হিন্দু বা বৈদিক ধর্ম : পর্ব # ২
[১ম পর্বের পর]
[১ম পর্বের পর]
মন্দির ছিল হিন্দুদের পূজাবাড়ি। জন্মান্তরবাদ বা আত্মার দেহধারণ হিন্দুধর্মের অন্যতম অনুসঙ্গ ছিল। এ ধর্ম ৪-টি বর্ণে বিভক্ত ছিল যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। গুণ ও কর্ম হিসেবে ৪-টি বর্ণের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগুলোর অন্যতম। এ ধর্মের একক কোন প্রবর্তক ছিলনা। মৃত্যুর পরে হিন্দুরা প্রধানত আগুনে পুড়িয়ে মরদেহের সৎকার করতো। এরপর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ও বিবিধ রীতিনীতি পালন করতো মৃত্যুর আত্মার শান্তির জন্যে। ঐ সময়ে কয়েকজন শক্তিধর হিন্দু প্রধান দেবদেবীরা ছিলেন যথাক্রমেঃ ব্রহ্মা, গণেশ, গৌরি, হনুমান, কার্তিক, কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, পার্বতী, রাম, সরস্বতী, শিব, সূর্য, বিষ্ণু। এ ছাড়াও আরো ৩৩-কোটি দেবদেবীতে বিশ্বাস করতো সনাতন ধর্ম অনুসারী হিন্দুরা। যজ্ঞ, হোম, পিন্ডদান, বলিদান প্রথা হিন্দুধর্মের অন্যতম ধর্মীয় অনুসঙ্গ ছিল।
হিন্দু দেবতারা প্রায়ই মর্ত্যে এসে পৃথিবীর নারীদের সঙ্গে নানাভাবে যৌনাচারের ফলে ‘না দেবতা না মানুষের’ জন্ম দিতো। এমন কয়েকজনের যৌনাচারের ঘটনা -
সূর্যদেবতার সঙ্গে কুমারী কুন্তির গর্ভে জন্ম নেন কর্ণ। যমদেবতার সঙ্গে পান্ডুপত্নী কুন্তির গর্ভে জন্ম নেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির। ইন্দ্রদেবতার সঙ্গে কুন্তির গর্ভে জন্ম নেন বীর যোদ্ধা অর্জুন। পবন দেবতার সঙ্গে অঞ্জনার গর্ভে জন্ম নেন হনুমান। সূর্য/ইন্দ্র দেবতার সঙ্গে রক্ষরজার গর্ভে জন্ম নেন বালি ও সুগ্রীব।
দেবরাজ ইন্দ্র গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করায় গুরুর অভিশাপে তার দেহে ১০০০-ভগ (স্ত্রী-যোনি) সৃষ্টি হওয়ার কারণে তার নাম হয় ‘ভগবান’ (যোনিযুক্ত)। পরবর্তীতে দেবতা হিসেবে যোনিগুলো চোখের রূপ লাভ করে। ভগযুক্তা হওয়ার কারণে দূর্গাদেবী ‘ভগবতী’ এবং ভগবতীর স্বামী হিসেবে শিব ‘ভগহীন’ হলেও হন ‘ভগবান’। সে যুক্তিতে পৃথিবীর সকল নারীই ভগবতী ও তাদের স্বামীরা সবাই ভগবান।
হিন্দু দেবতাদের প্রায় সকলের বসবাস হিমালয় ও তার আশেপাশে। প্রাচীন প্রায় ১-কোটি ভারতবাসীর জন্যে মর্ত্যে এসেছিল হিন্দুদের ৩৩-কোটি দেবতা, সে হিসেবে প্রতি জন মানুষের জন্যে গড়ে ৩৩ জন দেবতা ছিল তখন। দেবতারা ভক্তের স্তুতিতে তুষ্ট হয়ে নানাবিধ বর দিতেন যেমন : কুবেরকে ব্রহ্মা আকাশচারী ‘পুষ্পক’ রথ দিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সীতাকে রাবণ অপহরণ করে। পরবর্তীতে বিজয় লাভের পর রাম-সীতা ‘গনিমাতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত’ উক্ত রথে অযোদ্ধা যাত্রা করেন। বিষ্ণুর ছলে স্বামী জলন্ধরের মৃত্যু জলে স্ত্রীবৃন্দা বিষ্ণুকে অভিশাপ দিতে চাইলে বিষ্ণু বলেন, ‘‘তুমি স্বামীর দাহে (সতীদাহ) তার অনুগামী হলে, তোমার ভষ্মে যে বৃক্ষ জন্মাবে তার পূজাতে পূণ্য হবে’’। বৃন্দা স্বামীর চিতায় ভষ্ম হলে ঐ ভষ্মে তুলসী, আমলকি, পলাশ ও অশ্বত্থ বৃক্ষ সৃষ্টি হলে হিন্দুরা তার পূজা আরম্ভ করে। হিন্দুদের সকল অবতার কেবল ভারতেই অবতীর্ণ হয়েছিল বিশ্বের অন্য কোথাও নয়। একা বিষ্ণুই মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি এই ১০-রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
হিন্দুমতে উর্ধ্বলোকে ৭-স্বর্গের অবস্থান, যার নাম হচ্ছে : ভূর্লোক, ভূবর্লোক, স্বর্লোক, মহর্লোক, জনলোক, তপোলোক ও সত্যলোক। পৃথিবীর নিম্নভাগে নরকের ৭-ভাগ হচ্ছে : অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল, মহাতল ও পাতাল, এ ৭-নরকের অন্য নাম ছিল : অশ্বরীষ, রৌরব, মহারৌরব, কালসূত্র, তামিশ্র, অন্ধতামিশ্র ও অবীচি।
হিন্দু মতে, আদিত্য বা সূর্য একটি রথে চড়েন যা ৭টি ঘোড়ায় টানে, রথের সারথির নাম ছিল অরুণ। সূর্যের স্ত্রী পুত্র-কন্যা কাম ইত্যাদি ছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করতো যে, অমৃতের ভাগ না পেয়ে রাহু সূর্যকে ও কেতু চন্দ্রকে গ্রাস করে বিধায় চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ হয়। সূর্য একটি নক্ষত্র হলেও অন্য নক্ষত্রের জন্ম বৃত্তান্ত ও পিতামাতা না থাকলেও সূর্যের জন্ম হয় কশ্যপ মুনি ও অদিতির গর্ভে। সূর্য আবার বিয়ে করেছিল বিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞাকে। সূর্যের কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞা ছায়া নামে অপর নারীকে সূর্যের কাছে রেখে নিজে পলায়ন করে অশ্বিনী নামে কুরুবর্ষে অবস্থান করতে থাকেন। বিশ্বকর্মা ঘটনা জানতে পেরে সূর্যের তেজ স্ত্রী সংজ্ঞার সহনীয় পর্যায় নামিয়ে দেন। অন্যান্য অনেক দেবতার মতো অমৃত পানে চন্দ্র-সূর্য দু’জনেই অমরতা প্রাপ্ত হলেও, সূর্য একটি জীবন্ত নক্ষত্র দেবতা হলেও, চন্দ্র আসলে মহাকাশে একটি ‘মৃত জোতিষ্ক’ [দেবতা] বৈ কিছু নয়!
এর পর পর্ব # ৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন