শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৩০১৫ সনের পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লিখবে ধর্মের ইতিহাস? ইসলাম-৫ [ ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধমালা # ৯ ]

ইসলাম ধর্ম : পর্ব # ৫
[১ম-৪র্থ পর্বের পর]
ইসলাম ধর্মে জাহান্নামের স্তর হবে ৭টি যার ভয়াবহতার বর্ণনা ছিল এরূপ - ধাবমান ৭০-গুণ ক্ষমতাধর জ্বলন্ত আগুন, বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছু, কণ্টকময় বিষাক্ত জাক্কুম ফল, খাবার হিসেবে পুঁজ-রক্ত, অদ্ভুদদর্শন কদাকার ভয়াবহ ফিরিস্তা, আগুনের মুগুর-কাঁচি, অনন্ত মৃত্যুহীন যন্ত্রণাময় ধারাবাহিক অগ্নিময় দহনীয় শাস্তি ইত্যাদি। দোযখবাসীর দু’পায়ের তালুতে অঙ্গার রাখা হবে (বুখারী-৬১০৭)। পাপীকে কবরে ৭০টি অজগর সাপ খামচাতে-কামড়াতে থাকবে (তিরমিযী-২৪০২), ওদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার (কোরান-১৪:৫০)। ‘
কোরান অবিশ্বাসের কারণে একজন মানুষকে জাহান্নামে পুড়িয়ে পূঁজ খাওয়ানো হবে’ (কোরান-১৪:১৭)। ‘জাহান্নামী পাবে ফুটন্ত পানি ও পুঁজ’ (কোরান-৭৮:২৬)। ‘কোরানে অবিশ্বাসীদের শাস্তি হিসেবে আগুনের পোশাক, মাথায় গরম পানি ঢালা ও লোহার মুগুর দিয়ে পেটানো হবে’ (কোরান-২২:১৯)। কোরানে অবিশ্বাসী কেউ মারা গেলে তার প্রতি কোরানের বাণী, ‘‘ধর ওকে। গলায় বেড়ি পড়াও এবং নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। আর শৃঙ্খলিত কর ৭০-গজ দীর্ঘ শৃঙ্খলে। এর খাবার ক্ষত নিঃসৃত পুঁজ’’ (কোরান-৬৯:৩০-৩৫)।
জাহান্নামে ১টি পাথর ৭০-বছর পড়তে থাকলেও জাহান্নামের তলদেশে পৌঁছতে পারবে না, লৌহনির্মিত ডা-া, ‘সাউদ’ নামে আগুনের পাহাড় যা উঠতে ৭০-বছর ও গড়াতে ৭০-বছর লাগবে, অধিবাসীদের দাঁত, উরু ও পাছা হবে বিভিন্ন পাহাড়ের সমান, শরীরের চামড়া হবে ৪২-গজ পুরু, পানীয় হবে গলিত তামার মতো গাদ সদৃশ্য, গরম পানিতে নাড়িভূঁড়ি বের হবে, গলিত পুঁজ পান করবে, যাক্কুম ফল খাদ্য হিসেবে খাবে যা গলায় আটকে যাবে, গাধার ন্যায় চিৎকার করবে, বিছিয়ে রাখা জিহবা লোকেরা পদদলিত করবে, অধিকাংশ বাসিন্দা হবে নারী (তিরমিযী-২৫১৩-২৪,২৬০৩-৬)।
২০১৪ সনের পূর্ববর্তী প্রাচীন পৃথিবীতে মুসলমানদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে খারেজিরা ছিল একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায়। তারা গোঁড়া কিন্তু আল্লাহ ও রাসুলের পথে বিচরণকারী ছিল। সুন্নীর মধ্যে হানাফীরা সাবলীল ও উদারপন্থী সম্প্রদায় ছিল। মালেকিরা বিচার, ফিকা, কোরান ও কিয়াসের আলোকে বিচার করে ধর্ম পালন করতো। শাফেয়িরাও উদার ও মধ্যপন্থী ছিল। হাম্বলীরা গোঁড়া ও রক্ষণশীল পন্থা অবলম্বন করতো। এ ছাড়াও মুর্জিয়া, কাদেরিয়া, জাবারিয়া, সিফাতিয়া ও মুতাজিলা অন্যতম মুসলিম চিন্তক সম্প্রদায় ছিল (Theological School of thought)। মুর্জিয়ারা বিশ্বাসের স্বরূপ অন্বেষা, কাদেরিয়াগণ ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, জাবারিয়াগণ নিয়তিবাদে বিশ্বাসী, সিফাতিয়া’রা আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে চিন্তণ জগত সৃষ্টি এবং মুতাজিলারা যুক্তিবাদী হিসেবে আল্লাহকে ‘নির্গুণ’ ঘোষণা করেন।
মুসলমানদের পবিত্র আসমানী কিতাব ছিল পবিত্র কোরান, যা আরবের আরবি ভাষায় সংকলিত হয়েছিল। কোরান ছাড়াও মুসলমানগণ তাদের নবী মুহম্মদের বাণী ও আচরণসমৃদ্ধ পুস্তককে ‘হাদিস’ বলতো। মুসলমানরা তাদের পবিত্র কোরান, হাদিস ও প্রার্থনা আরবি ভাষায় বর্ণনা করতো, যদিও অনেক মুসলমানের মাতৃভাষা ছিল অনারবী। তাদের যুক্তি ছিল- কবর, জান্নাত, জাহান্নাম তথা পরকালীন ভাষা হবে আরবি, যে কারণে বাঙালি কিংবা চৈনিক মুসলমানগণও তাদের উপাসনার ভাষা হিসেবে ‘অবোধ্য’ আরবি ভাষা ব্যবহার করতো। মুসলমানগণ হাদিসকে নানাভাগে ভাগ করেছিল, যেমন প্রধান ভাগ ছিল ৩টি যথা কওলী (নবীর বাণী), ফেলি (নবীর আচরণ) ও তাকরীরী (অপরের আচরণের প্রতি সমর্থন)।
আবার মারফু, মাওকুফ ও মাকতু নামে অপর একটি ভাগ ছিল। এ ছাড়াও মাশহুর, আযীয ও গরিব হিসেবে হাদিসগুলো বিভক্ত ছিল। অনেক হাদিসের মধ্যে ৬টি হাদিসগ্রন্থ মুসলমানদের কাছে ‘ছিয়া সিত্তা’ নামে পরিচিত ছিল। ইমাম মালিক কর্তৃক সংগৃহীত হাদিস সংকলনের নাম ‘মুআত্তা’, ইমাম শাফেইর ‘মুসনাদ’, ইমাম আহমদ এর হাদিস সংকলনের নামও ‘মুসনাদ’, ইমাম বুখারীর ‘সহি আল বুখারী’। এ ছাড়া সুনানে নাসায়ি, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা, মেশকাত ও তিরমিজী শরীফও মুসলমানদের কাছে পবিত্র বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত ছিল। মুসলমানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে সুন্নী তথা আহলে সুন্নত ছিল ৮৪%, শিয়া ১৫% এবং দ্রুজসহ অন্য মতবাদী ১%। এর মধ্যে হানাফিরা প্রধানত মিশর, লেবানন, সিরিয়া, জর্দান, ইরাক ও তুরস্কে; মালেকিরা প্রধানত মরক্কো ও সুদানে; শাফেয়িরা সিরিয়া, ইয়ামেন, জর্দান, ওমান, কুয়েত ও মিশরে; হাম্বলিরা সৌদি আরব ও কাতারে; আহলে সুন্নতীরা প্রধানত পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করতো।
ছবি পরিচিতি :
১: প্রাক ইসলাম যুগের আসারিয়া দেবতা
২: আল লাত দেবির পাথুরে মুর্তি
৩: আর সূর্য দেবতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন