বদর যুদ্ধে আটক নবী জামাতা আবুল আসের ঘটনা -
এ বর্ণনায় নন মুসলিম আবুল আস বা কুরাইশদের আচরণ কি হত্যাযোগ্য?
:
বদর যুদ্ধে আটক ৭০-জন যুদ্ধবন্দীদের একজন ছিল রাসূলুল্লাহর জামাতা, তাঁর কন্যা যয়নাবের স্বামী আবুল ‘আস ইবনে রাবী ইবনে আবদুল উয্যা। যয়নাবের ইসলাম গ্রহণের ফলে আবুল আসের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ কার্যতঃ তাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে সক্ষম ছিলেন না। তাই যয়নাব মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মুশরিক স্বামীর ঘর করতে থাকেন। এই অবস্থায় নবী মদিনায় হিজরত করেন। পরে কুরাইশরা বদরের যুদ্ধে গেলে আবুল আসও তাদের সাথে যোগ দেয়। এভাবে সে যুদ্ধবন্দীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মদীনায় নবীর নিকট নীত হয়।
:
অতঃপর মক্কাবাসীরা যুদ্ধবন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ পাঠাতে লাগলো। যয়নাবও আবুল আ’স ইবনে রাবী’র মুক্তিপণ বাবদ কিছু টাকা ও বিয়ের সময় খাদীজার দেয়া হার পাঠিয়ে দেন। নবী হারখানি দেখে আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। সাহাবীদেরকে তিনি বললেন, “তোমরা যদি ভাল মনে কর তবে যয়নাবের পাঠানো মুক্তিপণ ফেরত দিয়ে তার বন্দীকে মুক্ত করে দিতে পার।” সাহাবীগণ তাকে মুক্তি দিলেন এবং মুক্তিপণ বাবদ পাঠানো টাকা ও হার ফেরত দিলেন। তবে নবী শর্ত দিলেন মক্কা ফেরত গিয়ে সে যেন তার মেয়েকে মদিনা ফেরত পাঠান।
:
কুরাইশরা আবুল আসকে চাপ দিল নবীর মেয়েকে তালাক দিতে। কিন্তু এখানে বিবেচ্য-
১) আবু আল-আস প্রলোভনের মুখে ও তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি হননি।
২) আবু আল-আস নিজে পৌত্তলিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সুদীর্ঘ বারোটি বছর (৬১০-৬২২ সাল) একত্রেই বসবাস করতেন; যা আজকের আধুনিক সেকুলার সমাজেও এক বিরল উদাহরণ। এমন একটি সমাজের সমস্ত লোককে ইসলামের নবী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা গত ১৪০০ বছর যাবত "অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা" বলে আখ্যায়িত করে আসছেন।
৩) স্ত্রী জয়নাব তাঁর স্বামীর এই চরম অসহায় মুহুর্তে তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে স্বামীর মুক্তির জন্য মুক্তিপণের অর্থ পাঠিয়েছিলেন।
৪) “ইসলামের নবী মুহাম্মদ” তাঁর জামাতা আবু আল আস কে মুক্তি দেয়ার সময় শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তিনি যেন তাঁর মেয়ে জয়নাবকে মদিনায় তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন।
:
চরম উদার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী এমন এক স্বামী একই সাথে সুদীর্ঘ ১২ টি বছর তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একত্রে অবস্থান করা অবস্থায় তাঁর সেই স্ত্রীরই প্রত্যক্ষ সাহায্যে মুক্ত হয়ে বিনা অপরাধে তাঁর সেই স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে বাপের বাড়িতে নির্বাসনে পাঠাবেন এমন অযৌক্তিক দাবি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
:
আবু আল আস মক্কায় এসে তাঁর শ্বশুরের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। জয়নাব মদিনায় তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
:
ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, কীভাবে ইসলামের নবী মুহাম্মদ তাঁর নিজ জামাতা আবু আল আস বিন রাবিকে বাধ্য করেছিলেন যেন তিনি তাঁর স্ত্রী জয়নাবকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। সুদীর্ঘ ১২ টি বছর (৬১০-৬২২ সাল) এই পৌত্তলিক স্বামী তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একই বাড়িতে অবস্থান করতেন। তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রীর ওপর কোনোরূপ অত্যাচার বা অসম্মান করতেন, এমন ইতিহাস কোথাও নেই। পৌত্তলিক আবু আল আস তাঁর মুসলিম স্ত্রীকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করেননি। ইসলামের নবী মুহাম্মদই আটকের পর তাঁকে বাধ্য করেছিলেন, যেন তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন।
:
ঐতিহাসিক বর্ণনা :
:
জয়নাব বললেন, "মক্কায় আমি যখন আমার পিতার সাথে [মদিনায়] যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হিন্দ বিনতে ওতবা (আবু সুফিয়ান বিন হারবের স্ত্রী, যিনি ছিলেন জয়নাবের স্বামীর বংশের; যে কারণে জয়নাবের সাথে ছিল তাঁর সখ্যতা। কিন্তু তিনি ছিলেন মুহাম্মদের চাচা হামজার উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থে আকুল আকাঙ্ক্ষী, কারণ তিনি [হামজা] তাঁর বাবা ও চাচাকে বদর প্রান্তে খুন করেছিলেন।) আমার সাথে সাক্ষাত করেন এবং আমাকে সাহায্য করতে চান।
:
নবীকন্যা যখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন, তাঁর স্বামীর ভাই কেনানা বিন আল রাবি তাঁর জন্য একটা উট নিয়ে আসেন, যার ওপর তিনি সওয়ার হন। তারপর কেনানা তার তীর ও তূণী নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে উটের পিঠের উপর স্থাপিত ডুলির (camel litter) ওপর তাঁকে [জয়নাব] বসিয়ে উটটি পরিচালনা করেন। কুরাইশরা এ ব্যাপারে বলাবলি শুরু করে এবং তাদের কে অনুসরণ করে এসে ধু-তাওয়া নামক স্থানে তাদেরকে পাকড়াও করে।
:
যে লোকটি প্রথমেই তাদের কাছে পৌঁছেন, তাঁর নাম ছিল হাববার বিন আল-আসওয়াদ বিন আল-মু্ত্তালিব বিন আসাদ বিন আবদ আল-উজজা আল-ফিহিরি। যখন হাববার তাদেরকে বল্লম দিয়ে হুমকি প্রদান করে, তিনি [জয়নাব] ছিলেন উটের পিঠের ওপর স্থাপিত ডুলির ভিতরে। বলা হয়, তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী; যখন তিনি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন তখন তাঁর গর্ভপাত হয়।
হাববারের হুমকির পর তাঁর দেবর [কেনানা] নতজানু হয়ে বসে পরে, তূণী থেকে তীর বের করে এবং বলে, "আল্লাহর কসম, কেউ আমার নিকটবর্তী হলে আমি তাকে তীরবিদ্ধ করবো।" ফলে আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য গণ্যমান্য কুরাইশরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা [হাববার বিন আল-আসওয়াদ ও নাফি বিন আবদ কায়েস] পিছু হটে। আবু সুফিয়ান বলেন, "এই যে [কেনানা], তোমার ধনুক নিচু করো যাতে আমরা তোমার সাথে কথা বলতে পারি।" সে তার ধনুক নিচু করে; আবু সুফিয়ান তার পাশে এসে দাঁড়ান ও বলেন,-
:
"তোমার ভুল এই যে, তুমি মেয়েটিকে সবার চোখের সামনেই প্রকাশ্যে দূরে বাহিরে নিয়ে যেতে চাইছ, যেখানে তুমি জানো যে আমাদের নিদারুণ দুর্দশা ও বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হলো ইসলামের নবী মুহাম্মদ। এই বিপর্যয়ের পরেও যদি প্রকাশ্যে সবার সামনে তার কন্যাকে তুমি বের করে নিয়ে যাও, তবে তা হবে আমাদের জন্য চরম অপমানকর; জনগণ মনে করবে যে, এটা আমাদের চরম দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। আমার জানের কসম, আমরা তার কন্যাকে ধরে রাখতে চাই না এবং এভাবে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা আমাদের পন্থা নয়। কিন্তু মেয়েটিকে এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং যখন বিক্ষোভ থেমে যাবে এবং লোকেরা বলবে যে, আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি, তখন তুমি গোপনে তাকে নিয়ে যেও যেন সে তার বাবার সাথে মিলিত হতে পারে।"
:
ঠিক ঠিক তাইই ঘটেছিল। এক রাতে সে [জয়নাবের দেবর কেনানা] তাঁকে নিয়ে যায় এবং জায়েদ বিন হারিথা ও তাঁর সঙ্গীর কাছে হস্তান্তর করে; তারা তাঁকে নিয়ে আল্লাহর নবীর কাছে যায়।’ এ ঘটনায় নন মুসলিম আবুল আস বা কুরাইশদের কোন অসদাচরণ কি প্রকাশ পায়?
========================== ======================
সূত্র: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা - ৩১৪-৩১৫, “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) - ১৩৪৮-১৩৫০
:
এ বর্ণনায় নন মুসলিম আবুল আস বা কুরাইশদের আচরণ কি হত্যাযোগ্য?
:
বদর যুদ্ধে আটক ৭০-জন যুদ্ধবন্দীদের একজন ছিল রাসূলুল্লাহর জামাতা, তাঁর কন্যা যয়নাবের স্বামী আবুল ‘আস ইবনে রাবী ইবনে আবদুল উয্যা। যয়নাবের ইসলাম গ্রহণের ফলে আবুল আসের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ কার্যতঃ তাদের বিচ্ছেদ ঘটাতে সক্ষম ছিলেন না। তাই যয়নাব মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও মুশরিক স্বামীর ঘর করতে থাকেন। এই অবস্থায় নবী মদিনায় হিজরত করেন। পরে কুরাইশরা বদরের যুদ্ধে গেলে আবুল আসও তাদের সাথে যোগ দেয়। এভাবে সে যুদ্ধবন্দীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মদীনায় নবীর নিকট নীত হয়।
:
অতঃপর মক্কাবাসীরা যুদ্ধবন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিপণ পাঠাতে লাগলো। যয়নাবও আবুল আ’স ইবনে রাবী’র মুক্তিপণ বাবদ কিছু টাকা ও বিয়ের সময় খাদীজার দেয়া হার পাঠিয়ে দেন। নবী হারখানি দেখে আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। সাহাবীদেরকে তিনি বললেন, “তোমরা যদি ভাল মনে কর তবে যয়নাবের পাঠানো মুক্তিপণ ফেরত দিয়ে তার বন্দীকে মুক্ত করে দিতে পার।” সাহাবীগণ তাকে মুক্তি দিলেন এবং মুক্তিপণ বাবদ পাঠানো টাকা ও হার ফেরত দিলেন। তবে নবী শর্ত দিলেন মক্কা ফেরত গিয়ে সে যেন তার মেয়েকে মদিনা ফেরত পাঠান।
:
কুরাইশরা আবুল আসকে চাপ দিল নবীর মেয়েকে তালাক দিতে। কিন্তু এখানে বিবেচ্য-
১) আবু আল-আস প্রলোভনের মুখে ও তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি হননি।
২) আবু আল-আস নিজে পৌত্তলিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সুদীর্ঘ বারোটি বছর (৬১০-৬২২ সাল) একত্রেই বসবাস করতেন; যা আজকের আধুনিক সেকুলার সমাজেও এক বিরল উদাহরণ। এমন একটি সমাজের সমস্ত লোককে ইসলামের নবী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা গত ১৪০০ বছর যাবত "অন্ধকারের যুগ/বাসিন্দা" বলে আখ্যায়িত করে আসছেন।
৩) স্ত্রী জয়নাব তাঁর স্বামীর এই চরম অসহায় মুহুর্তে তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে স্বামীর মুক্তির জন্য মুক্তিপণের অর্থ পাঠিয়েছিলেন।
৪) “ইসলামের নবী মুহাম্মদ” তাঁর জামাতা আবু আল আস কে মুক্তি দেয়ার সময় শর্ত আরোপ করেছিলেন যে, তিনি যেন তাঁর মেয়ে জয়নাবকে মদিনায় তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন।
:
চরম উদার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী এমন এক স্বামী একই সাথে সুদীর্ঘ ১২ টি বছর তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একত্রে অবস্থান করা অবস্থায় তাঁর সেই স্ত্রীরই প্রত্যক্ষ সাহায্যে মুক্ত হয়ে বিনা অপরাধে তাঁর সেই স্ত্রীকে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে বাপের বাড়িতে নির্বাসনে পাঠাবেন এমন অযৌক্তিক দাবি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
:
আবু আল আস মক্কায় এসে তাঁর শ্বশুরের আরোপিত শর্ত অনুযায়ী স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। জয়নাব মদিনায় তাঁর পিতা মুহাম্মদের কাছে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
:
ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, কীভাবে ইসলামের নবী মুহাম্মদ তাঁর নিজ জামাতা আবু আল আস বিন রাবিকে বাধ্য করেছিলেন যেন তিনি তাঁর স্ত্রী জয়নাবকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। সুদীর্ঘ ১২ টি বছর (৬১০-৬২২ সাল) এই পৌত্তলিক স্বামী তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একই বাড়িতে অবস্থান করতেন। তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রীর ওপর কোনোরূপ অত্যাচার বা অসম্মান করতেন, এমন ইতিহাস কোথাও নেই। পৌত্তলিক আবু আল আস তাঁর মুসলিম স্ত্রীকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করেননি। ইসলামের নবী মুহাম্মদই আটকের পর তাঁকে বাধ্য করেছিলেন, যেন তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন।
:
ঐতিহাসিক বর্ণনা :
:
জয়নাব বললেন, "মক্কায় আমি যখন আমার পিতার সাথে [মদিনায়] যোগদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হিন্দ বিনতে ওতবা (আবু সুফিয়ান বিন হারবের স্ত্রী, যিনি ছিলেন জয়নাবের স্বামীর বংশের; যে কারণে জয়নাবের সাথে ছিল তাঁর সখ্যতা। কিন্তু তিনি ছিলেন মুহাম্মদের চাচা হামজার উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থে আকুল আকাঙ্ক্ষী, কারণ তিনি [হামজা] তাঁর বাবা ও চাচাকে বদর প্রান্তে খুন করেছিলেন।) আমার সাথে সাক্ষাত করেন এবং আমাকে সাহায্য করতে চান।
:
নবীকন্যা যখন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন, তাঁর স্বামীর ভাই কেনানা বিন আল রাবি তাঁর জন্য একটা উট নিয়ে আসেন, যার ওপর তিনি সওয়ার হন। তারপর কেনানা তার তীর ও তূণী নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে উটের পিঠের উপর স্থাপিত ডুলির (camel litter) ওপর তাঁকে [জয়নাব] বসিয়ে উটটি পরিচালনা করেন। কুরাইশরা এ ব্যাপারে বলাবলি শুরু করে এবং তাদের কে অনুসরণ করে এসে ধু-তাওয়া নামক স্থানে তাদেরকে পাকড়াও করে।
:
যে লোকটি প্রথমেই তাদের কাছে পৌঁছেন, তাঁর নাম ছিল হাববার বিন আল-আসওয়াদ বিন আল-মু্ত্তালিব বিন আসাদ বিন আবদ আল-উজজা আল-ফিহিরি। যখন হাববার তাদেরকে বল্লম দিয়ে হুমকি প্রদান করে, তিনি [জয়নাব] ছিলেন উটের পিঠের ওপর স্থাপিত ডুলির ভিতরে। বলা হয়, তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী; যখন তিনি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন তখন তাঁর গর্ভপাত হয়।
হাববারের হুমকির পর তাঁর দেবর [কেনানা] নতজানু হয়ে বসে পরে, তূণী থেকে তীর বের করে এবং বলে, "আল্লাহর কসম, কেউ আমার নিকটবর্তী হলে আমি তাকে তীরবিদ্ধ করবো।" ফলে আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য গণ্যমান্য কুরাইশরা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা [হাববার বিন আল-আসওয়াদ ও নাফি বিন আবদ কায়েস] পিছু হটে। আবু সুফিয়ান বলেন, "এই যে [কেনানা], তোমার ধনুক নিচু করো যাতে আমরা তোমার সাথে কথা বলতে পারি।" সে তার ধনুক নিচু করে; আবু সুফিয়ান তার পাশে এসে দাঁড়ান ও বলেন,-
:
"তোমার ভুল এই যে, তুমি মেয়েটিকে সবার চোখের সামনেই প্রকাশ্যে দূরে বাহিরে নিয়ে যেতে চাইছ, যেখানে তুমি জানো যে আমাদের নিদারুণ দুর্দশা ও বিপর্যয়ের জন্য দায়ী হলো ইসলামের নবী মুহাম্মদ। এই বিপর্যয়ের পরেও যদি প্রকাশ্যে সবার সামনে তার কন্যাকে তুমি বের করে নিয়ে যাও, তবে তা হবে আমাদের জন্য চরম অপমানকর; জনগণ মনে করবে যে, এটা আমাদের চরম দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ। আমার জানের কসম, আমরা তার কন্যাকে ধরে রাখতে চাই না এবং এভাবে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা আমাদের পন্থা নয়। কিন্তু মেয়েটিকে এখন ফিরিয়ে নিয়ে যাও এবং যখন বিক্ষোভ থেমে যাবে এবং লোকেরা বলবে যে, আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি, তখন তুমি গোপনে তাকে নিয়ে যেও যেন সে তার বাবার সাথে মিলিত হতে পারে।"
:
ঠিক ঠিক তাইই ঘটেছিল। এক রাতে সে [জয়নাবের দেবর কেনানা] তাঁকে নিয়ে যায় এবং জায়েদ বিন হারিথা ও তাঁর সঙ্গীর কাছে হস্তান্তর করে; তারা তাঁকে নিয়ে আল্লাহর নবীর কাছে যায়।’ এ ঘটনায় নন মুসলিম আবুল আস বা কুরাইশদের কোন অসদাচরণ কি প্রকাশ পায়?
==========================
সূত্র: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা - ৩১৪-৩১৫, “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) - ১৩৪৮-১৩৫০
:
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন