শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৩০১৫ সনের পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লিখবে ধর্মের ইতিহাস? ইসলাম-৮ [ ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধমালা # ১২ ]


ইসলাম ধর্ম : পর্ব # ৮

[১ম-৭ম পর্বের পর]

ইসলাম ধর্মকে সুষ্পষ্টভাবে জানা ও বোঝার জন্যে এ সম্পর্কিত হাদিস ও ইতিহাসগ্রন্থ থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলো যা নিম্বরূপ-

২০১৪ সনের ইসলাম বিশ্বাসীদের জানা ছিল, পৃথিবী ধ্বংস বা কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে এক দাজ্জালের আগমন ঘটবে। দাজ্জাল হবে এক চোখ কানা, অপর ফোলা চোখের কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট অসীম ক্ষমতাধর যুবক, যে বাতাসের মতো দ্রুত গতি সম্পন্ন, তার নির্দেশনায় আকাশ বৃষ্টি ঝরাবে, তার নির্দেশে মাটির ভেতরের খনিজ সম্পদ বেরিয়ে তাকে অনুসরণ করবে, একটি যুবককে দ্বিখন্ডিত করার পর দাজ্জালের ডাকে মৃত যুবকটি একত্রিত ও জীবিত হবে। মক্কা-মদীনা ছাড়া পৃথিবীর সকল জনপদ দাজ্জালের আক্রমনে ধ্বংস হবে, তবে মক্কা-মদিনা রক্ষার জন্যে ফেরেস্তারা কাতারবন্দী হয়ে পাহারা দিবেন। 

দাজ্জাল ‘সাবখাহ’ পৌঁছলে মদীনাতে ৩-বার ভূমিকম্প হবে। সবুজ রঙের চাদর পরিহিত ইস্ফাহানের ৭০-হাজার ইহুদী দাজ্জালের সাথে যোগ দেবে। দাজ্জালের সঙ্গে ২টি জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। ঈমান না আনার কারণে জনৈক মুসলমানকে দাজ্জাল মাথার সিঁথি থেকে পা-পর্যন্ত করাত দিয়ে চিড়ে ফেলবে এবং তাকে পুন. জীবিত করবে। এরপরও ইমান না আনার কারণে দাজ্জাল তাকে রাগে ছুড়ে ফেললে, মুসলমান লোকটি সরাসরি জান্নাতে পতিত হবে। দাজ্জালকে ধ্বংসের জন্যে ঈসা ইবনে মরিয়ম ২-ফেরেস্তার পাখায় ভর করে দামেস্কের সাদা মিনারের উপর অবতরণ করবেন। 

তিনি দাজ্জালকে ধাওয়া করে তেলআবিবের ৬-মাইল দূরবর্তী ‘লুদ্দ’ নামক স্থানে হত্যা করবেন। এ সময় উচ্চভূমি থেকে ‘ইয়াজুজ-মাজুজ’রা বেরিয়ে এসে তাবারিয়া হ্রদের সব পানি খেয়ে ফেলবে। ঈসা ইবনে মরিয়মের অনুরোধে আল্লাহ ইয়াজুজ-মাজুজদের প্রত্যেকের ঘারে ধ্বংসকারী কীট সৃষ্টি করবেন। যাতে সকল ইয়াজুজ-মাজুজ-ই মারা যাবে। তাদের মৃতদেহের কারণে পৃথিবীতে এক ইঞ্চিও যায়গা পাওয়া যাবেনা, যেখানে পা রাখা যায়। 

এর ধারাবাহিকতায় ঈসা ইবনে মরিয়মের পুন. অনুরোধে আল্লাহ উটের কুঁজ সদৃশ এক প্রকার পাখি পাঠাবেন, বর্ণিত পচা-লাশগুলোতে তুলে নেয়ার জন্যে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পৃথিবী পবিত্র হবে এবং উৎপন্ন ফল-ফসল হবে বিশালাকৃতির, একটি ডালিম ফল পূর্ণ একটি দলের খাবারের চাহিদা মেটাতে পারবে এবং তার খোসার ছায়ায় দলটি আশ্রয় নিতে পারবে। পরবর্তীতে শীতল বাতাস প্রবাহে সকল মুমিন মানুষের মৃত্যু হবে, কেবল নন-মুসলিম ছাড়া। বেঁচে থাকা নন-মুসলিম খারাপ লোকগুলো প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও গাধার মতো যৌনাচার করবে। 

পরবর্তীতে পৃথিবী ধ্বংসের জন্যে শিঙায় ফুঁ বেজে উঠলে পৃথিবী ধ্বংস হবে। ২য়-বার শিঙার ফুঁকে পৃথিবীর সকল মৃত মানুষ জেগে উঠবে। জেগে ওঠা ঐ মানুষের মধ্যে হাজারে ৯৯৯-জনই হবে জাহান্নামি বা নরকবাসী, কেবল হাজারে ১-জন হবে জান্নাত বা স্বর্গবাসী। ইসলামী বিশ্বাস মতে, কিয়ামতের লক্ষণ হচ্ছে-৩০-জন মিথ্যাবাদী নিজেকে নবী হিসাবে দাবী করবে, পৃথিবীতে নানাবিধ রোগ ও নবতর চিকিৎসার উদ্ভব হবে। কিয়ামত ততদিন হবেনা, যতদিনে না ফোরাত নদী থেকে একটি স্বর্ণ-পর্বতের আবির্ভাব না ঘটে। 

মুসলমানরা তাদের হাদিস গ্রন্থ থেকে আরো জানতেন, মুসলমানদের হাতে ইহুদীদের চূড়ান্ত পরাজয় বা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। যুদ্ধের চূড়ান্তপর্বে মুসলমানদের ভয়ে ইহুদীরা পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলেও, সকল গাছ ও পাথর বলে দেবে ‘আমার মধ্যে ইহুদী লুকিয়ে আছে, তাকে হত্যা কর’ কেবল কাঁটাযুক্ত ‘গারকাদ’ গাছ ছাড়া, কারণ গারকাদ ছিল ‘ইহুদীদের গাছ’ (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন)। সাহাবাদের মর্যাদা প্রসঙ্গে ইসলামের নবী বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের (নন-সাহাবা) কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করলেও, তা সাহাবাদের ব্যয়কৃত একটি যবের সমমূল্য হবেনা’’। 

নবীর প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল খাদিজা বিনতু খুওয়াইলিদ। তাদের মধ্যে দূর-সম্পর্কের ফুফু-ভাতিজার সম্পর্ক ছিল। খাদিজার প্রথম স্বামীর নাম ছিল আবু হালা ইবন যারারাহ, আর ২য় স্বামীর নাম ছিল আতীক বিন আবিদ আল-মাখযুমী। ১ম স্বামীর ঘরে জন্ম নেয়া খাদিজার সন্তান ছিল হালা, হারিস, হিন্দ ও যয়নাব। ২য় স্বামীর ঔরসে জন্ম নেয়া মেয়ের নাম ছিল হিন্দা (উম্মু মুহাম্মদ)। নবীর ঔরসে জন্ম নেয়া ৬-সন্তান ছিল যথাক্রমে-কাসিম, যয়নাব, আবদুল্লাহ, রুকাইয়া, উন্মে কুলসুম ও ফাতিমা। ইব্রাহিম নামের সন্তানটি ছিল নবীর ঔরসে মারিয়ার গর্ভে। 

খাদিজার অপর বোন ‘হালা’-ও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। দারিদ্র্যতার কারণে নবী মুহম্মদের কাছে খাদিজাকে তার ধনবান পিতা বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাবেন, এই ভয়ে খাদিজা কৌশলে মদ্যপ অবস্থায় পিতার কাছ থেকে নিজের বিয়ের সম্মতি আদায় করেন। বিয়ের উভয়পক্ষের যাবতীয় খরচ খাদিজা তার একাউন্ট থেকে বহন করেন। জানাযার বিধান তখনো না থাকাতে, খাদিজাকে বিনা জানাযায় মক্কার ‘জান্নাতুল মুয়াল্লায়’ দাফন করা হয়। পৃথিবীর সর্বোত্তম নারী হিসেবে নবী মরিয়ম বিনতু ইমরান ও খাজিদা বিনতু খুওয়াইলিদ-কে উল্লেখ করেছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন