শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৩০১৫ সনের পৃথিবীর মানুষ কিভাবে লিখবে ধর্মের ইতিহাস? খৃস্টান ধর্ম [Christianity] : পর্ব # ২ [ ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধমালা # ১৬ ]

খৃস্টান ধর্ম [Christianity] : পর্ব # ২

২০১৪ সনের পৃথিবীতে খ্রীস্টান ছিল মোট প্রায় ২০০ কোটি, যার শুরু হয়েছিল যীশুর জন্মের পর তথা ২৭ খ্রিস্টাব্দে। এর মধ্যে রোমান ক্যাথলিক প্রোটেস্টান্ট, এ্যাংলিকান, ইভানজালীয়, অর্থোডক্স, আসিরীয় চার্চ প্রভৃতি বিভাজনের কথা আগেই বলা হয়েছে। ঐ সময়ে বিশ্বে খ্রীস্টানদের সম্প্রদায়গত সংখ্যাতত্ত্ব ছিল নিম্নরূপ-

Catholic-1,050,000,000, Orthodox/Eastern Christian-240,000,000, African indigenous sects (AICs)-110,000,000, Pentecostal-105,000,000, Reformed/Presbyterian/Congregational/United-75,000,000, Anglican-73,000,000, Baptist-70,000,000, Methodist-70,000,000, Lutheran-64,000,000, Jehovah's Witnesses-14,800,000, Adventist-12,000,000, Latter Day Saints-12,500,000, Apostolic/New Apostolic-10,000,000, Stone-Campbell (Restoration Movement)-5,400,000, New Thought (Unity, Christian Science, etc.)-1,500,000, Brethren (Plymouth)-1,500,000, Mennonite-1,250,000, Friends (Quakers)-300,000.

বাইবেল মতে, নবী সখরিয়ার (জাকারিয়া) ১২০ বছর বয়সে বন্ধ্যা স্ত্রী ইলিসাবেত বৃদ্ধ্যা বয়সে ঈশ্বরের নির্দেশে গর্ভবতী হয়ে নবী ইয়াহিয়াকে জন্ম দেন। নবী সখরিয়ার (জাকারিয়া) পালিতা কন্যা মরিয়ম কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী হলে ইহুদীরা এ জন্যে সখরিয়াকে দায়ী করেন ও তাকে ব্যভিচারী হিসেবে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজতে থাকে। নবী সখরিয়া একটি গাছের মধ্যে লুকালে ইহুদীরা করাত দিয়ে গাছটি দ্বিখন্ডিত করলে সখরিয়া দ্বিখন্ডিত হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। মরিয়ম শিশুটিকে নিয়ে যোসেপের সঙ্গে স্বদেশ ত্যাগ করে মিশর ও গালিলের নাসরতে বসবাস করেন (সূত্র-মথি ২,১৪-১৩, ঐ.অভিধান)।

খ্রীস্টান পরবর্তী একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ আবির্ভুত হলে, তার ব্যপ্তি রোধ করার জন্যে মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত খৃস্টান শক্তি ‘ধর্মযুদ্ধ’ বা ক্রুসেডে অংশ গ্রহণ করে। ১০৯৫ থেকে ১১৪৪ পর্যন্ত প্রথম ক্রুসেড, ১১৪৪ থেকে ১১৯৩ পর্যন্ত ২য় ক্রুসেড এবং ১১৯৩ থেকে ১২৯১ পর্যন্ত ৩য় পর্যায়ের ক্রুসেড সংগঠিত হয়। ক্রসেডারদের আমন্ত্রণে ১২৫৬ সালে মঙ্গল বীর হালাকু খান প্রাক্তন সমৃদ্ধশালী মুসলিম রাজধানী বাগদাদ ধ্বংস করেছিলো।

বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগেও মানুষের মনে নানাবিধ প্রশ্ন উঠতো যার একটি উদাহরণ নিম্নরূপ -

খ্রীষ্টান ধর্ম অনুসারী সেন্টপল বলেছিলেন, ‘‘তাকে স্বর্গের সব প্রাণিদের কাছে সুসমাচার (গোসপেল) প্রচারের জন্যে যাজক নিযুক্ত করা হয়েছিল’’। ‘‘প্রাথমিক যুগের খ্রীস্টানরা সূর্য উপাসক ছিলেন’’ এমন অভিযোগ করেছিলেন Bonwick তার হাজার বছরের পুরণো Egyptian Belief বইয়ের ২৮৩ পৃষ্ঠায়। Giles এর Hebrew & Christian Record থেকে জানা যায়, সম্রাট হাইড্রান খ্রীস্টান ও মিশরীয় সূর্য দেবতা সেরাপিস উপাসকদের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাননি।

Kircher তার Edipus Aegypticus পুস্তকে মিশরীয় দেবতা ‘ইসিস’কে ‘ঈসা’ ও গ্রীক ভাষায় তাকেই ‘খ্রাইস্ট’ বলেছেন। প্যাগান জাতিরা পূজো করতো ক্রুসের। ২১০ খ্রীস্টাব্দে প্যাগান থেকে খ্রীস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত ফাদার (পাদ্রী) ও তৎকালীন আফ্রিকান চার্চের প্রেসবিটার ‘তারতুলিয়ান’ (Tertullian) আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, ‘‘ধর্ম পরিবর্তন করে আমি কি সাফল্য লাভ করেছি এর কোন যুক্তি খুঁজে পাইনা এবং আমি লজ্জায় সংকুচিত হই। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, আমি বিশ্বাস করেছিলাম ঈশ্বরের পুত্র জন্মগ্রণ করেন, একথা ভাবতে আমার লজ্জা হয়না কেন? কারণ, এটা কি একটি লজ্জাকর ব্যাপার নয়? আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরের পুত্র মারা গেছেন। ঈশ্বরের পুত্র কি মারা যেতে পারেন? কারণ অবিশ্বাস্য-অ্যাবসার্ড। আমি বিশ্বাস করি সমাধিস্থ করার পর তিনি আবার বেঁচে উঠে আসেন, এই অসম্ভব সত্যকে আমি সত্য বলে বিশ্বাস করি’’ (সূত্র : Tylor, Diegisis P.326)।

২০১৪ সনের প্রাচীন পৃথিবীতে যিশুকে দেখানো হতো পৃথিবীর সৌন্দর্যময় ১৮-বছরের যুবকরূপে, চমৎকার মুখ, লম্বা ঘাড়ে ঘন চুলের সবিন্যস্ত কেশদামসহ, যেভাবে প্যাগানরা এ্যাপোলোর মূর্তি গড়েছিল পূজক হিসেবে। কিন্তু ফাদার ‘তারতুলিয়ান’ (Tertullian) যিশুর শারিরীক সৌন্দর্য সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘স্বর্গীয় রূপ দূরের কথা, যিশুর সাধারণ মানুষের সৌন্দর্যও ছিলনা’’। ওরাইজেন ২৩০ খ্রী. বলেন যে, ‘‘ যিশু ছোটখাটো বেঢপ প্রকৃতির মানুষ ও নিচ বংশজাত ছিলেন’’। শুরুতে ক্রাইস্টের পূজো করা হতো ভেড়ার আকারে, যাকে প্রাচীনপন্থীরা বলতো ঈশ্বরের মেষ তথা সূর্য। যিশুর আগমনের বহুপূর্বে প্যাগানরা যেভাবে এ্যাপোলো, মার্কারী ও অন্যদের চিত্রিত করতো, যিশুকে প্রাথমিক শিল্পকর্মে ঠিক সেভাবে মেষশিশুরূপে চিত্রিত করা হয়েছিল।

আগাথনের পোপের পূর্বে (৬০৮ খ্রী.) কখনো যিশুকে মানুষরূপে ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়নি। কনস্টান্টাইন পোগোনেটাসের শাসনকালে ৬ষ্ঠ সিনোড দ্বারা সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় যে, যিশুর প্রাচীন প্রতীক মেষের বদলে একটি ক্রুশবিদ্ধ মানুষকে সর্বত্র দেখানো হবে। ৬ষ্ঠ সিনোডের এই সিদ্ধান্ত পোপ অড্রিয়ান-১ কর্তৃক অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হয় (সূত্র : Quoted is Higgin’s Anacalypsis, V-ii, P-3)।

ইহুদীরা তাদের পবিত্র তালমুদে যিশুকে গাছে ঝুলিয়ে হত্যার কথা বলেছে, ক্রুশবিদ্ধের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। Wise এর The Martyrdom of Jesus of Nazareth পুস্তকে যিশুকে পাথর মেরে হত্যার কথা বলা হয়েছিল। খ্রীস্টান সম্রাট আলেকজান্ডার কর্তৃক মিসরের সূর্যদেব সেরাপিসের মন্দির ধ্বংসকালে মন্দিরের ফাউন্ডেশন স্টোন হিসেবে ক্রসচিহ্ন অঙ্কিত পাথর পাওয়া যায়, যা ভক্তিভরে খৃষ্টানরা তাদের প্রতিক হিসেবে গ্রহণ করেছিলো বলে মনে করা হতো।

সিরাপিসের মন্দিরের পবিত্র শব্দ ছিল Ihahao, যা ইহুদীরা রূপান্তর করে তাদের দেবতা হিসেবে Yhaho-তে এবং ২০১৪ সনেও ইহুদীদের আবিস্কৃত জনচেয়ে জনপ্রিয় ইন্টারনেট ওয়েবপেইজ ছিল Yahoo. মিসরীয় বিশ্বাস ছিল যে, ত্রাণকর্তা ওসিরিস ক্রুশ ধারণ করে যখন কোন মানুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করতো, তখন মানুষটি অমরত্ব লাভ করতো। ২০১৪ সনের গুড ফ্রাইডে-তে খ্রীস্টানরা যেভাবে তাদের কেকের উপর ক্রুসচিহ্ন অাঁকতো, প্রাচীন মিসরীয়রা তাদের পবিত্র পিঠা বা কেকে ওভাবে ক্রুস অঙ্কন করতো, তা প্রায় আরো ৪-হাজার বছর আগে। প্রাচীন পারস্য সম্রাট বাহরাম গৌরের পতাকা বা প্রতীক ছিলো ক্রুসচিহ্ন খচিত।

প্রাচীন ব্যবিলনের দেবতা বাল ও আনু’র প্রতীকও ছিলো ক্রুসচিহ্ন। ২০১৪ সনে প্রাচীন বৃটিশ যাদুঘরে রক্ষিত নমরুদ ‘তিগলাত পিলেসার’ বুকের উপর ক্রুস চিহ্ন অাঁকা ছিলো। হিন্দুদের অগ্নিদেবের প্রতিকও ছিলো বর্ণিত ক্রুস। ২০১৪ সনেও প্রাক্তন ভারতের বেনারস ও মথুরায় অন্তত ২টি মন্দির নির্মিত হয়েছিল ক্রুসের উপর। হিন্দু দেবতা শ্রীকৃষ্ণকে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছিল বলে অনেক হিন্দুই বিশ্বাস করতো ২০১৪ সনেও। প্রাচীন ভারতীয় সম্রাট অশোকস্তম্ভে ক্রুসচিহ্ন অঙ্কিত ছিল। তিববতের লামাদের কাছে ক্রুসচিহ্ন অতি পবিত্র ছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন