৩০১৫ সনের পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লিখবে ধর্মের ইতিহাস? ৩০১৫ সনের ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মের ইতিহাস :
খৃস্টান ধর্ম [Christianity] : পর্ব # ১
২০১৪ সনে পৃথিবীতে এ ধর্মের অনুসারী ছিল সবচেয়ে বেশী, প্রায় ২০০ কোটি। প্রাচীন ইহুদীদের দেশে যীশু বা খ্রীস্ট নামে এক "কুমারী" মায়ের গর্ভে জন্ম নেন এক সৎ পুরুষ। তিনি সত্য কথা বলা ও সৎ পথের পরামর্শ দিতো ইহুদীদের, নিজেকে দাবী করতো ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে। কিন্তু ইহুদীরা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে শুধুমাত্র সৎ কথা ও ঈশ্বরের পুত্র দাবী করার কারণে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও, তিনি সকল হত্যাকারীকে ক্ষমা করে নিজে জড় পদার্থে পরিণত হন। ঐ সময়ে বিজ্ঞান বর্তমান কালের মত উৎকর্ষ লাভ না করলেও, রূপান্তরিত ইহুদী তথা নব্য খ্রীস্টের শিষ্যরা প্রচার করে যে, মৃত্যুর পর আবার খ্রীস্ট জীবিত হয়েছিলেন অলৌকিক ক্ষমতা তথা ঈশ্বরপুত্র বলে।
২য় দফা মৃত্যুর পর যীশুর বাণী তার যে ১২-জন শিষ্য প্রচার করেন তারা ছিলেন- শিমোন, এ্যানড্রু, সিরদিয়ের পুত্র জ্যাকোব, জন, ফিলিপ, বার্মালেমিউ, টমাস, মথি, আলয়েফের পুত্র জ্যাকব, থিওডোর, কানানী শিমোন ও জুডাস ইসকারিয়ট। যীশুর এ সকল বাণী বাইবেলে রক্ষিত ছিল। এ বাইবেল আবার সুসমাচার (Gospels), কার্যাবলী (Acts) ও পত্রাবলী (Epistles) আকারে লিপিবদ্ধ ছিল। এ ধর্মও ইহুদীদের মত একেশ্বরবাদী ছিল যদিও তার মাঝে ত্রিত্ববাদ ছিল।
যীশুর বাণীসমৃদ্ধ পুস্তকের নাম ছিল ইঞ্জিল বা বাইবেল। ইহুদীদের পুরণো বাইবেল হিব্রু ভাষায় রচিত হলেও, নতুন বাইবেল রচিত হয়েছিল গ্রীক ভাষায়। বর্ণিত ২ ভাষার বাইবেল আবার ৪০০ খ্রীস্টাব্দে রূপান্তরিত হয় ল্যাটিন ভাষায়, যার নাম ছিল ‘ভালগিট’। ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্টে ছিলনা এমন কথা ‘ভালগিটে’ ঢোকানো হয়, যার নাম ছিল আবার ‘এ্যাপক্রিফা’। ‘এ্যাপক্রিফা’ আবার স্বীকার করতোনা ইহুদী ও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীস্টানরা, যদিও রোমান ক্যাথলিকরা ‘এ্যাপক্রিফা’-কে পবিত্র ধর্মশাস্ত্র বলেই মনে করতো। বাইবেল নিয়ে দলাদলির কারণে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছিল
(১) রোম্যান ক্যাথলিক
(২) প্রোটেস্ট্যান্ট ও
(৩) ইস্টার্ন চার্চ গ্রুপ।
(২) প্রোটেস্ট্যান্ট ও
(৩) ইস্টার্ন চার্চ গ্রুপ।
পৃথিবীর সকল রোম্যান ক্যাথলিকরা গুরু হিসেবে ‘পোপ’কে মানতো, যার একটি আদালা রাষ্ট্র ছিল ২০১৪ সনেও। যার ঐ সময়ের নাম ছিল ‘ভ্যাটিকান’ বা ঈশ্বরের রাজ্য। পোপকে অমান্য করে ২০১৪ সনের প্রায় ৪৫০ বছর আগে মার্টিন লুথার কিং নামক একজন খ্রীস্টান ঐ সময়ের প্রগতিশীল ‘প্রোটেস্ট্যান্ট’ গ্রুপ গঠন করেন। এ নিয়ে ২ গ্রুপে যুদ্ধ লাগে এবং তাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। একেশ্বরবাদী খ্রীস্ট ধর্ম প্রকৃতপক্ষে ত্রিত্ত্ববাদী। আর তা হলো পবিত্র ঈশ্বর পিতা, ঈশ্বর পুত্র (যীশু) ও পবিত্র আত্মা। এ ধর্ম ঈশ্বরের পিতৃত্বে বিশ্বাসী।
এ ধর্মের মতে পাপীদের কেবল যিশুই পরকালে উদ্ধার করতে পারবেন, আর কেউ নয়। তিনি তার জীবন দিয়ে মানুষের পাপকে মোচন করেছেন। এ ধর্মে দেবতা বা ফেরেশতায় বিশ্বাস করা হতো না। খ্রীস্টানরা ইসলাম ধর্মকে স্বীকার করতো না। এ ধর্ম অনেক সংস্কার হয়েছিল। প্রধান সংস্কারকগণ ছিলেন মার্টিন লুথার কিং, জন ক্যালভীন, হিউগনট, রাইনভূমি, প্রেস বাইটেরিয়ান ও পিউরিটান অন্যতম।
২০১৫ সনে পৃথিবীতে যীশুর অনুসারী হিসেবে -
রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায় (পোপ অনুসারী),
ইস্টার্ন অর্থোডকস (পোপের কর্তৃত্ব না মানা গোঁড়া খ্রীস্টান),
প্রোটেস্ট্যান্ট (লুথার কিং অনুসারী),
লুথেরান সম্প্রদায় (আউগবার্গ কনফেশান অনুসারী),
আনাব্যাপটিষ্ট (জার্মান ও অস্ট্রিয়ার কৃষক সম্প্রদায়),
ক্যালভিনিস্ট প্রোটেস্ট্যান্ট (ফরাসী ক্যালভিনের অনুসারী),
এ্যাংলিকানিজম (চার্চ অব ইংল্যান্ডের ভক্ত),
প্রেসবাইটেরিয়ান সম্প্রদায় (বিশপহীন ক্যালভিনিস্ট),
মেথডিজম (জন ওয়েলসির অনুসারী) সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।
চার্চ বা গির্জা ছিল খ্রীস্টানদের প্রার্থনাগৃহ। যে গির্জায় বিশপ বসবাস করতেন, তাকে বলা হতো ‘ক্যাথেড্রাল’। পোপ ছিল ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের ধর্মগুরু। তাকে নির্বাচন করতো ‘কার্ডিনাল কলেজ’। আমৃত্যু পোপ তার পদে বহাল থাকতেন। পোপের ঘোষিত যে কোন ধর্মীয় সিদ্ধান্ত বা ‘ডগমা’ মানা ক্যাথলিকদের জন্যে বাধ্যতামূলক ছিল। আর্মেনিয়ার গীর্জার অনুসারী ছাড়া বিশ্বের সকল খ্রীস্টান যীশুর জন্মদিন হিসেবে বড়দিনকে পালন করতো।
‘
সাক্রামেন্ট’ ছিল স্রষ্টার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অনুগ্রহ লাভের প্রার্থনার অনুষ্ঠান। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যীশুর নৈশভোজের স্মরণে পালন করা হতো ‘হোলি কম্যুনিয়ন’ বা ‘পবিত্র রুটি-মদ গ্রহণ অনুষ্ঠান’। ‘ইউকোরিস্ট’ ছিল এ্যাংলিকান গির্জায় পবিত্র সংগীত অনুষ্ঠান। গির্জাগুলো পরিচালনার জন্যে পদবিন্যাস ছিল বিশপ>প্রীষ্ট>ডীকন এবং সাবডীকন>একোলাইট>রিডার>এক্সরকিস্ট>ডোর কিপার।
সাক্রামেন্ট’ ছিল স্রষ্টার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অনুগ্রহ লাভের প্রার্থনার অনুষ্ঠান। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যীশুর নৈশভোজের স্মরণে পালন করা হতো ‘হোলি কম্যুনিয়ন’ বা ‘পবিত্র রুটি-মদ গ্রহণ অনুষ্ঠান’। ‘ইউকোরিস্ট’ ছিল এ্যাংলিকান গির্জায় পবিত্র সংগীত অনুষ্ঠান। গির্জাগুলো পরিচালনার জন্যে পদবিন্যাস ছিল বিশপ>প্রীষ্ট>ডীকন এবং সাবডীকন>একোলাইট>রিডার>এক্সরকিস্ট>ডোর কিপার।
‘ইস্টার’ ছিল যীশুর মৃত্যু পরবর্তীতে কবর থেকে পুন. জীবিত হওয়ার দিন। এটিও খ্রীস্ট সমাজে একটি উৎসব হিসেবে পরিগণিত হতো। খ্রীস্ট সমাজে বিয়ে বিশপের দীক্ষাপ্রাপ্ত যাজকের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এ ধর্মের যাজকশ্রেণি তথা ফাদার, ব্রাদার, সিস্টারগণ বিবাহ ও সংসার জীবন না করে গীর্জা তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবামূলক ব্রতে নিজেদের নিয়োজিত রাখতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন