ইসলাম ধর্ম : পর্ব # ৯
[১ম-৮ম পর্বের পর]
ইসলাম ধর্মকে সুষ্পষ্টভাবে জানা ও বোঝার জন্যে এ সম্পর্কিত হাদিস ও ইতিহাসগ্রন্থ থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলো যা নিম্বরূপ-
উটের যুদ্ধে আশারায়ে মুবাশশারার সদস্য তালহা ও যুবাইরসহ মোট ১৮,০০০ মুসলমান অন্য মুসলমানের হাতে শহীদ হন। খলিফা আবু বকরের শাসনামলে জান্নাতের সুসংবাদ লাভকারী আ. রহমান ইবনে আউফসহ কেবল ৮-জন সাহাবাকে ফতওয়া প্রদানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল। বদর যুদ্ধে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ মুশরিক হওয়ার কারণে তার জন্মদাতা পিতার মাথা তলোয়ারের এক আঘাতে বিছিন্ন করেন। নবীকে খুশী করতে যায়িদ ইবন হারিসা তার তালাকপ্রদানকৃত প্রাক্তন স্ত্রী যয়নাবের কাছে নবীর বিয়ের পয়গাম নিয়ে যান এবং বৃদ্ধা, বাহ্যিক রূপহীন মহিলা উম্মু আয়মনকে বিয়ে করেন। মুসলমানরা বদর যুদ্ধে নিহত আবু জাহলের লাশ অন্যান্য মুশরিকদের সঙ্গে ‘কালীব’ নামক কুপে নিক্ষেপ করেছিল। আবুযর আল গিফারী নির্বাসিত অবস্থায় রাবাযা নামক মরূভূমিতে মৃত্যুর সময় বলেছিলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সরকারের ক্ষুদ্রতম পদেও অধিষ্ঠিত, সে যেন তাকে কাফন না পড়ায়’’।
ইহুদীদের বসতি ‘খাইবার’ মুসলমান কর্তৃক জয় করার পর, বিধি অনুসারে সেখানের ইহুদী ভূমি আল্লাহ, তার রসুল ও মুসলমানদের হয়ে যায়। নবী ঐ জমি বর্ণিত ইহুদীদের কাছেই অর্ধেক ভাগ-চাষে বর্গা দেন এবং শেষ পর্যন্ত খলিফা উমর ‘নিজ জমিতে বর্গাচাষী’ ইহুদীদেরকে সিরিয়ার তাইমা ও আরীহায় বহিষ্কার করেন (বুখারী-২১৭০)। খায়বরের খবর শুনে ফদখের ইহুদীরা খায়বরের শর্তে [জীবন রক্ষার্থে ভাগ চাষে] আত্মসমর্পণ করে (দাউদ-৩০০৬), ইহুদীদের ৪০,০০০ খেজুর গাছ সমৃদ্ধ ‘কুতায়বা’কে শক্তি প্রয়োগে দখল করা হয় (দাউদ-৩০০৭)।
নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে ইহুদী বনু নযীর গোত্র এইমর্মে ইসলামের নবীকে প্রস্তাব দেয় যে, ৩০-জন ইহুদী ও ৩০-জন মুসলমান আলেম ধর্মীয় ব্যাপারে বসে সত্যাসত্যা নির্ধারণ করবে। ৩০-ইহুদী আলেম মুহম্মদকে ‘নবী’ হিসেবে মানলে, গোত্র প্রধানসহ সবাই মুসলমান হবে। কিন্তু পরদিন মুসলমানরা তাদের দূর্গ আক্রমন ও অবরোধ করেন এবং তাদেরকে অঙ্গীকার করতে বলেন। ইহুদীরা অঙ্গীকারে অস্বীকৃতি জানালে মুসলমানরা যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। পরদিন বনু নযীর গোত্রকে অব্যহিত দিয়ে, বনু কুরায়যার উপর আক্রমন করেন। বনু কুরায়যা নবীর সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলে, মুসলিমরা কুরায়যাকে ছেড়ে বনু নযীরকে পুন. আক্রমন করেন। বনু নযীরের লোকেরা ‘ইহুদী ধর্মপ্রেমে’ বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করে ও বনু নযীরের খেজুর বাগান নবীর দখলে আসে (দাউদ-২৯৯৪), পরবর্তীতে মতবিরোধের কারণে বনু কুরায়যার সাথে মুসলমানদের আবার যুদ্ধ লাগে এবং যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে ইহুদী পুরষদের হত্যা, মহিলা+শিশু+মালামাল মুসলমানদের মধ্যে গনিমাতের মাল হিসেবে বন্টন করা হয় (দাউদ-২৯৯৫)।
নবী বলেন, ইহুদী ও নাসারাদের আরব থেকে বের করে দেব, এখানে মুসলিম ছাড়া কেউ থাকবে না (দাউদ-৩০২০), ওমর নাজরান ও ফিদকের ইহুদীদের আরব ভূমি থেকে বহিস্কার করেন (দাউদ-৩০২৪), নবী বলেছেন, আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ তারা আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভূ নেই, এ কথা স্বীকার না করে (বুখারী-২৭২৯)। আবওয়া ও ওয়াদ্দান-এ নৈশ আক্রমণের সময় নবীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুশরিকদের নারী-শিশুদেরও কি হত্যা করা হবে? নবী বলেছিলেন, এরাও তো মুশরিক (বুখারী-২৭৯১), খালিদ ইবনে ওয়ালিদের নেতৃত্বে একদল মুসলিম যামিয়াহ গোত্র অভিযানে গেলে, গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করলো কিনা এমন কথা সুষ্পষ্ট না করে কেবল বললো, ‘সাবানা, সাবানা’, যার মানে ‘আমরা পুরাতন ধর্ম ত্যাগ করেছি’। কিন্তু খালেদ অনেককেই হত্যা করলেন ও সাহাবাদেরও হত্যার নির্দেশ দিলে ঘটনাটি নবীর কাছে উপস্থাপিত হলে নবী বলেন, খালেদ যা করেছে তার জন্যে আমি নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা করছি (বুখারী-৬৬৮৬)।
শেষ যামানায় এমন একদল যুবকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সুষ্টিকুলের বুলির উত্তম বুলি আওড়াবে, তাদেরকে যেখানেই পাবে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন এ হত্যার জন্যে পুরস্কার প্রদান করা হবে (বুখারী-৩৩৪৩)। নবীর নির্দেশে জারীর ইবনে আবদুল্লাহ খাসয়াম গোত্রের প্রতিমাপূজার মন্দিরকে দেড়শো অশ্বারোহীসহ ধ্বংস করার জন্যে যান এবং মন্দিরটি ধ্বংস ও আশেপাশের সবাইকে হত্যার খবর জানালে নবী জারীরের জন্যে দোয়া করেন (বুখারী-৩৫৪০)। শেষ যুগে কিছু যুবকের আগমন ঘটবে, দ্বীন তাদেরকে এমনভাবে ত্যাগ করবে, তীর যেভাবে ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তোমরা যেখানেই এদেরকে পাবে হত্যা করবে। এদের হত্যাকারীদের হাশরের দিন পুরস্কৃত করা হবে (বুখারী-৬৪৪৯)। রিয়াদুস সালেহীনের ১৮৩৯ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছিল, ‘‘লোকদের জন্য উত্তম সেই ব্যক্তি, যে লোকদের ঘারে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসে আর শেষ পর্যন্ত তারা ইসলামে প্রবেশ করে’’। নবী নাজরানের খ্রীস্টানদের সাথে চুক্তি করেন যে, খ্রীস্টানদের গীর্জা ধ্বংস ও পাদ্রীদের বের করে দেয়া হবেনা কিন্তু বিনিমেয়ে নবীকে ১০০০-জোড়া কাপড় সফর মাসে ও ১০০০-জোড়া রজব মাসে খ্রীস্টানরা পাঠাবে; তা ছাড়া ৩০টি বর্ম, ৩০টি ঘোড়া, ৩০টি উট এবং সব ধরণের যুদ্ধোপকরণ ধার হিসেবে মুসলমানদের দেয়া হবে কিন্তু খ্রীস্টানরা সুদ খাওয়া শুরু করলে তাদেরকে নাজরান থেকে বহিস্কার করা হয় (দাউদ-৩০৩১)।
নবী বলেন, আরব উপদ্বীপ থেকে ইহুদী-নাসারাদের অবশ্যই বের করে দিব (তিরমিযী-১৫৫৪), একজন মুসলমান খুন হওয়ার চেয়ে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া আল্লাহর কাছে অধিকতর সহজ (তিরমিযী-১৩৩৪), মুসলমানরা ইরাকের একটি দূর্গ অবরোধ করে বললো, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো অথবা তোমাদের ধর্মে থাকলে জিযয়া কর দাও, অন্যথায় যুদ্ধ করবো। ৩-দিন অবরোধের পর দূর্গ আক্রমন ও দখল করা হলো (তিরমিযী-১৪৯০), নবী বনু নাযীর গোত্রের খেজুর বাগানে আগুণ দিলে আয়াত অবতীর্ণ হয় [সবই হয়েছে আল্লাহর আদেশক্রমে, আল্লাহ ফাসেককে লাঞ্ছিত করেন-হাশর:৫] (তিরমিযী-১৪৯৪), আমার জন্য গনিমাত বৈধ করা হয়েছে ও আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য পাঠানো হয়েছে (তিরমিযী-১৪৯৬), নবীকে খবর দেয়া হলো যে, মুসলমান অশ্বারোহীরা কাফেরদের শিশু ও নারীদের পদদলিত করছে। নবী বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার সাথে সম্পৃক্ত (তিরমিযী-১৫১৬), ‘লাইলাহা---’ এ কথা স্বীকার না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালাতে হবে, লাইলাহা পড়লে জানমাল নিরাপদ (তিরমিযী-২৬০৭-৯), যে ব্যক্তি তার ধর্ম পরিবর্তন করে তাকে হত্যা কর (তিরমিযী-১৩৯৮), মদ পানকারীকে দোজখে পূঁজের নহর থেকে পান করানো হবে (তিরমিযী-১৮১১), ‘বেহেস্তের দরজা তরবারীর ছায়াতলে’ কথাটি শোনার পর জনৈক মুসলমান সঙ্গীদের বিদায় জানান এবং তরবারী নিয়ে শত্রুকে আঘাত করতে করতে শহীদ হন (তিরমিযী-১৬০৬)।
রণতরীতে যে সৈনিক মাথা ঘুরিয়ে বমি করে সে শহীদের মর্যাদা পায় (দাউদ-২৪৮৫), তোমাদের জানমাল, বাক্য ও লেখনী দিয়ে কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ কর (দাউদ-২৪৯৬), শক্তি অর্থ হলো তীরবাজি (দাউদ-২৫০৬), মুসলমানরা বনু মালহু গোত্রের উপর আক্রমন চালাতে গেলে পথে ঐ গোত্রের ‘হারিছ ইবনে বারছা’কে পেয়ে হত্যার জন্যে আটক করে। লোকটি বলে যে, সে ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে নবীর কাছে রওয়ানা হয়েছিল। মুসলমানরা এই বলে তাকে শক্ত করে বাঁধে যে, ‘‘তুমি মুসলমান হতে চাইলে ১-দিনরাতের বাধঁনে তোমার কোন ক্ষতি হবে না’’ (দাউদ-২৬৬৯), ইবন আবী সারাহ মক্কা বিজয়ের দিন ওসমানের সুপারিশে নবীর কাছে বায়াত নিতে আসেন কিন্তু নবী পরপর ৩-বার তার বায়াত গ্রহণে অস্বীকার করেন। ৪র্থ বারে ওসমানের অনুরোধে নবী তার বায়াত নেন ও বলেন, ‘‘এর মধ্যে কোন সাহাবা কেন তাকে হত্যা করলে না’’? (দাউদ-২৬৭৪), [ওসমানের মতো কোন অনুরোধকারী না থাকাতে] নবী ইবনে খাত্তালকে (আবদুল্লাহ আবু বারযা) কাবার গেলাফ ধরা অবস্থায় হত্যার নির্দেশ দেন (দাউদ-২৬৭৬)।
এর পর পর্ব # ১০
ছবি : বর্তমান তাওরাত মোতাবেক নবীদের বিস্তার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন