ইসলাম ধর্ম : পর্ব # ৬
[১ম-৫ম পর্বের পর]
ইসলামী ধর্ম পুস্তকে ‘আসহাবে কাহফে’র ঘটনা বর্ণিত হয়েছিল এভাবে- ‘আফসুন’ শহরের মূর্তিপূজক রাজা ‘দাকিয়ানুছ’ থেকে রক্ষা পেতে ৭-জন ধার্মিক ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইলে, আল্লাহ ধার্মিকতার পুরস্কার হিসেবে মাকসিলাইনিয়া, মাকনুশ, মাসলিনিয়া, ইয়ামলিখা, কাফশাত্ব ত্বাইউশ, দাবারনূশ, শাযনূশ নামক ৭-যুবক ও ক্বিতমির নামক সঙ্গী কুকুরটিকে ৩০৯ বছর ঘুমন্ত অবস্থায় একটি পাহাড়ের গুহায় নিরাপদে রাখেন। তারা জাগরিত হয়ে পুন. মৃত্যুবরণ করেন কিংবা কিয়ামতের পূর্বে জাগরিত হয়ে ইমাম মাহদীর অনুগামী হয়ে জান্নাতে গমন করবেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করতো।
শেষ বিচারে যাদের পাপ-পূণ্য সমান হবে, তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নাতে না পাঠিয়ে ‘আরাফ’ নামক মধ্যবর্তী স্থানে রাখা হবে বলেও বিশ্বাস করতো মুসলমানরা। যে সকল ব্যক্তির মৃতদেহ কবরে নষ্ট হবেনা বলে মুসলমানগণ বিশ্বাস করতো তারা হলেন-পয়গাম্বর, হাফেজ, গাজী, আলেম, শহীদ, সুবিচারক রাজা, মুয়াযযিন, শুক্রবারে মৃত্যুবরণকারী, সূতিকা রোগে মৃত নারী, বিনা অপরাধে নিহত ব্যক্তি। ইসলামী মতে, মৃত্যুর পর মানুষের সব কিছু জরাজীর্ণ হলেও, নিতম্বের হাড় নষ্ট হয়না। বাজার হলো শয়তানের যুদ্ধক্ষেত্র, শয়তান এখানে পতাকা (তার) উত্তোলন করে। শয়তান এখানে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটায়।
জান্নাতে প্রবেশের আগাম খবর প্রাপ্ত ১০-জন সম্মানিত মুসলমান ছিলেন-আবুবকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, যুবাইর, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস, সাঈদ ইবনে যায়েদ ও আবি ওবায়দা ইবনিজ জাররাহ। এ ছাড়াও ১০-টি পশুও জান্নাতে যাবে বলে ইসলামী ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছিল যা ছিল-হযরত সালেহর উট, হযরত ইব্রাহিমের ভেড়া, হযরত মুসার গাভী, হযরত ইউনুসকে গিলে ফেলা মাছ, হযরত ওযায়েরের গাধা, হযরত সোলায়মানের পিপড়া, হযরত ইসমাইলের দুম্বা, হযরত মুহম্মদের উটনী, আসহাবে কাহাফের কুকুর ও সুলতান বিলকিসের হুদহুদ পাখি।
মুসলমানরা বিশ্বাস করতো, কা’বার নিকটবর্তী আরাফা ময়দানে প্রথম মানব আদম-হাওয়া মিলিত হয়েছিলেন। আদমের অনুরোধে ৪র্থ আসমানে অবস্থিত ‘বায়তুল মামুর’ নামক পবিত্র মসজিদের অনুকরণে বা নক্সায় শীশ পয়গাম্বর প্রথমে কাবাঘর তৈরী করেন। পৃথিবীর সর্বপ্রথম মসজিদ ছিল এই কাবাঘর। আদমের সঙ্গে জান্নাত থেকে যে পাথরটি পতিত হয়ে কোবেস পাহাড়ে অবস্থান করতে থাকে, তা-ই হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল কোবেস পাহাড় থেকে সংগ্রহ করে কাবাঘরে স্থাপন করেন। যা ২০১৪ সনেও কাবাঘরে ‘হাজরে আসওয়াত’ নামে পরিচিত ছিল।
২০১৪ সনের প্রাচীন পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্যতম ইসলাম ধর্মের পবিত্র পুস্তক কোরানকে ব্যাখ্যা করে যে সকল ধর্মীয় পুস্তক রচিত হয়েছিল, তাকে ‘তাফসির’ বলা হতো। এ ধর্মে ইসলামের খলিফা ও ইমাম হিসেবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছিল। অন্য ধর্মের মতই কোন মুসলিম মহিলার ইমামতী, খলিফা নির্বাচন ইসলামে স্বীকৃত ছিলনা। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার পুরুষের অর্ধেক হিসেবে ইসলামে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। যদিও ঐ সময় নারীর অবস্থা প্রকৃতপক্ষেই ভয়াবহ ছিল। ইসলামে একজন পুরুষ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী (প্রজনন-সঙ্গী) গ্রহণের অধিকার রাখলেও, একজন মহিলা একসাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারতো না। ইসলামে কাউকে হত্যার জন্যে কিসাসের বিধান বা রক্তমূল্য পরিশোধের বিধান ছিল। যাকাত ইসলামে একটি চমৎকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। নন-মুসলিমদের জন্যে ইসলামে জিযিয়া এবং ফসলের জন্যে উসরের প্রবর্তন এ ধর্মের অন্যতম কর ব্যবস্থা ছিল। মানব শিশু জন্মদানকারী ‘মা’কে ইসলামে উচ্চতর মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল।
ছবি : খেরবুত আত তানুম দেবতা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন