মুসলিমরা সবাই বলে থাকেন যে, পৃথিবীর সকল মানুষ ইসলামের শান্তির পতাকাতলে নিজ ইচ্ছেতেই সমবেত হয়েছেন। কিন্তু নবীর জন্মস্থান মক্কার লোকেরা কিভাবে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিল তার বণর্না ইসলামি ঐতিহাসিকগণ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
:
৬৩০ সালের পহেলা জানুয়ারি (১০ই রমজান, হিজরি ৮ সাল) মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর অনুসারী এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা থেকে রওনা হন। তিনি তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল তাঁর অনুসারীদের কাছেও গোপন রাখেন এবং ঘোষণা দেন যে, তাঁদের অনুসারীদের কেউই যেন মক্কার কুরাইশদের সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ না করে।
:
নবীর চাচা আল-আব্বাস পরিবার সমেত "আল-যুহফা" নামক স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার (Migration) সময় পথিমধ্যে মুহাম্মদের সাথে মিলিত হন। এর আগে তিনি মক্কাতেই বসবাস করতেন।
:
অন্যান্য প্রায় সমস্ত অভিযানের মতই অতর্কিত আক্রমণে শত্রুদের পরাস্ত করার নিমিত্তে অতীব গোপনীয়তায় মুহাম্মদ ও তাঁর ১০,০০০ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মক্কার অদূরবর্তী "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। মুহাম্মদ অনুসারীরা বুঝতে পারেন, আল্লাহর নবীর লক্ষ্য হলো মক্কা অভিযান; অতর্কিত আক্রমণে মক্কাবাসীদের পরাস্ত করে "মক্কা বিজয়"।
:
মক্কাবাসীরা মুহাম্মদের এই পরিকল্পনা ও আক্রমণের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ৬২৮ সালের মার্চ মাসে (জিল-হজ, হিজরি ৬ সাল) হুদাইবিয়া নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের সাথে মক্কার কুরাইশদের দশ বছরের শান্তি চুক্তি ("হুদাইবিয়ার সন্ধি") স্বাক্ষরিত হয়।
:
মক্কাবাসী কুরাইশরা ধারণাও করতে পারেনি যে, মুহাম্মদ এই দশ বছরের শান্তি চুক্তি অবলীলায় লঙ্ঘন করে মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মক্কা আক্রমণ করতে পারেন। বানু খুজা গোত্র (মুহাম্মদের মিত্রপক্ষ) ও বানু বকর গোত্রের (কুরাইশদের মিত্রপক্ষ) সংঘর্ষের কারণে মক্কাবাসী কুরাইশরা অতিরিক্ত সন্ধানী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
:
মক্কাবাসীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রাত্রিবেলা হাকিম বিন হিজাম ও বুদায়েল বিন ওয়ারকা নামের দুইজন কুরাইশকে সঙ্গে নিয়ে সেইসময় পাহারায় থাকতেন। যে রাত্রিতে মুহাম্মদ "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন, মুহাম্মদের চাচা আল আব্বাস মক্কার কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অতিশয় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রচুর রক্তপাতের কারণ ঘটবে ও কুরাইশদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তিনি যে কোনো মূল্যে মুহাম্মদের এই অতর্কিত মক্কা আক্রমণের খবরটি কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
:
সেই রাত্রিতেই তিনি মুহাম্মদের সাদা খচ্চরের (White mule) পিঠে চড়ে শিবির থেকে বের হয়ে আসেন। শিবিরের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা মুহাম্মদের এই সাদা খচ্চরটি চিনতেন, আল-আব্বাসকেও চিনতেন অনেকে। সে কারণে শিবির থেকে বাইরে যাওয়া ও পুনরায় শিবিরে ফিরে আসার ব্যাপারে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল: যে কোনোভাবে মক্কার সন্নিকটে "আল-আরাক" নামক এক বৃক্ষ উপত্যকায় (A tree Valley) পৌঁছানো। তাঁর লক্ষ্য ছিল এই যে, তিনি সেখানে গিয়ে মক্কা গমনকারী যে কোনো পথচারীর মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে মুহাম্মদের এই আক্রমণের খবরটি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
:
পথিমধ্যে তিনি আবু সুফিয়ানের গলার শব্দ শুনতে পান। রাতের অন্ধকারে অসংখ্য মশালের আলোয় আলোকিত দূরের সেই স্থানটিতে কারা আছে, তা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করছিলেন।সঙ্গীদের একজন বলেন যে, ঐ স্থানটিতে বানু খুজার লোকজনেরা গোলযোগ করছে। আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন যে, তা হতে পারে না; বানু খোজার লোকেরা গরীব, তাদের কাছে এত অধিক মশালের আলো জ্বালানো সম্ভব নয়। আবু সুফিয়ানের গলার আওয়াজ শুনে আল আব্বাস জিজ্ঞেস করেন, "আবু হানজালা নাকি?" আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন, "আবু আল-ফদল নাকি? আল-আব্বাস মুহাম্মদের পরিকল্পনার খবর আবু সুফিয়ানকে খুলে বলেন। তিনি তাঁকে বলেন যে মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর আক্রমণ তাদের সবাইকেই (কুরাইশ) ধ্বংস করে দেবে। তিনি আরও বলেন যে, যদি তিনি তাঁর ও কুরাইশদের জীবন রক্ষা করতে চান, তবে এই মুহূর্তেই তিনি যেন তাঁর সাথে এই খচ্চরের পিঠের ওপর চড়ে বসেন।
:
কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের জীবন বাজি রেখে আবু সুফিয়ান আল আব্বাসের পেছনে মুহাম্মদের সেই সাদা খচ্চরের ওপর চড়ে বসেন। আল আব্বাস তাঁকে নিয়ে মুহাম্মদের শিবিরে ফিরে আসেন।
শিবিরের ভেতর প্রবেশ করার পর, মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করার আগের মুহূর্তে ওমর ইবনে খাত্তাব আবু সুফিয়ানকে চিনে ফেলেন। তিনি তখনই আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত।আল আব্বাস প্রবলভাবে উমরকে বাধা প্রদান করেন ও তাঁকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি দ্রুত গতিতে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করেন।
:
ওমর সেখানেও আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত। আল আব্বাস প্রবলভাবে আবারও বাধা প্রদান করেন এবং মুহাম্মদকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওমরের সাথে আল আব্বাসের বচসা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তা বংশমর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছায়। আব্বাস বলেন যে, ওমরের এই ব্যবহারে তিনি মর্মাহত এবং প্রশ্ন রাখেন যে আবু সুফিয়ান যদি আবদ-মানাফ বংশের (মুহাম্মদ/আল-আব্বাসের বংশ) না হয়ে আবদ আ'দি বংশের (ওমরের বংশ) হতো, তবে ওমর কখনোই আবু সুফিয়ানের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারতো না। নবী মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি আল আব্বাসকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন আবু সুফিয়ানকে সেই রাত্রির জন্য ধরে রাখেন এবং পরদিন সকালে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। আল-আব্বাস তাঁর নিজের তাঁবুতেই সেই রাত্রে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে রাখেন ও পরদিন প্রত্যুষে তাঁকে মুহাম্মদের কাছে হাজির করেন। মুহাম্মদ আবু সুফিয়ানের প্রশ্ন রাখেন যে, এখনও কি আবু সুফিয়ানের সন্দেহ আছে যে, তিনিই আল্লাহর নবী? তিনি তাঁকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান জানান। আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মুহাম্মদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। মুহাম্মদ তার কোনো জবাব না দিয়ে আবারও আবু সুফিয়ানকে একই প্রশ্ন করেন ও তাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান।
:
আবু সুফিয়ানের নিরাপত্তার কথা ভেবে আল আব্বাস উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তিনি আবু সুফিয়ানকে পরামর্শ দেন যে, তিনি যদি জীবন বাঁচাতে চান, তবে এই মুহূর্তেই যেন তিনি মুহাম্মদকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ান তরবারির মুখে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণের পর আল আব্বাস মুহাম্মদকে এই বলে অনুরোধ করেন যে, আবু সুফিয়ান একজন সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত কুরাইশ নেতা। মুহাম্মদ যেন তাঁকে এমন কিছু দান করেন, যা আবু সুফিয়ান মক্কার কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তিনি যেন তাঁকে বিফল না করেন।
:
জবাবে নবী মুহাম্মদ বলেন, আবু সুফিয়ান যেন মক্কার কুরাইশদের কাছে গিয়ে খবর দেন যে, ঐ ব্যক্তিরা নিরাপদ যারা-
:
৬৩০ সালের পহেলা জানুয়ারি (১০ই রমজান, হিজরি ৮ সাল) মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর অনুসারী এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদিনা থেকে রওনা হন। তিনি তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল তাঁর অনুসারীদের কাছেও গোপন রাখেন এবং ঘোষণা দেন যে, তাঁদের অনুসারীদের কেউই যেন মক্কার কুরাইশদের সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ না করে।
:
নবীর চাচা আল-আব্বাস পরিবার সমেত "আল-যুহফা" নামক স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার (Migration) সময় পথিমধ্যে মুহাম্মদের সাথে মিলিত হন। এর আগে তিনি মক্কাতেই বসবাস করতেন।
:
অন্যান্য প্রায় সমস্ত অভিযানের মতই অতর্কিত আক্রমণে শত্রুদের পরাস্ত করার নিমিত্তে অতীব গোপনীয়তায় মুহাম্মদ ও তাঁর ১০,০০০ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মক্কার অদূরবর্তী "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। মুহাম্মদ অনুসারীরা বুঝতে পারেন, আল্লাহর নবীর লক্ষ্য হলো মক্কা অভিযান; অতর্কিত আক্রমণে মক্কাবাসীদের পরাস্ত করে "মক্কা বিজয়"।
:
মক্কাবাসীরা মুহাম্মদের এই পরিকল্পনা ও আক্রমণের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। ৬২৮ সালের মার্চ মাসে (জিল-হজ, হিজরি ৬ সাল) হুদাইবিয়া নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের সাথে মক্কার কুরাইশদের দশ বছরের শান্তি চুক্তি ("হুদাইবিয়ার সন্ধি") স্বাক্ষরিত হয়।
:
মক্কাবাসী কুরাইশরা ধারণাও করতে পারেনি যে, মুহাম্মদ এই দশ বছরের শান্তি চুক্তি অবলীলায় লঙ্ঘন করে মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মক্কা আক্রমণ করতে পারেন। বানু খুজা গোত্র (মুহাম্মদের মিত্রপক্ষ) ও বানু বকর গোত্রের (কুরাইশদের মিত্রপক্ষ) সংঘর্ষের কারণে মক্কাবাসী কুরাইশরা অতিরিক্ত সন্ধানী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
:
মক্কাবাসীর নিরাপত্তার লক্ষ্যে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব রাত্রিবেলা হাকিম বিন হিজাম ও বুদায়েল বিন ওয়ারকা নামের দুইজন কুরাইশকে সঙ্গে নিয়ে সেইসময় পাহারায় থাকতেন। যে রাত্রিতে মুহাম্মদ "মার আল-জাহরান" নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন, মুহাম্মদের চাচা আল আব্বাস মক্কার কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অতিশয় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন যে, মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রচুর রক্তপাতের কারণ ঘটবে ও কুরাইশদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তিনি যে কোনো মূল্যে মুহাম্মদের এই অতর্কিত মক্কা আক্রমণের খবরটি কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
:
সেই রাত্রিতেই তিনি মুহাম্মদের সাদা খচ্চরের (White mule) পিঠে চড়ে শিবির থেকে বের হয়ে আসেন। শিবিরের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা মুহাম্মদের এই সাদা খচ্চরটি চিনতেন, আল-আব্বাসকেও চিনতেন অনেকে। সে কারণে শিবির থেকে বাইরে যাওয়া ও পুনরায় শিবিরে ফিরে আসার ব্যাপারে তাঁর কোনো অসুবিধা হয়নি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল: যে কোনোভাবে মক্কার সন্নিকটে "আল-আরাক" নামক এক বৃক্ষ উপত্যকায় (A tree Valley) পৌঁছানো। তাঁর লক্ষ্য ছিল এই যে, তিনি সেখানে গিয়ে মক্কা গমনকারী যে কোনো পথচারীর মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে মুহাম্মদের এই আক্রমণের খবরটি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
:
পথিমধ্যে তিনি আবু সুফিয়ানের গলার শব্দ শুনতে পান। রাতের অন্ধকারে অসংখ্য মশালের আলোয় আলোকিত দূরের সেই স্থানটিতে কারা আছে, তা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করছিলেন।সঙ্গীদের একজন বলেন যে, ঐ স্থানটিতে বানু খুজার লোকজনেরা গোলযোগ করছে। আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন যে, তা হতে পারে না; বানু খোজার লোকেরা গরীব, তাদের কাছে এত অধিক মশালের আলো জ্বালানো সম্ভব নয়। আবু সুফিয়ানের গলার আওয়াজ শুনে আল আব্বাস জিজ্ঞেস করেন, "আবু হানজালা নাকি?" আবু সুফিয়ান জবাবে বলেন, "আবু আল-ফদল নাকি? আল-আব্বাস মুহাম্মদের পরিকল্পনার খবর আবু সুফিয়ানকে খুলে বলেন। তিনি তাঁকে বলেন যে মুহাম্মদের এই বিশাল বাহিনীর আক্রমণ তাদের সবাইকেই (কুরাইশ) ধ্বংস করে দেবে। তিনি আরও বলেন যে, যদি তিনি তাঁর ও কুরাইশদের জীবন রক্ষা করতে চান, তবে এই মুহূর্তেই তিনি যেন তাঁর সাথে এই খচ্চরের পিঠের ওপর চড়ে বসেন।
:
কুরাইশদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের জীবন বাজি রেখে আবু সুফিয়ান আল আব্বাসের পেছনে মুহাম্মদের সেই সাদা খচ্চরের ওপর চড়ে বসেন। আল আব্বাস তাঁকে নিয়ে মুহাম্মদের শিবিরে ফিরে আসেন।
শিবিরের ভেতর প্রবেশ করার পর, মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করার আগের মুহূর্তে ওমর ইবনে খাত্তাব আবু সুফিয়ানকে চিনে ফেলেন। তিনি তখনই আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত।আল আব্বাস প্রবলভাবে উমরকে বাধা প্রদান করেন ও তাঁকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি দ্রুত গতিতে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে মুহাম্মদের কক্ষে প্রবেশ করেন।
:
ওমর সেখানেও আবু সুফিয়ানের কল্লা কাটার জন্য প্রস্তুত। আল আব্বাস প্রবলভাবে আবারও বাধা প্রদান করেন এবং মুহাম্মদকে জানিয়ে দেন যে, আবু সুফিয়ানকে তিনি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওমরের সাথে আল আব্বাসের বচসা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তা বংশমর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছায়। আব্বাস বলেন যে, ওমরের এই ব্যবহারে তিনি মর্মাহত এবং প্রশ্ন রাখেন যে আবু সুফিয়ান যদি আবদ-মানাফ বংশের (মুহাম্মদ/আল-আব্বাসের বংশ) না হয়ে আবদ আ'দি বংশের (ওমরের বংশ) হতো, তবে ওমর কখনোই আবু সুফিয়ানের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারতো না। নবী মুহাম্মদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি আল আব্বাসকে আদেশ করেন যে, তিনি যেন আবু সুফিয়ানকে সেই রাত্রির জন্য ধরে রাখেন এবং পরদিন সকালে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। আল-আব্বাস তাঁর নিজের তাঁবুতেই সেই রাত্রে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে রাখেন ও পরদিন প্রত্যুষে তাঁকে মুহাম্মদের কাছে হাজির করেন। মুহাম্মদ আবু সুফিয়ানের প্রশ্ন রাখেন যে, এখনও কি আবু সুফিয়ানের সন্দেহ আছে যে, তিনিই আল্লাহর নবী? তিনি তাঁকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করার আহ্বান জানান। আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মুহাম্মদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। মুহাম্মদ তার কোনো জবাব না দিয়ে আবারও আবু সুফিয়ানকে একই প্রশ্ন করেন ও তাকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান।
:
আবু সুফিয়ানের নিরাপত্তার কথা ভেবে আল আব্বাস উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। তিনি আবু সুফিয়ানকে পরামর্শ দেন যে, তিনি যদি জীবন বাঁচাতে চান, তবে এই মুহূর্তেই যেন তিনি মুহাম্মদকে নবী হিসাবে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ান তরবারির মুখে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণের পর আল আব্বাস মুহাম্মদকে এই বলে অনুরোধ করেন যে, আবু সুফিয়ান একজন সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত কুরাইশ নেতা। মুহাম্মদ যেন তাঁকে এমন কিছু দান করেন, যা আবু সুফিয়ান মক্কার কুরাইশদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তিনি যেন তাঁকে বিফল না করেন।
:
জবাবে নবী মুহাম্মদ বলেন, আবু সুফিয়ান যেন মক্কার কুরাইশদের কাছে গিয়ে খবর দেন যে, ঐ ব্যক্তিরা নিরাপদ যারা-
১) আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে আশ্রয় নেবে;
২) যারা কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে এবং;
৩) যারা তাদের নিজেদের ঘরের দরজা বন্ধ রেখে তার ভেতরে অবস্থান করবে (মানে প্রতিরোধ করবে না)।
:
নবী মুহাম্মদ আল আব্বাসকে হুকুম দেন, তাঁর সৈন্যরা এই শিবির থেকে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন আবু সুফিয়ানকে ধরে রাখেন। আল আব্বাস মুহাম্মদের সেই নির্দেশ পালন করেন এবং সৈন্যরা প্রস্থান করার পর আবু সুফিয়ানকে ছেড়ে দেন। আবু সুফিয়ান দ্রুত গতিতে মক্কায় ফিরে আসেন এবং মক্কার কুরাইশদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। ভীত সন্ত্রস্ত কুরাইশরা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ঐ শর্তগুলো অনুসরণ করেন।
.
উপর্যক্ত আলোচনায় সহজেই বোঝা যায় কিভাবে মক্কাবাসী ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেন। উল্লেখ্য অপমানজকভাবে এসকল মুসলিমককে (মক্কা বিজয়ের দিন যারা ইসলাম গ্রহণ করে) ইসলামে তোলাকা মুসলমান বলা হতো।আসলে কুরাইশদের প্রতি আল আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও আবু সুফিয়ান বিন হারবের গভীর মমত্ব ও দায়িত্ববোধ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বা এবং অসীম সাহসিকতায় রক্তপাতহীন মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছিল।
২) যারা কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে এবং;
৩) যারা তাদের নিজেদের ঘরের দরজা বন্ধ রেখে তার ভেতরে অবস্থান করবে (মানে প্রতিরোধ করবে না)।
:
নবী মুহাম্মদ আল আব্বাসকে হুকুম দেন, তাঁর সৈন্যরা এই শিবির থেকে চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে যেন আবু সুফিয়ানকে ধরে রাখেন। আল আব্বাস মুহাম্মদের সেই নির্দেশ পালন করেন এবং সৈন্যরা প্রস্থান করার পর আবু সুফিয়ানকে ছেড়ে দেন। আবু সুফিয়ান দ্রুত গতিতে মক্কায় ফিরে আসেন এবং মক্কার কুরাইশদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। ভীত সন্ত্রস্ত কুরাইশরা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ঐ শর্তগুলো অনুসরণ করেন।
.
উপর্যক্ত আলোচনায় সহজেই বোঝা যায় কিভাবে মক্কাবাসী ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেন। উল্লেখ্য অপমানজকভাবে এসকল মুসলিমককে (মক্কা বিজয়ের দিন যারা ইসলাম গ্রহণ করে) ইসলামে তোলাকা মুসলমান বলা হতো।আসলে কুরাইশদের প্রতি আল আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও আবু সুফিয়ান বিন হারবের গভীর মমত্ব ও দায়িত্ববোধ, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বা এবং অসীম সাহসিকতায় রক্তপাতহীন মক্কা বিজয় সম্ভব হয়েছিল।
=======================================================
সূত্র : “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮৫-৩৮৭;http://www.justislam.co.uk/…/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasu…; “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪১৮-১৪১৯http://books.google.com/books…
সূত্র : “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৮৫-৩৮৭;http://www.justislam.co.uk/…/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasu…; “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪১৮-১৪১৯http://books.google.com/books…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন