিন্তু মানুষ তার ডিম খাওয়ার কৌশল জানতো না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন