ইসলাম ধর্ম : পর্ব # ৩
[১ম ও ২য় পর্বের পর]
নবী মুহাম্মদের জন্মের সময় জান্নাতী মহিলারা নবীর মা আমেনার পাশে উপস্থিত হন। যে কারণে উজ্জ্বল নুরে ঘর আলোকিত হয়। ফেরাউনপত্নী আছিয়া ও কুমারী ঈসা-মাতা মরিয়ম এবং হুরেরা ঘর আলোকিত করে। ঘর এমন আলোকিত হয় যে, সিরিয়ার ইমারত পর্যন্ত মক্কা থেকে দেখা যায়। নবীর জন্মের সময় পারস্যের হাজার বছরের অগ্নিপূজার বেদী হঠাৎ নিভে যায়। কাবাঘরের ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের দেবদেবী ভূলুণ্ঠিত হয়। পারস্য রাজ্যে ভূকম্পন, হ্রদ শুকিয়ে যায় ও সম্রাটের প্রাসাদের ১৪টি চূড়া ভেঙে পড়ে। সিরিয়ার জলাশয়ের জল কমে যায়।
হাদিস গ্রন্থ মতে, আল্লাহ সব কিছু সৃষ্টির আগে নবীর বিশেষ নুর সৃষ্টি করে নিজের কাছে রেখেছিলেন। মুহম্মদ সৃষ্টি না হলে আদম, বেহেস্ত-দোযখ কিছুই সৃষ্টি করা হতো না। যখন আদম সৃষ্টি ও পয়দা হয়নি, তখনও নবী নবুওত লাভ করেছিলেন (যোরকানী)। আল্লাহ মাটি দ্বারা মানুষ, আগুন দ্বারা জ্বীন ও নুর দ্বারা ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন। নবীর স্বন্ধের উভয় পাশে মোহরে নবুয়ত দৃশ্যমান ছিল। তিরমিযীর একটি হাদিসে বলা হয়েছে, মোহরে নবুয়ত হচ্ছে একত্রিত কতগুলো লোম কিংবা পৃষ্ঠদেশে একটুকরা সুডৌল মাংসপিন্ড। মোহরে নবুয়ত থেকে মেশকের সুগন্ধ বের হতো। কুরাইশ বংশের মাত্র ১৭-জন লোক লেখাপড়া জানতেন, এরা ছিলেন - ওমর, আলী, ওসমান, আবু উবায়দা, তালহা, যায়েদ, আবু হুজায়ফা, আবু সুফিয়ান, শেফ বিনতে আবদুল্লাহ প্রমুখ।
ঐ সময় নাজরানে খ্রিস্টধর্ম এবং ইয়েমেন ও হিযাজে তথা মদিনায় বনু কুরায়যা, বনু নজীর ও বনু কাইনুকা নামক গোত্রগুলোর মধ্যে ইহুদি ধর্ম প্রচলিত ছিল। মদিনাসহ নিকটবর্তী এলাকার কিছু লোক ‘হানীফ’ হিসেবে পরিচিত ছিল, যারা এক আল্লাহ তথা এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতো। কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণকারী মুহম্মদ নিজে সত্যবাদী, সৎ ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তার এলাকা তথা মক্কার লোকদের বহুদেবতার বদলে তিনি একেশ্বরের উপাসনা করার উপদেশ দেন। তার উপাসকের নাম ছিল নিরাকার ‘আল্লাহ’। তিনি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এবং আল্লাহ থেকে অলৌকিক বাণী বা আদেশ নিয়ে পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্যে এসেছেন বলে নিজেকে প্রচার করতে থাকেন।
তার বর্ণিত অলৌকিক বাণীর সংকলনের নাম ছিল ‘কোরান’ যাতে মোট সুরার সংখ্যা ১১৪-টি। কোরানে শিরককে ঘৃণা করা হয়েছিল। ইসলামের মূল ভিত্তি ছিল আল্লাহর প্রতি, ফেরেস্তাদের প্রতি, আসমানী কিতাবের প্রতি, নবীদের প্রতি, তাকদীরের প্রতি, আখিরাতের প্রতি, শেষ বিচারের প্রতি বিশ্বাস। এর মূল কথা ছিল, যারা মুহম্মদের বাণী মেনে চলবে, তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে চিরশান্তি তথা জান্নাত (স্বর্গ) এবং যারা মুহম্মদ ও তার কথিত কোরানকে মিথ্যা বলবে বা বিশ্বাস করবে না, তারা মৃত্যুর পর অনন্তকাল কঠিন শাস্তি তথা নরক যন্ত্রণা ভোগ করবে। নবসৃষ্ট এই ধর্মের নাম ছিল ‘ইসলাম’ এবং এর অনুসারীদের বলা হতো ‘মুসলমান’।
মক্কায় প্রচলিত বহুত্ববাদের উপাসনার পরিবর্তে একত্ববাদ প্রচারের অপরাধে কুরাইশ কর্তৃক মুহম্মদকে মক্কা থেকে বিতারণ করা হলে, তিনি মদিনায় বসবাসরত একেশ্বরবাদী ইহুদী ও হানীফ আনসারদের কাছে তার নতুন ধর্ম প্রচারের সুযোগ নেন। বদর, ওহুদ, বনু নযীরের যুদ্ধ, খন্দক, খায়বরের যুদ্ধ, মূতার যুদ্ধসহ নানাবিধ যুদ্ধ বিগ্রহের পর আরবে একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ জয়লাভ করে এবং আরবে বসবাসকারী ইহুদী, খ্রীস্টান, অগ্নিউপাসক ও বহুত্ববাদী ধর্ম আরব থেকে নির্বাসিত হয়।
অনেক অনুসারী সৃষ্টি করে মদিনা শহরে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে ৬৩-বছর বয়সে মুহাম্মদ মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার কবর ২০১৪ সনেও প্রাক্তন মদিনা শহরে মুসলমনাদের পবিত্র ‘মসজিদুল নববীতে’ অবস্থিত ছিল। চিন্তাধারাগত পার্থক্যের কারণে মুসলমানের মধ্যে শিয়া, সুন্নী, খারেজি, মুরজিয়া, কাদেরিয়া, জাবারিয়া, সিফাতিয়া, মুতাজিলা, আশারিয়া, সুফী, ফালাসিফা, দ্রুজ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪ সনের পৃথিবীতে মুসলমান ছিল প্রায় ১৪০-কোটি (১৪০০ মিলিয়ন), যার শুরু হয়েছিল ৬২২ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন আরবে। এর মধ্যে সুন্নী ছিল ১২৫ কোটি, শিয়া ১৭ কোটি, আহমেদিয়া ১ কোটি, সুফি-ইসমাইলিয়া, দ্রুজ ইত্যাদি ৭ কোটির মত।
লেখাটি ফেসবুকে দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যান প্লিজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন