শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৩০১৫ সনের পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লিখবে ধর্মের ইতিহাস? হিন্দু ধর্ম : পর্ব # ১ [ ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধমালা # ১৮ ]

হিন্দু বা বৈদিক ধর্ম : পর্ব # ১

২০১৫ সন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ কোটি হিন্দু ধর্ম অনুসারী মানুষ বসবাস করতো পৃথিবীতে। যার ৯০% বসবাস করতো প্রাচীন ভারতবর্ষে, বাকিরা নেপাল, বাংলাদেশ ও অন্যত্র। এমনকি নেপালের ২০১৫ সনের রাষ্ট্রধর্ম ছিল ‘হিন্দু’। হিন্দুরা তাদেরকে ‘সনাতন ধর্ম’ অনুসারী বলে তখন মনে করতো। হিন্দুরা বিশ্বাস করতো যে, সনাতন ধর্মের অভ্যুদয় মানব সৃষ্টির আদিকালে এবং স্থায়ী হবে সৃষ্টির লয় পর্যন্ত। এ ধর্ম বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় এই তিন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এর উদ্ভব ঘটেছিল খ্রীস্টের জন্মের অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে। 

বেদকে হিন্দুরা ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করতো। বেদের মতে, দেবদেবী প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তির আঁধার এবং পরমেশ্বরেরই বিভিন্ন রূপের প্রকাশ। অপর ধর্মগ্রন্থ সাতটি কান্ডে রচিত রামায়ণের রচয়িতা ছিল বাল্মীকি, আর মহাভারতের রচয়িতা ছিল কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস। ১৮-পর্বে কুরুপান্ডবের যুদ্ধ কাহিনি বর্ণিত হয়েছে এ মহাগ্রন্থে। এ সময়ে এর শ্লোকসংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। ১৮-অধ্যায়ে রচিত ভগবত গীতা ছিল স্বতন্ত্র ধর্মীয় পবিত্র গ্রন্থ। বিশাল পুরাণ সাহিত্যের মধ্যে ১৮-টি মহাপুরাণ ও ১৮-টি উপপুরাণ বিখ্যাত ছিল। পুরাণের অনেক রচয়িতা থাকলেও ব্যাসদেবের নামই এখনও পাওয়া যায় এই ৩০১৫ সনেও। 

পুরাণে বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়, নতুন সৃষ্টি, মনুদের কথা, দেবতাদের কাহিনী, রাজা ও পৌরাণিক রাজবংশের কথা আলোচিত হয়েছিল। প্রাচীন অনেক ধর্ম বিলুপ্ত হলেও, সম্ভবত হিন্দু ধর্মের অনুসারী সংখ্যা ২০১৪ সনেও পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হতো। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, মিত (সূর্য), বরুণ, সোম (চন্দ্র), অগ্নি, ইন্দ্র ছিল আর্যদের বড় দেবতা, যা সনাতন ধর্ম হিসেবে ২০১৪ সনেও হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের প্রধান ধর্ম পুস্তকের নাম ছিল ‘বেদ’ যা প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় রচিত ছিল। 

বেদের আবার ভাগ ছিল ৪টি যথাঃ ঋকবেদ, যজুর্বেদ (কৃষ্ণ ও শুক্ল), সামবেদ ও অথর্ববেদ। বেদের সহায়ক পুস্তক ছিল ৬-টি বেদাঙ্গ, ৬-টি বেদোপঙ্গ ও ৪-টি উপবেদ। এ ছাড়া বেদের অপর সহায়ক ঐতিহাসিক গ্রন্থ ছিল মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও রামায়ণ। মহাভারত ছিল প্রাচীন ভারতের কৌরব ও পান্ডবদের যুদ্ধ তথা নানাবিধ কাহিনী গাঁথা। মহাভারতের অন্যতম চরিত্র ‘কৃষ্ণ’ যিনি রাধার প্রেমিক হিসেব খ্যাত ছিলেন। 

তা ছাড়া শিবও ছিল মহাভারতের প্রধান দেবতা। বহুবিধ অলৌকিক ঘটনার সমাহার ছিল মহাভারতে। আর রামায়ণে ছিল রামের বনবাস, সীতা হরণ, রাবণ বাহিনীর সঙ্গে রামের যুদ্ধ জয়, সীতার সতীত্ব পরীক্ষা ইত্যাদির কথা। রামায়ণে রাম ছিল বিষ্ণুর অবতার। এ ছাড়াও হিন্দু ধর্মে আরো যে সকল গ্রন্থকে পবিত্র মনে করা হতো সেগুলো ছিল চন্ডী, স্মৃতিসংহিতা, অভিজ্ঞান শকুন্তলম, কথাসরিৎসার, কুমারসম্ভবম, পঞ্চতন্ত্রম, গীতগোবিন্দম ইত্যাদি। 

বেদের পরে হিন্দুদের পবিত্র গ্রন্থ ছিল ‘উপনিষদ’। উপনিষদের বিভাজন ছিল যথাক্রমে ঐতরেয় উপনিষদ, কোষীতকি উপনিষদ, ছান্দোগ্য উপনিষদ, কেন-উপনিষদ, কঠ উপনিষদ, তৈত্তিরীয় উপনিষদ, মৈত্রী উপনিষদ, শ্বেতাশ্বর উপনিষদ, বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ঈশা উপনিষদ, মুন্ডক উপনিষদ, মান্ডক্য উপনিষদ, প্রশ্ন উপনিষদ ইত্যাদি। উপনিষদের মতে, ভগবান বা স্রষ্টা একজন যার নাম ‘ব্রহ্ম’। এ ছাড়াও হিন্দুদের পবিত্র শাস্ত্র ছিল স্মৃতি এবং পুরাণ। পুরাণের ভাগ ছিল আবার মহাপুরাণ ও উপপুরাণ হিসেবে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিষ্ণুপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বায়ুপুরাণ, স্কন্ধেরপুরাণ ও ভগবতপুরাণ। 

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই ৩-দেবতা ছিল পুরাণের প্রধান দেবতা। মনুসংহিতা, যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা, বিষ্ণু পুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, ভাগবত ইত্যাদি সংস্কৃত ভাষায় লেখা ছিল হিন্দুদের পবিত্র পুস্তকাদি। সামাজিক রীাতিনীতি বর্ণিত ছিল মনু সংহিতা ও স্মৃতি সংহিতায়। পবিত্র গ্রন্থ গীতা ছিল ১৮ সর্গে ও ৭০০-শ্লোকে বিভক্ত। হিন্দু ধর্ম পুস্তকাদি খ্রীস্টের জন্মের ১৫০০-বছর আগে থেকে শুরু হয়ে ১৯-শতক পর্যন্ত রচিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। 

এরপর পর্ব # ২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন