শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সিরাত থেকে নেয়া ইসলামের ইতিহাসপর্ব : ৮ (ধর্ম বিষয়ক পোস্ট # ৪২)

সিরাত থেকে নেয়া ইসলামের ইতিহাসপর্ব : ৮
[ওহুদ যুদ্ধ যেভাবে আর যে প্রেক্ষাপটে শুরু]
:
যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মদিনার আনসাররা বলে, "হে আল্লাহর নবী, আমাদের কি এটি উচিত নয় যে, আমরা আমাদের মিত্র ইহুদিদের কাছে সাহায্য শুধাই?"
জবাবে নবী বলেন, "তাদের প্রয়োজন আমাদের নেই!"-----
তবে আগ্রহি ইহুদিরা এ যু্দধে অংশ নিয়েছিলেন ও ওহুদ যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন, তাদের একজন হলেন ইহুদি মুখায়েরিক, যিনি ছিলেন বানু থালাবা বিন আল-ফিতিউন গোত্রের লোক।
ঐ দিন মুখায়েরিক ইহুদিদের উদ্দেশে বলেন: "তোমরা জান যে, তোমাদের কর্তব্য হলো মুহাম্মদকে সাহায্য করা।"
যখন ইহুদিরা জবাবে বলে যে, সেটি 'সাবাথ (শনিবার) দিন', তখন নবী বলেন, "তোমরা কোনো সাবাথের অধিকার পাবে না" এবং মুখায়েরিক তাঁর তরবারি ও সাজসজ্জা নিয়ে ঘোষনা দেন যে, যদি তিনি নিহত হন তবে তাঁর সম্পত্তির মালিক হবেন মুহাম্মদ, যা তিনি যেমন খুশী তেমন ভাবে ব্যয় করতে পারবেন।
তারপর তিনি আল্লাহর নবীর সাথে যোগদান করেন এবং নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেন। এরপর আল্লাহর নবী বলেন, "মুখায়েরিক হলো ইহুদিদের মধ্যে উত্তম।" 
:
কুরাইশরা ওহুদ প্রান্তে জড়ো হয়েছিলেন বদর যুদ্ধে তাঁদের প্রিয়জনদের হত্যা, বন্দী, অপমান ও লাঞ্ছনার প্রতিশোধ নিতে!
একটা ব্যাপার বলা হয় যে ইহুদিরা চুক্তি মোতাবেক মুসলিমদের সাহায্য না করে অপরাধ করেছিল, তাই তারা চুক্তি ভঙ্গকারী, মুনাফেক। অতএব তাদের প্রাপ্য উৎখাত কিংবা হত্যা। কথাটা কি আসলে সত্যি?
:
এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নবীর একান্ত অনুসারীরাও ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। মুহাম্মদের বহু অনুসারী মদিনা পরিত্যাগ করে আগ বাড়িয়ে ওহুদ প্রান্তে গিয়ে কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে এতই অনিচ্ছুক ছিলেন যে, তাঁর এক-তৃতীয়াংশ অনুসারী মাঝপথ থেকে আবার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।
:
যেখানে মুহাম্মদের নিজ অনুসারীরাই আগ বাড়িয়ে কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে অনিচ্ছুক, সেখানে গত একটি বছর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের একের পর এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার বলি (Victim) মদিনার ইহুদি গোত্রের লোকেরা তাঁদের পবিত্র 'সাবাথ দিনে' মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের কাছ থকে কোনোরূপ সাহায্যের আহ্বান ছাড়াই আগ বাড়িয়ে দলে দলে ওহুদ যুদ্ধে শরীক হবেন, এমন প্রত্যাশা অবাস্তব ও হাস্যকর। 
:
মদিনা এবং মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা আক্রান্ত না হওয়া সত্বেও আগ বাড়িয়ে ওহুদ প্রান্তে গিয়ে কুরাইশদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে মুহাম্মদের বহু অনুসারীদের মতই মদিনার ইহুদিরাও ছিলেন অনিচ্ছুক। এটি কোনো চুক্তিভঙ্গের উদাহরণ নয়! যে কারণে মুসলিম আবদুল্লাহ বিন উবাই বিন সালুল ও আরও প্রায় ৩০০ মুহাম্মদ অনুসারী (এক-তৃতীয়াংশ) মাঝপথ থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
:
এরপরও নবী যুদ্ধ প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন। তারপর তিনি তাঁর তরবারি হাতে নেন এবং তা ঘুরিয়ে আস্ফালন (Brandish) করে বলেন, "তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে এই তরবারির যোগ্য?"
মুসলিম আবু দুযানা জিজ্ঞাসা করেন, "হে আল্লাহর নবী, এটি গ্রহণের যোগ্যতা কী?"
তিনি জবাবে বলেন, "তা এই যে, এটি দিয়ে তুমি শত্রুদের আঘাত/বধ (Smite) করতেই থাকবে যতক্ষণ না এটি বেঁকে যায়।"
যখন তিনি বলেন যে, তিনি এটি গ্রহণ করে তার মর্যাদা রাখবেন, তিনি তা তাকে দেন। আবু দুযানা ছিলেন সাহসী কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দাম্ভিক। যখনই তিনি তাঁর লাল পাগড়িটি পরিধান করতেন, জনগণ জানতেন যে, তিনি যুদ্ধে প্রস্তুত।’ 
:
যখন দুই পক্ষ একে অপরের নিকটবর্তী হলো, হিন্দ বিনতে ওতবা তাঁর সঙ্গের মহিলাদের নিয়ে উঠে দাঁড়ান ও সৈন্যদের পেছনে পেছনে চলতে থাকেন। কুরাইশ নারীরা খঞ্জনিগুলো সৈন্যদের উদ্দীপ্ত করার জন্য বাজাচ্ছিল, তা তারা বাজাতে বাজাতে সুর করে গাইতে থাকেন:
"হে আবদ-দার এর দারক,
তোমরা আমাদের রক্ষক,
প্রতিটি শাণিত বল্লম দ্বারা করো তাদের আঘাত!"
===========================================
সূত্র : “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ২০০-৩৭৩ ; “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭ – পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩০০-১৩৯৮।
===========================================

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন