গাজায় মরছে অসংখ্য মানুষ, নারী আর শিশুর লাশ দেখে শোকার্ত বিশ্ব মানব। আপাত আমরা সবাই ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর ইসরাইলি আমক্রণের বর্বরতা দেখছি। এটা যেন বিশ্বে একটা ক্যান্সারের মত অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধ। কিন্তু এক দিনের চেষ্টায় এ যুদ্ধ চিরদিনের জন্য বন্ধ হতে পারে। প্রশ্ন কিভাবে? দেখতে হবে সমস্যার সূত্রপাত কোথায়? আর এর সমাধান কি?
এ যুদ্ধ মূলত ইহুদি মুসলিম যুদ্ধ, এটা আজ শুরু হয়নি। হয়েছিল প্রফেট মোহাম্মদ যখন মদিয়ায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন, তখন থেকেই। ইহুদিরা বদান্যতাবসত ইসলামের নবীর বাসস্থান ও নতুন মসজিদ বানানোর জন্য তাদের পুরণো পূর্ব পুরুষদের কবরস্থানের জমি দান করেছিল, একথা হাদিসে বর্ণতি হয়েছে বহুবার। কোন মূল্যও নেয়নি তারা। কিন্তু যখন ইহুদিরা তাদের পুরণো ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণে আপত্তি জানালো, তখনই মুসলমানরা তাদেরকে তাদের পৈত্রিক ভিটা খায়বর, ফদক, তাইমা, অরিহা থেকে উৎখাত, তাদের ভূমি বাড়িঘর দখল ও পুরুষদের হত্যা কিংবা বিতাড়ন করে। নারী শিশুদের প্রথমে আটক ও পরে দাসি বানায়। নবীর স্ত্রী সাফিয়া ছিলেন খায়বরের ইহুদি হুয়াইর কন্যা। তার গোত্রের সকল পুরুষদের (পিতা+ভাই+স্বামি) হত্যার পর দাসি হিসেবে সাহাবি দাহবি কালবির হাতে পরে এ মহিলা। নবী অন্য ৭টি দাসির বিনিময়ে দাসত্ব থেকে এ নারীকে মুক্ত করে বিয়ে করেন।
এর ধারাবাহিকতায় মুসলমানরা জেরজালেম দখল করলে ইহুদিরা তাওরাত বর্ণিত তাদের "পবিত্র ভূমি" থেকে বিতাড়িত হয়ে হাজার বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ায়। অনেক কুটকৌশল করে ইউরোপ আমেরিকাকে হাতে নিয়ে ১৯৪৮ সনে জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে ইহুদিরা তাদের পূর্বপুরুষের নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসে।
এখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যের কমবেশি ৯৯% জমিতে আরবরা বসবাস করছে, আর কমবেশি ১% জামিতে ইহুদি তথা ইসরাইলিরা বসবাস করছে। ইতিহাস আর যুক্তির যে কোন বিচারে ইহুদিরা ইসরাইলে বসবাসের অধিকার রাখে, এ দেশটির নামটিও তাদের নবীর নামে রাখা। যদিও মুসলমানদের নবীর নামে কোন দেশ নেই মুসলিমদের। ইসরাইলে অনেক আরব মুসলমান বসবাস করে। সেখানের এমপি, বিচারক, মন্ত্রী আছে আরব মুসলিম। কিন্তু কোন মুসলিম রাষ্ট্রে বাস করেনা বা যেতে পারেনা কোন ইহুদি। ইসরাইলির দাপ্তরিক ভাষা হিব্রু ও আরবি, কোন আরব রাষ্ট্রেই হিব্রু ভাষা নেই। ইসরাইলি আরব ও ইহুদি শিশুরা বাধ্যতামূলক আরবি ও হিব্রু শেখে স্কুলে।
ইসলাম ধর্মে অনেকবার ইহুদিদের খারাপ, হত্যা করা, বন্ধু না বানানোর কথা বলা আছে, এমনকি তারা গর্তে ঢুকলেও তাদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে মুসলমানদের। কিন্তু তাওরাতে মুসলিমদের ঘৃণা বা হত্যার কথা বলা হয়নি। কোন ইহুদি কখনো কোন মুসলিম রাষ্ট্র আক্রমন করেছে এমন ইতিহাস নেই, কেবল বর্তমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যা ছাড়া। কিনতু মুসলিমরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে নানাভাবে ইহুদিদের বিতাড়িত করেছে, হত্যা করেছে, যার ইতিহাস ভুরিভুরি হাদিস কোরানেই বিদ্যমান। একসময় সিরিয়া, জর্ডান, লেবাননসহ ছিল বিশাল জুডাইজম বা ইহুদি রাষ্ট্র। যা এখন মুসলমানদের দখলে।
উপর্যুক্ত তথ্য বিশ্লেষণে যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, ইহুদি মুসলিম লড়াই মূলত শুরু হয়েছে ইসলামি নবীর সময় থেকেই যা এখনো বিদ্যমান। মধ্যযুগিয় চিন্তা চেতনা বহাল রাখলে এ যুদ্ধ কখনোই শেষ হবেনা। ফিলিস্তিনি নারী শিশুদের উপর যে আক্রমণ আমরা দেখে এখন অশ্রুপাত করছি, তা হাজার বার নিন্দনীয়। কিন্তু ইহুদি নারী, শিশু আর পুরুষদের উপরও এমন আক্রমন শুরু করেছিল মুসলমানরা কেবল ধর্মীয় কারণে।
সুতরাং সব হত্যা, ধ্বংস, যুদ্ধই নিন্দনীয় ধর্ম আর জাতির নামে। অতীতে মুসলমানরা যা করেছে ইহুদিদের সাথে, সে ঘা কি তাদের হৃদয়ে নেই? এখন তারা মুসলমানদের তুলনায় জ্ঞান, বিজ্ঞান, অস্ত্রবিদ্যায় অনেক পারদর্শী। এখন কি মুসলমানরা টিকতে পারবে ইহুদিদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্ব থেকে ইহুদিদের মুছে দেয়ার চেতনা থেকে? কখনোই পারবে না, আর মানুষের চেতনা পাল্টেছে এখন, ধর্মের নামে মানুষকে কেন ঘৃণা করতে হবে, হত্যা করতে হবে? অতীতের যুদ্ধ ইতিহাস মুছে দিয়ে দরকার হলে অতীত হত্যা আর যুদ্ধের জন্য ইহুদিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্থায়ী শান্তির চুক্তি হতে পারে বিশ্বে। যেখানে মুসলমিরা তাদের দেশে বসবাস করবে, ইহুদিরা করবে তাওরাত প্রতিশ্রুত তাদের পবিত্রভূমিতে।
প্রত্যেকেই স্বীকার করে নেবে একে অন্যের শান্তিতে বসবাসের অধিকার। এ কাজে মুসলমানদের এগিয়ে আসতে হবে খোলা মনে। কারণ অতীতে মুসলমানরা ইহুদিদের উপর প্রথম অত্যাচার শুরু করেছিল। তখন মুসলিমরা শক্তিশালি ছিল, এখন নানা বিচারে ইহুদিরা শক্তিশালী। এ বাস্তবতা মানলে একদিনেই বিশ্বে স্থায়ি শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে। না হলে ক্রমশ এ যুদ্ধ বাড়তেই থাকবে। আরো বহু নারী শিশু মরবে কিন্তু বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত ইহুদি মুসলিম যুদ্ধ চলতেই থাকবে।
সুতরাং মুসলমানরা যদি একটু যুক্তি আর বিবেককে প্রাধান্য দিয়ে শান্তির পথে আসতে চায়, তবে একদিনেই এ চিরযুদ্ধের অবসান হতে পারে। কিন্তু তা কি হবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন